thereport24.com
ঢাকা, শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১,  ২১ জমাদিউল আউয়াল 1446

আটকে যাচ্ছে বিশ্বব্যাংকের ঋণ

২০১৩ ডিসেম্বর ০৭ ১৭:৪৫:৪০
আটকে যাচ্ছে বিশ্বব্যাংকের ঋণ

জোসনা জামান, দ্য রিপোর্ট : বিশ্বব্যাংকের প্রতিশ্রুত এক হাজার কোটি টাকার সহজ শর্তের ঋণ আটকে যাওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। মানসম্মত উচ্চশিক্ষা নিশ্চিতকরণ প্রকল্প বাস্তবায়নে অতিরিক্ত হিসেবে এই ঋণ ব্যবহার করার কথা। প্রকল্পটির দ্বিতীয় মেয়াদের সংশোধনী প্রস্তাব অনুমোদন না হওয়ায় এই ঋণ আটকে যেতে পারে।

অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ, পরিকল্পনা কমিশন এবং বিশ্বব্যাংক সূত্রে এই তথ্য জানা গেছে।

জানা গেছে, প্রকল্পটির তৃতীয় সংশোধনী প্রস্তাব অনুমোদন না হলে উচ্চশিক্ষার মান উন্নত করা সংক্রান্ত এই প্রকল্পটির বাস্তবায়ন কাজও বন্ধ হয়ে থাকবে। চলতি মাসেই প্রকল্পটির মেয়াদ শেষ হতে যাচ্ছে।

পরিকল্পনা কমিশন বলছে, জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) বৈঠকে সময়মতো অনুমোদন না হওয়ায় প্রকল্পটির বাস্তবায়ন ও ঋণ দুটোই থমকে যাবে।

পরিকল্পনা কমিশনের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের সদস্য (জিইডি) ড. শামসুল আলম দ্য রিপোর্টকে বলেন, বৈদেশিক সহায়তা রয়েছে এমন প্রকল্প অনুমোদনের ক্ষেত্রে সবসময়ই অগ্রাধিকার পেয়ে থাকে। একনেক বৈঠক বন্ধ হওয়ায় এসব প্রকল্প জটিলতায় পড়বে। জাতীয় স্বার্থে এই বিষয়ে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া উচিত।

অর্থনেতিক সম্পর্ক বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, হায়ার এডুকেশন কোয়ালিটি এনহান্সমেন্ট প্রজেক্ট (এইচইকিউইপি) নামের এ প্রকল্পটিতে শুরু থেকেই বিশ্বব্যাংক অর্থায়ন করে আসছে। এটির সফল বাস্তবায়নের জন্য অতিরিক্ত প্রায় এক হাজার কোটি টাকা (১২৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলার) দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে সংস্থাটি। এ বিষয়ে ২৮ অক্টোবর ঢাকায় বিশ্বব্যাংকের সঙ্গে নেগোসিয়েশন অনুষ্ঠিত হয়েছে। কিন্তু একনেকে অনুমোদন না হওয়ায় এটির ঋণ চুক্তিসহ অন্যান্য প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত হতে পারে।

এই ঋণ পরিশোধের সময়সীমা ১০ বছরের গ্রেস পিরিয়ডসহ মোট ৪০ বছর। এ ক্ষেত্রে বার্ষিক সার্ভিস চার্জ শতকরা শূন্য দশমিক ৭ এবং কমিটমেন্ট ফি শতকরা দশমিক পাঁচ শূন্য ।

শিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, বিশ্বব্যাংকের সহায়তায় মূল প্রকল্পটি মোট ৬৮১ কোটি ৪ লাখ টাকা (এর মধ্যে সরকারি তহবিলের ৮২ কোটি ৫৬ লাখ এবং বিশ্বব্যাংকের ৫৯৮ কোটি ৪৮ লাখ) ব্যয় ধরা হয়েছিল। বাস্তবায়নের সময় ছিল ২০০৯ সালের জানুয়ারি থেকে ২০১৩ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত।

প্রকল্পটি ২০০৮ সালের ২৩ অক্টোবর জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় প্রথম অনুমোদন দেওয়া হয়। এরপর জনবলের সংখ্যা পরিবর্তন ও কয়েকটি নতুন অঙ্গ যোগ হওয়ায় ব্যয় অপরিবর্তিত রেখে প্রকল্পটি প্রথম দফায় সংশোধন করা হয়। এ প্রস্তাব ২০১১ সালের ৫ জানুয়ারি একনেকে অনুমোদন লাভ করে।

পরবর্তীতে ডলার বিনিময় হারের পরিবর্তনের কারণে প্রকল্প ব্যয় ও বাস্তবায়ন মেয়াদ বৃদ্ধি করে এটির দ্বিতীয় সংশোধনী করা হয়। এ সময় ব্যয় বেড়ে ৭৫২ কোটি ৬৬ লাখ টাকা করা হয় এবং মেয়াদ ২ বছর বাড়ানো হয়। চলতি বছরের ৭ মে এটির দ্বিতীয় সংশোধনী প্রস্তাব একনেকে অনুমোদন লাভ করে। এ প্রকল্পে বিশ্বব্যাংকের ঋণ ছিল ৮ কোটি ১০ লাখ মার্কিন ডলার। বর্তমানে বিশ্বব্যাংক ১২ কোটি ৫০ লাখ মাকিন ডলার অর্থায়নে আগ্রহ দেখায় প্রকল্পটির তৃতীয় সংশোধনীর প্রয়োজনীয়তা দেখা দিয়েছে।

এ পরিপ্রেক্ষিতে প্রকল্পটির ব্যয় বাড়িয়ে মোট ২ হাজার ৬৪ কোটি ৯২ লাখ টাকা এবং মেয়াদ ২০১৮ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত ধরে তৃতীয় সংশোধনী প্রস্তাব করা হয় পরিকল্পনা কমিশনে। ১০ অক্টোবর প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির (পিইসি) সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী সংশোধিত প্রকল্প প্রস্তাব পুনরায় পাঠানো হয় পরিকল্পনা কমিশনে। চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য একনেকে উপস্থাপনের যাবতীয় প্রস্তুতিও সম্পন্ন করে পরিকল্পনা কমিশন। কিন্তু হঠাৎ করেই জাতীয় নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করায় প্রকল্পটির অনুমোদন আটকে গেছে।

পরিকল্পনা কমিশনের আর্থ-সামাজিক অবকাঠামো বিভাগের সদস্য আবদুল মান্নান হাওলাদার মনে করেন, প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে সরকারি ও নির্বাচিত বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে গুণগতমানের উচ্চশিক্ষা অর্জন সহজ হবে এবং গবেষণা প্রসারে প্রকল্পটি ভূমিকা রাখতে সক্ষম হবে। তা ছাড়া এটি অনুমোদিত হলে বছরভিত্তিক অর্থ বরাদ্দেরও নিশ্চিয়তা রয়েছে। তাই এ প্রকল্পটি অনুমোদনের জন্য একনেকে উপস্থাপনের সুপারিশ করা হয়েছিল।

প্রকল্পটি গ্রহণের উদ্দেশ্য সম্পর্কে বলা হয়েছে, উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সৃজনশীলতায় উৎসাহ প্রদানের মাধ্যমে গবেষণার পরিবেশ সৃষ্টি ও টিচিং এবং লার্নিং-এর গুণগতমান বাড়ানোর। এ ছাড়া উচ্চশিক্ষা খাতে কারিগরি ও প্রাতিষ্ঠানিক দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য প্রকল্পটি গ্রহণ করা হয়েছে।

প্রকল্পটির ৫টি অঙ্গ হলো- প্রমোটিং এ্যাকাডেমিক ইনভেশন, বিল্ডিং ইনস্টিটিউশনাল ক্যাপাসিটি বৃদ্ধি, রেইজিং দ্য কানেকটিভিটি ক্যাপাসিটি অফ দ্য হায়ার এডুকেশন, স্টাবলিস্টমেন্ট অফ হায়ার এডুকেশন কোয়ালিটি এ্যাসুরেন্স ম্যাকানিজম এবং প্রজেক্ট ম্যানেজমেন্ট। ক্যাপাসিটি বিল্ডিং অঙ্গের আওতায় হায়ার এডুকেশন ম্যানেজমেন্ট ইনফরমেশন সিস্টেম (এইচইএমআইএস) এবং কানেকটিভিটি ক্যাপাসিটি অঙ্গের আওতায় বাংলাদেশ রিসার্স এ্যান্ড এডুকেশন নেটওয়ার্ক (বিডিআরইএন) প্রতিষ্ঠা করা হবে।

(দ্য রিপোর্ট/জেজে/নূরু/এসবি/ডিসেম্বর ০৭, ২০১৩)

পাঠকের মতামত:

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

SMS Alert

অর্থ ও বাণিজ্য এর সর্বশেষ খবর

অর্থ ও বাণিজ্য - এর সব খবর