thereport24.com
ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২০ ফেব্রুয়ারি 25, ৭ ফাল্গুন ১৪৩১,  ২১ শাবান 1446

শেয়ার কারসাজি: আমিনুল-হিরু চক্রকে ১০.১৩ কোটি অর্থদণ্ড

২০২৫ ফেব্রুয়ারি ১৯ ১৭:০৮:১৩
শেয়ার কারসাজি: আমিনুল-হিরু চক্রকে ১০.১৩ কোটি অর্থদণ্ড

দ্য রিপোর্ট প্রতিবেদক:পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানি ওরিয়ন ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেড ও এনআরবিসি ব্যাংক পিএলসির শেয়ার কারসাজিতে জড়িত থাকার অভিযোগে ৮ ব্যক্তি ও ৪ প্রতিষ্ঠানকে মোট ১০ কোটি ১৩ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে। কোম্পানি দুটির মধ্যে ওরিয়ন ফার্মাসিউটিক্যালসের শেয়ার নিয়ে নাবিল গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক আমিনুল ইসলাম এবং এনআরবিসি ব্যাংকের শেয়ার নিয়ে সমবায় অধিদপ্তরে উপ-নিবন্ধক ও শেয়ার ব্যবসায়ী আবুল খায়ের হিরু কারসাজিতে নেতৃত্ব দিয়েছেন। এভাবে কোম্পানি দুইটির শেয়ার অস্বাভাবিক দাম বাড়িয়ে তারা কোটি কোটি টাকা মুনাফা হাতিয়ে নিয়েছেন।

বিভিন্ন অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে তদন্ত সাপেক্ষে কারসাজির সঙ্গে জড়িতদের চিহ্নিত করে শাস্তির আওতায় এনেছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)।

২০২১ সালের ২১ সেপ্টেম্বর থেকে ১৪ অক্টোবর পর্যন্ত সময়ে ওরিয়ন ফার্মাসিউটিক্যালসের শেয়ার কারসাজি করে দাম বাড়ানো হয়। ওই একই বছরের ৭ থেকে ২৭ অক্টোবর পর্যন্ত সময়ে এনআরবিসি ব্যাংকের শেয়ারের দাম বাড়ানোর জন্য কারসাজির আশ্রয় নেওয়া হয়।

ওরিয়ন ফার্মাসিউটিক্যালসের শেয়ার কারসাজিতে জড়িতরা আইসিবি সিকিউরিটিজ ট্রেডিং কোম্পানি লিডিমটেড, আকিজ ক্যাপিটাল ম্যানেজমেন্ট লিমিটেড ও ইউনাইটেড সিকিউরিটিজ লিমিটেডে বিও হিসাব পরিচালনা করতেন। আর এনআরবিসি ব্যাংকের শেয়ার কারসাজিতে জড়িতরা অগ্রণী ইক্যুইটি অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেড, ইউসিবি স্টক ব্রোকারেজ লিমিটেড, ইবিএল সিকিউরিটিজ লিমিটেড, সিটি ব্যাংক ক্যাপিটাল রিসোর্স লিমিটেড, প্রিমিয়ার ব্যাংক সিকিউরিটিজ লিমিটেড, এসবিএল ক্যাপিটাল ম্যানেজমেন্ট লিমিটেড, ব্র্যাক ইপিএল ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেড ও ব্র্যাক ইপিএল স্টক ব্রোকারেজ লিমিটেড এবং কমার্স ব্যাংক সিকিউরিটিজ অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেড বিও হিসাব পরিচালনা করতেন।

ওরিয়ন ফার্মাসিউটিক্যালসের শেয়ার কারসাজিতে জড়িত থাকার অভিযোগে নাবিল গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক আমিনুল ইসলামকে ৩ কোটি ২০ লাখ টাকা, তার প্রতিষ্ঠান নাবিল ফিড মিলসকে ১০ লাখ টাকা ও আরেক প্রতিষ্ঠান নাবিল নাবা ফুডসকে ১০ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে।

এদিকে, এনআরবিসি ব্যাংকের শেয়ার কারসাজিতে জড়িত থাকার অভিযোগে সমবায় অধিদপ্তরে উপ-নিবন্ধক ও শেয়ার ব্যবসায়ী আবুল খায়ের হিরুকে ২.৩০ কোটি টাকা, তার বাবা আবুল কালাম মাতবরকে ৪.১৫ কোটি টাকা, তার স্ত্রী কাজী সাদিয়া হাসানকে ১১ লাখ টাকা, তার বোন কনিকা আফরোজকে ১ লাখ টাকা, তার মা আলেয়া বেগমকে ১ লাখ টাকা, তার ভাই মোহাম্মদ বাসারকে ১ লাখ টাকা, ভাই সাজিদ মাতবরকে ১ লাখ টাকা, তার প্রতিষ্ঠান ডিআইটি কো-অপারেটিভকে ১২ লাখ টাকা এবং তার আরেক প্রতিষ্ঠান মোনার্ক হোল্ডিংসকে ১ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে।

তদন্ত কার্যক্রম
নাবিল গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক আমিনুল ইসলাম এবং তার দুইটি প্রতিষ্ঠান যোগসাজশ করে ওরিয়ন ফার্মাসিউটিক্যালসের শেয়ার লেনদেন করে। কাসজাজিকারীরা ২০২১ সালের ২১ সেপ্টেম্বর থেকে ১৪ অক্টোবর পর্যন্ত সময়ে ওরিয়ন ফার্মাসিউটিক্যালসের শেয়ার কারসাজি করে দাম বাড়ায়। এ সময়ের মধ্যে কোম্পানির শেয়ারের দাম ৬৮.২০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ১১৫.২০ টাকায় নিয়ে যাওয়া যায়। আলোচ্য সময়ে কোম্পানির শেয়ারের দাম ৪৭ টাকা বা ৬৮.৯১ শতাংশ বেড়ে যায়।

সমবায় অধিদপ্তরে উপ-নিবন্ধক ও শেয়ার ব্যবসায়ী আবুল খায়ের হিরু এবং তার পরিবারের সাত সদস্য ও দুইটি প্রতিষ্ঠান যোগসাজস করে এনআরবিসি ব্যাংকের শেয়ার লেনদেন করে। কাসজাজিকারীরা ২০২১ সালের ৭ অক্টোবর থেকে ২৭ অক্টোবর পর্যন্ত সময়ে এনআরবিসি ব্যাংকের শেয়ার কারসাজি করে দাম বাড়ায়। এ সময়ের মধ্যে কোম্পানির শেয়ারের দাম ২৩.৮০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৩৮.৩০ টাকায় নিয়ে যাওয়া যায়। আলোচ্য সময়ে কোম্পানির শেয়ারের দাম ৬০.৯২ শতাংশ বাড়ে যায়।

কারসাজির পরিপ্রেক্ষিতে বিএসইসির সিদ্ধান্ত

ওরিয়ন ফার্মাসিউটিক্যালসে ও এনআরবিসি ব্যাংকের শেয়ার কারসাজিতে জড়িতদের বক্তব্য এবং তদন্ত প্রতিবেদন পর্যালোচনা থেকে প্রতীয়মান হয়, উপস্থাপিত অভিযোগসমূহ সঠিক ও ইচ্ছাকৃত এবং কর্মকাণ্ডের ফলে পুঁজিবাজারের সাধারণ বিনিয়োগকারীরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন যা পুঁজিবাজার উন্নয়নের পরিপন্থী, সেহেতু এক্ষেত্রে অভিযুক্তদের ব্যাখ্যা কমিশনের নিকট গ্রহণযোগ্য হিসেবে বিবেচিত হয়নি। যেহেতু অভিযুক্তদের কর্মকাণ্ড সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ অর্ডিনেন্স, ১৯৬৯ এর সেকশন ১৭(ই)(৫) এবং সেকশন ১৭(ই)(২) লংঘন করেছে, যা সিকিউরিটিজ আইনের পরিপন্থী। যেহেতু অভিযুক্তরা উপর্যুক্ত কর্মকাণ্ড সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ অর্ডিনেন্স, ১৯৬৯ এর সেকশন ২২ অনুযায়ী শাস্তিযোগ্য অপরাধ: যেহেতু, কমিশনের বিবেচনায়, সিকিউরিটিজ আইন ও বিধি-বিধান পরিপালনে আলোচ্য ব্যর্থতার জন্য, পুঁজিবাজারের শৃঙ্খলা, স্বচ্ছতা এবং জনস্বার্থে আলোচ্য ব্যক্তিদের জরিমানা করা প্রয়োজন ও সমীচীন। অতএব, সেহেতু, কমিশন উল্লিখিত যাবতীয় বিষয় বিবেচনাপূর্বক, সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ অর্ডিনেন্স, ১৯৬৯ এর সেকশন ২২ এর প্রদত্ত ক্ষমতাবলে অভিযুক্তদের অর্থদন্ড ধার্য করল যা অত্র আদেশের ৩০ দিনের মধ্যে ‘বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন’ এর অনুকূলে ইস্যুকৃত ব্যাংক ড্রাফট অথবা পে-অর্ডারের মাধ্যমে জমা দিতে হবে, অন্যথায় সিকিউরিটিজ আইন অনুযায়ী পরবর্তী আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

পাঠকের মতামত:

SMS Alert

শেয়ারবাজার এর সর্বশেষ খবর

শেয়ারবাজার - এর সব খবর