thereport24.com
ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২ পৌষ ১৪৩১,  ২৪ জমাদিউস সানি 1446

৫০৭ বছরের প্রাণীটিকে হত্যা করলেন বিজ্ঞানীরা

২০১৩ নভেম্বর ১৭ ২০:২৭:১১
৫০৭ বছরের প্রাণীটিকে হত্যা করলেন বিজ্ঞানীরা

আমিরুল মাসুদ, দিরিপোর্ট ডেস্ক :মিং দি মল্লাস্ক নামে খ্যাত সামুদ্রিক ঝিনুকটিই ছিলো বিশ্বের সবচেয়ে পুরানো জীব। তবে যখন এটা জানা গেলো, ততক্ষণে বিজ্ঞানীদের হাতে মারা গেছে ৫০৭ বছর বয়সী প্রাণীটি।

২০০৬ সালে আইসল্যান্ডের নিকটে উত্তর আটলান্টিকের গভীর তলদেশ থেকে সামুদ্রিক কোয়াহগ প্রজাতির একটি গভীর সমুদ্রের ঝিনুক উদ্ধার করেছিলেন গবেষকরা। ওই সময় তারা এর বয়স সম্পর্কে না জেনেই স্বাভাবিক পদ্ধতিতে একে হিমায়িত করে রাখেন। ফলে বিজ্ঞানীদের হাতেই প্রাণ দিতে হয়েছে এতো বছর ধরে বেঁচে থাকা কোয়াহগ ঝিনুকটিকে।

বিজ্ঞানীরা জানান, তারা অসাবধানতাবসত পৃথিবীর সবচেয়ে বয়স্ক প্রাণীটিকে হত্যা করেছেন। এটা তাদের জন্য খুবই বেদনাদায়ক। কেননা তারা জনতেন না ঝিনুকটির বয়স আসলেই কত। তবে ঘটনাটি প্রকাশ করা আরো কঠিন হয়ে পড়ে যখন তারা জানতে পারেন প্রাণীটির বয়স ৫০৭ বছর।

এর আগে ডেনমার্কের বেনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানীরা যখন ঝিনুকটিকে গবেষণাগারে নিয়ে যান তখনই প্রথমবারের মতো উদঘাটন হয়, এর বয়স ৪০০ বছর। সহজেই গিনেস বুক অফ ওয়ার্ল্ড রেকর্ডে স্থান করে নেয় ঝিনুকটি। তবে যথাযথ সংরক্ষণের অভাবে ততক্ষণে জীবনাবসান ঘটেছে ঝিনুকটির। মৃত্যূর আগেই চীনা মিং রাজবংশীয় সম্রাট মল্লাস্ক এর নামানুসারে এর নামকরণ হয় মিং দি মল্লাস্ক। কেননা ঝিনুকটি যখন জন্ম নেয় তখন চীন শাসন করছিল এ রাজবংশটি।

পরবর্তিতে সামুদ্রিক প্রাণটিকে নিয়ে আরো নিবিড় গবেষণায় বেরিয়ে আসে ঝিনুকটির বয়স ৪০০ বছর নয় বরং তার চেয়ে আরো ১০৭ বছর বেশি। অর্থাৎ এর বয়স ৫০৭ বছর।

বিশ্ববিদ্যালয়ের স্কুল অফ ওসেন সায়েন্সের অধ্যাপক ড. পাউল বাটলার বলেন, ‘প্রথমবার আমরা একটি ভূল সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম। আমরা নতুন করে পাওয়া তথ্যটি প্রকাশ করতে কিছুটা বিব্রত ছিলাম। তবে এটা নিশ্চিত যে এখন আমরা সঠিক তথ্যটি উদঘাটন করতে পেরেছি।’

তিনি জানান, সামুদ্রিক কোয়াহাগ নামের ওই ঝিনুকগুলোর বয়স নির্ণয় করা হয় অনেকটা গাছের মতো। এদের জন্মের পর থেকে প্রত্যেক বছর এদের আবরণের উপর নতুন একটি করে পাক সৃষ্টি হয়। আর বিজ্ঞানীরা গছের পাক গুণে যে পদ্ধতিতে বয়স নির্ণয় করেন একইভাবে এই ঝিনুকগুলোর বয়সও তাদের পাক গুণে করা হয়। সাধারণত গ্রীষ্মকালে যখন পানি উষ্ণ থাকে এবং পর্যাপ্ত পরিমান খাবার থাকে তখন এ পাকগুলো সৃষ্টি হয়।

তবে এ বৃদ্ধি-পাকটি কোয়াহাগ ঝিনুকের শরীর দুইটি অংশে দেখা যায়। একটি হচ্ছে তাদের খোলসের বাইরের অংশে এবং অপরটি হচ্ছে এর ভেতরের অংশে, যেখানে দুইটি খোলস মিলিত হয়েছে। বিজ্ঞানীরা মনে করেন, ভেতরের অংশের পাক হিসাব করাই বয়স নির্ণয়ের সবচেয়ে ভালো উপায়। কেননা তা বাইরের পরিবেশ থেকে অনেক বেশি সংরক্ষিত থাকে।

তবে কোয়াহাগটির ক্ষেত্রে ঘটেছে উল্টো ঘটনা। এর বয়স গণনায় যখন ভেতরের অংশের পাক হিসাব করা হচ্ছিল তখন অনেকগুলোই সংকুচিত হয়ে যাওয়ায় তা বুঝা যায়নি। তবে যখন দ্বিতীয় পর‌্যবেক্ষনে এর বাইরের পাকগুলো গণনা করা হয় তখনই বুঝা যায় যে আগের গণনাটি ভূল ছিল।

দ্বিতীয় গবেষণায় জানা যায়, ঝিনুকটি কলম্বাসের আমেরিকা আবিষ্কারের মাত্র সাত বছর পর ১৪৯৯ সালে জন্ম নিয়েছিল।

বিজ্ঞানীরা দাবি করছেন, এ ঝিনুকটির আবরণ নিয়ে গবেষণার মাধ্যমে তারা সমুদ্রের তলদেশের একহাজার বছরের পানির তাপমাত্রা, ঘনত্ব এবং অন্যান্য সামুদ্রিক প্রাণী সম্পর্কে ধারণা লাভ করতে পারবেন।

(দিরিপোর্ট২৪/এআইএম/ এমডি/নভেম্বর ১৭, ২০১৩)

পাঠকের মতামত:

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

SMS Alert

বিশ্ব এর সর্বশেষ খবর

বিশ্ব - এর সব খবর