নড়াইলে সড়ক সংস্কারে অনিয়মের অভিযোগ

নড়াইল সংবাদদাতা : নড়াইল-লোহাগড়া-কালনা ও নড়াইল-কালিয়া সড়ক ১২ কোটি টাকা ব্যয়ে সংস্কারের তিন মাস ১৬ দিনের মধ্যে দুবার পুনঃসংস্কার করতে হয়েছে। ওই প্রকল্পে নিম্নমানের কাজের অভিযোগ করেছেন স্থানীয়রা।

স্থানীয়রা অভিযোগ করে জানান, গত ২৪ থেকে ২৬ অক্টোবর তিনদিনের বৃষ্টিতে নড়াইল-লোহাগড়া-কালনা সড়কের ১৮ কিলোমিটার অংশে বড় বড় গর্ত সৃষ্টি হয়। এ ছাড়া পাথর ও পিচ উঠে ছোট-বড় গর্তের সৃষ্টি হয়। বিভিন্ন স্থানে দেবেও যায়। এই সড়কের ঘোষবাড়ী, মুলদাইড় হাফেজিয়া মাদ্রাসা, ডৌয়াতলায় (পোস্টঅফিস), দত্তপাড়া স্কুলের সামনে, বাদশার গ্যারেজের পশ্চিমে, বুড়িখালী বাসস্ট্যান্ডের পূর্ব ও পশ্চিমে, চৌগাছা ইটভাটার পশ্চিমে, লোহাগড়া টেলিফোন অফিসের কাছে, লোহাগড়া ব্রিজের ওপর, মদিনাপাড়া, কলেজ মোড়ে, পিকুলের বটতলা ব্রিজের ওপর, কালনা ইটভাটার সামনে ও কালনাঘাট এলাকায় এক বা একাধিক গর্তের সৃষ্টি হয়। এ ছাড়া মশাগুনি ব্র্যাক অফিস ও লোহাগড়ায় মাস্টারবাড়ীর সামনে দেবে যাওয়ায় বড় বড় গর্ত হয়েছে।

এ ছাড়া চৌগাছা বাসস্ট্যান্ড, এড়েন্দা বাসস্ট্যান্ড, লোহাগড়া ফিলিং স্টেশন, লক্ষ্মীপাশা চৌরাস্তা পরিবহন কাউন্টারের সামনেসহ কালনাঘাট ইটভাটার কাছে পাথর ও পিচ উঠে গেছে।

এ সড়কে চলাচলকারী লোহাগড়ার কুচিয়াবাড়ী গ্রামের তারিকুল ইসলাম বলেন, মাত্র তিনদিনের বৃষ্টিতেই যদি এই অবস্থা হয়, তাহলে আগামী দিনগুলোতে এই সড়কের (নড়াইল-লোহাগড়া) কী অবস্থা হবে। আগামী বর্ষা মৌসুম পর্যন্ত এ রাস্তা টিকবে না বলে তিনি মন্তব্য করেন। সীমাখালীর মহব্বত হোসেন জানান, কাজের মান ভালো না হওয়ায় অল্পদিনেই রাস্তার অবস্থা খারাপ হয়ে গেছে। ঢাকাগামী হানিফ পরিবহনের চালক নাজমুল বলেন, শুনেছি অনেক টাকার কাজ হয়েছে। কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হয়নি।

এদিকে, নড়াইল-লোহাগড়া-কালনা বাইপাস সড়কের তিন কিলোমিটারে গাড়ির চাকা যেন থমকে যাচ্ছে। চার-পাঁচ মিনিটের রাস্তা যেতে ১৫ থেকে ২০ মিনিট সময় লাগছে বলে যাত্রীরা জানিয়েছেন।

মাথাভাঙ্গা ব্রিজের দক্ষিণেসহ দিঘলিয়া ক্বারি সাহেবের বাড়ির সামনে, বনগ্রাম বাজারের উত্তরে, আটলিয়া মন্টুর দোকানের সামনে, বগুড়া দিঘলিয়া বাজারের উত্তর দিকে কয়েকটি ছোট-বড় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। এ ছাড়া এই সড়কের বিভিন্ন স্থানে দেবে গেছে, পিচও উঠে গেছে।

এদিকে, নড়াইল-কালিয়া সড়কের সাত কিলোমিটার বাদ রেখে সংস্কার কাজ করায় এই অংশে অত্যন্ত ঝুঁকি নিয়ে যানবাহন চলাচল করছে। সংস্কারবিহীন সাত কিলোমিটার সড়কে পিচ, পাথর, খোয়া ও বালি উঠে বড় বড় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। এই সড়কের ভবানীপুরে সম্প্রতি যাত্রীবাহী বাস উল্টো স্কুলছাত্রসহ দুজন নিহত হয়েছেন।

সড়ক ও জনপথ সূত্রে জানা গেছে, ১২ কোটি ৪৮ লাখ টাকা ব্যয়ে পাবনা জেলার মেসার্স শফিক ট্রেডার্স ১০ মে নড়াইল-লোহাগড়া-কালনা ও নড়াইল-কালিয়া সড়কের সংস্কার কাজ শুরু করে এবং ৭ জুলাই তা শেষ করে।

অভিযোগ রয়েছে, সড়ক নির্মাণে এই ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান নির্দিষ্ট পরিমাণ চওড়া ও উচ্চতা ঠিক না রেখেই পিচ ঢালাই দেয়। নুড়ি পাথরমিশ্রিত নিম্নমানের পাথর, বালু ও কম বিটুমিন ব্যবহারেরও অভিযোগ রয়েছে। কালিয়া উপজেলার আটলিয়া গ্রামের হাফিজুর রহমান ও লবাব আলী জানান, সংস্কারের শুরুতে কাজের মান ভালো না হওয়ায় এলাকাবাসী কাজ বন্ধ করে দিয়েছিলেন। তবুও কাজ ভালো হয়নি। এ ছাড়া সড়কের দুপাশে ঠিকমতো ঢালু না করায় সামান্য বৃষ্টিতেই পানি জমে থাকছে। তবে, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের (মেসার্স শফিক ট্রেডার্স) পক্ষ থেকে এসব অভিযোগ অস্বীকার করা হয়েছে।

সড়ক ও জনপথ (সওজ) নড়াইলের নির্বাহী প্রকৌশলী তাপসী দাশ দাবি করেন, কাজের মান ভালো হয়েছে। বর্ষা মৌসুমে কাজ করার কারণে কোথাও কোথাও সমস্যা হয়েছে বলে তিনি মন্তব্য করেছেন।

(দিরিপোর্ট/এসএমআইকে/এএস/নভেম্বর ১৯, ২০১৩)