thereport24.com
ঢাকা, সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১,  ২৩ জমাদিউল আউয়াল 1446

ধানের শীষ, স্বতন্ত্র

দুই পথেই হাঁটছে জামায়াত

২০১৩ নভেম্বর ২৯ ০৪:১৪:৩৩
দুই পথেই হাঁটছে জামায়াত

কাওসার আজম, দ্য রিপোর্ট : হাইকোর্টের রায়ে জামায়াতে ইসলামীর নিবন্ধন অবৈধ ঘোষিত হওয়ায় আসন্ন ১০ম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নিজস্ব প্রতীকে অংশ নিতে পারছে না দলটি। এ অবস্থায় বিকল্প পথে হাঁটছেন জামায়াতের শীর্ষ নেতারা। হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে আপিলের প্রস্তুতির পাশাপাশি আগামী নির্বাচনে অংশগ্রহণের বিষয়টি নিয়েও ভাবছেন নেতারা। স্বতন্ত্র বা কোনো দলে যোগ দিয়ে নির্বাচনের পথ খোলা রয়েছে জামায়াতের। এ ক্ষেত্রে দুই পথেই হাটছেন শীর্ষ নেতারা।

জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী হতে আগে নিবন্ধিত কোনো দলের কমপক্ষে ৩ বছরের সদস্য থাকার বাধ্যবাধকতা ছিল। কিন্তু নির্বাচন কমিশন গণপ্রতিধিত্ব আদেশের (আরপিও) ১২ (জে) ধারা বাতিল করায় এবার এ বাধ্যবাধকতা থাকছে না। ফলে জামায়াত নেতারা তাদের দলীয় প্রতীকে অংশ নিতে না পারলেও নিবন্ধিত যেকোনো দলে যোগ দিয়ে বা স্বতন্ত্রভাবে আসন্ন নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন।

ঢাকা মহানগরীর কয়েকজন নেতার সঙ্গে আলাপ করে জানা যায়, শেখ হাসিনার অধীনে আসন্ন নির্বাচনে অংশ নেবে না জামায়াত। এটি বিএনপির নেতৃত্বাধীন ১৮ দলেরও সিদ্ধান্ত। এ জন্য তারা জোটগতভাবে কঠোর আন্দোলন চালিয়ে যাবেন। তবে পরিবেশ তৈরি হলে ১৮ দল নির্বাচনে অংশ নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেবে। এ ক্ষেত্রে জামায়াত স্বতন্ত্রভাবে বা কোনো নিবন্ধিত দলের প্রতীক নিয়ে জোটগতভাবে নির্বাচনে অংশ নেবে।

জামায়াতের এক কেন্দ্রীয় নেতা জানান, রাজপথে সরকারবিরোধী আন্দোলনের পাশাপাশি আগামী নির্বাচনে অংশগ্রহণের ব্যাপারেও প্রস্তুতি নিচ্ছে জামায়াত। এক্ষেত্রে নিবন্ধিত কোনো দলের প্রতীক নিয়ে নাকি স্বতন্ত্রভাবে অংশ নেওয়া হবে, তা আগামী দিনের রাজনৈতিক পরিস্থিতির উপরই নির্ভর করছে। বর্তমানে তারা দুইভাবেই প্রস্তুতি নিচ্ছেন বলে জানান এ জামায়াত নেতা। এ জন্য দলীয় প্রার্থী তালিকাও চূড়ান্ত করা হয়েছে এবং তারা নিজ নিজ এলাকায় সরকারবিরোধী আন্দোলনের পাশাপাশি স্থানীয় নেতাকর্মী ও জনগণের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করে যাচ্ছেন।

ছাত্রশিবিরের সাবেক এক কেন্দ্রীয় নেতা জানান, হাইকোর্টের রায়ে দলের নিবন্ধিত অবৈধ হওয়ার কারণে দলীয় প্রতীকে আসন্ন নির্বাচনে অংশ নেওয়া অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। এ অবস্থায় দুই পথ খোলা রয়েছে জামায়াতের। এ ক্ষেত্রে যদি নিবন্ধিত কোনো দলের প্রতীক নিয়ে নির্বাচনে অংশ নিতে হয় তাহলে জোটের প্রধান শরিক বিএনপির ধানের শীষকেই বেছে নেওয়ার সম্ভবনা বেশি। এছাড়া স্বতন্ত্রভাবে অংশ নেওয়ার সুযোগ তো রয়েছেই।

জামায়াত সূত্র জানায়, বিএনপির ধানের শীষ প্রতীককেই দলটি নিশ্চয়তার প্রতীক বলে মনে করছেন। কারণ হিসেবে জানা যায়, জোটগতভাবে নির্বাচন হলে জামায়াত নির্ধারিত আসন পাবে। এক্ষেত্রে যদি জামায়াতের প্রার্থীদের ধানের শীষ প্রতীক বরাদ্দ দেওয়া হয় তাহলে সেখানে বিএনপির কেউ বিদ্রোহী হিসেবে দাঁড়াতে পারছেন না। বিএনপি নেতাকর্মী ও সমর্থকরা জামায়াতের প্রার্থীকেই ভোট দেবেন। আর নিজেদের ভোট ব্যাংক তো থাকছেই। এক্ষেত্রে ২০০৮ সালের জাতীয় নির্বাচনের উদাহরণ রয়েছে তাদের সামনে। কয়েকটি আসনে বিএনপির বিদ্রোহী প্রার্থী থাকায় ওই নির্বাচনে আওয়ামী লীগ প্রার্থীর কাছে অল্প ভোটে হেরেছেন জামায়াতের দুই প্রার্থী। তাই আগামী নির্বাচনে নিশ্চিত জয় পেতে ধানের শীষকেই বেছে নিতে পারে দলটির শীর্ষ নেতৃত্ব। তবে এ নিয়ে যদি কোনো জটিলতা বা রাজনৈতিক পটপরিবর্তন হয় তাহলে বিকল্প কোনো দলের প্রতীক বা স্বতন্ত্রভাবে নির্বাচনে অংশ নেওয়ার প্রস্তুতিও রয়েছে দলটির। এক্ষেত্রে প্রার্থী তালিকা লম্বা থাকবে জামায়াতের।

এ ব্যাপারে জামায়াতের আইন বিষয়ক সম্পাদক এডভোকেট জসিম উদ্দিন সরকার দ্য রিপোর্টকে জানান, নির্বাচনে কিভাবে অংশ নেওয়া হবে এ নিয়ে আপাতত তারা ভাবছেন না। আইনি প্রক্রিয়ায় কিভাবে দলের নিবন্ধনের বৈধতা আনা যায় এ নিয়েই কাজ করছেন তারা। শেষপর্যন্ত জামায়াত নির্বাচনে অংশ নিতে না পারলে কি করবেন-এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে তখন সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

দলটির সর্বোচ্চ নীতি নির্ধারণী ফোরাম নির্বাহী পরিষদের সদস্য হামিদুর রহমান আযাদ এমপি বলেন, নির্বাচন কমিশনের গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশের ৯০বি ধারা অনুযায়ী জামায়াতকে নিবন্ধন দেওয়া হয়েছে। সে অনুযায়ী জামায়াত নির্বাচনে অংশ নিয়ে আসছে। আমরা হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করবো। আশা করছি সুবিচার পাবো। চূড়ান্ত রায়ে নিবন্ধন অবৈধ হলে কি করা হবে- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, যেহেতু বিষয়টি এখনো বিচারাধীন, তাই আপাতত অন্য কিছু চিন্তা করা হচ্ছে না।

চলতি বছরের ১ আগস্ট দলীয় গঠনতন্ত্রের কয়েকটি ধারা নির্বাচন কমিশনের গণপ্রতিনিধিত্ব অধ্যাদেশের ৯০বি (১)(বি)(২) এবং ৯০সি অনুচ্ছেদের সঙ্গে সাংঘর্ষিক হিসেবে চিহিৃত করে জামায়াতে ইসলামীর নিবন্ধন অবৈধ ঘোষণা করে হাইকোর্ট। ২০০৯ সালে বাংলাদেশ তরিকত ফেডারেশনের সেক্রেটারি জেনারেল সৈয়দ রেজাউল হক চাঁদপুরী ও জাকের পার্টির মহাসচিব মুন্সি আব্দুল লতিফসহ ২৫ জনের একটি রিট আবেদনের প্রেক্ষিতে হাইকোর্ট এ রায় দেয়। এতে যুদ্ধাপরাধ ইস্যুতে চাপে থাকা ধর্মভিত্তিক দলটি রাজনৈতিকভাবে আরো চাপে পড়ে। অনিশ্চয়তা দেখা দেয় দলটির রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ নিয়ে। আসন্ন নির্বাচনে অংশ নেওয়া নিয়েও সংশয় দেখা দেয় দলের কেন্দ্রীয় নেতাসহ সাধারণ নেতাকর্মীদের মধ্যে।

(দ্য রিপোর্ট/কেএ/জেএম/নভেম্বর ২৯, ২০১৩)

পাঠকের মতামত:

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

SMS Alert

রাজনীতি এর সর্বশেষ খবর

রাজনীতি - এর সব খবর