thereport24.com
ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২৩ জানুয়ারি 25, ১০ মাঘ ১৪৩১,  ২৩ রজব 1446

১১৬ অনুচ্ছেদের কারণে বিচারকরা সরকারের কাছে জিম্মি: শিশির মনির

২০২৫ জানুয়ারি ২৩ ১৬:৫৮:৫২
১১৬ অনুচ্ছেদের কারণে বিচারকরা সরকারের কাছে জিম্মি: শিশির মনির

দ্য রিপোর্ট প্রতিবেদক:সংবিধানের ১১৬ অনুচ্ছেদের কারণে অধস্তন আদালতের বিচারকরা সরকারের কাছে জিম্মি হয়ে পড়েছেন এবং স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারেন না বলে মন্তব্য করেছেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনির।

বৃহস্পতিবার সংবিধানের ১১৬ অনুচ্ছেদে বর্ণিত অধস্তন আদালতের দায়িত্বপালনরত ম্যাজিস্ট্রেটদের নিয়ন্ত্রণ (কর্মস্থল নির্ধারণ, পদোন্নতি দান ও ছুটি মঞ্জুরিসহ) শৃঙ্খলাবিধানের দায়িত্ব রাষ্ট্রপতির ওপর ন্যস্ত থাকা কেন অসাংবিধানিক হবে না, এই মর্মে জারি করা রুলের শুনানিতে তিনি এই মন্তব্য করেন।

বিচারপতি ফারাহ মাহবুব ও বিচারপতি দেবাশীষ রায় চৌধুরীর হাইকোর্ট বেঞ্চে এ রুলের ওপর শুনানি অনুষ্ঠিত হয়। এ সময় রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদ উদ্দিন, সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল মুজাহিদুল ইসলাম শাহীন।

এই শুনানিতে শিশির মনির আরও বলেছেন, সংবিধানের ১১৬ অনুচ্ছেদের কারণে অধস্তন আদালতের বিচারকরা সরকারের কাছে জিম্মিদশায় থাকতে হয়। তারা স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারেন না। রাতে কোর্ট বসিয়ে বিচারকদের সাজা দিতে বাধ্য করার ঘটনা ঘটেছে। সরকারের পছন্দমতো আদেশ না দেওয়ার কারণে আদেশের পরদিন বিচারককে বান্দরবানে পাঠানো হয়েছে। অনেক বিচারককে এ কারণে চোখের পানি ফেলতে দেখেছি।

তিনি বলেছেন, এই অনুচ্ছেদের কারণে বিচার বিভাগের জন্য পৃথক সচিবালয়ের স্বপ্ন স্থবির হয়ে রয়েছে। এই অনুচ্ছেদ সরিয়ে বা বাদ দেওয়া হলে বিচার বিভাগ পৃথকীকরণের স্বপ্ন পূরণ হবে বলেও মন্তব্য করেন এ আইনজীবী।

এর আগে গত, ২৭ অক্টোবর সংবিধানের ১১৬ অনুচ্ছেদে বর্ণিত অধস্তন আদালতের দায়িত্বপালনরত ম্যাজিস্ট্রেটদের নিয়ন্ত্রণ (কর্মস্থল নির্ধারণ, পদোন্নতি দান ও ছুটি মঞ্জুরিসহ) শৃঙ্খলাবিধানের দায়িত্ব রাষ্ট্রপতির ওপর ন্যস্ত থাকা কেন অসাংবিধানিক হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেন হাইকোর্ট।

গত ২৫ আগস্ট ওই বিধানের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে রিট দায়ের করা হয়। রিটে সংবিধানের ১১৬ অনুচ্ছেদ কেন অসাংবিধানিক হবে না, এই মর্মে রুল জারির আবেদন জানানো হয়েছে। অধস্তন আদালতের দায়িত্বপালনরত ম্যাজিস্ট্রেটদের নিয়ন্ত্রণ ও শৃঙ্খলাবিধানের দায়িত্ব রাষ্ট্রপতির ওপর ন্যস্ত থাকলে বিচার বিভাগের স্বাধীনতা খর্ব হয়, এ কারণে এই বিধানের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করা হয়। সুপ্রিম কোর্টের ১০ জন আইনজীবী এ রিট দায়ের করেন।

রিট আবেদনকারীরা হলেন- আইনজীবী মোহাম্মদ সাদ্দাম হোসেন, মো. আসাদ উদ্দিন, মো. মুজাহিদুল ইসলাম, মো. জহিরুর ইসলাম, মোস্তাফিজুর রহমান, শাইখ মাহাদী, আবদুল্লাহ সাদিক, মো. মিজানুল হক, আমিনুল ইসলাম শাকিল এবং যায়েদ বিন আমজাদ। রিটে আইন মন্ত্রণালয়ের লেজিসলেটিভ ও পার্লামেন্টারি অ্যাফেয়ার্স বিভাগ, আইন ও বিচার বিভাগের সচিব এবং সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রারকে বিবাদী করা হয়। আবেদনকারীদের পক্ষে আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনির রিট মামলাটি দায়ের করেন।

রিটে ২০১৭ সালে প্রণীত বাংলাদেশ জুডিশিয়াল সার্ভিস (ডিসিপ্লিনারি) রুলসের সাংবিধানিক বৈধতাকেও চ্যালেঞ্জ করা হয়। রিট আবেদনে একটি পৃথক বিচার বিভাগীয় সচিবালয় প্রতিষ্ঠা করতে আদালতের নির্দেশনা এবং মামলার চূড়ান্ত নিষ্পত্তির পূর্বে সুপ্রিম কোর্টের ২০১২ সালের আদেশ প্রতিপালনে অগ্রগতি রিপোর্ট দাখিলের নির্দেশনা চেয়ে অন্তবর্তীকালীন আদেশ চাওয়া হয়।

রিট আবেদনে যুক্তি তুলে ধরে বলা হয়

১. বিচার বিভাগের স্বাধীনতা সংবিধানের মৌলিক কাঠামো। ১১৬ অনুচ্ছেদের মাধ্যমে এই মৌলিক কাঠামো বিনষ্ট করা হয়েছে। একইসঙ্গে বিচারকদের শৃঙ্খলাবিধির বাস্তবায়ন কার্যত আইন মন্ত্রণালয়ের হাতে ন্যস্ত করা হয়েছে।

২. সংবিধানের চতুর্থ সংশোধনী এরইমধ্যে বিলুপ্ত হয়েছে। পঞ্চম সংশোধনী অসাংবিধানিক ঘোষিত হয়েছে এবং পঞ্চদশ সংশোধনীতে ১১৬ এর বিধান বহাল রাখা হয়েছে, যা বিচার বিভাগের স্বাধীনতা ও আইনের শাসনের পরিপন্থি।

৩. পৃথক সচিবালয় না থাকায় বিচার বিভাগের স্বাধীনতা কার্যত স্থবির হয়ে পড়েছে। অধস্তন আদালতের উপর আইন মন্ত্রণালয়ের নিয়ন্ত্রণের কারণে বিচার বিভাগের কর্মকর্তাগণ স্বাধীনভাবে বিচারকার্য পরিচালনা করতে পারছেন না।

পাঠকের মতামত:

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

SMS Alert

অপরাধ ও আইন এর সর্বশেষ খবর

অপরাধ ও আইন - এর সব খবর