thereport24.com
ঢাকা, বুধবার, ২৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ১১ পৌষ ১৪৩১,  ২৩ জমাদিউস সানি 1446

প্রকল্প বাস্তবায়ন হয়নি

স্মার্টকার্ড পাচ্ছেন না ভোটাররা

২০১৩ ডিসেম্বর ০৪ ২৩:২৪:৪৭
স্মার্টকার্ড পাচ্ছেন না ভোটাররা

জোসনা জামান, দ্য রিপোর্ট : দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে স্মার্টকার্ড পাচ্ছেন না ৯ কোটি ভোটার। ২০১১ সালে এ সংক্রান্ত প্রকল্প হাতে নেওয়া হলেও বিশ্বব্যাংক ও নির্বাচন কমিশনের মধ্যে নানা বিষয়ে মতবিরোধের কারণে প্রকল্পটির বাস্তবায়ন ঝুলে যায়।

তবে বর্তমানে সব জটিলতা কেটে গেছে বলে দাবি করেছেন প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা। এ প্রকল্পটি আগামী ২০১৫ সালের জুনের মধ্যে বাস্তবায়নের কথা রয়েছে।

এ বিষয়ে প্রকল্প পরিচালক কর্নেল মো. সালেউদ্দিন দ্য রিপোর্টকে জানান, নানা কারণে প্রকল্পের বাস্তবায়ন বিলম্বিত হলেও এখন বাস্তবায়নে আর বাধা নেই। এ সংক্রান্ত একটি আইন সম্প্রতি জাতীয় সংসদে পাস হওয়ায় সমস্যা কেটে গেছে। তবে লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী আগামী নির্বাচনের আগে ভোটারদের হাতে স্মার্টকার্ড তুলে দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না।

এ বিষয়ে বিশ্বব্যাংকের দায়িত্বে থাকা অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের অতিরিক্ত সচিব আরাস্তু খান দ্য রিপোর্টকে বলেন, আইন পাসের মধ্য দিয়ে এ প্রকল্পের সমস্যার সমাধান হয়েছে। প্রকল্পটি নিয়ে আমরা উদ্বিগ্ন ছিলাম। নানা ধরনের জটিলতায় এটির বাস্তবায়ন মুখথুবড়ে পড়েছিল। ইতোমধ্যে অপারেশন সংক্রান্ত সমস্যা দূর হয়েছে। কাজেই আশা করছি এখন গতি ফিরে আসবে।

নির্বাচন কমিশনের সচিব ড. মোহাম্মদ সাদিক বলেন, প্রকল্পের শুরুতেই অনেক শর্তের কারণে খারাপ অবস্থা ছিল। জাতীয় নিবন্ধন আইন পাস হওয়ায় সব জটিলতার অবসান হয়েছে। আশা করছি এখন প্রকল্পটি বাস্তবায়নে আর কোনো সমস্যা নেই।

বিশ্বব্যাংক বাংলাদেশ অফিসের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মেহেরিন এ মাহবুব বলেন, আইনের সংশোধনীর মাধ্যমে প্রকল্পটির মূল সমস্যা কেটে গেছে। প্রকল্পের কাজ যে একেবারেই হয়নি তা নয়, কেননা এ প্রকল্প থেকেই আইনটির সংশোধনী প্রক্রিয়ায় সাপোর্ট দেওয়া হয়েছিল। সেটিও তো একটি কাজ। জাতীয় নির্বাচনের কারণে বাস্তবায়ন কাজ কিছুটা ধীর হতে পারে। কেননা নির্বাচন কমিশনের মনোযোগ এখন নির্বাচনের দিকে থাকাটাই স্বাভাবিক। তাছাড়া প্রকল্পটি বাস্তবায়নে আর কোনো সমস্যা নেই। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এ কার্ডটি নির্বাচনের সময় ভোট দেওয়া ছাড়াও রাষ্ট্রের বিভিন্ন নাগরিক সুবিধা পেতে ব্যবহৃত হবে। এক কথায় বলতে গেলে বর্তমান জাতীয় পরিচয়পত্র যেসব কাজে লাগে সেই রকমই ব্যবহার হবে স্মার্টকার্ড।

সূত্র জানায়, নির্বাচন কমিশন ও বিশ্বব্যাংকের মধ্যে শর্ত পূরণ নিয়ে টানাপড়নের কারণে স্থবির হয়ে পড়েছিল স্মার্টকার্ড তৈরির প্রকল্পটি। সংস্থাটি জাতীয় নিবন্ধন আইন সংশোধনের ক্ষেত্রে বেশকিছু পরামর্শ দিয়েছিল। নির্বাচন কমিশন তাদের নিজস্ব ভাবধারায় পরিবর্তন আনতে চেয়েছিল। আবার ক্রয়প্রক্রিয়া ও বিতরণে খবরদারি চেয়েছিল বিশ্বব্যাংক। এতেও নারাজ হয় নির্বাচন কমিশন। দু’পক্ষের টানাটানিতে ঋণ বাতিলের উপক্রম হয়েছিল। পরবর্তীতে ব্যাপক আলাপ-আলোচনার পর বিশ্বব্যাংক ও নির্বাচন কমিশন উভয়পক্ষ শর্ত ছাড় দিয়ে একটি সমঝোতায় পৌঁছে।

বিশ্বব্যাংকের পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল, জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন আইনে নাগরিকের তথ্যের গোপনীয়তা ও সুরক্ষা, জাতীয় পরিচিতি নম্বর একটি ইউনিক নম্বর হবে, সব নাগরিক ধাপে ধাপে পরিচয়পত্র পাবে, কোনো নাগরিককে কার্ড না থাকার জন্য কোনো সেবা থেকে বঞ্চিত করা যাবে না, জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন তহবিল করতে হবে। অপরদিকে নির্বাচন কমিশন দেশের অন্যান্য সংস্থা এই কার্ড ব্যবহার করতে পারবে এমন সুযোগ চায়।

দুপক্ষের মধ্যে নিবন্ধন আইন নিয়ে কিছুটা নমনীয় তা দেখা গেলেও ক্রয়সংক্রান্ত বিষয়ে বিশ্বব্যাংকের খবরদারি মানতে নারাজ হয় নির্বাচন কমিশন। এমনকি বিতরণে ১৭৪ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়। যেখানে দুর্নীতির আশাঙ্কা করে সেখানেও পূর্ণাঙ্গ নজরদারি চায় সংস্থাটি। এসব কারণে প্রকল্পটি ঝুলে যায়।

সূত্র জানায়, আইডেন্টিফিকেশন সিস্টেম ফর এনহ্যান্সিং একসেস টু সার্ভিসেস প্রকল্পের আওতায় ভোটারদের স্মার্টকার্ড দেওয়ার পরিকল্পনা করে সরকার। এ প্রকল্প বাস্তবায়নে মোট খরচ ধরা হয় ১ হাজার ৩৭৯ কোটি ৩০ লাখ টাকা। এর মধ্যে সরকারের নিজস্ব তহবিল থেকে ১৪ কোটি ১৯ লাখ টাকা সরবরাহ করা হবে। বাকি ১ হাজার ৩৪৪ কোটি টাকা দেবে বিশ্বব্যাংক।

পরিকল্পনা কমিশন সূত্র জানায়, ২০১২-১৩ অর্থবছরে প্রকল্পটির অনুকূলে বরাদ্দ ছিল ৩২১ কোটি ১৮ লাখ টাকা। এর মধ্যে ওই অর্থবছরের ডিসেম্বর পর্যন্ত ব্যয় হয়েছিল ২১৬ কোটি টাকা। যা বেতন-ভাতা খাতে ব্যয় হয়েছিল। চলতি ২০১৩-১৪ অর্থবছরে এ প্রকল্পের অনুকূলে বরাদ্দ রয়েছে ২৫৫ কোটি ৬৭ লাখ টাকা। এর মধ্যে সরকারি তহবিলের ৬ কোটি ৫৫ লাখ এবং বিশ্বব্যাংকের ২৪৯ কোটি ১২ লাখ টাকা।

অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের হিসাবমতে এ প্রকল্পটির মাত্র ২ শতাংশ বাস্তবায়ন হয়েছে। নির্বাচন কমিশন জানিয়েছে, প্রকল্প সংশ্লিষ্টদের বেতন-ভাতা আর প্রশাসনিক কার্যক্রম পরিচালনা করতেই অল্পকিছু টাকা ব্যয় হয়েছে। মূল প্রকল্পের কার্যক্রম এখনো শুরু হয়নি।

এই স্মার্টকার্ড তৈরি হলে সরকারের গুরুত্বপূর্ণ আরো কয়েকটি সংস্থা এটি ব্যবহারের কথা রয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর), পাসপোর্ট অফিস ও সামাজিক নিরাপত্তার আওতায় উপকারভোগীদের তালিকা করতে ব্যবহার করার পরিকল্পনা।

(দ্য রিপোর্ট/জেজে/এস/এইচএসএম/ডিসেম্বর ০৪, ২০১৩)

পাঠকের মতামত:

SMS Alert

বিশেষ সংবাদ এর সর্বশেষ খবর

বিশেষ সংবাদ - এর সব খবর