thereport24.com
ঢাকা, মঙ্গলবার, ২৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ১০ পৌষ ১৪৩১,  ২২ জমাদিউস সানি 1446

আনন্দের দৈত্য

২০১৩ সেপ্টেম্বর ২৩ ১২:০৩:১৮ ০০০০ 00 ০০ ০০:০০:০০
আনন্দের দৈত্য
আনন্দের দৈত্যটা একচোখা। ইশ্! কথাটা মনে হয় ঠিক মতো বলা হলো না। এক চোখা মানে কী? নিজেকেই নিজে প্রশ্ন করে আনন্দ। এক চোখা মানে হলো ... মানে হলো ... যার একটি মাত্র চোখ। আপন মনে জবাব দেয় সে। ভুল। ভুল উত্তর। এক চোখা মানে একবেশে। বলল আনন্দের ভাইয়া অনিন্দ্য।

শুনে আনন্দের মনটা খারাপ হয়ে গেল। অনিন্দ্যর ওপর ভীষণ ক্ষেপে গেল সে। বলা নেই, কওয়া নেই হঠাত্ বলে দিল ‘ভুল উত্তর’। পণ্ডিত! এত রাগ লাগছে। একটা ভালো নাম খুঁজে পাওয়া যে এত কষ্টের কাজ আগে জানা ছিল না। দৈত্যের নাম দিতে হবে—এটাই ড্রয়িং ক্লাসের হোমওয়ার্ক। আজ স্কুলে ড্রয়িং ক্লাসে যে যার মতো আঁকছিল। আনন্দ আঁকল একটা দৈত্য। দৈত্যের কপালের ওপর একটা মাত্র চোখ। গোলাকৃতি। সবুজ রঙ। স্যার ডাকলেন, আনন্দ। জ্বী স্যার। কী এঁকেছিস এটা? দৈত্য স্যার। দৈত্য স্যার আবার কে? তোর কোন স্যার দৈত্য? দুঃখিত স্যার। কোনো স্যার দৈত্য না। আমি একটা দৈত্য এঁকেছি। এতো কিছু থাকতে তুই দৈত্য আঁকতে গেলি কেন? দৈত্যদের অনেক কষ্ট তো তাই। দৈত্যদের অনেক কষ্ট তোকে কে বলল? স্যার, কেউ বলেনি। আমার মনে হলো তাই ...। তোর এমন মনে হবার কারণ? না মানে, মা যে গল্পটা বলে সেখানে কোনো কারণ ছাড়াই দৈত্যটাকে মেরে ফেলা হয়। বাবার গল্পেও একটা বোকা দৈত্যকে বুদ্ধিতে হারিয়ে বোতলে ভরে সাগরে ফেলে দিল। অ-নে-ক বছর ধরে সেই দৈত্য গভীর সাগরে বোতল বন্দি হয়ে আছে। বেচারা খেতে পারছে না। নিঃশ্বাস নিতে পারছে না। ওর বাবুনির কাছে যেতে পারছে না। দৈত্যদের স্যার খুব কষ্ট! তাই? জ্বি স্যার। দৈত্য সম্পর্কে তোর আর কোনো গবেষণা আছে? আনন্দ স্যারের এ প্রশ্নটি বুঝতে পারল না। তবে এটুকু বুঝতে পারল স্যার বিরক্ত হয়েছেন। আনন্দ ভয় পেল। ভয় পেলে বারবার ওর চোখের পলক পড়তে থাকে। আনন্দ? জ্বি স্যার। জবাব দিচ্ছিস না যে? আনন্দ চুপ করে দাঁড়িয়ে রইল। তুই কি ভয় পেয়েছিস? আনন্দ এ প্রশ্নেরও কোনো উত্তর দিতে পারল না। সে দাঁড়িয়েই রইল। আমি তো তোকে ভয় দেখাচ্ছি না। তাই না? জ্বি স্যার। বারবার এমন ‘জ্বি স্যার’, ‘জ্বি স্যার’ করবি না। জ্বি স্যার। আবারও! সরি স্যার। এবার বল, দৈত্য সম্পর্কে তুই আর কি ভাবছিস? সত্যি বলব স্যার? অবশ্যই সত্যি বলবি। মিথ্যা বলা ঠিক না। তুই দৈত্যের কথা বল। দৈত্যদের অনেক কষ্ট স্যার। এখন সারা পৃথিবীতে বিদ্যুতের আলো জ্বলে। ফলে দৈত্যরা রাতের বেলাও খাবারের জন্য বের হতে পারে না। না খেয়ে খেয়ে দৈত্যরা মরে যাচ্ছে। তাই তো এখন আর আমরা দৈত্যদের দেখতে পাই না। বুঝলাম। কিন্তু তোর দৈত্যের এক চোখ এবং তার রঙ সবুজ কেন? স্যার, দিনের বেলা তো সূর্যের আলো থাকে। দৈত্যরা সূর্যের আলো সহ্য করতে পারে না। তাছাড়া মানুষ তো দৈত্যদের শত্রু। তাই মানুষের ভয় এবং সূর্যের আলোর কারণে দিনের বেলা দৈত্য বাইরে বের হয় না। কিন্তু রাতে তাদের বের হতেই হয়। তখন অন্ধকারে তারা এক চোখে দেখে লঞ্চ বা ট্রেনের হেড লাইটের মতো। এভাবে দেখলে অনেক দূর থেকেও সবকিছু দেখা যায়। আর সবুজ হবার কারণে অন্য কোনো আলোর সঙ্গে মিলে যায় না। শুধু দৈত্যরাই দৈত্যদের দূর থেকে বুঝতে পারে। তুই তো দেখছি দৈত্য বিশারদ হয়ে গেছিস। তোর এই গবেষণা আমি মনে রাখব। তোকে ভূত বিষয়ে পিএইচডি ডিগ্রি দিলাম। পিএইচডি ডিগ্রি কি স্যার?। বড় হলে বুঝতে পারবি। আর একটা কথা, তোর এক চোখওয়ালা দৈত্যের নাম রেখেছিস কিছু? না স্যার। এক চোখবিশিষ্ট দৈত্যের নাম রাখাই হলো তোর নেক্সট ক্লাসের হোমওয়ার্ক। জ্বি স্যার। আবার জ্বি স্যার। ধমক খেয়ে আনন্দ তোতলাতে থাকে। বাড়ি ফিরে সে ভাবনায় পড়ে যায়। কিছুতেই সে দৈত্যের জন্য একটা ভালো নাম খুঁজে পাচ্ছে না। যে নামের মধ্যে এক চোখ গুরুত্ব পাবে। আবার লক্ষ রাখতে হবে যেন নামের কারণে দৈত্যটি দৈত্য ভিন্ন অন্য কিছু হয়ে না যায়। আনন্দ ভাবতে থাকে।

পাঠকের মতামত:

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

SMS Alert

শিক্ষা এর সর্বশেষ খবর

শিক্ষা - এর সব খবর