thereport24.com
ঢাকা, শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১,  ২১ জমাদিউল আউয়াল 1446

চিঠি, যোগদান, বর্জন : রাজনীতিতে নাটকীয় মোড়

২০১৩ অক্টোবর ২৩ ১৬:২৪:৩৯ ০০০০ 00 ০০ ০০:০০:০০
চিঠি, যোগদান, বর্জন : রাজনীতিতে নাটকীয় মোড়
দিরিপোর্ট২৪ প্রতিবেদক : নাটকীয় মোড় নিয়েছে নবম জাতীয় সংসদের শেষ অধিবেশন। ২৪ অক্টোবর অধিবেশনের ইতি টানার কথা থাকলেও মেয়াদ বাড়িয়ে তা ৭ নভেম্বর করা হয়েছে।

বুধবার প্রধান বিরোধী দল অধিবেশনে যোগ দিয়ে নির্বাচনকালীন সরকারের রূপরেখা উপস্থাপন করলেও জিয়াউর রহমানের সমালোচনা ও কটুক্তির কারণে দেড়ঘন্টা অবস্থানের পর তারা ওয়াকআউট করে।

নির্বাচনকালীন সরকার নিয়ে সংকট নিরসনে মঙ্গলবার বিএনপির চিঠি আর আওয়ামী লীগের ফোনালাপের পর রাজনৈতিক সমঝোতার আশা থাকলেও বুধবার বিএনপির অধিবেশন বর্জন নতুন নাটকের জন্ম নিয়েছে।

মাগরিবের নামাজের পর বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার জমিরউদ্দিন সরকারের নেতৃত্বে বিরোধী জোটের সদস্যরা অধিবেশন কক্ষে প্রবেশ করেন।

এর আগে, বিকেল সাড়ে ৪টার পর স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে ১৩ দিন বিরতির পর ১৯তম অধিবেশনের তৃতীয় পর্বের মুলতবি বৈঠক শুরু হয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার নির্ধারিত প্রশ্নের জবাব দেন।

মুলতবি অধিবেশন শুরুর আগে বিকেল ৩টায় সংসদের কার্য উপদেষ্টা কমিটির বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। সেখানেই অধিবেশনের মেয়াদ বাড়ানো হয়।

৯ অক্টোবর সংসদ মুলতবি করার আগে আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য তোফায়েল আহমেদ ২৪ অক্টোবরের পরও অধিবেশন চালিয়ে যাওয়ার প্রস্তাব করেন। এরপর অধিবেশনের মেয়াদ বাড়ার গুঞ্জণ ওঠে।

সোমবার অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের রূপরেখা দেন বিরোধী দলের নেতা বেগম খালেদা জিয়া। ওই একই প্রস্তাব বুধবার সংসদে প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশ্যে উপস্থাপন করেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকার।

প্রস্তাবে বলা হয়, ১৯৯৬ ও ২০০১ সালের তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ২০ উপদেষ্টার মধ্যে আওয়ামী লীগ পাঁচজন এবং বিএনপি পাঁচজনের নাম প্রস্তাব করবে। ১০ জন উপদেষ্টা নিয়ে নির্বাচনকালীন সরকার গঠন করা হবে। এর বাইরে গ্রহণযোগ্য একজনকে প্রধান উপদেষ্টা মনোনীত করা যেতে পারে। সংসদে যেভাবে রাষ্ট্রপতি, স্পিকার ও সংরক্ষিত নারী আসনের সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়, ঠিক সেভাবে তাদেরকেও নির্বাচিত করার প্রস্তাব রাখা হয়।

জমিরউদ্দিন সরকার বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ ব্যাপারে উদ্যোগ গ্রহণ করবেন বলে আশা প্রকাশ করছি। এ ব্যাপারে দ্রুত উদ্যোগ গ্রহণের জন্য উদাত্ত আহবান এবং বিশেষ অনুরোধ জানান তিনি।

বিরোধী দলের এ প্রস্তাব উত্থাপনকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অধিবেশন কক্ষে উপস্থিত ছিলেন না।

পয়েন্ট অব অর্ডারে আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য তোফায়েল আহমেদ বিরোধী দলের প্রস্তাবকে অসাংবিধানিক আখ্যায়িত করেন। তিনি বলেন, বিরোধী দলের নেতার প্রস্তাবে ১০ উপদেষ্টার কথা বলা হয়েছে। এখানে সংখ্যা ভুল হয়েছে। প্রকৃত সংখ্যা ১৮ জন। কেননা দুজন উপদেষ্টা দুবার ছিলেন। বিএনপি নেতা সতর্কতার সঙ্গে প্রস্তাব উত্থাপন করলে ভালো হতো। এই ভুল হতো না।

তিনি আরো বলেন, ১৮ উপদেষ্টার মধ্যে চারজন মারা গেছেন। খালেদা জিয়ার প্রস্তাবের পর ইতোমধ্যে দুজন অপারগতা প্রকাশ করেছেন। চারজন অসুস্থ রয়েছেন। এছাড়া একজন বর্তমানে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা। সব মিলিয়ে এখন তো ১০ জনও নেই। তাই প্রস্তাব অনুযায়ী ১০ উপদেষ্টা আমরা কোথায় পাব?

আওয়ামী লীগের সিনিয়র এ সদস্য বলেন, বিরোধী দলের প্রস্তাবটি সংসদের কার্যপ্রণালীর যে কোন বিধি অনুসারে উত্থাপন করা হলে তা নিয়ে আলোচনা করা যেতো।

তিনি আরো বলেন, ৯৬ এর নির্বাচনের পর তৎকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা নিয়ে বিএনপির সভানেত্রী খালেদা জিয়া, তৎকালীন মহাসচিব মরহুম আব্দুস সালাম তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সমালোচনা করেন। তাদের বিরুদ্ধে নির্বাচনে কারচুপি, পুকুর চুরি হয়েছে বলে অভিযোগ আনেন। এমনকি তৎকালীন প্রধান উপদেষ্টার বাসভবনে হামলা চালায় ছাত্রদল ও যুবদলের কর্মীরা।

তোফায়েল বলেন, ২০০১ সালের তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টার বিরুদ্ধে আমাদেরও আপত্তি ছিল। তিনি খালেদা জিয়ার সঙ্গে ২০ মিনিট একান্তে বৈঠক করেন। পরে নির্বাচনে দুই-তৃতীয়াংশ আসন পাওয়ার আশ্বাস পান। ওখান থেকে বের হয়ে বর্তমান বিরোধী দলের নেতা এ কথা ঘোষণা করেন। বাস্তবেও তাই হয়েছিল। এ কারণে দুটি তত্ত্বাবধায়ক সরকার নিয়ে দুই দলেরই আপত্তি রয়েছে। তাদের দিয়ে কিভাবে তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠন করা যেতে পারে?

তোফায়েল আহমেদের বক্তব্যের জবাবে বিএনপির সিনিয়র সদস্য এম কে আনোয়ার বলেন, আমরা প্রস্তাবটি প্রধানমন্ত্রীর নিকট উত্থাপন করেছি। উনি বিরোধী দলের নেতার সঙ্গে আলোচনা করবেন, কী করবেন না - তা ওনার ব্যাপার। এর আগেই তোফায়েল আহমেদ বিরোধী দলের নেতার প্রস্তাবটি উড়িয়ে দিলেন।

প্রস্তাবের মূল বিবেচ্য বিষয় হলো, নির্বাচনকালীন সরকারের প্রধান কে হবেন? সকল দলের ঐক্যমতের ভিত্তিতে একটি সমাধানে উপনীত হতে হলে বাকি উপদেষ্টা নিয়োগ নিয়ে কোন ঝামেলা হবে বলে আমি মনে করি না। সেটি সরকার বা বিরোধী দলের সংসদ সদস্য কিংবা উপদেষ্টা, যাদের মধ্য থেকেই হোক করা যাবে।

এ সময় ক্ষমতাসীন দলের সংসদ সদস্যরা বিভিন্ন অঙ্গ-ভঙ্গি করে এম কে আনোয়ারের বক্তব্যের কটুক্তি করেন।

কটুক্তির জবাবে তিনি বলেন, সংসদে বিতর্ক হতে পারে; আলোচনা হয় বাইরে। আলোচনার পর একটি রাস্তায় উপনীত হলে সেটি সংসদে এসে সিদ্ধান্ত হয়।

প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশ্যে বিএনপির এ সংসদ সদস্য বলেন, সংবিধান সংশোধনের সময় সংসদীয় কমিটিকে আপনি বলেছিলেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকার বাতিল করা হবে না। তবে সময় নির্দিষ্ট করে দেওয়া হবে। প্রধানমন্ত্রীর এ বক্তব্য যুক্তিসঙ্গত ছিল - দাবি করেন এম কে আনোয়ার।

তিনি আবারও ঐক্যমতের ভিত্তিতে সমস্যা সমাধানের আহবান জানিয়ে বলেন, একদলীয় নির্বাচন করে দেশে শান্তি আসবে না। পরস্পরের প্রতি দোষ না দিয়ে চলমান রাজনৈতিক সংকট সমাধানে প্রধানমন্ত্রীর কাছে আহবান জানাই।

আনোয়ারের বক্তব্যের পর আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য শেখ সেলিম বলেন, সংবিধান সংশোধন করতে আওয়ামী লীগ বাধ্য হয়েছে। এ সংক্রান্ত সংসদীয় স্থায়ী কমিটি গঠনে বারবার বিরোধী দলের সংসদ সদস্যদের নাম চাওয়া হলেও তারা দেননি। সংবিধান সংশোধন করা হয়েছিল উচ্চ আদালতের রায়ের কারণে।

তিনি আরো বলেন, জিয়াউর রহমানের সরকার সামরিক শাসন জারি করে যে ক্ষমতা দখল করেছিল উচ্চ আদালত সেটিকে অবৈধ ঘোষণা করে রায় দিয়েছিল।

বিরোধী দলের সদস্যদের উদ্দেশ্যে সেলিম বলেন, যুক্তিতে পারবেন না। তাই চিৎকার করে চলে যাবেন। ক্যান্টনমেন্টে আপনাদের জন্ম, সমালোচনা আপনারা শুনতে পারবেন না। তত্ত্বাবধায়ক সরকার অসাংবিধানিক বলে উচ্চ আদালত রায় দেয়। এরপরই এ বিধান বাতিল করে দেওয়া হয়। আমাদের মূলনীতির পরিপন্থী এ বিধান বাতিল করে আমরা বাহাত্তরের সংবিধানে ফিরে আসি। সংবিধানে পরিষ্কারভাবে বলা আছে, আগামী নির্বাচন এবং পরবর্তী প্রধান নির্বাচিত না হওয়া পর্যন্ত বর্তমান প্রধানমন্ত্রীই থাকবেন। কিন্তু তারা সমঝোতা চায় না, সঙ্কট চায়। তাই তারা এমন প্রস্তাব দিয়েছেন। কিন্তু আমরা সংবিধানের বাইরে একচুলও যেতে পারব না।

জিয়াউর রহমানকে নিয়ে বক্তব্য শুরু হলে এর প্রতিবাদ জানিয়ে সন্ধ্যা ৭টা ৪৫ মিনিটে বিরোধী জোটের সদস্যরা একযোগে অধিবেশন থেকে ওয়াকআউট করেন।

সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত বলেন, আমি দৃঢ়ভাবে প্রতিবাদ করছি, দেশে কোনও সাংবিধানিক সঙ্কট নেই। দেশে একটি উত্তম সংবিধান আছে, সংবিধান অনুযায়ী রাষ্ট্র চলছে। আইয়ুব খানের ভূত তাদের মাথায় আছে। মুসলিম লীগ তাদের সঙ্গে আছে। তারা পুরনো মদ নতুন বোতলে নিয়ে এসেছে। এটা তো বাতিল। এটার জন্য দুই বছর দেশের মানুষ ভুগেছে। যেহেতেু সংসদে প্রস্তাব দিয়েছেন, সেহেতু আলোচনা হোক। যুক্তি আপনারা দেন, আমরাও দেই। ভোটাভুটিতে না দেওয়া হোক।

তিনি বলেন, মন্ত্রিসভাকে ক্ষমতাহীন করে নির্বাচন কমিশনকে কিভাবে শক্তিশালী করা যায় সেটি নিয়ে আলোচনা হোক। কিন্তু আপনারা বাতিল মাল নিয়ে এসেছেন। তাই আপনারা প্রধানমন্ত্রীর প্রস্তাবে আসেন। একটা সমঝোতায় আসেন। আমাদের সংবিধানের বাইরে যাওয়ার কোনো সুযোগ নেই। আপনাদের প্রস্তাবে সমঝোতার সুযোগ নেই।

(দিরিপোর্ট২৪/রাজু/এমএআর/এমডি/ অক্টোবর ২৩, ২০১৩)

পাঠকের মতামত:

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

SMS Alert

রাজনীতি এর সর্বশেষ খবর

রাজনীতি - এর সব খবর