thereport24.com
ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ৯ জানুয়ারি 25, ২৫ পৌষ ১৪৩১,  ৯ রজব 1446

ম্যান্ডেলার জীবনের সেরা মুহূর্ত

২০১৩ ডিসেম্বর ০৬ ১৬:৩৫:৫০
ম্যান্ডেলার জীবনের সেরা মুহূর্ত

দ্য রিপোর্ট ডেস্ক : দক্ষিণ আফ্রিকার বর্ণবাদ বিরোধী নেতা থেকে দেশটির প্রথম কৃষ্ণাঙ্গ প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন নেলসন ম্যান্ডেলা। আত্মত্যাগ, উদারতা ও বর্ণবাদ বিরোধী অহিংস আন্দোলনের জন্য বিগত শতাব্দীর অন্যতম সেরা ব্যক্তিত্ব হিসেবে মনে করা হয় তাকে।

ম্যান্ডেলার জীবনে এমন বিশেষ কিছু মুহূর্ত এসেছিল। তিনি নিজেই শুনিয়েছিলেন তার জীবনের সেসব মুহূর্তের গল্প।

২০ এপ্রিল, ১৯৬৪

নাশকতার অভিযোগে আটক ম্যান্ডেলা প্রিটোরিয়ার সর্বোচ্চ আদালতে আসামির কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে ১৯৬৪ সালের ২০ এপ্রিল তার জবানবন্দি দেন।

সেদিন আদালতের কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে ম্যান্ডেলা বলেন, ‘আমার সমস্ত জীবন আমি আফ্রিকার মানুষের অধিকার আদায়ের লড়াইয়ে উৎসর্গ করেছি। আমি সাদা-কালো সব ধরনের শাসনের বিরুদ্ধে লড়াই করেছি। আমি একটি গণতান্ত্রিক ও মুক্ত সমাজের আদর্শ লালন করেছি, যেখানে সব মানুষ শান্তি ও সমান সুযোগ নিয়ে বসবাস করবে। এটা এমন একটা আদর্শ যা অর্জনের জন্যই আমি বেঁচে আছি। এই আদর্শ অর্জনে প্রয়োজন হলে আমি জীবন দিতেও প্রস্তুত।’

এর ঠিক দুই মাস পর ম্যান্ডেলাসহ সাতজনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়।

১১ ফেব্রুয়ারি, ১৯৯০

২৭ বছরের কারাবাস শেষে এদিন ভিক্টর ভার্সটার কারাগার থেকে ম্যান্ডেলাকে মুক্তি দেওয়া হয়। মুক্তি পাওয়ার পর ম্যান্ডেলা স্ত্রী উইনির হাত ধরে কারাগার থেকে ধীরে ধীরে হাসিমুখে বের হন ম্যান্ডেলা। এতো দীর্ঘসময় কারাভোগ করার পর মুক্তি পাওয়ায় হাজার হাজার জনতা তাকে স্বাগত জানায়। তাকে ঘিরে ধরে শত শত সাংবাদিক। বিশ্বজুড়ে তার মুক্তির দৃশ্য টেলিভিশনের মাধ্যমে লাইভ দেখানো হয়। অনেক দিন কারাবন্দি থাকায় খুব কম মানুষই তার চেহারা জানতেন। সেসময় ম্যান্ডেলা জানান তিনি এ অর্ভথনায় অভিভুত।

১০ মে, ১৯৯৪

এদিন নেলসন ম্যান্ডেলা গণতান্ত্রিকভাবে দেশটির প্রথম কৃষ্ণাঙ্গ প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন। দক্ষিণ আফ্রিকার রাজধানী প্রিটোরিয়ার ইউনিয়ন বিল্ডিংয়ে প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নেন তিনি। ঐতিহাসিক এ মুহূর্ত উদযাপন উপলক্ষে জড়ো হয় বিশ্বনেতা ও বিশ্বের বিভিন্ন দেশের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা।

ম্যান্ডেলা তার অভিষেক বক্তব্যে বলেন, ‘আর কখনোই এই সুন্দর দেশে কারও নিপীড়নের অভিজ্ঞতা হবে না। মানবতার যে সূর্য আজ উদিত হয়েছে তা কখনোই অস্তমিত হবে না। ধন্যবাদ।’

২৪ জুন, ১৯৯৫

এদিন বিশ্বকাপ রাগবির ফাইনাল। অংশ নিচ্ছে স্বাগতিক দক্ষিণ আফ্রিকা ও নিউজিল্যান্ড। এ উপলক্ষে দক্ষিণ আফ্রিকার ৬০ হাজার মানুষের কাতারে সমাবেত হয়েছিলেন ম্যান্ডেলা। চারিদিকে হাজার হাজার কণ্ঠের ‘নেলসন, নেলসন’ প্রতিধ্বনি প্রমাণ করে দিচ্ছিল ম্যান্ডেলার তুমুল জনপ্রিয়তা।

মাঠে গিয়ে ম্যান্ডেলা দেখলেন কৃষ্ণাঙ্গ দর্শকরা শ্বেতাঙ্গ প্রধান দলের উদ্দেশে দুয়ো ধ্বনি দিচ্ছে। তিনি দক্ষিণ আফ্রিকার রাগবি দলের অধিনায়ক ফ্রঁসোয়া পিনারকে তার সঙ্গে দেখা করতে বললেন। ফ্রঁসোয়া ধরেই নিলেন, তাকেসহ পুরো দলকে বাদ দেওয়ার সিদ্ধান্তের কথা বলার জন্যই ডাকা হয়েছে। কিন্তু ম্যান্ডেলা তাকে জানালেন, দলে কোনো পরিবর্তনই আসবে না বরং তিনি চান ফ্রঁসোয়ার নেতৃত্বে যেন দল রাগবি বিশ্বকাপ জয় করতে পারে।

ম্যান্ডেলা ফ্রঁসোয়াকে ব্রিটিশ কবি উইলিয়াম হেনরির 'ইনভিকটাস' কবিতার উদ্ধৃতি টেনে বলেন, 'শুয়ে পড়ার পরিস্থিতিতে সে উঠে দাঁড়াল সোজা হয়ে'। ভাষায় না বললেও ফ্রঁসোয়া ঠিকই বুঝে নিলেন ম্যান্ডেলার মনের কথা। বিশ্বকাপের সময় যদি তারা 'কালোদের' সমর্থন আদায় করতে সক্ষম হয় এবং বিশ্বকাপ জয়লাভ করতে পারে তাহলে হয়তো 'সাদা-কালো'র এতদিনের ভেদাভেদ দূর হয়ে যেতেও পারে। সেদিনই মনে মনে দেশের জন্য বিশ্বকাপ জয়ের প্রতিজ্ঞা করলেন ফ্রঁসোয়া। বিজয়ও ছিনিয়ে আনেন তিনি।

দিনটি ম্যান্ডেলা তার জীবনের গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত হিসেবে দেখেছেন। হলিউডের ক্লিন্ট ইস্টউড এই সত্য ঘটনা নিয়ে ‘ইনভিকটাস’ নামের একটি চলচ্চিত্রও নির্মাণ করেছেন।

১১ জুলাই ২০১০

ওই বছর বিশ্বকাপ ফুটবলের আয়োজক ছিল দক্ষিণ আফ্রিকা। সকার সিটি স্টেডিয়ামের হাজার হাজার দর্শকের সামনে বিশ্বকাপ ফুটবলের সমাপণী অনুষ্ঠানে হাজির হন নেলসন ম্যান্ডেলা। তবে দর্শকদের উদ্দেশে কিছুই বলেননি তিনি। এটাই ছিল অহিংস এ নেতার জনসম্মুখে শেষবারের মতো আসা।

(দ্য রিপোর্ট/ কেএন/ ডিসেম্বর ০৬, ২০১৩)

পাঠকের মতামত:

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

SMS Alert

বিশ্ব এর সর্বশেষ খবর

বিশ্ব - এর সব খবর