thereport24.com
ঢাকা, মঙ্গলবার, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ১২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১,  ২৪ জমাদিউল আউয়াল 1446

রেলে নাশকতায় অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারিরা জড়িত!

২০১৩ ডিসেম্বর ০২ ১৭:০৭:০০
রেলে নাশকতায় অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারিরা জড়িত!

রানা হানিফ, দ্য রিপোর্ট প্রতিবেদক : সম্প্রতি বিরোধী জোটের ডাকা সড়ক, রেল ও নৌ-পথ অবরোধে রেলপথে নাশকতার ঘটনায় কিছু অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারি জড়িত বলে সন্দেহ রেল কর্তৃপক্ষের। নাশকতার ধরন ও কিছু গোপন সূত্রের ভিত্তিতে এমন সন্দেহ করছে তারা।

রেল কর্তৃপক্ষ মনে করছেন, রেলের কারিগরি ও প্রকৌশল বিভাগে কর্মরতরা ছাড়া অন্য কারো পক্ষে এতো দ্রুত ফিসপ্লেট, বোল্ড ও রেল পাটি খুলে ফেলা সম্ভব নয়। সরাসরি জড়িত না হলেও পরোক্ষভাবে কিছু অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারি নাশকতাকারীদের সহায়তা করছেন।

রেলের উপর ধারাবাহিক নাশকতায় রেলের অভ্যন্তরীণ কেউ কেউ জড়িত আছে বলে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন একাধিক কর্মকর্তা। এ অভিযোগে রেলের স্থানীয় পর্যায়ের সন্দেহভাজন বেশ কিছু কর্মকর্তা-কর্মচারিকে বিশেষ নজরে রাখা হয়েছে।

তবে এ ব্যাপারে অতিরিক্ত মহাপরিচালক (অবকাঠামো) মো. আমজাদ হোসেন দায়িত্ব না নিয়ে দ্য রিপোর্টকে বলেন, ‘আমার কাছে নিশ্চিত কোন তথ্য নেই, যে এসব ঘটনায় রেলের কোন কর্মকর্তা বা কর্মচারি জড়িত। তবে ঘটনাগুলো দেখলে অবশ্যই সন্দেহ হয়, অভ্যন্তরীণ কেউ এসব ঘটনায় প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে জড়িত। কারণ ফিসপ্লেট, বোল্ট ও রেলের পাটি খুলতে যেসব ইকুয়েপমেন্ট (যন্ত্রাংশ) প্রয়োজন তা সাধারণ অবরোধকারীদের কাছে থাকার কথা না। যেসব জায়গায় নাশকতা ঘটানো হয়েছে সেখানকার কয়েক’শ মিটার রেল ফিসপ্লেট খুলে ফেলা হয়েছে। আর এসব ঘটনা ঘটানো হয়েছে খুব দ্রুত সময়ের মধ্যে। এসব ফিসপ্লেট প্রফেশনালরা (পেশাগত) ছাড়া কিংবা তাদের সহায়তা ছাড়া অন্য কারো পক্ষে খোলা সম্ভব নয়।’

তিনি বলেন, ‘রেলের নাশকতার ঘটনায় তদন্ত করলে প্রকৃত দায়ীরা বেরিয়ে আসবে। তখন জানা যাবে রেলের কেউ এসব ঘটনায় জড়িত কিনা।’

এদিকে নাম প্রকাশ না করা শর্তে রেলের প্রকৌশল বিভাগের এক কর্মকর্তা জানান, ‘দেশে অন্যান্য সেবাখাতের মতো রেলের কর্মকর্তা ও কর্মচারী পর্যায়ে ইউনিয়ন রয়েছে। এসব ইউনিয়ন কোনো না কোনো রাজনৈতিক দলের অনুসারি। আমাদের কাছে অনির্ভরযোগ্য সুত্র থেকে কিছু তথ্য আছে, রেলের নাশকতায় বিরোধী দলের মতাদর্শের কিছু কর্মকর্তা ও কর্মচারী অবরোধ পালনকারীদের সহায়তা করছেন। বিভিন্ন স্থানে কিছু কিছু কর্মকর্তা ও কর্মচারীর নামেও অভিযোগ শোনা যাচ্ছে। তবে তদন্ত না হওয়া পর্যন্ত তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করা সম্ভব নয়। সন্দেহের তালিকায় থাকা এমন বেশ কিছু কর্মকর্তা-কর্মচারীকে বিশেষ নজরে রাখা হয়েছে।

ধারাবাহিক অবরোধে চলমান নাশকতায় বাংলাদেশ রেলওয়ের শত কোটি টাকার মত ক্ষতি হয়েছে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ রেলওয়ের একটি সূত্র।

একই সঙ্গে রেলের উপর ধারাবাহিক সহিংসতা মোকাবেলা করতে হিমসিম খাচ্ছে রেল কর্তৃপক্ষ। মোট দুই হাজার ৮৫৫ কিলোমিটার দীর্ঘ রেল পথে মোট ৬৩৬টি ঝূঁকিপূর্ণ পয়েন্ট রয়েছে। আর নাশকতাকারীরা এসব পয়েন্টকেই বেছে নিয়েছে হামলার জন্য। শুধু মাত্র রেলের নিজস্ব নিরাপত্তা কর্মীদের দিয়ে এসব ঝূঁকিপূর্ণ পয়েন্টের নিরাপত্তা দেয়া সম্ভব নয় বলে মনে করছে রেল কর্তৃপক্ষ।

রেলের ক্ষয়ক্ষতি নিয়ে ২৯ নভেম্বর এক সংবাদ সম্মেলনে রেলমন্ত্রী মুজিবুল হক জানান, নভেম্বরের শেষ সপ্তাহের তিন দিনের অবরোধ সহ রাজনৈতিক কর্মসূচীতে মোট ৩২ কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। এর মধ্যে শুধু মাত্র অবরোধের নাশকতায় ক্ষতি হয়েছে ৬ কোটি টাকা।

বিরোধী জোটের ধারাবাহিক অবরোধে রেলের আর্থিক ক্ষয়ক্ষতি সম্পর্কে জানতে চাইলে রেলের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (অবকাঠামো) প্রকৌশলী মো. আমজাদ হোসেন দ্য রিপোর্টকে বলেন, ‘আমার চাকরি জীবনের ইতিহাসে রাজনৈতিক কর্মসূচীতে রেলের এতো ক্ষয়ক্ষতি আগে কখনো দেখিনি। বিগত দুই মাসের হরতাল ও অবরোধে শুধু মাত্র রেলের যে পরিমাণ ক্ষতি হয়েছে তা রেলের ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি।’

তিনি বলেন, ‘শুধুমাত্র নভেম্বর মাসের রাজনৈতিক কর্মসূচিতে রেলের উপর যে আঘাত এসেছে তাতে শত কোটি টাকার উপরে আর্থিক ক্ষতি হয়েছে এই খাতের। ধারাবাহিক ভাবে অবরোধ ও হরতাল কর্মসূচির কারণে রেল কর্তৃপক্ষ রেলের প্রটেক্টশন ও রিকোভারেই ব্যস্ত। রেলের ক্ষয়ক্ষতি নিরুপনে এখনো কোন তদন্ত করা হয়নি। আমরা কিভাবে তদন্ত করবে। আজ যদি আখাউড়া, কুমিল্লা অঞ্চলের তদন্ত শুরু করি, দেখা যাবে একই দিনে ঈশ্বরদী অথবা অন্যকোন স্থানে নাশকতা হচ্ছে।’

আমজাদ হোসেন বলেন, ‘নভেম্বর মাসের শেষ সপ্তাহ থেকে গতকাল (রবিবার) পর্যন্ত বগিতে আগুন, ফিসপ্লেট খুলে ফেলার মত অবকাঠামোগত ক্ষতি, এসব ক্ষতিগ্রস্ত রেলপথ সংস্কার, রেলের সিডিউল বিপর্যয়সহ অতিরিক্ত জনবল নিয়োগের কারণে রেলের ক্ষতি পরিমাণ শত কোটি টাকা ছাড়িয়ে গেছে। তবে তদন্তের মাধ্যমে প্রকৃত ক্ষতির পরিমাণটা জানা যাবে। পরিস্থিতি শান্ত না হওয়া পর্যন্ত আমরা এসব ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নিরুপন করতে পারছি না। যা জানছি তা স্থানীয় পর্যায়ের রেলের ট্রাফিক বিভাগ থেকে জানছি।’

রেলের এই কর্মকর্তা জানান, নাশকতা রোধে রেলের নিজস্ব ৪ হাজার নিরাপত্তা কর্মীর জিআরপি ও আরএনবি’র সঙ্গে অনান্য নিরাপত্তা বাহিনী থেকে অতিরিক্ত প্রায় ৫ হাজার সদস্য যোগ করা হয়েছে। এছাড়া বিভিন্ন স্থানের নাশকতার ধরণ অনুযায়ি স্থানীয় রেল কর্তৃপক্ষ ও জিআরপি প্রয়োজন বোধে জেলা প্রশাসনের সঙ্গে যোগাযোগ করে বিজিবি মোতায়েন করছে।

(দ্য রিপোর্ট/এইচআর/এইচএস/ডিসেম্বর ০২, ২০১৩)

পাঠকের মতামত:

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

SMS Alert

জেলার খবর এর সর্বশেষ খবর

জেলার খবর - এর সব খবর