thereport24.com
ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ১৪ অগ্রহায়ণ ১৪৩১,  ২৬ জমাদিউল আউয়াল 1446

রিজার্ভ যা আছে তা দিয়ে পাঁচমাসের আমদানি খরচ মিটানো যাবে - প্রধানমন্ত্রী

২০২২ নভেম্বর ২৫ ২১:৩৮:২৫
রিজার্ভ যা আছে তা দিয়ে পাঁচমাসের আমদানি খরচ মিটানো যাবে - প্রধানমন্ত্রী

দ্য রিপোর্ট প্রতিবেদক: বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠন স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদের (স্বাচিপ) পঞ্চম ত্রিবার্ষিক জাতীয় সম্মেলনে উপস্থিত হয়ে বক্তব্য রাখছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শুক্রবার (২৫ নভেম্বর) বিকেল তিনটার পর রাজধানীর ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আয়োজিত সম্মেলনে যোগ দেন তিনি। এর আগে বেলুন ও পতাকা উড়িয়ে সম্মেলনের উদ্বোধন করেন তিনি।

সম্মেলনে প্রধান অতিথি ও উদ্বোধক হিসেবে দেয়া বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, জাতির পিতা ও তার পরিবারের সদস্যদের নৃশংস হত্যাকান্ডের ঘটনা শুধু একটি হত্যাকান্ড নয়; এটি ছিল স্বাধীনতার ওপর আঘাত।

অথচ সেই হত্যার বিচার করা যাবে না বলে ইমডেমনিটি অধ্যাদেশ করা হয়েছিলো। ফলে আমার বাবা-মা-ভাইয়ের হত্যার বিচার করতে আমাকে ৩৫ বছর অপেক্ষা করতে হয়েছে। ৮১ সালে আমি যখন দেশে ফিরে আসি তখন মামলা করার কোন অধিকার ছিল না, আমার মামলা নেয়নি। পঁচাত্তরের নৃশংস হত্যাকাণ্ডের পর অবৈধভাবে ক্ষমতার পালাবদলের মাধ্যমে বিচারের পথ বন্ধ করা হয়। এরপর রাজনীতির সুযোগ দেয়া হয় স্বাধীনতাবিরোধীদের। একমাত্র আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর সেই ইমডেমনিটি অধ্যাদেশ বাতিল করেছে। আমরা সেই খুনিদের বিচার করেছি, মামলা করতে পেরেছি। বিচারহীনতার সংস্কৃতি তো তখন থেকেই শুরু।
তিনি বলেন, আমরা ক্ষমতায় আসার পর সব রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ডের বিচার করেছি। তবে বঙ্গবন্ধুর খুনিদের অনেকে এখনো পালিয়ে বেড়াচ্ছে। খুনিদের দুইজন পাকিস্তানে, একজন কানাডায় ও একজন যুক্তরাষ্ট্রে পলাতক রয়েছে। আরেকজন কখনো জার্মানি আবার কখনো ভারতে পালিয়ে বেড়াচ্ছে। পাকিস্তানে রয়েছে রশিদ এবং ডালিম। আরেকজন মোসলেউদ্দিন, তাকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। তবে আমাদের প্রচেষ্টা আছে পৃথিবীর যেখানেই থাকুক এদেরকে ধরে এনে সাজা নিশ্চিত করবো আমরা।

অন্তত পাঁচ মাসের আমদানি খরচ মেটানো সম্ভব

শেখ হাসিনা বলেন, রিজার্ভ নিয়ে অনেক কথা হচ্ছে। অনেকে ভয়ে ব্যাংক থেকে টাকা তুলে বাড়ীতে রাখছেন। এতে চোরকে সুযোগ করে দেয়া হচ্ছে। এখন আপনারা চোরের হাতে টাকা তুলে দেবেন না ব্যাংকে রাখবেন সেটা নির্ভর করছে আপনাদের উপর। রিজার্ভ হলো, আমাদের চাহিদা মিটিয়ে কমপক্ষে তিন মাসের আমদানী ব্যয় মেটানোর সক্ষমতা। জাতির পিতা তো যাত্রা শুরু করেছিলেন শূন্য রিজার্ভ নিয়ে। তারপরও তিনি এ দেশটাকে গড়ে তুলেছিলেন। আমাদের আমলে রিজার্ভ প্রায় ৪৮ ভাগে উঠে গিয়েছিল। আমরা যেসব ঋণ নিয়েছিলাম তা শোধ করেছি। কিন্তু বাংলাদেশের রিজার্ভ বর্তমানে যা আছে তাতে তিন মাস নয়, অন্তত পাঁচ মাসের আমদানি খরচ মেটানো সম্ভব।

দুই কোটি পরিবার সরাসরি সহযোগিতা পাচ্ছে

শেখ হাসিনা বলেন, একমাত্র জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর আমলে আমাদের প্রবৃত্তির ৯ ভাগের উপরে অর্জন হয়েছিল। আওয়ামী লীগ সরকার আসার পর আমরা ৮ ভাগ পর্যন্ত প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছিলাম। কিন্তু করোনা মহামারী এসে আমাদেরকে বাধাগ্রস্ত করে দেয়। আমেরিকার স্যাংশান, ইউরোপের স্যাংশান, কাউন্টার স্যাংশান, ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ প্রভৃতি কারণে প্রত্যেকটা জিনিসের দাম আন্তর্জাতিক বাজারে বৃদ্ধি পেয়েছে। তাই সবাইকে একটু সাশ্রয়ী হতে হবে। আমার অনুরোধ, কেউ যেন অপচয় না করি। আমাদেরকে অনেক মূল্য দিয়ে গম, ভুট্টা, ভোজ্য তেল, জ্বালানি, চিনি, সবকিছুই অতিরিক্ত দামে আমদানি করতে হচ্ছে। পাশাপাশি পরিবহন খরচও বেড়ে গেছে। আমরা দুই কোটি পরিবারকে প্রায় সরাসরি সহযোগিতা করে যাচ্ছি।

স্বাস্থ্য খাতের সাফল্য বিশ্বে রোল মডেল
শেখ হাসিনা বলেন, কমিউনিটি ক্লিনিক থেকে ৩০ প্রকারের ওষুধ বিনা পয়সায় দেওয়া হচ্ছে। আমরা টেলিমেডিসিন সেবা, হেলথ কল সেন্টার 'স্বাস্থ্য বাতায়ন' ২৪ ঘন্টায় চালু রেখেছি। এখানে চিকিৎসকের পরামর্শ, অ্যাম্বুলেন্স বুকিং দেওয়া, অভিযোগ, পরামর্শ ইত্যাদি জানানোর ব্যবস্থা রয়েছে। আমরা ডিএনএ প্রোফাইলিং ল্যাবরেটরি করে দিয়েছি। মাতৃত্ব এবং শিশুর মৃত্যুহার আজ কমেছে। আমাদের এই সাফল্যকে আন্তর্জাতিক বিশ্ব স্বীকৃতি দিয়েছে। আন্তর্জাতিক চিকিৎসা সাময়িকী ‘ল্যানসেট’ বাংলাদেশের স্বাস্থ্য খাতের অর্জন নিয়ে ছয়টি সিরিজ প্রকাশনা তুলে ধরেছে। সেখানে বলা হয়েছে, নানা প্রতিকূলতা সত্বেও বাংলাদেশের স্বাস্থ্য খাতের অসাধারণ সাফল্য এখন বিশ্বে রোল মডেল।
তিনি বলেন, দেশের হাসপাতালগুলোতে ৬৮ হাজার ৩৪৫টি শয্যাসংখ্যা উন্নীত হয়েছে। বেসরকারী খাতে তা ১ লাখ ৩৬৮টি। ১২ হাজার ৩৮২ জন চিকিৎসক ছিলো; এখন ৩০ হাজার ১৫২ জন চিকিৎসক রয়েছেন সারা দেশে। ৪৩ হাজার ১৫ জন নার্সকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। পৃথিবীর কেউ বিনা পয়সে ভ্যাকসিন দেয়নি, কিন্তু বাংলাদেশে আমি দিয়েছি। ভ্যাকসিন যখন গবেষণা পর্যায়ে তখনই বুকিং দেওয়া শুরু করেছিলাম। ভ্যাকসিন গবেষণা সফল না হলে আমাদের টাকাটা হয়তো পানিতে যেতো। করোনাকালীন চিকিৎসকসহ সংশ্লিষ্টদের নিরাপত্তার ব্যবস্থা আমরা করেছি।

ইতিহাসে একবারই শান্তিপূর্ণভাবে ক্ষমতা হস্তান্তর হয়েছিলো, তা করেছিলো আওয়ামী লীগ

শেখ হাসিনা বলেন, ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি ভোটারবিহীন নির্বাচন করেছিলো খালেদা জিয়া। ফলে ৩০ মার্চ খালেদা জিয়া বাধ্য হয়ে পদত্যাগ করেছিল। ভোট চোরের অপরাধে তাদেরকে পদত্যাগ করতে বাধ্য করেছিল জনগণ। এরপর নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতায় আসে আওয়ামী লীগ। আবার ২০০১ সালে আমরা শান্তিপূর্ণভাবে ক্ষমতা হস্তান্তরও করি। বাংলাদেশের ইতিহাসে একবারই ক্ষমতা শান্তিপূর্ণভাবে হস্তান্তর করা হয় সেটাই আমরা করেছিলাম। আমরা এখন তৃতীয়বারের মতো সরকারে। এই ১৪ বছরে বাংলাদেশ অনেক দূর এগিয়েছে। আমরা চাই গণতান্ত্রিক ধারাবাহিকতা। বাংলাদেশ এখন উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা পেয়েছে।

তিনি বলেন, যার যেখানে যতটুকু জমি আছে তার এক ইঞ্চি জমিও ফেলে রাখবেন না। যে যা পারেন উৎপাদন করুন। নিজেরটা নিজে উৎপাদন করুন। চিকিৎসকদের প্রতিও আহ্বান জানাই, আপনাদেরও জমি জায়গা হয়তো কিছু আছে। সেগুলোতে যাতে ফসল হয় তরি-তরকারি হয় তার ব্যবস্থা নেন। আমরা নিজেদের চাহিদা মিটিয়ে অনেক দেশকে সাহায্য করতে পারি। আমরা একসাথে ১০০টি অর্থনৈতিক অঞ্চল করেছি। সেখানে খাদ্যপ্রক্রিয়াজাত শিল্প করার ব্যাপারে গুরুত্ব দিচ্ছি। জাতির পিতা বলে গেছেন, বাংলাদেশের মানুষকে কেউ দাবায়া রাখতে পারবে না।

পাঠকের মতামত:

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

SMS Alert

জাতীয় এর সর্বশেষ খবর

জাতীয় - এর সব খবর