thereport24.com
ঢাকা, মঙ্গলবার, ২৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ১০ পৌষ ১৪৩১,  ২২ জমাদিউস সানি 1446

‘সাধারণ মানুষ স্থিতিশীলতা চায়’

২০১৩ ডিসেম্বর ০১ ০০:০৯:৫৫
‘সাধারণ মানুষ স্থিতিশীলতা চায়’

দ্য রিপোর্ট প্রতিবেদক : চলমান রাজনৈতিক সংঘাতে জনমনে উদ্বেগের শেষ নেই। সহিংসতার আগুনে পুড়ছে মানুষ, পুড়ছে মানবতা। টানা আন্দোলনে অচল হয়ে পড়েছে যোগাযোগ ব্যবস্থা। উপড়ে ফেলা হচ্ছে ট্রেন লাইন। বড় দুটি রাজনৈতিক দলের মধ্যে দ্বন্দ্ব চরমে। এক দলের নেতাকর্মীরা রয়েছেন গ্রেফতার আতঙ্কে, অন্যদল অটল আছে নির্বাচন অনুষ্ঠানে।

দুই দলেরই লক্ষ্য সুষ্ঠু নির্বাচন। দুই পক্ষের লক্ষবিন্দু এক হলেও কাজে মিল নেই। কেউ নির্বাচনের জন্য আন্দোলনের মাঠে। কেউ আবার নির্বাচনের টিকিট পেয়ে উল্লসিত। তাদেরই আরেকটা পক্ষ মনোনয়ন বঞ্চিত হয়ে বিভিন্ন জায়গায় আন্দোলন সংঘাতের দিকে যাচ্ছে।

রাজনীতির এই ডামাডোলে সাধারণ মানুষের জায়গা কোথায়? এই বিষয়ে দেশের বিশিষ্টজনরাও উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। দ্য রিপোর্ট-এর পক্ষ থেকে তাদের মতামত গ্রন্থনা করেছেন বাহরাম খান

ড. আকবর আলী খান
সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা

যতদিন রাজনৈতিক অস্থিরতা আছে ততদিন সাধারণ মানুষের দুর্ভোগ থাকবেই। আমরা আমাদের ভুলগুলো যদি দূর না করতে পারি তাহলে সমস্যা থেকে উত্তরণের পথ দেখি না। এজন্য প্রধান দুটি রাজনৈতিক দলের দায়িত্ব সবচেয়ে বেশি।

সমঝোতা এখন বহুল প্রচলিত শব্দ। বড় সংকটে পড়লেই আমরা সমঝোতার কথা বলি। ছোট ছোট জায়গাগুলোতে যদি আমরা পারস্পরিক সমঝোতার মনোভাব নিয়ে কাজ করি তাহলে বড় সংকটের উদ্ভব হয় না। এই চেষ্টা থাকতে হবে।

আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক
ভাইস চ্যান্সেলর, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

রাজনীতির মূল উদ্দেশ্য সাধারণ মানুষের সেবা করা। মানুষ যার যার কাজ মূল্যায়ন করেন। কে কতটা মূল্যায়িত হলেন সেটাই তার অর্জন। এটাই গণতান্ত্রিক রীতি। সাধারণ মানুষের স্বাধীনতা কেড়ে নেওয়ার অধিকার কারও নেই। দুঃখজনক হলেও সত্যি যে, আমরা সেই রাজনৈতিক সংস্কৃতি গড়ে তুলতে পারিনি। আশাহত হওয়ার অনেক কারণ আছে। এরপরও আমরা অনেক এগিয়েছি। সামনের দিনে আরো এগিয়ে যাবো। এই প্রত্যাশা রাখি।

অধ্যাপক নূর-উন-নবী
ভাইস চ্যান্সেলর, বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়

আমাদের রাজনৈতিক সংস্কৃতির জায়গায় বড় ধরনের ফারাক রয়েছে। সরকারি দলের নেতাকর্মীরা যেসব প্রতিক্রিয়া দেখাচ্ছে তা সাময়িক। বিরোধী দল যদি নির্বাচনে আসে, মনোনয়ন কার্যক্রম সম্পন্ন করে, তাদের ক্ষেত্রেও এমন কিছু প্রতিক্রিয়া আসবে। সাধারণত কয়েকদিন যাওয়ার পর এই মনোভাব থাকে না।

বিরোধী দল যেভাবে ধারবাহিক জ্বালাও-পোড়াও রাজনীতির পথে হাঁটছে তাতে শঙ্কিত হতে হয়। মানুষ যা চায় না তাই করতে বাধ্য হচ্ছে। এটা কোনো রাজনৈতিক দলের অধিকার হতে পারে না। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ সব জায়গায় মানুষ ভোগান্তির শিকার হচেছ।

অধ্যাপক ফেরদৌস হোসেন
রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

সাধারণ মানুষ সবসময় স্থিতিশীলতা চায়। রাজনৈতিক দলগুলো মানুষের সেই প্রত্যাশা বুঝতে ব্যর্থ হচ্ছে। কিন্তু সাধারণ মানুষকে অবুঝ ভাবার কোনো কারণ নেই। বাংলাদেশের মানুষ সৌদি আরবের মতো দেশের মানুষের মতো নন। আমাদের দেশের জনগণ রাজনৈতিকভাবে যথেষ্ট সচেতন।

রাজনৈতিক দলগুলো যেসব কার্যক্রম দেখাচ্ছে সেগুলোর ফলাফল তারা পাবে। জনগণ একাউন্ট অনুযায়ী সবকিছু জমা করবেন। আমার অভিমত হচ্ছে, রাজনৈতিক দলগুলো জনগণের প্রত্যাশা ধারণ করুক। তাহলেই সমাধান আসবে।

বদিউল আলম মজুমদার
সম্পাদক, সুশাসনের জন্য নাগরিক

সাধারণ মানুষ রাজনৈতিক দলগুলোর যাঁতাকলে পিষ্ট হচ্ছে। জীবন অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে। এই জায়গা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। মানুষ এমন পরিস্থিতি দেখতে চায় না। কয়েক বছর পর পর একই পরিস্থিতির সৃষ্টি হচ্ছে। এমন অবস্থার জন্য রাজনৈতিক দলগুলোকেই মূলত দোষারোপ করা হয়। আমাদের রাজনৈতিক সংস্কৃতি বির্নিমাণে সাধারণ মানুষেরও যথেষ্ট অবদান আছে। তাদেরকেও সচেতন হতে হবে।

পিয়াস করিম
অধ্যাপক, ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়

দেশ একটি রাজনৈতিক অচলাবস্থার সম্মুখীন। এই অবস্থা থেকে উত্তরণে প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোর দায়িত্ব সর্বাধিক। যে দল সরকারে থাকে তাদের দায়িত্ব থাকে সবচেয়ে বেশি। আশ্চর্যের সঙ্গে লক্ষ্য করা যাচ্ছে দায়িত্বশীল জায়গা থেকে দায়িত্বহীন কার্যক্রম হচ্ছে।

প্রতিদ্বন্দ্বী রাজনৈতিক দলকে শত্রু ভাবার মনোভাব থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। জনগণের স্বার্থ রক্ষা করার জন্য রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানের ভূমিকা খুব গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের প্রতিষ্ঠানগুলো সেভাবে গড়ে উঠছে। সরকারগুলো সেসব জায়গায় দলীয় দৃষ্টিভঙ্গিতে কাজ করে।

শান্তনু মজুমদার
শিক্ষক, রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ দলিল সংবিধান। সংবিধান অনুযায়ী জনগণের স্থান সবার ওপরে। বর্তমান পরিস্থিতিতে মনে হচ্ছে জনগণের স্থান রাজনৈতিক দলগুলোর পায়ের নিচে। এর জন্য অন্যদের দোষ দেওয়ার আগে জনসমাজের রাজনৈতিক সংস্কৃতির মান বুঝতে হবে। আমাদের জন-সমাজের রাজনৈতিক সংস্কৃতির মান নিম্ন পর্যায়ের।

রাজনৈতিক দলগুলো গণতন্ত্রের কথা বলে। বাস্তবে তারা সেই পর্যায়ে পৌঁছতে পারেনি। গণতান্ত্রিক রাজনীতির চাহিদা অনুযায়ী তারা যথেষ্ট বুর্জোয়া হয়ে উঠতে পারেনি। রাজনৈতিক দ্বন্দ্বের কথা আমরা বলি। আমার মনে হয় এই দ্বন্দ্বগুলো গোষ্ঠীগত দ্বন্দ্বের উর্ধে উঠতে পারেনি। এই কারণে একেকবার উদ্ভট ধরনের দাবি উত্থাপন হয় রাজনৈতিক দলগুলোর পক্ষ থেকে।

(দ্য রিপোর্ট/বিকে/এইচএসএম/ডিসেম্বর ০১, ২০১৩)

পাঠকের মতামত:

SMS Alert

বিশেষ সংবাদ এর সর্বশেষ খবর

বিশেষ সংবাদ - এর সব খবর