thereport24.com
ঢাকা, শনিবার, ১৮ মে 24, ৪ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১,  ১০ জিলকদ  1445

নাজিরপুরে ভূমি অফিসের সহকারীদের ষড়যন্ত্রের বলি এসিল্যান্ড।

২০২৩ অক্টোবর ০৭ ২২:২১:৪৬
নাজিরপুরে ভূমি অফিসের সহকারীদের ষড়যন্ত্রের বলি এসিল্যান্ড।

দ্যা রিপোর্ট প্রতিবেদক;পিরোজপুরঃ

পিরোজপুরের নাজিরপুরে ভূমি অফিসের ৪ তহশিলদারদের পরে আবারো দুই সহকারিকে প্রশাসনিক কারনে বদলীর আদেশ দেওয়া হয়েছে। অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার (রাজস্ব) মোঃ আহসান হাবিব স্বাক্ষরিত এক অফিস আদেশে জানা যায়, ২৪ সেপ্টেম্বর উপজেলার ৪ তহশিলদার পরিমল কুমার দে ,মোঃ সুজন, শ.ম শাহ্জাহান কবির, মোঃ হাছান হাওলাদার ও ২৭ সেপ্টেম্বর অফিস সহকারী মফিজুল ইসলাম ও মারুফ হাওলাদারকে প্রশাসনিক কারনে জেলার বাহিরে বিভিন্ন উপজেলায় শাস্তি মূলক বদলি করা হয়েছে।

জানা যায়, নাজিরপুরে উপজেলা ভূমি অফিসের মিউটেশন কাম-সার্টিফিকেট সহকারী মফিজুল ইসলাম ও সার্টিফিকেট পেশকার মোঃ মারুফ হাওলাদারের বিরুদ্ধে নামজারি ও লিজ নবায়নে অতিরিক্ত টাকা আদায়, “ক” তফসিলের সম্পত্তি ব্যক্তিনামে নামজারী করে দেওয়া, গেজেটভুক্ত ভিপি নথি গায়েব করার অভিযোগ উঠেছে। এমনকি অতিরিক্ত টাকার দাবিতে মিস কেস গুলো বছরের পর বছর ফাইলবন্দী করে রাখায় ভুক্তভোগীরা পড়েছেন চরম বিপাকে। এছাড়া এদের বিরুদ্ধে দীর্ঘ দিন ধরে বিভাগীয় মামলা চলমান থাকলেও তা নিয়ে দীর্ঘসূত্রিতা করা হচ্ছে।

বর্তমানে উপজেলার কয়েকজন ভুক্তভোগী ভূমি মন্ত্রণালয়, জেলা প্রশাসক এবং দূর্নীতি দমন কমিশনের বিভাগীয় কার্যালয় সহ বিভিন্ন উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের কাছে লিখিত অভিযোগ করেছেন। ভুক্তভোগীদের মধ্যে উপজেলার শ্রীরামকাঠী ইউনিয়নের অবঃ এলজিইডি প্রকৌশলী নিরঞ্জন বিশ্বাস গত ২০২০ সালের ১২ ফেব্রæয়ারী দুদকে একটি অভিযোগ করেন, অভিযোগপত্রে দেখা যায়, জে এল নং-২৪, চরবানিয়ারী মৌজায় গেজেট পৃষ্ঠা নং ২২৫০৫ এর ক্রমিক নং-৩ এর ভিপি কেস নং-১৩৭৩/৭৮ রেকর্ডভুক্ত রয়েছে অথচ গেজেট প্রকাশে দেখা যায় নাজিরপুর উপজেলায় ৪৬৯ টি ভিপি কেস গেজেটভুক্ত আছে।

গেজেটভুক্ত হওয়ার পূর্বেই অফিস থেকে ৯০৪ টি ভিপি নথি গায়েব হয়েছে এবং গেজেটভুক্ত হওয়ার পরে ১৯ টি ভিপি নথি গায়েব হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন ওই দুই অফিস সহকারির বিরুদ্ধে। বিষয়টি সহকারি কমিশনার (ভূমি) অ:দা: ওবায়েদুর রহমান অবগত হলে নাজিরপুর থানায় সাধারণ ডাইরী করেন, এবং তৎকালীন জেলাপ্রশাসক সিআইডিতে তদন্তের ভার অর্পন করেছেন বলেও অভিযোগ পত্রে উল্লেখ করেন।

এছাড়া বিভাগীয় কমিশনারের কাছে ৮ নং শ্রীরামকাঠী ইউনিয়নে “ক” তফসিল তালিকাভুক্ত এস এ ১৪৩ নং খতিয়ানের ৯৪০ নং দাগের .০১ একর সম্পত্তির বিধি বহির্ভূতভাবে অন্য ব্যক্তির নামে ইজারা প্রদান করা হয়েছে। অভিযোগে আরো উল্লেখ করা হয় ২০২০ সালের ২ মার্চ সিনিয়র সহ-কমিশনার (রাজস্ব) জান্নাত আরা নাহিদ ০৫.১০০০০০.০০৪.০১.০০৫.১৭/২০৩৮ নং স্বারকে জেলা প্রশাসক বরাবরে অভিযোগের তদন্ত পূর্বক প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহনের নির্দেশ প্রদান করেন। তদন্তে অভিযোগের সত্যতা নিশ্চিত হলে বিধি বহির্ভূতভাবে বিভিন্ন ব্যক্তিদের নামে রেকর্ড হয়ে যাওয়া ভিপি সম্পত্তি সরকারের নামে রেকর্ড করনের জন্য আদেশ করেন এবং অভিযোগকারী নিরঞ্জন বিশ্বাসের জায়গা সরকারি আমিন দ্বারা সঠিকভাবে পরিমাপ করে বুঝিয়ে দেওয়ার নির্দেশনা প্রদান করেন।


ভুক্তভোগী ক্ষোভ প্রকাশ করে আরো জানান, উক্ত আদেশের পর আমি ওই দুই সহকারীর সাথে যোগাযোগ করলে তারা আমার কাছে ২ লক্ষ টাকা দাবী করেন, আমি টাকা না দেওয়ায় সহকারীরা কালক্ষেপন করতে থাকে। এক পর্যায়ে ওই অফিসে এলিস্যান্ড হিসাবে মোঃ মাসুদুর রহমান যোগদান করলে আমি তার স্মরনাপন্ন হই এবং তিনি ওই সহকারীদের আমার সামনে ডেকে এনে আমার জায়গা সঠিকভাবে ভাবে বুঝে পাই তার দ্রæত ব্যবস্থা গ্রহন করতে নির্দেশ দেয়ায়, আমার এবং এসিল্যান্ডের প্রতি সহকারীরা ক্ষিপ্ত হয় । এর কয়েক দিনের ব্যবধানেই চক্রান্তের শিকার হয়েছেন এসিল্যান্ড মাসুদুর রহমান। পরবর্তীতে মাসুদুর রহমান বরখাস্ত হলে গত ০৫ অক্টোবর জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের ই-তথ্য সেবা কেন্দ্রে পূণরায় সকল আদেশের এবং অভিযোগের ছায়ালিপি দাখিল করি।

তিনি আরো বলেন, নাজিরপুরে বিগত দিনে যে সকল এসিল্যান্ড দয়িত্বে ছিলেন, সাময়িক বরখাস্তকৃত এই কর্মকর্তা তাদের তুলনায় মাত্র দু-আড়াই মাসেই সাধারণ সেবাপ্রত্যাশী জনগনের অন্তরে স্থান করে নিয়েছিলেন। চেষ্টা করেছিলেন ভূমি অফিসকে দালাল এবং সিন্ডিকেট মুক্ত করতে।

অন্যদিকে মালিখালী ইউনিয়নের চাঁপাখালী গ্রামের বিকাশ চন্দ্র বাইনের ওই দুই কর্মচারীর বিরুদ্ধে ভূমি মন্ত্রনালয়ের লিখিত অভিযোগ সূত্রে দেখা যায়, তার নিজ নামীয় ‘বিকাশ চন্দ্র’ পরিবর্তে ‘বিবাস চন্দ্র’ নামের করনীক ভুল সংশোধনে করার জন্য প্রথমে ৯ হাজার টাকা ও পরবর্তীতে আরো ১৫ হাজার টাকা দিয়েও সমস্যার সমাধান পাননি।

উপজেলার মাটিভাঙ্গা ইউনিয়নের বানিয়ারী গ্রামের মৃত সোনামদ্দি শেখের ছেলে কামাল শেখে জেলা প্রশাসকের নিকট নাজির ও পেশকারের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযাগ করে। অভিযোগে নামজারীর মূল ডিসিআর এর কপি আনতে গেলে তার নিকট ৫০ হাজার টাকা দাবী করে ওই দুই সহকারী। ভুক্তভোগী তার মায়ের অসুস্থতার কথা বলে ১০ হাজার টাকা দিলেও বাকী টাকা না দেওয়ায় সহকারী মফিজ ভুল প্রতিবেদন দিয়ে আবেদনটি খারিজ করে দেন।

জেলার আলামকাঠী গ্রামের মোঃ জাহাঙ্গীর আলম মারুফের বিরুদ্ধে দূর্ণীতি দমন কমিশনে দেওয়া একটি লিখিত অভিযোগে দেখা যায় মারুফ ভূমি অফিসের একজন তৃতীয় শ্রেনীর কর্মচারী সে কিভাবে একই কর্মস্থলে ৭ বছর ছেকে কোটি টাকার উপরে আয় করেছে। অভিযোগে আরো উল্লেখ করেন পিরোজপুর পৌরসভা সদরে তার রয়েছে ১৮ শতক জায়গা, যার মূল্য প্রায় কোটি টাকা।

জানা যায়, গত ৮ জুন এসিল্যান্ড মাসুদুর রহমান নাজিরপুর উপজেলায় যোগদান করেন। তার কিছুদিন পরেই ওই দুই সহকারিদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অভিযোগের বিষয়ে সোচ্চার হন তিনি। পরর্বতীতে কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করার জন্য ওৎ পেতে ছিল তারা। যার ফলশ্রæতিতে একটি খন্ডিত অডিও ক্লিপের মাধ্যমে বিভ্রান্তিকর তথ্য প্রভাবশালী একটি মহলকে দিয়ে কারসাজি করে মিডিয়ায় ভাইরাল করে সাময়িক বরখাস্ত হতে হয়েছে তাকে, এর আগেও ২০১৮ সালে এই স্টাফদের কারসাজিতে ভুগতে হয়েছিলো শামীম কিবরিয়া নামের অপর এক এসিল্যান্ডকে।

এবিষয়ে পিরোজপুর জেলার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মোঃ আমিনুল ইসলাম বলেন ওই দুই সহকারির বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা চলমানের সত্যতা স্বীকার করেন এবং তাদের বিরুদ্ধে আনিত বর্তমান অভিযোগ গুলোর তদন্ত চলমান রয়েছে। তদন্ত শেষে তারা যদি দোষি প্রমানিত হয় তাহলে তাদের বিরুদ্ধে বিধিমোতাবেক আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।

একেএস/এএইচ/এসকে/দ্য রিপোর্ট টুয়েন্টি ফোর ডট কম।

পাঠকের মতামত:

SMS Alert

জেলার খবর এর সর্বশেষ খবর

জেলার খবর - এর সব খবর