thereport24.com
ঢাকা, রবিবার, ২৯ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৪ পৌষ ১৪৩১,  ২৭ জমাদিউস সানি 1446

ঢাকা ঘোরা হলো, বাড়ি ফেরা হল না

২০১৩ নভেম্বর ১২ ২২:২৩:১০
ঢাকা ঘোরা হলো, বাড়ি ফেরা হল না

নিজাম উদ্দিন দিপু, দিরিপোর্ট২৪ : ‘বাবা আমি কখনো ঢাকায় ঘুরতে যাইনি, আমারে একটু ঢাকা ঘুরাইয়া আনবা?’ ছেলের কথা মতো বাবা ঠিকই ঢাকা শহর ঘুরিয়ে নিয়ে আসলেন তাকে কিন্তু জীবিত নয়, নিয়ে এলেন তার অগ্নিদগ্ধ লাশ। ৪ নভেম্বর পিকেটারদের দেওয়া আগুনে ঝলসে যাওয়া মনিরের এ করুণ পরিণতির দায় নেবে কে?

মনির (১৩) কালিয়কৈরের বড় কাঞ্চনপুর গ্রামের মো. রমজান আলীর বড় ছেলে। সে বড় কাঞ্চনপুর প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণীর ছাত্র।

মনির কখনো ঢাকার শহরে যায়নি তাই বাবার কাছে আবদার করেছিল তাকে যেন ঢাকায় ঘুরিয়ে নিয়ে আসে। তারই কথা মতো মনিরের বাবা তাকে ৩ নভেম্বর সকাল ১০টার দিকে ঢাকায় নিয়ে আসেন।

মনিরের বাবা ছিলেন কাভার্ডভ্যানের ড্রাইভার। তিনি বিভিন্ন জেলা থেকে মালপত্র কাভার্ডভ্যানে বহন করতেন। ৩ নভেম্বর টাঙ্গাইল থেকে গাজীপুরে মালপত্র নিয়ে আসেন। পথে তার ছেলের বায়না অনুযায়ী বড় কাঞ্চনপুর গ্রামের বাড়ির সামনে থেকে মনিরকে গাড়িতে উঠিয়ে ঢাকার উদ্দেশ্যে রওয়ানা হন। রবিবার রাত ৩টায় তিনি ঢাকা থেকে মালপত্র খালাস করে গাজীপুরের উদ্দেশ্যে রওয়ানা দেন এবং ভোর ৫টার দিকে গাজীপুর ট্রাকস্ট্যান্ডে গিয়ে উপস্থিত হন।

সকাল ১০টার দিকে রমজান আলী ঘুমন্ত ছেলেকে কাভার্ডভ্যানের ভেতরে রেখে সামনে এগিয়ে যান হরতাল পরিস্থিত বোঝার জন্য। এ সময় লোকজনের চিৎকার শুনে পেছনে ফিরে দেখতে পান তারই রেখে যাওয়া কাভার্ডভ্যানে দাউ দাউ করে আগুন জ্বলছে। তিনি দৌড়ে এসে দেখেন ভ্যানের ভেতরে ঘুমিয়ে থাকা ছেলে মনিরের সারা শরীর ঝলসে গেছে।

মঙ্গলবার সরেজমিনে কালিয়াকৈরে মনিরের বাবা রমজান আলীর সঙ্গে কথা হয়। তিনি কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, ‘আমি জীবনে অনেক বড় একটা ভুল করেছি, আমার ছেলেকে ঢাকায় ঘুরতে নিয়ে যাওয়া ঠিক হয়নি। আমি যদি ঢাকায় না নিয়ে যেতাম তাহলে আমার বাবাকে হারাতাম না।’

তিনি বলেন, ‘আমি জানি না, জীবনে কী পাপ করেছি যে আমার জীবনে এমন কষ্টের সম্মুখীন হতে হলো। স্বপ্ন ছিল ছেলে পড়াশোনা করে বড় হয়ে আমাদের দুঃখ কষ্ট দূর করবে। কিন্তু আমাদের সেই স্বপ্ন আর পূরণ হলো না।’

রমজান আলী তার ছেলের অকাল মৃত্যুর জন্য দায়ী করলেন দেশের বড় দুই রাজনৈতিক দলকে। তার মতে, দুই দল যদি নিজেদের মধ্যে হানাহানি না করতো তবে তার ছেলেকে এভাবে পুড়ে মরতে হতো না।

মনিরের মা মিনুরা বেগমের সঙ্গে কথা বলতে গেলে দেখা যায় ছেলে হারানোর শোকে তিনি কয়েকদিন ধরে বিছানা থেকেই উঠতে পারছেন না। রমযান আলীর কাছ থেকে জানা যায়, ৩-৪ দিন ধরে তাকে স্যালাইন দিয়ে রাখা হয়েছে। ঘটনার পর থেকে তিনি নাওয়া-খাওয়া ভুলে শুধু কান্নাকাটি করছেন। এখন তার অবস্থা এতোটাই করুণ যে ঠিকভাবে কারো সঙ্গে কথাও বলতে পারছেন না।

মিনুরা বেগম আবেগজড়িত ক্লান্ত গলায় বলেন, ‘আমার ছেলে বলেছিল, মা আমি বাবার সঙ্গে ঢাকায় ঘুরতে যাইতাছি, সোমবারে চইলা আসমু। কিন্তু আমার বাবা এখনো ফিরে আসলো না।’ এই বলেই তিনি কান্নায় ভেঙে পড়েন এবং অজ্ঞান হয়ে যান।

মনিরের ঘরে ঢুকে দেখা গেলো বিছানা আর কাপড়-চোপড় আগের মতোই অগোছালো।

জানা যায়, মনিরের মৃত্যুর পর থেকে এই ঘরে আর কেউ ঢুকছে না। তার কাপড়-চোপড় ও বিছানা যেমনটা ছিল, ঠিক তেমনই পড়ে আছে।

মনিরের বাবা জানান, এই ঘরে আসলেই তাদের মনিরের কথা মনে পড়ে। তাই এই ঘরে আর কেউ আসে না।

মনিরের কবরের কাছে গিয়ে দেখা যায়, মনিরের ছোট ভাই লিখন কবরের দিকে অপলক তাকিয়ে আছে। ৩ বছরের এই শিশুটিও ভাইয়ের মৃত্যুশোকে কাতর।

(দিরিপোর্ট২৪/ডি/এনডিএস/এইচএসএম/নভেম্বর ১২, ২০১৩)

পাঠকের মতামত:

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

SMS Alert

জেলার খবর এর সর্বশেষ খবর

জেলার খবর - এর সব খবর