thereport24.com
ঢাকা, রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১,  ২২ জমাদিউল আউয়াল 1446

৭৬০ মেগাওয়াট বিদ্যুতের হদিস নেই

২০১৩ নভেম্বর ১৩ ২১:৪৪:৫২
৭৬০ মেগাওয়াট বিদ্যুতের হদিস নেই

রাজু হামিদ ও রানা হানিফ, দিরিপোর্ট : ১০ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুতের টার্গেট পূরণে আগেভাগেই কৌশলের আশ্রয় নিয়েছিল বিদ্যুৎ বিভাগ। পরিকল্পণায় থাকা স্থায়ী বিদ্যুৎকেন্দ্র প্রস্তুত না থাকায় ভাড়াভিত্তিক নয়টি বিদ্যুৎকেন্দ্রের মেয়াদ বাড়ানো হয়েছিল টার্গেট পূরণে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ওই নয় কেন্দ্রের ৭৪৫ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ পুঁজি করেই মঙ্গলবার ঘটা করে উদযাপন করা হলো ১০ হাজার মেগাওয়াট উৎপাদনের সাফল্য উৎসব।

বিদ্যুৎ বিভাগের বিশেষ শাখা পাওয়ার সেলের সাবেক মহাপরিচালক বিডি রহমতুল্লাহ সরকারের এই উৎসবকে জনগণের সঙ্গে ধোঁকাবাজি হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন।

তিনি বলেছেন, যেখানে জনগণ ঠিক মতো বিদ্যুৎ পাচ্ছে না, রেন্টালের নামে কোটি কোটি টাকা লুটপাট হচ্ছে, সেখানে আলোক উৎসব এক প্রকার প্রতারণা।

জ্বালানি বিশেষজ্ঞদের মতে, কার্যত সরকার আগামী নির্বাচনের বৈতরণী পার হতেই এমন উদযাপনের আয়োজন করেছে।

বিদ্যুৎ ও জ্বালানি বিশেষজ্ঞ আ ন ম সামসুল আলম দিরিপোর্টকে বলেন, স্বল্পমেয়াদী কোন বিদ্যুৎ প্রকল্প সরকারের উন্নয়ন হিসেবে বিবেচিত হতে পারে না।

একদিকে সরকার বলছে গ্যাস ও জ্বালানি তেল সাশ্রয়ের জন্য বিদ্যুৎ উৎপাদন কমানো হয়েছে। অন্যদিকে রেন্টাল ও কুইক রেন্টালের মেয়াদও বাড়ানো হচ্ছে। যদি উৎপাদনই না করা হয় তাহলে এগুলোর মেয়াদ বাড়িয়ে লাভ কি? আসলে সরকার স্ববিরোধী। এর মাধ্যমে তারা উৎপাদনের কৃতিত্ব নিতে চাচ্ছেন।

বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি) তথ্য অনুযায়ী, বর্তমান সরকারের আমলে স্থাপিত ৫৭টিসহ দেশে এখন বিদ্যুৎকেন্দ্রের সংখ্যা ৮৪টি। বর্তমান সরকারের সময়ে যে কেন্দ্রগুলো চালু হয়েছে তার অধিকাংশ স্বল্প মেয়াদের ব্যয়বহুল রেন্টাল ও কুইক রেন্টাল বিদ্যুৎকেন্দ্র। সাশ্রয়ী জ্বালানির (গ্যাস/কয়লা) বড় বিদ্যুৎকেন্দ্র মাত্র একটি চালু হয়েছে। পুরাতন কেন্দ্রসহ পিডিবির বর্তমান স্থাপনকালিন ক্ষমতা ১০ হাজার ২২৪ মেগাওয়াট। তবে উৎপাদন ক্ষমতা কমে চলতি বছর ১২ নভেম্বর সর্বোচ্চ উৎপাদন ক্ষমতা (ডিরেটেড) দেখানও হয়েছে নয় হাজার ৬১০ মেগাওয়াট। ভারত থেকে আমদানিকৃত ৫০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ এর সঙ্গে যুক্ত রয়েছে।

বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের তথ্য মতে, ভারত থেকে এ পর্যন্ত প্রতিদিন সর্বোচ্চ ১৭০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ পাওয়া গেছে। সে হিসেবে বর্তমান দেশের বিদ্যুৎ উৎপাদান ক্ষমতা নয় হাজার ২৪০ মেগাওয়াট। সরকারি হিসেবেই ৭৬০ মেগাওয়াট বিদ্যুতের কোন হদিস নেই।

বিশ্লেষকদের মতে, কারিগরি ত্রুটির কারণে আড়াই হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন সম্ভব নয়। আর জ্বালানি স্বল্পতায় উৎপাদন সম্ভব হচ্ছে না এক হাজার মেগাওয়াটের মতো। সব মিলিয়ে স্থাপিত ক্ষমতার চার হাজার মেগাওয়াটের উপরে বিদ্যুৎ পাওয়া যাচ্ছে না।

এ পরিস্থিতিতে সরকার ১০ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের সাফল্য নিজেদের ঘরে নিয়ে আসতে নয়টি ভাড়াভিত্তিক কেন্দ্রের মেয়াদ বাড়িয়ে দেয়। এর মধ্যে রয়েছে- সিনহা পাওয়ারের আমনুরা ৫০ মেগাওয়াট, এনপিএসএলের কাটাখালী ৫০, খুলনা পাওয়ার কোম্পানি লিমিটেডের ১০৫, নোয়াপাড়া ৪০, মদনগঞ্জ সামিট পাওয়ার লিমিটেডের ১০০, এ্যাকর্ন ইনফ্রার জুলদা ১০০, পাওয়ারপ্যাক মুতিয়ারার কেরানীগঞ্জ ১০০, ডাচ-বাংলা পাওয়ারের সিদ্ধিরগঞ্জ ১০০ এবং ওরিয়নের মেঘনাঘাট আইইএলের ১০০ মেগাওয়াট।

এছাড়া মেয়াদ শেষে বন্ধ করে দেওয়া খুলনা ৪০ ও ঠাকুরগাঁও ৪৭ মেগাওয়াট রেন্টাল বিদ্যুৎকেন্দ্র এবং কুইক রেন্টাল ভিত্তিক খুলনা ৫৫ মেগাওয়াট কেন্দ্রগুলোও ধরা হয়েছে। ১০ হাজারের হিসেবে এই কেন্দ্রগুলোর বিদ্যুৎও যুক্ত করা হয়েছে।

(দিরিপোর্ট/আরএইচ/এইচআর/এসবি/এমএআর/নভেম্বর ১৩, ২০১৩)

পাঠকের মতামত:

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

SMS Alert

জেলার খবর এর সর্বশেষ খবর

জেলার খবর - এর সব খবর