thereport24.com
ঢাকা, বুধবার, ১৮ ডিসেম্বর ২০২৪, ৪ পৌষ ১৪৩১,  ১৬ জমাদিউস সানি 1446

শীতের অসুখ

২০১৩ ডিসেম্বর ০২ ০৫:১৯:১৪
শীতের অসুখ

নিশম সরকার : পাড়া-মহল্লার মোড়ে মোড়ে ভাপা পিঠার দোকানগুলো দেখে মোটামুটি নিশ্চিত হওয়া যায় শীত আসতে আর দেরি নেই। ধূসর চাদর পরা শীতের সকালগুলো যেন একটু অন্যরকম সুন্দর। ঘাসের পাতায় কাচের টুকরোর মতো শিশির দেখলে দিনের শুরুটা আনন্দে ভরে যায়। তবে এই শীতকে ঘিরে কিছু রোগ-বালাই অপেক্ষা করতে থাকে। কখন শীত আসবে আর এই বিরস রোগ-বালাই ঝাঁপিয়ে পরবে, এই অপেক্ষায় থাকে যেন এরা। শীত উপলক্ষে আমাদের নিতে হবে কিছু বাড়তি সতর্কতা, জানতে হবে এই রোগগুলো সম্পর্কে।

শীতের এই সময়টাতে সর্দি-কাশি, ভাইরাস জ্বর, শ্বাসতন্ত্রের সমস্যা, নিউমোনিয়াসহ ত্বকের বিভিন্ন সমস্যা, হাত-পা ফেটে যাওয়া, খোঁস-পাঁচড়া ইত্যাদি বিভিন্ন সমস্যা দেখা দেয়। জানা যাক, এই রোগগুলো থেকে কীভাবে বাঁচা যায়।

সর্দি-কাশি ও ভাইরাস জ্বর : বেশির ভাগ ক্ষেত্রে রাইনো ভাইরাস দিয়ে শ্বাসনালির সংক্রমণে হয় সর্দি। অন্যান্য ভাইরাসের মধ্যে আছে কোরোনা ভাইরাস, প্যারা-ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাস, রেসপিরেটরি সিনসাইটিয়াল ভাইরাস প্রভৃতি। মাথা ব্যথা, মাথা ভারী বোধ হওয়া, নাক দিয়ে পানি পরা, খুসখুসে কাশি ইত্যাদি উপসর্গ দেখা যেতে পারে। সপ্তাহখানেকের মধ্যে রোগটি ভালো হয়ে যায়। তবে অনেক ক্ষেত্রে জটিলতা দেখা দেয়। ছোট শিশুদের ফুসফুসে ইনফেকশন হয়ে হতে পারে ব্রংকিওলাইটিস, নিউমোনিয়া। হতে পারে ওটিটিস মিডিয়া (মধ্যকানের প্রদাহ)। বড়দের হতে পারে সাইনোসাইটিস।

সর্দি নিয়মিত পরিষ্কার করে নাসারন্ধ্র খোলা রাখতে হবে। হাঁচি-কাশির জন্য হিসটামিন, ওরাটিডিন, লরাটিডিন কিংবা কিটোটিফেন গ্রুপের ঔষধ একটি করে দিনে দুইবার সেবন করতে পারেন। জ্বর, মাথা ব্যথার জন্য প্যারাসিটামল দিনে তিনবার খাওয়ার পরে (বয়সানুসারে)। এ ছাড়াও আদা চা, লেবু চা, মধু, তুলসি পাতার রস বেশ উপকারে আসে। শিশুদের ব্রংকিওলাইটিস, নিউমোনিয়াসহ যে-কোনো জটিলতায় অবশ্যই চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে।

নিউমোনিয়া : জন্ম নেওয়া বাচ্চা থেকে সাধারণত ৫ বছর বয়সী বাচ্চাদের শীতে নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হবার হার বেশি। শান্ত থাকা অবস্থায় শিশুর যদি নিঃশ্বাস নিতে কষ্ট হয়, নিঃশ্বাস নিতে গেলে ঘড়ঘড় আওয়াজ হয়, বুক ভেতরের দিকে ডেবে যায়, সঙ্গে হালকা জ্বর– এ সবই নিউমোনিয়ার লক্ষণ। এ সময় বুকে ব্যথা হতে পারে। ব্যথা হলে শিশু ব্যথার স্থানে হাত দিয়ে রাখতে হবে। অথবা যেদিকে ব্যথা সেদিকে পাশ ফিরে শুয়ে থাকতে হবে। এ ধরনের লক্ষণ দেখা গেলে দেরি না করে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে। সাধারণত বুকের এক্স-রে করতে হয় ও রক্তের রুটিন পরীক্ষা করতে হয়। এক্স-রে থেকে নিউমোনিয়া হয়েছে কিনা জানা যাবে। এবং রক্ত পরীক্ষার মাধ্যমে ভাইরাল না ব্যাক্টেরিয়াল নিউমোনিয়াতে শিশু আক্রান্ত, তা বোঝা যাবে। চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী বয়স ও ওজন অনুসারে এন্টিবায়োটিক ও শ্বাস কষ্ট কমাবার জন্য সালবিউটামল, থিওফাইলিন এক চামচ করে দিনে তিনবার সেবন করতে হবে।

জিহ্বা ও মুখের কোণায় ঘা : ভিটামিন বি২, আয়রনের অভাবে এই সমস্যা দেখা যায়। খুশকি বেড়ে যাবারও একটি কারণ এই ভিটামিন বি২ (রিবোফ্ল্যাভিন)-এর অভাব। সবুজ শাক-সবজি, ডিম, দুধ, মাশরুম, কলিজা এগুলো ভিটামিন বি২-এর খুব ভালো উৎস। এ ছাড়া মাল্টিভিটামিন ট্যাবলেট, রাইবোফোভিন সেবন করা যেতে পারে।

হাত-পা ফেটে যাওয়া, চামড়া ওঠা : ৩টি কারণে এটি হতে পারে। বংশগত, পুষ্টির অভাবে ও পরিচর্যার অভাবে। অতিরিক্ত ধূলাবালি থেকে দূরে থাকতে হবে। বেশিক্ষণ হাত পা ভেজা রাখবেন না। পানির কাজ শেষ হলেই হাত মুছে শুকনো করে ফেলুন। গ্লিসারিন মাখুন ঘুমানোর আগে। এবং গোসল শেষ করে হাত শুকানোর পরে। আর প্রতিদিনের খাদ্য তালিকাতে সুষম খাদ্য রাখুন, এতে করে পুষ্টিহীনতার কারণে চামড়া ওঠা বন্ধ হবে। অবস্থা তীব্র আকার ধারণ করলে ত্বক বিশেষজ্ঞের শরণাপন্ন হতে হবে।

খোঁস-পাঁচড়া : শিশু, বয়স্ক যে কারও এই রোগ হতে পারে। ঘনবসতিপূর্ণ স্থানে এই রোগ বেশি দেখা দেয়। সারকপটিস স্কেবিয়াই জীবাণু এ রোগের জন্য দায়ী। ছোট ছোট ঘামাচির মতো ফুসকুড়ি হওয়া, চর্মে ছোট ছোট সুড়ঙ্গ হওয়া, অসংখ্য নখের আচড় ও ক্ষতগুলোতে ব্যাকটেরিয়া দ্বারা সেকেন্ডারি ইনফেকশন হয়ে পুঁজ দেখা যেতে পারে। এ রোগের লক্ষণ প্রথমত ভাজপ্রধান অঞ্চলে যেমন- দুই আঙ্গুলের মধ্যবর্তী স্থান, হাতের কবজি, কনুই, বগল, নাভির কাছে, ঊরু প্রভৃতি স্থানে দেখা দেয়। বাচ্চাদের মুখে, মাথায়, হাত ও পায়ের তালুতে এ রোগ দেখা যায়।

পারমিথ্রিন ৫% ক্রিম সবচেয়ে নিরাপদ এবং সবচেয়ে বেশি কর্যকর। শিশু এবং গর্ভবতী মহিলাদের অনায়াসে ব্যবহার করা যায়। ১% গামা বেনজিন হেঙাক্লোরাইড স্ক্যাবিশের ব্যাকটেরিয়া দ্বারা গৌণ সংক্রমণের ক্ষেত্রে খুবই কার্যকর। তবে শিশু এবং গর্ভবতী মহিলাদের ক্ষেত্রে কিডনির নিরাপত্তার জন্য ব্যবহার করা যাবে না। ২৫% বেনজাইল বেনজয়েড ইমালশন ২ ভাগ পানির সঙ্গে মিশিয়ে পর পর ৩ দিন ব্যবহার করতে হয়। চোখ এবং ঠোঁট ছাড়া এই ওষুধগুলো শরীরের সব জায়গায় ব্যবহার করতে হয়। সর্বশেষ ব্যবহারের ৮ থেকে ১২ ঘণ্টা পরে সাবান দিয়ে শরীর ঘষে ভালোভাবে গোসল করতে হবে। সেই সঙ্গে রোগীর ব্যবহার্য কাপড়চোপড় সোডা দিয়ে সিদ্ধ করে ধুতে হবে এবং রোদে শুকাতে হবে।

শীতে সবাই সুস্থ থাকুন, শীতকে পুরোপুরি আমেজের সঙ্গে উপভোগ করুন।

(দ্য রিপোর্ট/কেএম/আইজেকে/ডিসেম্বর ০২, ২০১৩)

পাঠকের মতামত:

SMS Alert

স্বাস্থ্য এর সর্বশেষ খবর

স্বাস্থ্য - এর সব খবর