thereport24.com
ঢাকা, বুধবার, ১৫ মে 24, ১ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১,  ৭ জিলকদ  1445

শূন্য লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে পালিত হচ্ছে এইডস দিবস

২০১৩ ডিসেম্বর ০১ ০০:৩১:০২
শূন্য লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে পালিত হচ্ছে এইডস দিবস

মেহেদী হাসান, দ্য রিপোর্ট ডেস্ক : ১ ডিসেম্বর রবিবার বিশ্ব এইডস দিবস। জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে এইডসের বিরুদ্ধে জনমত গঠন ও সচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে ১৯৮৮ সালে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) ১ ডিসেম্বরকে ‘বিশ্ব এইডস দিবস’ হিসেবে ঘোষণা করে। সেই থেকে প্রতি বছর দিবসটি সারাবিশ্বে পালিত হয়ে আসছে।

প্রতি বছরের মতো এবারও আমাদের দেশে নানা কর্মসূচির মধ্য দিয়ে এইডস দিবস পালন করা হচ্ছে। এইডস মুক্ত একটি পৃথিবীর স্বপ্ন পূরণের লক্ষ্যে ওয়ার্ল্ড এইডস ক্যাম্পেইন ও তাদের সহযোগী সংস্থাসমূহ ২০১১ সাল থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত ‘শূন্য লক্ষ্যমাত্রা অর্জন’কে এইডস দিবসের প্রতিপাদ্য নির্ধারণ করেন।

বিশ্বে প্রথম ১৯৮১ সালে এইডসের জীবাণু সনাক্ত করা হয় ও ১৯৮৫ সালে আফ্রিকাতে প্রথম এইডস রোগী সনাক্ত করা হয়। বাংলাদেশে অনুপ্রবেশের সময় ১৯৮৯ সালে প্রথম এক বিদেশির শরীরে এইচআইভি (HIV) জীবাণু সনাক্ত করা হয়।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, ২০১৩ সালে পৃথিবীতে এইচআইভিতে আক্রান্ত হয়েছেন তিন কোটি ৯৪ লাখ মানুষ, এদের মধ্যে ২১ লাখ হলো শিশু। এইচআইভিতে আক্রান্ত অর্ধেকের বয়স ২৫ বছরের কম। এ পর্যন্ত এইডসে মৃত্যুবরণ করেছেন ২ কোটি ৮০ লাখ মানুষ। প্রতিবছর মারা যাচ্ছেন প্রায় ৩০ লাখ মানুষ। নতুন করে এ রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন প্রায় ৫০ লাখ মানুষ। অর্থাৎ প্রতি সেকেন্ডে এইচআইভি আক্রান্ত হয় ১০ দশমিক ৫৪ জন।

আরও গুরুত্বপূর্ণ তথ্য হলো, এইচআইভি ও এইডস নিয়ে যত লোক আছে তাদের এক বিশাল অংশ রয়েছে নিম্নআয় ও মধ্যআয়ের দেশগুলোতে। সবচেয়ে বেশি এইডস আক্রান্ত হলো আফ্রিকার মহাদেশের মধ্যবিত্ত দেশগুলো।

এইডস একটি মারাত্মক সংক্রামক রোগ। যা এইচআইভি (HIV) জীবাণুর মাধ্যমে সংক্রমিত হয়। এইডস এর পুরো নাম হলো (A-Acquired/অর্জিত) (I-Immune/রোগ প্রতিরোগ ক্ষমতা) (D-Deficiency/ঘাটতি) (S-Syndrome/অবস্থা/রোগের লক্ষণ সমূহ)। এইডসের ভাইরাস লেন্টিভাইরাস গোত্রের অন্তর্গত।

এইচআইভি সংক্রমণের সঙ্গে সঙ্গেই এইডস হয় না। কিন্তু একবার সংক্রামক এইচআইভি শরীরে ঢুকলে তাকে পুরোপুরি দূর করা এখন পর্যন্ত সম্ভব হয়নি। তাই এইচআইভি সংক্রমণ হলে এইডস প্রায় অনিবার্য।

এইচআইভি (HIV) নিরাময়ে এখনো কোনো ভ্যাকসিন বা টিকা আবিষ্কার হয়নি। তবে এইচআইভি (HIV) নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে এমন কিছু ঔষধ আছে, যা অ্যান্টিরেট্রোভাইরাল (এআরভি) ড্রাগস নামে পরিচিত। এইচআইভি রোগীদের অতি প্রয়োজনীয় ওষুধ হলো ‘নেভিরাপিন’ ও ‘হার্রট’। কিন্তু এই ওষুধ অত্যন্ত ব্যয়সাপেক্ষ।

এইচআইভি (HIV) ভাইরাস বিভিন্নভাবে ছড়াতে পারে। তবে সাধারণত যৌন সর্ম্পক, অনিরাপদ শারীরিক সর্ম্পক, অন্যের ব্যবহৃত সুই, সিরিঞ্জ, ব্লেড, রেজার, টুথব্রাশ ব্যবহার, অপরীক্ষিত রক্ত গ্রহণ, এইচআইভি (HIV) জীবাণুবাহী পিতা-মাতার সন্তান জন্ম নেওয়া, এইচআইভি (HIV) জীবাণুবাহী মায়ের স্তন্যপানে এই ভাইরাস ছড়ায়।

স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ সচিব এম এম নিয়াজ উদ্দিন বলেন, ২০১১ থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত বিশ্ব এইডস দিবসের প্রতিপাদ্য ‘শূন্য লক্ষ্যমাত্রা অর্জন’। এই প্রতিপাদ্যের উদ্দেশ্য হলো তিনটি বিষয়ে শূন্য লক্ষ্যমাত্রা অর্জন। এগুলো হচ্ছে, ২০১৫ সালের মধ্যে এইচআইভি’র নতুন সংক্রমণ রোধ, এইচআইভি আক্রান্তদের প্রতি বৈষম্য দূরিকরণ এবং মৃত্যুহার শূন্যের কোঠায় নামিয়ে আনা।

২৮ নভেম্বর স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন।

ন্যাশনাল এইডস প্রোগ্রামের লাইন ডিরেক্টর ডা. মো. আবদুল ওয়াহিদ বলেন, ২০১৩ সালের তথ্য অনুযায়ী বাংলাদেশে এইচআইভি আক্রান্তের সংখ্যা তিন হাজারের মতো। তবে জাতিসংঘের বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও-এর তথ্য অনুযায়ী আট হাজারের বেশি এইচআইভি আক্রান্ত রোগী বাংলাদেশে আছে। রাজধানী ঢাকা শহরে এ রোগে আক্রান্তের সংখ্যা বেশি। দ্বিতীয় পর্যায়ে রয়েছে চট্টগ্রাম, খুলনা ও বরিশাল। এ রোগে ২০১৩ সালে বাংলাদেশে ১১৯ জন আক্রান্ত হয় ও ৭০ জন মারা যায়।

তিনি আরো জানান, বাংলাদেশের শতকরা ৬৯ ভাগ ট্রাক ড্রাইভার ও রিকশাচালক যৌনকর্মীদের সঙ্গে মিলিত হন। এর মধ্যে ট্রাক শ্রমিকদের শতকরা ৫২ ভাগ এবং রিকশাচালকদের শতকরা ৭৫ ভাগ বিবাহিত। ফলে এদের স্ত্রীদের এইডসে আক্রান্ত হওয়ার হার শতকরা প্রায় ৬ ভাগ।

বাংলাদেশের এইডস ভাইরাস পরীক্ষা করা হয় ভাইরোলজি বিভাগ, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা; আইইডিসি এন্ড আর, মহাখালী, ঢাকা। মাইক্রোবায়োলজি বিভাগ, সিলেট ও চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও এএফআইপি ঢাকা সেনানিবাস, ঢাকা।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইরোলজি বিভাগের চেয়ারম্যান শাহিনা তাবাসসুম বলেন, এ বিশ্ববিদ্যালয়ে এইচআইভি এইডসের সব ধরনের পরীক্ষা-নিরীক্ষা হচ্ছে। পরীক্ষায় একজন যখন এইচআইভি পজিটিভ হচ্ছেন তারপর তিনি কোথায় যাবেন সে বিষয়টি সরকারের আয়ত্তে নেই। তাই নিজ দায়িত্বেই চিকিৎসার জন্য কয়েকটি এনজিও’র নাম বলে দেওয়া হচ্ছে। তবে তাদের মধ্যে কতজন সেখানে চিকিৎসা নিতে যাচ্ছেন তার হিসাব নেই। এই রোগীদের মধ্যেই অনেককে দেখা যায়, এইচআইভি পজেটিভ সন্তান নিয়ে আবার ফিরে আসছেন।

তিনি আরো বলেন, এইচআইভি পজিটিভ গর্ভবতী মা ও অন্য ব্যক্তিদের কোনো হাসপাতাল চিকিৎসা দিতে চায় না। তাই এই রোগীদের জন্য আলাদা হাসপাতাল ও অন্যান্য হাসপাতালে আলাদা ওয়ার্ড থাকা প্রয়োজন।

ব্যক্তিগত ও সামাজিক সচেতনতার মাধ্যমে এইডস রোগের জীবাণুর বিস্তার রোধ করা সম্ভব। প্রতিরোধই হচ্ছে এইডস থেকে নিজেকে বাঁচানোর উত্তম উপায়। সংক্রামক এই রোগ থেকে বাঁচতে হলে আমাদের যা করণীয়- ধর্মীয় অনুশাসন মেনে চলা, অনিরাপদ শাররীক সর্ম্পক স্থাপন না করা, কারো ব্যবহৃত সুঁই, সিরিঞ্জ, রেজার, টুথব্রাশ ব্যবহার না করা, অপরীক্ষিত রক্ত শরীরে গ্রহণ না করা, অনিরাপদ শারীরিক সর্ম্পকে কনডম ব্যবহার করা।

প্রতিরোধের উপায়গুলোর পাশাপাশি প্রয়োজন জনসচেতনতা ও সার্বিক চিকিৎসা। অনেকে এর আওতায় এলে প্রতিরোধ কার্যক্রম এক অর্থে বেশি শক্তিশালী হবে। এ জন্য বেশি বিনিয়োগ প্রয়োজন। তাহলে দুঃখী পীড়িত দরিদ্র বিশ্বের মানুষ পাবে অগ্রাধিকার। চিকিৎসা বিশ্বের সব এইডস আক্রান্ত ব্যক্তির কাছে পৌঁছানো মানবাধিকার হিসেবে বিবেচনা করা হলে এ মহামারি রোগ আমাদের পুরো নিয়ন্ত্রণে আসতে পারে।

(দ্য রিপোর্ট/এমএইচও/এইচএসএম/ডিসেম্বর ০১, ২০১৩)

পাঠকের মতামত:

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

SMS Alert

স্বাস্থ্য এর সর্বশেষ খবর

স্বাস্থ্য - এর সব খবর