thereport24.com
ঢাকা, রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১,  ২২ জমাদিউল আউয়াল 1446

বিলুপ্তির পথে যশোরের ঐতিহ্যবাহী তাঁতশিল্প

২০১৩ নভেম্বর ২০ ১০:৪২:২৭
বিলুপ্তির পথে যশোরের ঐতিহ্যবাহী তাঁতশিল্প

বেনাপোল সংবাদদাতা : ঐতিহ্যবাহী যশোরের মোমিননগর তাঁতশিল্প ধীরে ধীরে বিলুপ্তির পথে এগিয়ে যাচ্ছে। প্রতিবছরই কমছে তাঁতকলের সংখ্যা। ১৪ হাজার তাঁতের মধ্যে বর্তমানে আছে দেড় হাজার। এ তাঁতশিল্পের সঙ্গে প্রায় লক্ষাধিক লোকের কর্মসংস্থান ছিল। পুঁজি সংকট, উৎপাদন ব্যয় বৃদ্ধিসহ নানান কারণে একের পর এক তাঁতশিল্প বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। ফলে পেশা বদল করতে বাধ্য হচ্ছেন অনেক তাঁতমালিক, কারিগরসহ সংশ্লিষ্টরা।

যশোর মোমিননগর তাঁতশিল্প মালিক সমিতির সূতিকাগর হিসাবে পরিচিত সদর উপজেলার নওদাগ্রাম ও তেঘরিয়া। ব্রিটিশ আমল থেকেই এ দুই গ্রামসহ আশপাশের এলাকায় তাঁতশিল্প বিস্তৃতি লাভ করে। ১৯৪২ সালের ২২ জানুয়ারি তাঁতশিল্প স্বার্থ সংরক্ষণের জন্য গঠিত হয় মোমিননগর তাঁতশিল্প সমবায় সমিতি। এসময় থেকেই তাঁতের কাপড়ের পরিধি বাজারে বিস্তৃতি লাভ করে। কিন্তু আশির দশকের মাঝামাঝি তাঁতকাপড়ের বাজার পড়তে শুরু করে। ৯০ দশক থেকে বন্ধ হতে থাকে তাঁত। এ ধারা এখনও অব্যাহত রয়েছে।

তাঁতশিল্প সমবায় সমিতির সভাপতি রেজাউল ইসলাম জানান, শুরুতে এ অঞ্চলে ১৪ হাজার তাঁত ছিল। যার মধ্যে সদর উপজেলায় ছিল ৩ হাজার তাঁত। বর্তমানে বেঁচে আছে প্রায় দেড়হাজার তাঁত। সমিতির সাধারণ সম্পাদক সাইদুর রহমান বলেন, আধুনিকতার কাছে যশোরে তাঁত মার খাচ্ছে। কেননা তাঁতিরা হাতের সাহায্যে তাঁত পণ্য বোনেন। সরকার ব্যাংক ঋণের ব্যবস্থা করলে তাঁতিরা মেশিন কিনে তার মাধ্যমে উৎপাদনে যেতে পারত। এটা সম্ভব হলে তাঁতিরা তাদের পেশা বদল করত না। এজন্য সরকারেকে এগিয়ে আসতে হবে।

নওদাগ্রাম ঘুরে দেখা গেছে, বর্তমানে এ গ্রামে ৬৮টি তাঁত চালু রয়েছে। এর মধ্যে ইকবাল হোসেনের ৩০টি, আব্দার রহমানের ১০টি, সাইফুর রহমানের ১০টি, হাবিবুর রহমানের ৭টি, সুলতান হোসেনের ৫টি, শাহজান আলী, গোলাম আলী ও রহমানের ১টি করে তাঁত রয়েছে। অথচ দুবছর আগেও এখানে ২০০টি তাঁত মেশিন ছিল। এ ২০০টি তাঁতের সঙ্গে জড়িয়ে ছিল ১ হাজার লোকের কর্মসংস্থান। কিন্তু তাঁতশিল্পের দুর্দিনের কারণে অনেকেই বাধ্য হয়েছেন তাঁত মেশিন বিক্রি করে দিতে। নওদা গ্রামের তবিবুর রহমান জানান, তার ৫টি মেশিন ছিল তার সবকটি এখন বন্ধ। বাধ্য হয়ে মুদি দোকান দিয়ে বসেছে। তিনি জানান বড় সমস্যা পুঁজি সঙ্কট।

এছাড়া তাঁত সংশ্লিষ্ট উপকরণের দাম বাড়লেও উৎপাদিত পণ্যের মূল্য না বাড়ায় তাঁত বন্ধ করা হয়েছে। তবিবুর রহমান বলেন, ৫ সদস্যর সংসার নিয়ে এখন তিনি মুদি দোকানের উপর নির্ভর হয়ে পড়েছেন। তাঁতমালিক হাবিবুর রহমান বলেন, তাঁতের মূল উপাদান সুতা। দফায় দফায় সুতার দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় তাদের উৎপাদন খরচ অনেক বেড়ে যাচ্ছে। মাত্র ৭ মাস আগে ৪০ কাউন্ট এক বান্ডিল সুতার দাম ছিল ৭শ টাকা। এখন সে সুতার দাম বৃদ্ধি পেয়ে ১৫ থেকে ১৮শ টাকা হয়েছে। ১৩/১৪শ টাকা মূল্যের ৬২ কাউন্ট সুতার দাম বৃদ্ধি পেয়েছে একইভাবে। একইসঙ্গে রংসহ আনুষঙ্গিক জিনিসের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে। তেঘরিয়া গ্রামের আশরাফ আলী জানান, তাঁতের বেহাল দশার কারণে পেশা ছেড়ে দিয়েছেন। এখন তিনি ফার্নিচারের ব্যবসা করছেন। একই গ্রামের জাকির হোসেন জানান, তাদের গ্রামে আগে ৩৫০টি তাঁত ছিল। বর্তমানে আছে ৩০টির মতো। তার নিজেরও তাঁত ছিল। জাকির হোসেন জানান, প্রতিদিন একজন কারিগর ৬টি গামছা বুনতে পারে। তাতে আয় হয় ১৮০ থেকে ১৯০ টাকা। তার স্ত্রী বেবী খাতুন জানান, স্বামী-স্ত্রী মিলে দিনরাত পরিশ্রম করেও অভাব দূর করতে পারছি না। সরকার যদি সহজ শর্তে ব্যাংক ঋণ দিত তাহলে আমরা উৎপাদন বাড়াতে পারতাম। পাশের বাড়ির লোকমান বলেন, আমাদের উৎপাদিত তাঁতপণ্যের দাম বাড়ছে না। বরং তাঁতের শাড়ি লুঙ্গির দাম কমেছে। এ কারণে ব্যবসায় মার খাচ্ছে তাঁত ব্যবসায়ীরা।

এ ব্যাপারে যশোর চেম্বার অব কমার্সের সভাপতি মিজানুর রহমান দিরিপোর্টকে বলেন, জীবন জীবিকার নিশ্চয়তার পাশাপাশি তাঁতশিল্পকে বাঁচিয়ে রাখতে সরকারের সহযোগিতা প্রয়োজন। সচল তাঁতগুলোকে চালু রাখতে এবং বন্ধ হয়ে যাওয়া গুলোকে সচল করতে সরকারের সহোযোতিা একান্তভাবে এবং খুব দ্রুত প্রয়োজন। নইলে আমাদের তাঁতশিল্পকে বাঁচিয়ে রাখা যাবে না। সরকারের কার্যকর সহযোগিতাই পারে তাঁতশিল্পকে বাঁচিয়ে রাখতে।

(দিরিপোর্ট/এমএআর/এপি/জেএম/নভেম্বর ২০, ২০১৩)

পাঠকের মতামত:

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

SMS Alert

জেলার খবর এর সর্বশেষ খবর

জেলার খবর - এর সব খবর