thereport24.com
ঢাকা, মঙ্গলবার, ২৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ৯ পৌষ ১৪৩১,  ২২ জমাদিউস সানি 1446

ব্যর্থতার পথে ডব্লিউটিও’র বালি সম্মেলন

২০১৩ ডিসেম্বর ০৫ ২০:৫০:২৯
ব্যর্থতার পথে ডব্লিউটিও’র বালি সম্মেলন

রাজু আহমেদ, বালি (ইন্দোনেশিয়া) থেকে :

খাদ্য নিরাপত্তা ইস্যুতে ঐকমত্য না হওয়ায় তৃতীয় দিন শেষে ব্যর্থতার পথে এগোচ্ছে বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার মন্ত্রী পর্যায়ের নবম সম্মেলন।

ভর্তুকি মূল্যে খাদ্য বিতরণকে কৃষি চুক্তির আওতায় আনার পক্ষে উন্নত দেশগুলো। এ প্রস্তাবকে অনায্য দাবি করে প্রয়োজনে কোনো সিদ্ধান্ত ছাড়াই সম্মেলন শেষ করা উচিত বলে মন্তব্য করেছেন ভারতীয় বাণিজ্যমন্ত্রী আনন্দ শর্মা।

অন্যদিকে, মূল অধিবেশনে দেওয়া বক্তৃতায় স্বল্পোন্নত দেশের সব পণ্যে শুল্ক মুক্ত রফতানি সুবিধার দাবি জানিয়েছেন বাংলাদেশের বাণিজ্য সচিব মাহবুব আহমেদ।

উন্নত দেশে পণ্য রফতানিতে শতভাগ শুল্কমুক্ত সুবিধা আদায়ে দীর্ঘদিন ধরেই ডব্লিউটিওতে লড়াই করছে বাংলাদেশসহ স্বল্পোন্নত দেশগুলো। ২০০৫ সালে হংকং সম্মেলনে ৯৭ ভাগ পণ্যে এই সুবিধা দিলেও নানাভাবে তা অকার্যকর রাখছে উন্নত দেশগুলো।

এবারের সম্মেলনেও তাই বাংলাদেশের মূল দাবি শুল্কমুক্ত সুবিধা। মূল অধিবেশনের বক্তৃতায় আবারো এ দাবি তুলে ধরলেন বাংলাদেশ প্রতিনিধি দলের প্রধান বাণিজ্য সচিব মাহবুব আহমেদ।

তিনি বলেন, স্বল্পোন্নত দেশের পক্ষ থেকে মূল সম্মেলনে একটি প্রস্তাব উপস্থাপন করা হয়েছে। এতে সকল পণ্য রফতানিতে শুল্কমুক্ত সুবিধা, বাণিজ্য সুবিধা সম্প্র্রসারণসহ চারটি বিষয়ে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। বাংলাদেশ ওই প্রস্তাবের সঙ্গে সম্পূর্ণ একমত।

তিনি বলেন, দোহা রাউন্ডে স্বল্পোন্নত দেশের জন্য অনেকগুলো সুবিধা প্রদানের অঙ্গীকার রয়েছে। কিন্তু গত কয়েক বছরে এ বিষয়ে আলোচনা খুব বেশি অগ্রসর হয়নি। বালি সম্মেলনে এই অচলাবস্থা নিরসন হবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।

ব্যর্থতার পথে আলোচনা : বাংলাদেশের দাবির সঙ্গে অনেক দেশ একমত হলেও বালি সম্মেলন থেকে কোনো সিদ্ধান্ত পাওয়া যাবে কিনা- এ নিয়ে দেখা দিয়েছে সংশয়। কারণ দফায় দফায় আলোচনার পরও কৃষি চুক্তি নিয়ে সমঝোতা হচ্ছে না উন্নত ও উন্নয়নশীল দেশগুলোর। খাদ্য নিরাপত্তা ব্যয়কে ভর্তুকি হিসাবে না ধরার দাবিতে অনড় অবস্থানে ভারত, চীন, ইন্দোনেশিয়াসহ কয়েকটি দেশ।

সম্মেলনে ভারত, চীন, ইন্দোনেশিয়াসহ আরো কয়েকটি দেশ বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার কৃষি নীতি সংশোধনের প্রস্তাব দিয়েছে। জি-৩৩ এর ৪৬ দেশের দাবি গরিব কৃষককে ভর্তুকি দিয়ে তার কাছ থেকে ন্যায্যমূল্যে উৎপাদিত ফসল কিনে নেওয়ার। যাতে গরিব মানুষকে স্বল্পমূল্যে খাবারের যোগান দেওয়া যায়। বিশ্বজুড়ে খাবারের দাম বহুগুণে বাড়লেও ডব্লিউটিও ১৯৮৬-৮৮ সালের ভিত্তিমূল্য ধরে কৃষি ভর্তুকির হিসাব করে। আর এতেই আপত্তি ভারতসহ অনেক স্বল্পোন্নত দেশের।

এক ঘণ্টার সংবাদ সম্মেলনে বিভিন্ন দেশের প্রায় ৩০ জন সাংবাদিকের প্রশ্নের জবাব দেন ভারতের মন্ত্রী। এ সময় তাকে অনেক কঠিন ও অপ্রিয় প্রশ্নের মুখে পড়তে হয়। তিনি অত্যন্ত দৃঢ়তার সঙ্গে ঠাণ্ডা মাথায় এসব প্রশ্নের জবাব দেন।

এক প্রশ্নের জবাবে আনন্দ শর্মা বলেন, 'বিশ্ববাণিজ্য সংস্থার (ডব্লিউটিও) দর কষাকষি প্রক্রিয়ায় খাদ্য নিরাপত্তা ইস্যুতে কোনো ছাড় দেবে না ভারত। আমাদের সঙ্গে আছে বিশ্বের প্রায় সব দরিদ্র ও স্বল্পোন্নত দেশ। বিশ্বের মোট জনসংখ্যার দুই তৃতীযাংশ মানুষ এসব দেশে বাস করে।’

তিনি বলেন, ‘১২০ কোটি মানুষের দেশ ভারত ৭০ কোটি দরিদ্র মানুষকে তাদেরকে ন্যূনতম খাদ্য চাহিদা পূরণে বিশেষ কর্মসূচি বাস্তবায়ন করছে। এটি আমার দেশের নাগরিকদের আইনসঙ্গত অধিকার। এই ইস্যুতে কোনো আপসের সুযোগ নেই।’

আনন্দ শর্মা বলেন, ‘কৃষি পণ্যের আন্তর্জাতিক বাজারকে বিকৃত করে রেখেছে উন্নত দেশগুলো। ভর্তুকি দেওয়ার মাধ্যমে তারা বাজার মূল্যকে প্রভাবিত করছে। ভর্তুকির ক্ষেত্রে তারা কৃষি পণ্যের ২৯ বছর আগের মূল্যকে ভিত্তি মূল্য ধরছে। এটি দরিদ্র ও স্বল্পোন্নত দেশের কৃষকের স্বার্থের পরিপন্থী। তাই এ বাজার ব্যবস্থা ও ভর্তুকি পদ্ধতির সংস্কার জরুরি।’

ভারতের একগুঁয়ে অবস্থানের কারণে বালি সম্মেলন ব্যর্থ হতে পারে- উন্নত দেশগুলোর এমন অভিযোগকে অবাস্তব উল্লেখ করে শর্মা বলেন, 'স্বল্পোন্নত দেশগুলোর দরিদ্র মানুষের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিতের দাবির বিরোধিতা দুঃখজনক। উন্নত দেশগুলো দারিদ্র বিমোচন ও বিশ্ববাসীর জীবন মান উন্নয়নে সহস্রাব্দের লক্ষ্যমাত্রা বা এমডিজি ঘোষণায় অগ্রণী ভূমিকা রেখেছে। কিন্তু তারাই এখন দরিদ্র মানুষের খাদ্য নিরাপত্তা ইস্যুর বিরোধিতা করছে। এটা চরম স্ববিরোধী। উন্নত দেশগুলোর এ অবস্থান এমডিজির সঙ্গে সাংঘর্ষিক।'

মার্কিন এক সাংবাদিকের প্রশ্নের জবাবে ভারতের বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, ‘ভারত বালি সম্মেলনের সাফল্য চায়। এ সম্মেলনের প্রস্তাবনাগুলো গৃহীত হোক-তাও চায় তারা। কিন্তু এসব হতে হবে ন্যায্য, যুক্তিসঙ্গত ও ভারসাম্যপূর্ণ।’

গরিব মানুষের জন্য খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সব দেশেরই পদক্ষেপ নেওয়া উচিত বলে মনে করেন ভারতীয় মন্ত্রী। বাজে সিদ্ধান্তের চেয়ে কোনো চুক্তি ছাড়া সম্মেলন শেষ করাই শ্রেয় বলে মন্তব্য করেন তিনি।

(দ্য রিপোর্ট/আরএ/এস/এইচএসএম/ডিসেম্বর ০৫, ২০১৩)

পাঠকের মতামত:

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

SMS Alert

অর্থ ও বাণিজ্য এর সর্বশেষ খবর

অর্থ ও বাণিজ্য - এর সব খবর