thereport24.com
ঢাকা, বুধবার, ১১ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১,  ৯ জমাদিউস সানি 1446

আরও সমৃদ্ধ, শান্তিপূর্ণ দক্ষিণ এশিয়া গড়তে একসঙ্গে কাজ করতে হবে: পররাষ্ট্র উপদেষ্টা

২০২৪ ডিসেম্বর ০৯ ০৯:৫২:৫৯
আরও সমৃদ্ধ, শান্তিপূর্ণ দক্ষিণ এশিয়া গড়তে একসঙ্গে কাজ করতে হবে: পররাষ্ট্র উপদেষ্টা

দ্য রিপোর্ট প্রতিবেদক:আরও সমৃদ্ধ, শান্তিপূর্ণ ও অখণ্ড দক্ষিণ এশিয়া গড়ে তুলতে একসঙ্গে কাজ করার জন্য দক্ষিণ এশীয় আঞ্চলিক সহযোগিতা সংস্থার (সার্ক) সদস্য দেশগুলোর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন পররাষ্ট্র বিষয়ক উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন।

রোববার (৮ ডিসেম্বর) জাতীয় প্রেসক্লাবে ‘দ্য সার্ক: পিপল অব সাউথ এশিয়া ক্রেভ ফর’ শীর্ষক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ আহ্বান জানান। ৪০তম সার্ক সনদ দিবস উপলক্ষ্যে সার্ক জার্নালিস্ট ফোরামের বাংলাদেশ চ্যাপ্টার এ সেমিনারের আয়োজন করে।

উপদেষ্টা বলেন, “সকল বিভ্রান্তি কাটিয়ে একটি ঐক্যবদ্ধ ও সহযোগিতামূলক দক্ষিণ এশিয়া গড়ার স্বপ্ন নিয়ে সার্ক গঠিত হয়েছিল। এখন সংগঠনটি সক্রিয় না থাকায় প্রায় সব ধরনের সম্মিলিত প্রচেষ্টা স্থগিত হয়ে গেছে। এতে শুধু বাংলাদেশের ক্ষতি হয়নি, ভারতের পাশাপাশি শ্রীলঙ্কার মতো অন্য সদস্য দেশগুলোরও ক্ষতি হয়েছে।”

পররাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, চলতি বছরের ৫ আগস্ট বাংলাদেশের পট পরিবর্তনের পর ভারতের সঙ্গে সম্পর্কে কিছু গুণগত পরিবর্তন হয়েছে।

তিনি বলেন, “প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস সার্ককে পুনরুজ্জীবিত করতে আগ্রহী। তিনি সম্প্রতি নিউ ইয়র্কে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরীফের সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করেন যেখানে পাকিস্তানি নেতা ইতিবাচক প্রতিক্রিয়া জানান।”

তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন যে, অন্যান্য সদস্য দেশগুলোও ইতিবাচক সাড়া দেবে এবং শীঘ্রই সার্ক শীর্ষ সম্মেলন পুনরায় শুরু করার জন্য একটি উচ্চ পর্যায়ের বৈঠক আয়োজন করবে।
উপদেষ্টা বলেন, “সার্কের চার দশক উদযাপনের কালে আসুন আমরা আমাদের সামনের চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবিলা করার এবং আরও সমৃদ্ধ, শান্তিপূর্ণ ও অখণ্ড দক্ষিণ এশিয়া প্রতিষ্ঠার জন্য একসঙ্গে কাজ করার ব্যাপারে আমাদের সম্মিলিত অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করি।”
তিনি বলেন, সার্ক শীর্ষ সম্মেলন যদি সদস্য দেশগুলোর মধ্যকার সব বিরোধ নিষ্পত্তি নাও করতে পারে, তবে এটি অবশ্যই রাষ্ট্রনেতাদের মধ্যে বন্ধুত্বপূর্ণ পরিবেশ তৈরি করবে এবং আলোচনার মাধ্যমে বিরোধ মিমংসার পথ প্রশস্ত করবে।

সার্ক পুনরুজ্জীবিত করার পাশাপাশি দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক এগিয়ে রাখতে হবে বলেও মনে করেন উপদেষ্টা।
সেমিনারে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার্স অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (এফবিসিসিআই) সাবেক সভাপতি আবদুল আউয়াল মিন্টু, স্ট্র্যাটেজিক এক্সপার্ট ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অবসরপ্রাপ্ত) মোহাম্মদ হাসান নাসির, সার্ক সাংবাদিক ফোরামের মহাসচিব মো. আবদুর রহমান, জাতীয় প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক আইয়ুব ভুঁইয়া এবং ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি মো. শহিদুল ইসলাম।
অনুষ্ঠানে মূল বক্তব্য উপস্থাপন করেন নিউ নেশনের সাবেক সম্পাদক মোস্তফা কামাল মজুমদার। এতে সভাপতিত্ব করেন সার্ক জার্নালিস্ট ফোরামের বাংলাদেশ চ্যাপ্টারের সভাপতি নাসির আল মামুন এবং সঞ্চালনা করেন সেমিনার আয়োজক কমিটির সভাপতি রফিকুল ইসলাম আজাদ।
সার্ক জার্নালিস্ট ফোরামের বাংলাদেশ চ্যাপ্টারের জেনারেল সেক্রেটারি শিয়াবুর রহমান অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন এবং এতে আর উপস্থিত ছিলেন ঢাকায় সার্কভুক্ত দেশগুলোর মিশনের প্রতিনিধি, জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক ও সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা।
আবদুল আউয়াল মিন্টু বলেন, সহযোগিতামূলক প্রচেষ্টার মাধ্যমে সার্ক দেশগুলো এই অঞ্চলের অপার সম্ভাবনাকে উন্মোচিত করতে পারে এবং এটিকে প্রবৃদ্ধি, উদ্ভাবন এবং অভিন্ন সমৃদ্ধির কেন্দ্রে পরিণত করতে পারে।
তিনি বলেন, “সংলাপকে অগ্রাধিকার দিয়ে, পারস্পরিক আস্থা বৃদ্ধি করে এবং অন্তর্ভুক্তিত্বকে গ্রহণ করে, আমরা এমন একটি দক্ষিণ এশিয়ার দিকে আগাতে পারি যেটি সহযোগিতার মাধ্যমে সমৃদ্ধি অর্জন করবে।”
মিন্টু বলেন, “আসিয়ান তার সদস্য দেশগুলোর উন্নয়নে ব্যাপক অবদান রাখে। আমাদের এটি অনুসরণ করতে হবে এবং ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টার মাধ্যমে সম্পদ তৈরি করতে হবে।”
ব্রিগেডিয়ার জেনারেল হাসান নাসির বলেন, আঞ্চলিক সংলাপ ও সহযোগিতা বৃদ্ধির মাধ্যমে সার্ক অর্থনৈতিক উন্নয়ন থেকে শুরু করে সাংস্কৃতিক বিনিময় পর্যন্ত অভিন্ন লক্ষ্যে অগ্রসর হওয়ার ক্ষেত্রে সহায়ক ভূমিকা পালন করছে।
সার্কের রূপকল্পের প্রতি নিজেদের প্রতিশ্রুতিতে অটল থাকার জন্য সংস্থার সদস্য দেশগুলোর প্রতি আহ্বান জানান তিনি।
তিনি আরও বলেন, "ভারত-পাকিস্তান বৈরিতা সার্কের ক্ষতি করেছে কিন্তু আমাদের সকল বিরোধ কাটিয়ে উঠতে হবে এবং শক্তিশালী ও সমৃদ্ধ দক্ষিণ এশিয়া গড়ে তুলতে হবে।"
মো. আব্দুর রহমান তার বক্তব্যে সার্ক জার্নালিস্ট ফোরামের কার্যক্রম তুলে ধরেন। তিনি বলেন, সংস্থাটি শুধুমাত্র এই অঞ্চলের সাংবাদিকদের মধ্যে সহযোগিতা জোরদার করার জন্যই নয়, আটটি সদস্য রাষ্ট্রের মধ্যে সাংস্কৃতিক বিনিময় জোরদার, বন্ধুত্বকে আরও সংহত এবং উন্নয়নকে বেগবান করার জন্যও কাজ করছে।
নাসির আল মামুন সার্ক প্রতিষ্ঠায় বাংলাদেশের প্রয়াত রাষ্ট্রপতি শহীদ জিয়াউর রহমানের ভূমিকার কথা স্মরণ করে বলেন, দক্ষিণ এশিয়ায় আঞ্চলিক সহযোগিতা বৃদ্ধির ক্ষেত্রে তাঁর চিন্তাধারা সার্কের জন্মের পথ প্রশস্ত করেছে।
তিনি বলেন, “আজ, যখন আমরা জলবায়ু পরিবর্তন এবং ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনার মতো আরও জটিল সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছি, তখন শহীদ জিয়ার চিন্তাধারা সার্কের আদর্শের প্রতি আমাদের প্রতিশ্রুতিকে জাগিয়ে তুলবে।”

পাঠকের মতামত:

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

SMS Alert

জাতীয় এর সর্বশেষ খবর

জাতীয় - এর সব খবর