thereport24.com
ঢাকা, রবিবার, ১৭ নভেম্বর ২০২৪, ৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১,  ১৫ জমাদিউল আউয়াল 1446

দেশে অবৈধভাবে পরিচালিত হাসপাতাল  ও   ক্লিনিক বন্ধ হচ্ছে

২০২৪ জানুয়ারি ১৮ ১১:২৫:৩২
দেশে অবৈধভাবে পরিচালিত হাসপাতাল  ও   ক্লিনিক বন্ধ হচ্ছে

দ্য রিপোর্ট প্রতিবেদক:ভুল চিকিৎসায় অসংখ্য মৃত্যুর ঘটনা সামনে রেখে সারা দেশে অবৈধভাবে পরিচালিত সব বেসরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার বন্ধ হচ্ছে। স্বাস্থ্যমন্ত্রীর নির্দেশে এ লক্ষ্যে কাজ কাজ শুরু করেছে স্বাস্থ্য বিভাগ। রাজধানীর ইউনাইটেড মেডিকেল কলেজ হাসপাতালসহ সম্প্রতি দেশের বিভিন্ন জেলা-উপজেলায় বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিকে ভুল চিকিৎসায় রোগী মৃত্যুর ঘটনায় উদ্বিগ্ন সবাই। আর এসব ঘটনাকে সামনে রেখেই সারা দেশে শুরু হয়েছে অভিযান। এতে যেসব প্রতিষ্ঠানের কাগজপত্র সঠিক পাওয়া যাচ্ছে না সেগুলোকেই সিলগালা করে দেওয়া হচ্ছে। পাশাপাশি অনেক প্রতিষ্ঠানকে করা হচ্ছে জরিমানা।

এদিকে, প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য অবৈধভাবে পরিচালিত হাসপাতাল ও ক্লিনিক বন্ধের নির্দেশসহ বৈধ-অবৈধ বেসরকারি সব স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানের তালিকা চেয়েছেন স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণমন্ত্রী ডা. সামন্ত লাল সেন। তিনি বলেছেন, ‘দেশের আনাচে-কানাচে গড়ে ওঠা সব ধরনের অবৈধ ক্লিনিক, ডায়াগনস্টিক সেন্টারসহ অবৈধ স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলো বন্ধ করে দিতে হবে। বুধবার সকালেই সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের নির্দেশনা দিয়েছি। কর্মকর্তাদের কাছে জানতে চেয়েছি দেশে প্রকৃতপক্ষে কতগুলো অবৈধ ক্লিনিক, ডায়াগনস্টিক সেন্টার ও স্বাস্থ্যকেন্দ্র আছে। সংখ্যায় যতগুলোই থাকুক, এসব অবৈধ স্বাস্থ্যকেন্দ্র বন্ধ করে দেওয়া হবে। অবৈধ ক্লিনিক-ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলোর মালিকরা নিজেরাই বন্ধ করে দিলে ভালো। না হলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা।’ বুধবার বনানী কবরস্থানে স্বাস্থ্যমন্ত্রী তার বাল্যবন্ধু শেখ কামালসহ পঁচাত্তরের ১৫ আগস্ট নিহতদের কবর জিয়ারত ও পুষ্পস্তবক অর্পণ শেষে এসব কথা বলেন।

বেসরকারি হাসপাতাল-ক্লিনিকগুলোতে একের পর এক ভুল চিকিৎসায় রোগীর মৃত্যু ঘটনায় সাইকে ভাবিয়ে তুলেছে। এসব ঘটনায় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর তদন্ত করে দেখতে পায়, অভিযুক্ত হাসপাতালগুলো নিয়ম মেনে পরিচালিত হচ্ছিল না। এমন বাস্তবতায় সারা দেশে কতগুলো অবৈধ হাসপাতাল-ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার রয়েছে অধিদপ্তরের কাছে সেই তালিকা চান উচ্চ আদালত। এক সপ্তাহের মধ্যে সব বৈধ-অবৈধ হাসপাতালের তালিকা পাঠাতে তৎপরতা শুরু করেছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।

অপরদিকে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে স্থাপিত অবৈধ হাসপাতাল-ক্লিনিকের বিরুদ্ধে অভিযান শুরু করেছেন ভ্রাম্যমাণ আদালত (মোবাইল কোর্ট)। বুধবার খুলনার দুটি ক্লিনিককে জরিমানা করে র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব)। এ সময় চিকিৎসা ব্যবস্থাপনায় অনিয়ম, অনুমোদনবিহীন ল্যাব পরিচালনা, অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে অপারেশনের তথ্য মিলেছে।

খুলনা সিভিল সার্জন কার্যালয়ের চিকিৎসক ডা. সাদিয়া মনোয়ারা উষা জানান, নগরীর মোহাম্মাদনগর ও গল্লামারি এলাকায় ছফুরা ক্লিনিক ও মোহাম্মাদনগর হসপিটাল অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করা হয়। এ সময় ছফুরা ক্লিনিকের মালিক মো. জিয়াউর রহমানকে চিকিৎসা ব্যবস্থাপনায় অনিয়ম করায় এক লাখ টাকা অর্থদণ্ড এবং মোহাম্মাদনগর হসপিটাল অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারের মালিক মিসেস নুরুননাহারকে চিকিৎসা ব্যবস্থাপনায় অনিয়ম করায় ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জরিমানার অর্থ তাৎক্ষণিক প্রদান করায় সরকারি কোষাগারে জমা করা হয়েছে।

সোমবার চাঁদপুরের শাহরাস্তিতে মা ও শিশু স্বাস্থ্যকেন্দ্র হাসপাতালে চিকিৎসা করতে এসে ভুল চিকিৎসায় একজন প্রসূতি মায়ের মৃত্যু হয়। এ ঘটনায় চাঁদপুরের শাহরাস্তিতে মা ও শিশু স্বাস্থ্যকেন্দ্র সিলগালা করেছেন ভ্রাম্যমাণ আদালত। বুধবার সকালে উপজেলার মেহের কালীবাড়িতে অবস্থিত মা ও শিশু স্বাস্থ্যকেন্দ্রের মেয়াদোত্তীর্ণ লাইসেন্স, অপর্যাপ্ত জনবল, অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ ও নানা অনিয়মের দায়ে হাসপাতালটি সিলগালা ও এক লাখ টাকা জরিমানা করা হয়। ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করেন উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট রেজওয়ানা চৌধুরী। এ সময় ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনায় সহযোগিতা করেন শাহরাস্তি স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. নাছির উদ্দিন।

এছাড়া ফেনীর দাগনভূঞা পৌর শহরের বসুরহাটে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত পল্লি চিকিৎসক পরিচয় দেওয়া আবদুল মান্নান নামে এক ভুয়া চিকিৎসকে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে ১০ হাজার টাকা জরিমানা ও আরব ফার্মেসি সিলগালা করা হয়। এলাকাবাসীর অভিযোগের ভিত্তিতে মঙ্গলবার বিকালে উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মেহরাজ শারবীন ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করেন। এসময় উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা তৌহিদুল ইসলাম উপস্থিত ছিলেন।

উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. তৌহিদুল ইসলাম বলেন, চিকিৎসক পরিচয়দাতা মেডিকেল সনদের মূল কপি দেখাতে পারেননি। ভুয়া চিকিৎসকের বিষয়টি তিনি নিজেও স্বীকার করেন। উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মেহরাজ শারমীন বলেন, জনস্বার্থে এমন অভিযান অব্যাহত থাকবে।

প্রসঙ্গত, ১৯৮২ সালের মেডিকেল অ্যান্ড প্রাইভেট ক্লিনিকস অ্যান্ড ল্যাবরেটরিস অর্ডিন্যান্স অনুযায়ী, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অনুমোদন ছাড়া কোনো হাসপাতাল, ক্লিনিক বা ডায়াগনস্টিক সেন্টার চালানোর সুযোগ নেই। কিন্তু ১ জানুয়ারিতে খতনা করাতে গিয়ে আয়ান আহমেদ নামে এক শিশুর মৃত্যুর পর জানা যায়, ঢাকার সাতারকুলে ইউনাইটেড মেডিকেল হাসপাতাল অনুমোদন ছড়াই কার্যক্রম চালিয়ে আসছিল।

স্বাস্থ্যমন্ত্রী ডা. সামন্ত লাল সেন বলেন, ‘আমরা এবার স্বাস্থ্যসেবাকে গ্রাম পর্যায়ে পৌঁছে দিতে কাজ করব। ঢাকা মেডিকেলে যে মানের ডাক্তার চিকিৎসা দিচ্ছেন, সে মানের ডাক্তার জেলা-উপজেলা হাসপাতালে পাঠানো গেলে তো কাজটি সহজ হয়ে যায়। আর ডাক্তারদের সুযোগ-সুবিধা ভালো করলে তারাও নিশ্চয়ই জেলা-উপজেলা পর্যায়ে কাজ করতে আগ্রহী হবেন। সব মিলিয়ে আমাদের লক্ষ্য হচ্ছে দেশের মানুষের স্বাস্থ্যসেবার মানোন্নয়নে কাজ করা এবং সেটা আমরা করব।’

পাঠকের মতামত:

SMS Alert

স্বাস্থ্য এর সর্বশেষ খবর

স্বাস্থ্য - এর সব খবর