thereport24.com
ঢাকা, মঙ্গলবার, ২১ মে 24, ৬ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১,  ১৩ জিলকদ  1445

গ্যাস এক্সচেঞ্জের মাধ্যমে বাংলাদেশে গ্যাস রপ্তানির প্রস্তাব ভারতের

২০২৩ আগস্ট ১২ ১৫:৩৪:২৯
গ্যাস এক্সচেঞ্জের মাধ্যমে বাংলাদেশে গ্যাস রপ্তানির প্রস্তাব ভারতের

আমীর হামজা,দ্য রিপোর্ট: ভারতীয় জ্বালানী কোম্পানি ইন্ডিয়ান গ্যাস এক্সচেঞ্জ লিমিটেড (আইজিএক্স) সম্প্রতি বাংলাদেশের পেট্রোবাংলাকে গ্যাস রপ্তানী করার প্রস্তাব দিয়েছে।

ডলার সংকটের কারণে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক জ্বালানী কোম্পানি শেভরনের বিল সময়মত পরিশোধ করতে পারছে না তেল, গ্যাস ও খনিজ সম্পদ করপোরেশন (পেট্রোবাংলা)। দ্রুততম সময়ের মধ্যে এই বকেয়া বিল পরিশোধ করতে না পারলে গ্যাস উৎপfদন ও সরবরাহ আর করবে না শেভরন।

এর মধ্যে গ্যাসের ঘাটতি কমাতে বিকল্প হিসেবে পেট্রোবাংলাকে গ্যাস সরবরাহ করার প্রস্তাব দিয়েছে ভারতীয় জ্বালানী কোম্পানি ইন্ডিয়ান গ্যাস এক্সচেঞ্জ লিমিটেড (আইজিএক্স)। সম্প্রতি পেট্রো বাংলার চেয়ারম্যানের কাছে এ সংক্রান্ত একটি প্রস্তাব পাঠিয়েছে আইজিএক্স-এর সিইও ও এমডি রাজেশ কে মেডিরাত্তা।

আইজিএক্স হচ্ছে ভারতের প্রথম স্বয়ংক্রিয় জাতীয় স্তরের গ্যাস এক্সচেঞ্জ যা সে দেশে দক্ষ এবং শক্তিশালী গ্যাস বাজারকে উন্নীত করতে এবং টিকিয়ে রাখতে পারে। সে দেশের গ্যাস ব্যবসাকে উৎসাহিত করতে ভূমিকা রাখে।

বাংলাদেশের পেট্রোবাংলাকে ভারতের বিভিন্ন গ্যাস কোম্পানিগুলোর শেয়ার ক্রয়-বিক্রয়ের মাধ্যমে অংশগ্রহণ করে গ্যাস সংগ্রহ করার প্রস্তাব করেছে আইজিএক্স । এতে বাংলাদেশের গ্যাসের চলমান গভীর সংকট লাঘব করা যায় বলে চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে।

পেট্রো বাংলার হিসাব মতে, দেশে প্রতিদিন এখন গ্যাসের চাহিদা ৩৭০ কোটি ঘনফুট। এর মধ্যে দেশে উৎপাদিত হচ্ছে ২৩০ কোটি ঘনফুটের মতো। ঘাটতি ১৪০ কোটি ঘনফুট গ্যাস মোকাবিলায় দিনে এখন ১০০ কোটি ঘনফুট তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) আমদানি করতে হচ্ছে, যা মোট সরবরাহের ৩০ শতাংশের বেশি। এলএনজি আমদানির পরও ঘাটতি প্রায় ৪০ কোটি ঘনফুট। জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, বাংলাদেশের গ্যাসের সংকট লাঘব করতে গত ১০ জুলাই পাঠানো এক চিঠির মাধ্যমে আইজিএক্সর সিইও পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যানের কাছে এ প্রস্তাব করেছে।

চিঠিতে বলা হয়েছে, আইজিএক্সের মাধ্যমে পেট্রোবাংলা ভারতের গ্যাস কোম্পানিগুলোর শেয়ার লেনদেনের মাধ্যমে সীমান্তের ওপার থেকে গ্যাস সংগ্রহ করে সম্ভাব্য প্রতিযোগিতামূলক মূল্যে বাংলাদেশে স্থিতিশীল গ্যাস সরবরাহ নিশ্চিত করতে পারবে। ফলে গ্যাসের বিভিন্ন উৎসের মিশ্রণ কার্যকর হতে পারবে এবং বাংলাদেশের জাতীয় বাজেটের উপর বোঝা কমাতে সক্ষম হবে।

চিঠিতে আরো বলা হয়েছে, আমাদের প্রতিষ্ঠিত কোম্পানি ইন্ডিয়ান এনার্জি এক্সচেঞ্জ এর ক্রস বর্ডার ইলেক্ট্রিসিটি বাণিজ্যের ক্ষেত্রেও একই ভূমিকা রেখেছে। আইজিএক্স তার আগের অ্যাসাইনমেন্টে (কার্যাবলী) ক্রসবর্ডার বিদ্যুৎ বাণিজ্যের জন্য চুক্তির ডিজাইন তৈরি করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। সে মডেলে ভারত বর্তমানে বাংলাদেশে ৩০০ মেগাওয়াট বিদ্যুত রপ্তানী করছে। সেই অভিজ্ঞতা এবং প্রাকৃতিক গ্যাসের বাজারের অবস্থার ভিত্তিতে এখন বাংলাদেশের জন্য আইজিএক্স এর মাধ্যমে প্রাকৃতিক গ্যাস/তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস সংগ্রহের জন্য বাংলাদেশের জন্য একটা বাজারের মডেল তৈরি করা হয়েছে।

আইজিএক্স এর সিইও আরো বলেন, গ্যাস আন্তঃসীমান্ত ব্যবসার সম্ভাব্যতা নিয়ে আলোচনা শুরু করার জন্য আমি পেট্রোবাংলাকে অনুরোধ করছি। আমি বিশ্বাস করি যে এই বিষয়ে একটি কৌশলগত অংশীদারিত্ব কেবল আমাদের জ্বালানি খাতকে উন্নত করবে না বরং আমাদের দুই দেশের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ককেও শক্তিশালী করবে।

আইজিএক্স বর্তমানে তাদের মধ্যে গ্যাস সরবরাহ করা বিভিন্ন পয়েন্টসহ ভারত জুড়ে ছয়টি আঞ্চলিক গ্যাস হাব পরিচালনা করেছে। বাংলাদেশের জন্য বিশেষ আগ্রহের বিষয় হতে পারে ‘ ইস্টার্ন ’ এবং 'নর্দার্ন ইস্টার্ন' গ্যাস হাব। ইস্টার্ন হাবে ধামরা এলএনজি টার্মিনাল চালু হওয়ার পর্যায়ে রয়েছে। এটি চালু হওয়ার সাথে সাথে তা বাংলাদেশে সরবরাহের কাজে ব্যবহার করার পরিকল্পনা রয়েছে আইজেএক্সের।

ওই চিঠিতে আরো উল্লেখ্য করা হয়েছে বাংলাদেশ সরবরাহ পয়েন্টের মাধ্যমে বর্তমানে এসএস/এলএনজি রুটের মাধ্যমে গ্যাস লেনদেন করতে পারে এবং একবার ক্রস বর্ডার পাইপলাইন তৈরি হয়ে গেলে পাইপলাইন রুটের মাধ্যমে দুই দেশের মধ্যে গ্যাস নিয়ে আন্তঃদেশীয় গ্যাস বাণিজ্য করা যেতে পারে। এছাড়াও, ভারতের উত্তর-পূর্ব অংশটি 'ইন্দ্রধনু গ্যাস গ্রিড'-এর বিকাশের সাথে সর্বভারতীয় গ্যাসগ্রিডের সাথে সংযুক্ত হওয়ার অগ্রসর পর্যায়ে রয়েছে, এই অঞ্চলটি সর্বভারতীয় গ্রিডের অংশ হয়ে গেলে বাংলাদেশ উত্তর পূর্ব গ্যাস হাবের মাধ্যমেও বাণিজ্য করতে পারে। আন্তঃসীমান্ত পাইপলাইন তৈরি করে ফেলা একটি বাস্তবতা হিসেবে চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে।

এদিকে বাংলাদেশের গ্যাস চাহিদার দিকে তাকালে দেখা যায়,দেশের খনিজ গ্যাসের ৬০ শতাংশই সরবরাহ করে শেভরন (বিবিয়ানা ও জালালাবাদ গ্যাস ফিল্ডের মাধ্যমে)। প্রতি মাসে তাদের বিলের পরিমাণ দাঁড়ায় পাঁচ কোটি ডলার।

পেট্রোবাংলা ও শেভরন সূত্রে জানাগেছে, চুক্তি অনুসারে গ্যাসের বিল জমা দেওয়ার ৩০ দিনের মধ্যে তা পরিশোধ করতে হয়। বিল দিতে দেরি হলে নির্ধারিত হারে জরিমানা হিসেবে দিতে হয়। চুক্তি অনুযায়ী, পাঁচ মাস বিল বকেয়া থাকলে গ্যাস উৎপাদন বন্ধ করতে পারে শেভরন। শেভরন চেয়েছিল পরিচালন ব্যয় মেটাতে পেট্রোবাংলা যাতে মাসে অন্তত আড়াই কোটি ডলার করে বিল দেয়। কিন্তু ডলার না পাওয়ায় পেট্রোবাংলা পুরো অর্থ দিতে পারছে না। এক কোটি বা দেড় কোটি ডলার করে মাসে পরিশোধ করা হচ্ছে। এতে প্রতি মাসেই বকেয়ার পরিমাণ বাড়ছে। তাতে শেভরনের পক্ষ থেকে যে কোনো সময় গ্যাস উত্তোলন ও সরবরাহ বন্ধ করা হতে পারে।

(দ্য রিপোর্ট/ টি আইএম /১২ অগাস্ট/২০২৩)

পাঠকের মতামত:

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

SMS Alert

বিশেষ সংবাদ এর সর্বশেষ খবর

বিশেষ সংবাদ - এর সব খবর