thereport24.com
ঢাকা, রবিবার, ২৮ এপ্রিল 24, ১৫ বৈশাখ ১৪৩১,  ১৯ শাওয়াল 1445

২৯ সেকেন্ডে ৯% লাফ

শেয়ারবাজারে হিরুদের কারসাজি, তদন্ত

২০২২ ফেব্রুয়ারি ২০ ১১:৩৮:৪৩
শেয়ারবাজারে হিরুদের কারসাজি, তদন্ত

তৌহিদুল ইসলাম মিন্টু: ২০২১ সালের ৬ মে। ১১.২৬ মিনিট ৮ সেকেন্ড। পরবর্তী ২৯ সেকেন্ডে দেশের প্রধান শেয়ারবাজারে এক অস্বাভাবিক লেনদেন লক্ষ্য করে নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলো। ১১.২৬ মিনিট ৮ সেকেন্ড থেকে ৩৭ সেকেন্ড পযন্ত আইটি খাতের ইজেনারেশন লিমিটেডের লেনদেন হওয়া তিন লাখ ২৩ হাজার ৭২৯টি শেয়ারের মধ্যে দুই লাখ ১৭ হাজার ৩১০টি শেয়ারই পাঁচটি বিও একাউন্ট থেকে। এই ২৯ সেকেন্ডে ৪৩ টাকা থেকে ৪৫ টাকা ৩০ পয়সায় চলে যায় শেয়ারটির মূল্য। ৬ মে দিনশেষে শেয়ারটির মূল্য বৃদ্ধি পায় ৪ টাকা ১০ পয়সা অর্থাৎ ৯ দশমিক ৯৫ শতাংশ।

সংশ্লিষ্টদের অবাক করে দেয় এ ধরনের লেনদেন । এ লেনদেন থেকেই বোঝা যায় আবারও অস্থিরতায় পড়েছে বাংলাদেশের শেয়ারবাজার। আজ উত্থান তো কাল পতন। নিয়ন্ত্রক সংস্থার কাছ থেকে শেয়ারবাজারের নিয়ন্ত্রণ নিতে সচেষ্ট হয়ে উঠেছে কারসাজি চক্র।

২০২০ সালের ১৭ মে নতুন কমিশন দায়িত্ব নেয়। এরপর ধীরে ধীরে গতি পায় বাজার। তরতর করে বাড়তে থাকে বিভিন্ন কোম্পানির শেয়ার দর। বিনিয়োগকারীরাও নড়ে চড়ে বসেন। লেনদেন বাড়তে থাকে। বাড়ে সূচকও। শুরু হয় কারসাজি। মূলত কারসাজির কারণেই শেয়ারবাজারের গতি বাড়তে থাকে। শেয়ারবাজারের নিয়ে কারসাজি করে রাতারাতি তারকা বনে যান নতুন নতুন খেলোয়াড়। বর্তমান পরিস্থিতি এমন দাঁড়িয়েছে যে বিনিয়োগকারীসহ সংশ্লিষ্টরা বলতে শুরু করেছেন বাজারে গেমলার না থাকলে গতি আসে না। লেনদেন বাড়ে না, বাড়ে না সূচক। কিন্তু যখন দর পতন ঘটে তখন বিপর্যয় নেমে আসে বিনিয়োগকারীর জীবনে। পুঁজি হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে পড়েন তারা। মিছিল, মিটিং আর বিক্ষোভ। রাজপথে আগুন জ্বালিয়ে নিজের ক্ষোভ প্রকাশ করতে থাকেন।

শেয়ারবাজারের এই উত্থান পতনের সঙ্গে এক ধরনের কারসাজি জড়িত বলে বাজার সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন।

কারসাজির বিষয়টি দীর্ঘদিন ধরেই নজর রাখছিল দ্য রিপোর্ট। বিস্ময়কর এই লেনদেন নিয়ে তদন্তে নামে দেশের প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সেচেঞ্জ( ডিএসই) কর্তৃপক্ষ। দ্য রিপোর্টের হাতে এসেছে ডিএসই’র করা তদন্ত প্রতিবেদনটি।

২০১০ সালের ধসের আগে শেয়ারবাজারে যে ধরনের কারসাজি চলেছিল এবারও সে লক্ষণ স্পষ্ট। তবে এবার নিয়ন্ত্রক সংস্থা আগে থেকেই সক্রিয় হয়েছে। সে কারণে বিভিন্ন কারিসাজি নজরে আসার পরপরই তদন্তের ব্যবস্থা করছে।

শুধু ৬ মে নয় । ৫ এপ্রিল থেকে ৩০ মে চলা ই-জেনারেশনের শেয়ার লেনদেন নিয়ে চলেছে সিরিয়াল ট্রেডিং। ওই নির্দিষ্ট সময়ে শেয়ারটির সর্বোচ্চ ক্রেতা ছিলেন মোহাম্মদ আবুল খায়ের ( বিও আইডি নম্ব র ১২০১৯৫ ----- ৬৪৫৩৫) , শেয়ারটির দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ক্রেতা ছিলেন মাহমুদ উজ জামান চৌধুরী ( বিও আইডি ১২০৩৬৩ ----- ২৪৪৮৭), তৃতীয় সর্বোচ্চ ক্রেতা হলেন ডি আই টি কো-ওপারেটিভ লিমিটেড ( বিও আইডি ১২০৫৫৯ ------ ৫৭৮১১)।

ডিএসইর ওয়েবসাইটের তথ্যে দেখা গেছে ৫ এপ্রিল থেকে ৩০ মে পর্যন্ত ডিএসইর সূচক ১৮ দশমিক ০৭ শতাংশ বৃদ্ধি পায়। একদিনে ৫১৭৭.৪৮ পয়েন্ট থেকে ৯৫০.১৪ বেড়ে ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স ৬০০৮.৬৯ পয়েন্টে পৌঁছায়।

এরপর থেকে দেশের শেয়ারবাজারের ধারাবাহিক উত্থান ও পতন শুরু হয়। যা গত সপ্তাহ পর্যন্ত বিদ্যমান ছিলো। গত এক বছরে ই-জেনারেশনের প্রতিটি শেয়ারের দর ১৫ টাকা থেকে বেড়ে সর্বোচ্চ ৬৮ টাকায় লেনদেন হয়েছে। গত বৃহস্পতিবার এর শেয়ারের দর ছিল ৪৭.০৪ টাকা।

ইনভেস্টমেন্ট অ্যান্ড এনফোর্সমেন্ট ডিপার্টমেন্টের চার কর্মকর্তা নিয়ে গঠিত ডিএসইর তদন্ত কমিটি ৫ এপ্রিল থেকে ৩০ মে পর্যন্ত ই- জেনারেশনের লেনদেন ধরে তদন্ত করে। তদন্ত রিপোর্ট মতে গত ৫ এপ্রিল থেকে ৩০ মে শেয়ারটির মূল্য বেড়ে ১১৭ দশমিক ২৩ শতাংশ। তদন্তে দেখাগেছে ৫ এপ্রিল থেকে ৩০মে পর্যন্ত ই- জেনারেশন লিমিটেডের অস্বাভাবিক দর বৃদ্ধি পায়।

এই দর বৃদ্ধির পর থেকেই এখনও শেয়ারটির দর বৃদ্ধি অস্বাভাবিক পর্যায়ে রয়েছে। ডিএসইর ওয়েবসাইট থেকে দেখা গেছে ৫ আগস্ট এর সর্বোচ্চ বৃদ্ধি পেয়ে দাঁড়িয়েছিল ৬৮ টাকায়।

দরবৃদ্ধির পেছনে রয়েছে দুটি গ্যাং-এর সিরিয়াল ট্রেডিং বা ধারাবাহিক লেনদেন। শেয়ারবাজারে একজন বড় বিনিয়োগকারী হিসেবে আলোচনায় আসেন আবুল খায়ের ওরফে হিরু। তিনি সমবায় অধিদপ্তরের ডেপুটি রেজিস্ট্রার হিসেবে কর্মরত রয়েছেন। সমালোচকরা সরকারি এই কর্মকর্তাকে কারসাজির চক্রের মহানায়ক হিসেবে চিহ্নিত করে থাকেন। বর্তমান শেয়ারবাজারের সুচক ও লেনদেন ওঠানামার সঙ্গে জড়িয়ে গেছে হিরু গং এর নাম। এই এক বছরে সেকেন্ডারি মার্কেট থেকে এতো টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন যে এ বছর বিপিএল এ রানার্ আপ হওয়া ক্রিকেট দল ফরচুন বরিশালের সত্বাধিকারী হয়েছেন তিনি।



তদন্তে জানা গেছে মোহাম্মদ আবুল খায়ের ওরফে হিরু নিজের একটি , স্ত্রীর দুটি এবং তার নিয়ন্ত্রাধীন ডি আই টি কো ওপারেটিভ লিমিটেডের নামে দুটি বিও একাউণ্ট থেকে এ লেনদেন করেন। ৫ এপ্রিল থেকে ৩০ মে এই ৫৬ দিনে ৫ টি বিও একাউন্ট দিয়ে কোম্পানির লেনদেন হওয়া শেয়ারের ১০ দশমিক ৭৭ শতাংশ শেয়ার লেনদেন করে আবুল খায়ের অ্যান্ড গং। এসময়ে আবুল খায়ের ওরফে হিরু ২৯ লাখ ৩৯ হাজার ১৭৩ টি শেয়ার কিনেছেন। তাতে মুনাফা হয় ২ কোটি ৩২ লাখ ৫ হাজার ৬০৮ টাকা। এসময় ইজেনারেশনের ৫ কোটি ৪৫ লাখ ৫৭ হাজার ৬৬৬ টি শেয়ার লেনদেন হয়।

গত বছর ২৩ ফেব্রুয়ারি থেকে ঢাকা স্টক একচেঞ্জে লেনদেন শুরু করে ইজেনারেশন লিমিটেড। আইটি সেক্টরে নিবন্ধিত কোম্পানিটির অনুমোদিত মূলধন ছিলো ১০০ কোটি টাকা। ৭৫ কোটি পরিশোধিত মূলধন নিয়ে যাত্রা শুরু করা কোম্পানিটির প্রতিটি শেয়ারের ফেসভ্যালু ১০ টাকা। তদন্তে দেখা গেছে প্রায় একই ঘটনা ঘটে ১৯ মে ১০টা ৯ মিনিট ৩২ সেকেন্ড থেকে ১টা ৫মিনিট ৪ সেকেন্ড পর্যন্ত ।এই সময়ে কোম্পানির ৩০৯ টি হাওলার মধ্যে ১৭০টিই করে এই ৫টি বিও একাউন্ট থেকে লেনদেন হয় ।লেনদেনের মধ্যে ৫৬ দশমিক ৮৬ শতাংশই করে আবুল খায়ের অ্যান্ড গং। ১৯ মে দিন শেষে শেয়ারটির মূল্য ৯ দশমিক ৬১ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়ে দর দাড়ায় ৫৫ টাকা ৯ পয়সায়।

সিকিউরিটিজ অ্যান্ড একচেঞ্জ অর্ডিনেন্স ১৯৬৯ অনুযায়ী কোন ব্যাক্তি প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে কোন নিরাপত্তা ,বিক্রয় বা ক্রয় প্ররোচিত,নিরুৎসাহিত, প্রভাব প্রতিরোধ বা কোনো উপায়ে প্রভাবিত বা তার সুবিধার দিকে মোড় নেওয়ার উদ্দেশ্য করবেন না।

তদন্ত রিপোর্ট মতে মোহাম্মদ আবুল খায়ের এবং তার সহযোগীরা প্রত্যক্ষ বা অপ্রত্যক্ষভাবে কোম্পানির লেনদেন সক্রিয় দেখানোর জন্য ইচ্ছাকৃত ভাবে লেনদেন করেছেন যা সিকিউরিটিজ অ্যান্ড একচেঞ্জ অর্ডিয়ান্স ১৯৬৯ লংঘন করেছে ।

উল্লেখ্য আবুল খায়ের এর বিও একাউণ্টের ব্রোকারেজ হাউস হচ্ছে ইবিএল সিকিউরিটিজ লিমিটেড।এছাড়া বিও আবুল খায়েরের স্ত্রীর দুইটি একাউন্টের ব্রোকারেজ হাউস হচ্ছে যথাক্রমে ইউসিবি স্টক ব্রোকারেজ হাউস এবং এসবিএল ক্যাপিটাল ম্যানেজমেন্ট লিমিটেড। এছাড়া মোহাম্মদ আবুল খায়েরের নিয়ন্ত্রাধীন ডিএইটি কো ওপা্রেটিভ লিমিটেডের দু’টি ব্রোকারেজ হাউস হলো যথাক্রমে ইউসিবি স্টক ব্রোকারেজ হাউস এবং এসবিএল ক্যাপিটাল ম্যানেজমেন্ট লিমিটেড।

শুধু আবুল খায়েরই নয় লেনদেন সংক্রান্ত অভিযোগ পাওয়া গিয়েছে.২য় সর্বোচ্চ ক্রেতা মাহমুদ উজ জামান চৌধুরির বিরুদ্ধেও।

৬ই এপ্রিল কোম্পানিটির লেনদেন হওয়া ৩০ দশমিক ৬০ শতাংশ শেয়ার লেনদেন করে মাহমুদ উজ জামান চৌধুরি নামক বিনিয়োগকারী। ৬ই এপ্রিল ১০টা ৭ মিনিট ৩৩ সেকেন্ড থেকে ১০টা ২৪ মিনিট ৪ সেকেণ্ড সময়ের মধ্যে কোম্পানির মোট হাওলা ১৬৩টির মধ্যে ১০৪টি করে এই বিনিয়োগকারী।

তদন্ত রিপোর্ট মতে মাহমুদ উজ জামান চৌধুরি ৬ এপ্রিল তার সিরিজ লেনদেন শুরু করেন ১০টা ৫৬ মিনিট ১৫ সেকেন্ডে। যা চলে ১১টা ২ মিনিট ৩১ সেকেণ্ড পর্যন্ত। এ সময়ে ২৯ টাকা ১০ পয়সা থেকে ৩০ টাকায় চলে যায় শেয়ার মূল্য। প্রায় এই ৬ মিনিটে কোম্পানির মোট লেনদেনের ৫৯ দশমিক ৩৭ শতাংশ শেয়ার লেনদেন করে এই বিও একাউন্ট। দিনশেষে ৮ দশমিক ৮০ শতাংশ মূল্য বৃদ্ধি পেয়ে শেয়ারটির মূল্য দাড়ায় ৩০.৯০ টাকায়।

মাহমুদ উজ জামান চৌধুরীর এই বিও একাউন্ট থেকে আবার লেনদেন করা হয় ৭ এপ্রিল। ১০টা ৫ মিনিট ৫ সেকেণ্ড থেকে লেনদেন শুরু হয়ে চলে প্রায় ৩১ মিনিট । ১০টা ৩৬ মিনিট ৪১ সেকেন্ড।সেই ছত্রিশ মিনিটে ৭৪ দশমিক ৬২ শতাংশ লেনদেন ছিলো এই একাউন্ট থেকে। এই বিও একাউন্টটি থেকে আবার সন্দেহজনক লেনদেন হয় ১৮ ই এপ্রিল।.১০ টা ৭ মিনিট ৪৪ সেকেন্ড থেকে শুরু হয়ে শেষ হয় ১০ টা ১৫ মিনিট ৩ সেকেন্ডে।এই সময়ে মোট লেনদেনের ৬৩ দশমিক শুন্য ৫ শতাংশ লেনদেন হয় এই বিও একাউন্টে।



ডিএসইসির তদন্ত অনুযায়ী মাহমুদ উজ জামানের বিও একাউন্ট থেকে ৫৬ দিনে মোট ১২ লাখ ১৪ হাজার ৩৬৩ টি শেয়ার কিনেছে । ইজেনারেশনের লেনদেন হওয়া শেয়ারের ৪ দশমিক ৬৫ শতাংশ শেয়ারের লেনদেন হয় ওই একটি একাউন্ট থেকেই। এভাবে এই ৫৬ দিনে একটি বিও একাউন্ট থেকে মুনাফা করেন, ৯৩ লাখ ২৭ হাজার ৩০৯ টাকা।

ডিএসইর ইনভেস্টমেন্ট অ্যান্ড ইনফোর্সমেন্ট ডিপার্টমেন্টের দুইজন ডেপুটি ম্যানেজার সাইফুল হক এবং মোহাম্মদ দ্বীন ইসলাম মোল্লা ছাড়াও আরও ছি্লেন সিনিয়র ম্যানেজার মোহাম্মদ জিল্লুর রহমান।এছাড়াও তদন্ত কমিটিতে আরও ছিলেন ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার শফিকুল ইসলাম ভুইয়া। জুন থেকে ডিসেম্বর মাস পর্যন্ত তদন্ত করেন তাঁরা।

তদন্তকালে এই চার তদন্তকারী কর্মকর্তা ৫৬ দিনের লেনদেনের তথ্য সংগ্রহ করেন। এসব ডাটা সংগ্রহ করেছেন ডিএসইর সার্ভিলেন্স বিভাগ, ম্যানেজমেন্ট ইনফরমেশন সিস্টেম(এমআইএস) বিভাগ,লিস্টিং এফেয়ার্স বিভাগ ও সংশ্লিষ্ট ব্রোকারেজ হাউজ থেকে।

সংগৃহিত সামগ্রিক ডাটা একত্রিক করে স্বাভাবিক সময়ের সাথে অস্বাভাবিক লেনদেনের তুলনা করেন। ডাটা যাচাই বাছাই শেষে সিরিয়াল ট্রেডিং এর প্রমাণ খুঁজে পায় তদন্ত দল। যা শেয়ারের অস্বাভাবিক দর বৃদ্ধি ভূমিকা রাখে। তদন্ত শেষে রিপোর্টে উল্লেখ করা হয় এই দুটো একাউণ্ট সিকিউরিটিজ অ্যান্ড একচেঞ্জ অর্ডিয়েন্স ১৯৬৯ এর সেকশন ১৭(১) ৫ ধারা ভঙ্গ করেছে এবং ইচ্ছাকৃতভাবে অতিরিক্ত লেনদেন করে কৃত্রিম মূল্য বৃদ্ধি করেছে।

এ বিষয়ে কথা হয় ইজেনারেশনের কোম্পানি সচিব জিসান আহমেদ সিদ্দিকীর সঙ্গে। দ্য রিপোর্ট থেকে জানতে চাওয়া হয় কোম্পানির পক্ষ থেকে তথ্য পাচার করে কোনো কারসাজি করা হয়েছে কী-না। এ বিষয়ে তিনি বলেন সেকেন্ডারী মার্কেটের শেয়ারের দর হ্রাস বৃদ্ধি বা লেনদেনের সঙ্গে কোম্পানির কোনো সম্পর্ক থাকে না। আমাদের কোনো পরিচালক বা সংশ্লিষ্ট কোনো কর্মকর্তা জড়িত নেই।

বিনিয়োগকারী আবুল খায়ের হিরু দ্য রিপোর্টের এই প্রতিবেদককে বলেন, কবে কোথায় কত শেয়ার লেনদেন করেছি তা মনে নেই। সরকারি কর্মকর্তা হিসেবে লেনদেন করার এতো টাকা কোথায় পেলেন, জানতে চাইলে তিনি বলেন , এটা সরকারের সংশ্লিষ্টরা দেখবেন। এটা এক ধরনের সিরিয়াল ট্রেডিং যা বিএসইসির আইনে অপরাধ। তিনি অপরাধ মনে করেন কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন আমি সেটা জানি না।

আবুল খায়ের হিরুর বিও একাউণ্টের ব্রোকারেজ হাউস হচ্ছে ইবিএল সিকিউরিটিজ লিমিটেড। এই ব্রোকারেজ হাউজের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ছাইদুর রহমান দ্য রিপোর্টকে বলেন কে কখন কত টাকা লেনদেন করেছেন সেটা আমরা বলতে পারবো না। এতো খোঁজ রাখাও সম্ভব নয়।

মাহমুদ উজ জামান চৌধুরী ট্রেড করেন সাব ভ্যালী সিকিউরিটিজ হাউজে। ১৯ নম্বর দিলকুশার ৬ তলার এই অফিসে এর নির্বাহী পরিচালক মাহবুব মেহেরিন মিশুর সঙ্গে কথা হয় এই প্রতিবেদকের। তিনি দ্য রিপোর্টকে বলেন‘ এটা ক্লায়েন্টের গোপন বিষয় । এ নিয়ে সাংবাদিকের প্রশ্ন করার অধিকার আছে কী? ব্রোকারেজ হাউজ এ ধরণের কারসাজির সঙ্গে জড়িত থাকে। সাব ভ্যালি সিকিউরিটিজ এ ঘটনায় জড়িত কি না জানতে চাইলে তিনি কথা বলতে অস্বীকৃতি জানান।

তদন্তকারী কর্মকর্তাদের একজন নাম না প্রকাশ করার শর্তে দ্য রিপোর্টকে বলেন, এটা সিরিয়াল ট্রেডিং। আমাদের তদন্তে সুস্পষ্টভাবেই সিরিয়াল ট্রেডিং এর মাধ্যমে দুই বিনিয়োগকারীর কারসাজির বিষয়টি ধরা পড়েছে। নিশ্চয় আমরা বিএসইসির গাইড লাইন মেনে তদন্ত করেছি। তবে এখানে কোম্পানির সংশ্লিষ্টতার প্রমাণ মেলেনি বলে জানান ওই কর্মকর্তা।

পুঁজিবাজার বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক আবু আহমেদ দ্য রিপোর্টকে বলেন,এখন তো সিরিয়াল ট্রেড হচ্ছে । সিরিয়াল ট্রেড বড় ধরনের ম্যানুপুলেশন। বিএসইসি নিশ্চয় ব্যবস্থা নেবে। তবে বিনিয়োগকারীরা এখন বড় অসহায় বোধ করছে। বিনিয়োগকারীদের উচিৎ কোম্পানির ফান্ডামেন্টাল অবস্থা জেনে বুঝে বিনিয়োগ করা।

এ বিষয়ে কথা হয় বিএসইসির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ও কমিশনার শামছুদ্দিন আহমেদের সঙ্গে। তিনি দ্য রিপোর্টকে বলেন কোনো লেনদেন নিয়ে সন্দেহ হলে আমরা নিজেরা তদন্ত করি। কখনো ডিএসইকে সঙ্গে নিয়ে তদন্ত করি। কখনোবা ডিএসইর ওপর দায়িত্ব দিয়ে স্বাধীন ভাবে কাজ করার সুযোগ দেই। সার্ভিলেন্সের দায়িত্বে থাকা এই কমিশনার বলেন সিরিয়াল ট্রেডিং প্রমাণ হলে তা সিকিউরিটিজ অ্যান্ড একচেঞ্জ অর্ডিনেন্স ১৯৬৯ এর সেকশন ১৭(১) ৫ ধারা ভঙ্গের অপরাধ। সেক্ষেত্রে আমরা জরিমানা করতে পারি বা ফৌজদারি আদালতে মামলা করতে পারি। তিনি বলেন কমিশন অনেক সক্রিয়। সব ধরনের কারসাজি প্রতিরোধে আমরা কঠোর রয়েছি। কোনো অপরাধীকেই আমরা ছাড় দেবো না। তিনি জানান অনেকগুলো ইস্যু নিয়েই বিএসইসি ও ডিএসই তদন্ত করছে।

(দ্য রিপোর্ট/ মাহা/ টিআইএম/২০ ফেব্রুয়ারি,২০২২)

পাঠকের মতামত:

SMS Alert

শেয়ারবাজার এর সর্বশেষ খবর

শেয়ারবাজার - এর সব খবর