thereport24.com
ঢাকা, শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১,  ২১ জমাদিউল আউয়াল 1446

প্রকল্প অনুমোদনের পর ঋণ চুক্তি

স্থানীয় সরকার ব্যবস্থা উন্নয়নে ঋণ দিচ্ছে বিশ্বব্যাংক

২০১৩ নভেম্বর ২৮ ০৭:৪৩:৩৪
স্থানীয় সরকার ব্যবস্থা উন্নয়নে ঋণ দিচ্ছে বিশ্বব্যাংক

জোসনা জামান, দ্য রিপোর্ট : পৌরসভা ও সিটি করপোরেশনের নাগরিক সুবিধা নিশ্চিত করতে এবং স্থানীয় সরকার ব্যবস্থার উন্নয়নে বড় অঙ্কের ঋণ দিচ্ছে বিশ্বব্যাংক। এমজিএসপি প্রকল্পের আওতায় এ ঋণ নিচ্ছে বাংলাদেশ। একনেকে প্রকল্প অনুমোদনের পরই ঋণ চুক্তি হবে বলে জানা গেছে।

এ প্রকল্প বাস্তবায়নে মোট ব্যয় হবে ২ হাজার ৪৭০ কোটি ৯৩ লাখ ৯২ হাজার টাকা। এর মধ্যে বিশ্বব্যাংক দিচ্ছে ১ হাজার ৯৫৩ কোটি ৬৫ লাখ ৩৬ হাজার টাকা। বাকি ৫১৭ কোটি ২৮ লাখ ৫৬ হাজার টাকা সরকারি তহবিল থেকে ব্যয় করা হবে।

এ বিষয়ে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের অতিরিক্ত সচিব আরাস্তু খান দ্য রিপোর্টকে বলেন, বিশ্বব্যাংক ঋণ প্রদান করার বিষয়ে ইতোমধ্যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। একনেকে প্রকল্পটি অনুমোদনের পরেই ঋণ চুক্তি স্বাক্ষরিত হবে। তিনি জানান, বিশ্বব্যাংক সম্পাদিত গ্রোথ স্টাডির পর্যবেক্ষণ অনুযায়ী যেখানে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ও কর্মসংস্থান সৃষ্টির সম্ভাবনা বেশি, এমন ৪টি মেজর গ্রোথ করিডোর (ঢাকা, চট্টগ্রাম, সিলেট, রংপুর ও ময়মনসিংহ) এর উপর অবস্থিত পৌরসভা ও সিটি করপোরেশন এবং দক্ষিণ অঞ্চলের ৩টি জেলা শহরকে নির্বাচন করা হয়েছে।

সূত্র জানায়, প্রকল্পটির মাধ্যমে ৩টি কম্পোনেন্ট বাস্তবায়ন করা হবে। ২০১৯ সালের ডিসেম্বর মাসের মধ্যে এটি বাস্তবায়নের কাজ শেষ করবে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি)।

প্রকল্পটির অবকাঠামো উন্নয়ন সংক্রান্ত কাজ দেশের ৫টি বিভাগের ১৮টি জেলার ২৬ উপজেলা, ২৬ পৌরসভা বা সিটি করপোরেশনে বাস্তবায়িত হবে। এগুলো হচ্ছে, নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন, রংপুর সিটি করপোরেশন, কুমিল্লা সিটি করপোরেশন, সিলেট সিটি করপোরেশন এবং টাঙ্গাইল পৌরসভা, এলেঙ্গা, মাদারীপুর, শরিয়তপুর, গোপালগঞ্জ, ভালুকা, ত্রিশাল, মাধবদী, ভৈরব, শেরপুর সৈয়দপুর, গোবিন্দগঞ্জ, দাউদকান্দি, চান্দিনা, চৌদ্দগ্রাম, ফেনী, পটিয়া, মিরেরসরাই, সীতাকুন্ড, চকরিয়া, সায়েস্তাগঞ্জ ও মাধবপুর পৌরসভা।

বিশ্বব্যাংকের সহায়তায় সিটি করপোরেশন ও পৌরসভাগুলোতে যেসব কার্যক্রম বাস্তবায়িত হবে, তা হচ্ছে কম্পোনেন্ট-১ এর আওতায় ৬০০ কিলোমিটার আরবান সড়ক উন্নয়ন, ৫৭০ কিলোমিটার ব্রিজ/কালভার্ট নির্মাণ, ১২টি বাস টার্মিনাল, ৪টি ট্রাক টার্মিনাল, ৪টি বোট ল্যান্ডিং জেটি, ৪১০ কিলোমিটার ড্রেনেজ উন্নয়ন, ২৬টি কিচেন মার্কেট তৈরি, ২৬টি হোলসেল মার্কেট, ৩৬টি পাবলিক টয়লেট, ৬টি পার্ক উন্নয়ন এবং ৮টি কমিউনিটি সেন্টার তৈরি করা হবে।

কম্পোনেন্ট-২ এর আওতায় দেশব্যাপী সব সিটি করপোরেশন ও পৌরসভায় উন্নয়ন পরিকল্পনা গ্রহণ, আর্থিক ব্যবস্থাপনা, নিজস্ব রাজস্ব আদায় বৃদ্ধি, রেকর্ডপত্রাদি কম্পিউটারাইজেশন ইত্যাদি বিষয়ে দক্ষতা বৃদ্ধির কার্যক্রম করা হবে। এ কম্পোনেন্টের আওতায় পৌরসভার মেয়র, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। এছাড়া প্রকল্প থেকে পৌরসভাসমুহের যন্ত্রপাতি, হার্ডওয়্যার ও অন্যান্য লজিস্টিক সহায়তা করা হবে যা পৌরসভাগুলোর দক্ষতা বৃদ্ধিতে সহায়ক হবে।

কম্পোনেন্ট-৩ এর আওতায় প্রাকৃতিক দুর্যোগসহ বিভিন্ন জরুরি প্রয়োজনে অতিরিক্ত তহবিল সরবরাহের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে বলে জানা গেছে।

স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নন ও সমবায় মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, স্বাধীনতার পর থেকে বাংলাদেশ নগরায়ণ প্রক্রিয়ার মধ্যেই রয়েছে। নগরের জনসংখ্যা ১৯৭৪ সাল থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত ৮ শতাংশ থেকে বেড়ে ২৩ শতাংশ হয়েছে । ২০১৫ সালে তা বেড়ে ৩৩ শতাংশে বা মোট জনসংখ্যার ৩ ভাগের ১ ভাগ হবে। দ্রুত নগরায়ণের মূখে দেশের শহর ও নগরসমূহে অবকাঠামো ও সেবা প্রদানের ক্ষেত্র নানা সমস্যায় জর্জরিত। জীর্ণ অবকাঠামো, অপর্যাপ্ত সুপেয় পানি ও পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা, যানজট, পরিবেশদূষণ বাংলাদেশের নগরগুলোর স্বাভাবিকচিত্র, যা শহরের উন্নত জীবন যাপনে অন্যতম বাধা। তারপরও দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে নগরায়ণ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। এখন যা প্রয়োজন তা হচ্ছে সঠিক পরিকল্পনা ও ব্যবস্থাপনা। সঠিক ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে নগরায়ণ দেশের অর্থনৈতিক উন্নতি সাধন, দারিদ্র্য হ্রাস ও উন্নতমানের নাগরিক জীবন নিশ্চিত করতে ভূমিকা রাখতে পারে।

দেশের পৌরসভা ও সিটি করপোরেশনগুলো আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে ব্যাপক ভূমিকা রাখছে। যদিও আর্থ-সামাজিক এবং পরিবেশগত নানা সীমাবদ্ধতা রয়েছে। বর্তমানে বাংলাদেশের শহর এলাকায় দেশের শতকরা ৩০ ভাগ লোক বাস করে। জিডিপিতে যাদের অবদান শতকরা ৬০ ভাগ। শহর এলাকায় শ্রমের উৎপাদনশীলতা গ্রাম এলাকার চেয়ে অনেক বেশি।

এ প্রেক্ষিতে এর আগে বিশ্বব্যাংক শহর এলাকার মৌলিক নাগরিক সুবিধা প্রদান এবং পৌর প্রতিষ্ঠানের দক্ষতাবৃদ্ধির জন্য মিউনিসিপ্যাল সার্ভিসেস প্রকল্পের মাধ্যমে সহায়তা প্রদান করেছিল। যা ২০১২ সালের ৩০ জুন সমাপ্ত হয়েছে। এই প্রকল্পে রাজশাহী ও খুলনা সিটি করপোরেশন এবং ১৭টি পৌরসভা অন্তর্ভুক্ত ছিল। পাশাপাশি প্রকল্পটি বাস্তবায়নের সময় ৪টি বন্যা পরবর্তী পুনর্বাসনের আওতায় ১৫০টি পৌরসভায় সহায়তা প্রদান করা হয়েছিল। এছাড়া দেশব্যাপী সিটি করপোরেশন ও পৌরসভাগুলোর দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য এলজিইডিতে মিউনিসিপ্যাল সাপোর্ট ইউনিট স্থাপনের মাধ্যমে সহায়তা প্রদান করা হয়েছিল। এসময় বিএমডিএফ নামে একটি ননব্যাংকিং আর্থিক প্রতিষ্ঠান সৃষ্টি করা হয়, যা স্থানীয় পর্যায়ে পৌরসভা এবং সিটি করপোরেশনগুলোকে অবকাঠামোগত উন্নয়নের জন্য অর্থঋণ দিয়ে সাহায্য করছে।

ওই প্রকল্পের সফলতা ও অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে আবারও একটি প্রকল্প নেওযার জন্য সরকারের পক্ষ থেকে অনুরাধে জানানো হলে বিশ্বব্যাংক এতে সাড়া দেয়। পরবর্তীতে উল্লেখিত এমজিএসপি প্রকল্পে অর্থায়নের সম্মতি দিয়েছে। তাই এ প্রকল্পটিকে মিউনিসিপ্যাল সার্ভিসেস প্রকল্পের ফলোআপ প্রকল্প হিসেবে মনে করা হচ্ছে।

এ বিষয়ে পরিকল্পনা সচিব ভূইয়া সফিকুল ইসলাম দ্য রিপোর্টকে জানান, প্রস্তাবিত এমজিএসপি প্রকল্পের ওপর গত ৭ নভেম্বর পরিকল্পনা কমিশনে প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির (পিইসি) সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে ৪টি নতুন সিটি করপোরেশন ও ২২টি গুরুত্বপূর্ণ পৌরসভা উন্নয়ন হবে। এছাড়া প্রকল্পের মাধ্যমে ১৪৬টি পৌরসভায় ক্যাপাসিটি বিল্ডিং অ্যান্ড ইমপ্লিমেন্টেশন সার্পোট প্রদান করা হবে। প্রকল্পের আওতায় প্রাকৃতিক দুর্যোগসহ বিভিন্ন জরুরি প্রয়োজনে অতিরিক্ত তহবিল সরবরাহের ব্যবস্থা রয়েছে। তাই এ প্রকল্পটি একনেকে অনুমোদনের জন্য ইতোমধ্যেই সুপারিশ করা হয়েছে।

(দ্য রিপোর্ট/জেজে/এপি/এমডি/নভেম্বর ২৮, ২০১৩)

পাঠকের মতামত:

SMS Alert

বিশেষ সংবাদ এর সর্বশেষ খবর

বিশেষ সংবাদ - এর সব খবর