thereport24.com
ঢাকা, রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১,  ২২ জমাদিউল আউয়াল 1446

গাজীপুর শিল্পাঞ্চল

থেমে থেমে সংঘর্ষ, প্রতিদিনই হচ্ছে হতাহত

২০১৩ নভেম্বর ২০ ০৬:০১:৫১
থেমে থেমে সংঘর্ষ, প্রতিদিনই হচ্ছে হতাহত

গাজীপুর সংবাদদাতা : শ্রমিক আন্দোলনে উত্তাল গাজীপুর শিল্পাঞ্চল। সফিপুর, কোণাবাড়ি, টঙ্গী ও কাশিমপুরে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর কড়া নিরাপত্তার মধ্যেও চলছে থেমে থেমে সংঘর্ষ। বন্ধ কারখানার শ্রমিকদের সঙ্গে চলমান কারখানার শ্রমিকেরা যোগ না দেওয়ায় একের পর এক বন্ধ হচ্ছে অবশিষ্ট পোশাক কারখানা। প্রতিদিনই হচ্ছে হতাহত, অগ্নিসংযোগ, ভাংচুর।

কখনো কারখানার ভেতরে, কখনো বা বাইরে, হৈ-চৈ চিৎকার। ভেতরে ভাংচুর, বাইরে মিছিল আর রাস্তায় আগুন দিয়ে আন্দোলন করছেন শ্রমিকেরা। অথচ পুলিশ বলছে, এসব শ্রমিকদের নয়, বহিরাগত বিশেষ মহলের সহিংস কর্মকাণ্ড।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, কোণাবাড়ি শিল্পাঞ্চলে সাধারণ মানুষের মধ্যে চলছে সুনসান নীরবতা। বিশেষ প্রয়োজন ছাড়া কেউ বাড়ির বাইরে যান না। সোয়েটার ফ্যাক্টরির শ্রমিক অসন্তোষের কারণে গত তিনদিনের সহিংসতায় পুড়েছে অনেক মার্কেট, ঘরবাড়ি, দোকানপাট। লুটপাট হয়েছে অনেক ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। এসব ঘটনায় নিহত হয়েছেন দুই শ্রমিক। ১১ জন গুলিবিদ্ধসহ আহত হয়েছেন শতাধিক। শত শত দোকানপাট ভাংচুর ও লুটপাট হয়েছে জরুন এলাকায়। অগ্নিসংযোগ হয়েছে শ্রমিকদের ভাড়া দেওয়ার জন্য নির্মিত কলোনিগুলো। প্রাণ ভয়ে অনেকেই মাসের মাঝামাঝি সময় বাড়ি বদলে অন্যত্র চলে গেছেন।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, মঙ্গলবার বেলা ১০টার দিকে সোয়েটার কারখানার শ্রমিকেরা তাদের ১১ দফা দাবি আদায়ের লক্ষ্যে কোণাবাড়ি-কাশিমপুর আঞ্চলিক সড়কে মিছিল করে ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে উঠার চেষ্টা করলে পুলিশ বাধা দেয়ে। পুলিশি বাধা উপেক্ষা করে শ্রমিকেরা মিছিল করতে চাইলে পুলিশ টিয়ারশেল ও রাবার বুলেট ছুড়ে মিছিলটি ছত্রভঙ্গ করে দেয়। এ ঘটনায় দৌঁড়ে পালাতে গিয়ে আহত হয়েছেন কমপক্ষে পাঁচজন।

এছাড়া, কারখানার নিরাপত্তারক্ষীর হাতে নারী শ্রমিক লাঞ্ছিত হওয়ার প্রতিবাদে বিক্ষোভ, কর্মবিরতি সর্বশেষ বিক্ষুব্ধ শ্রমিকদের বিতাড়িত করতে পুলিশের ছোড়া গুলির শব্দে প্রকম্পিত হয়ে ওঠে সমগ্র টঙ্গীর বিসিক শিল্পাঞ্চল। সকালে শিল্পনগরী টঙ্গীর বিসিক এলাকায় যাবের যুবায়ের তৈরি পোশাক কারখানায় এই ঘটনা ঘটে। এতে পুলিশের ছোড়া গুলিতে নারী শ্রমিকসহ কমপক্ষে ১৫ জন আহত হন। উত্তেজিত শ্রমিকেরা এ সময় পুলিশের দুটি গাড়িতে ভাংচুর চালায়।

কারখানার সামনে আন্দোলনরত বিক্ষুব্ধ শ্রমিকেরা জানায়, সকাল নয়টার কিছু পরে কারখানা চালু অবস্থায় হঠাৎ কারখানার মূল ফটকে নিরাপত্তারক্ষীর হাতে এক নারী শ্রমিক শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত হন। এ ঘটনায় কর্মরত শ্রমিকদের মাঝে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। মুহূর্তের মধ্যে কর্মরত সকল শ্রমিক এক জোট হয়ে এ ঘটনায় দোষীদের বিচার দাবি করেন। উত্তেজিত শ্রমিকেরা এ সময় কারখানায় ব্যাপক ভাংচুর চালায়। খবর পেয়ে টঙ্গী থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে এসে শ্রমিকদের ধাওয়া দিলে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষ বাধে। এ সময় উত্তেজিত শ্রমিকদের ছত্রভঙ্গ করতে পুলিশ শত শত রাউন্ড রাবার বুলেট ও টিয়ারশেল নিক্ষেপ করে।

সমগ্র এলাকায় শ্রমিক আন্দোলনের আতঙ্কে বেশকিছু পোশাক কারখনায় ছুটি ঘোষণা করে কর্তৃপক্ষ। কারখানা এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়।

এদিকে, গত কয়েকদিন শ্রমিক অসন্তোষের কারণে গার্মেন্টসখাতে অস্থিরতা দেখা দেওয়ায় বুধবারও সাত প্লাটুন বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে। তারা শিল্প এলাকায় টহল দিচ্ছেন। পাশাপাশি ওইসব এলাকায় শিল্প পুলিশ ও থানা পুলিশ মোতায়েন রয়েছে। সঙ্গে রয়েছেন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট। নিরাপত্তা জনিত কারণে অনেক কারখানার সামনে বন্ধের নোটিশ টানানো হয়েছে।

সোমবার পুলিশের গুলিতে নিহত দুই শ্রমিকের কর্মস্থল জিএমএক্স কারখানায় গিয়ে দেখা যায়, কোন শ্রমিক নেই। কারখানার সামনে বিপুলসংখ্যক পুলিশ মোতায়েন আছে। একই পরিস্থিতি ডিবিএল গ্রুপের কারখানায়। স্কয়ার, স্ট্যান্ডার্ড গ্রুপের প্রতিষ্ঠানসহ বিভিন্ন স্পর্শকাতর প্রতিষ্ঠানে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য ছাড়া আর কেউ নেই। মাঝে মধ্যে খোলা থাকা কারখানায় মিডিয়ার লোক প্রবেশ নিষিদ্ধ। বন্ধ কারখানায় পুলিশ মোতায়েন থাকলেও কর্তৃপক্ষ নেই বলে জানায় পুলিশ।

জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মুস্তাফিজুর রহমান এসব আন্দোলনকে বহিরাগত বিশেষ মহলের কর্মকাণ্ড বলে উড়িয়ে দেওয়া চেষ্ট করছেন এখানও।

(দিরিপোর্ট/এমএমএফ/এমএআর/নভেম্বর ২০, ২০১৩)

পাঠকের মতামত:

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

SMS Alert

জেলার খবর এর সর্বশেষ খবর

জেলার খবর - এর সব খবর