thereport24.com
ঢাকা, বুধবার, ২৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ১১ পৌষ ১৪৩১,  ২৩ জমাদিউস সানি 1446

অবরোধে স্থবির গ্রামীণ অর্থনীতি

২০১৩ ডিসেম্বর ০৭ ২৩:০০:৫৯
অবরোধে স্থবির গ্রামীণ অর্থনীতি

আমিনুল ইসলাম, দ্য রিপোর্ট : হরতাল, জ্বালাও-পোড়াও আর একটানা অবরোধের কারণে স্থবির হয়ে পড়েছে গ্রামীণ অর্থনীতি। সারাদেশে পরিবহন যোগাযোগ স্বাভাবিক না থাকায় বাজার ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে। ক্ষেতেই নষ্ট হচ্ছে মৌসুমি সবজি। অর্থ প্রবাহ স্বাভাবিক না থাকায় পুঁজি ভেঙে খাচ্ছেন গ্রামের ছোট ব্যবসায়ী, আড়তদার ও ফড়িয়া ব্যবসায়ীরা।

কুষ্টিয়ার দৌলতপুর উপজেলার চাষি আমান সরকার বলেন, বেগুন, টমেটোসহ সবজি উৎপাদনের দামই পাচ্ছি না। আগে মাঠ থেকে পাইকারিভাবে এসব সবজি কিনে নিয়ে যেত ক্রেতারা। অবরোধের কারণে তারা না আসায় মাঠেই নষ্ট হচ্ছে এসব সবজি।

গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়ার মাছ চাষি রতন মিয়া বলেন, পুকুরে কয়েক টন মাছ থাকলেও ক্রেতার অভাবে বিক্রি করতে পারছি না। কিছু মাছ স্থানীয় বাজারে নিয়ে বিক্রি করেছি, দাম ভালো পায়নি।

গ্রামীণ ভঙ্গুর অর্থনীতির প্রভাব পড়েছে শহুরে জীবনেও। যোগাযোগ ব্যবস্থা স্বাভাবিক না থাকায় কাঁচামাল সঙ্কটে পড়েছে অনেক শিল্প-কারখানা। দেশীয় কাঁচামাল নির্ভর অনেক কারখানার উৎপাদন কমেছে প্রায় ৬০ থেকে ৭০ শতাংশ।

হরতাল ও অবরোধ কর্মসূচি ক্রমেই দীর্ঘায়িত হওয়ায় গ্রামীণ অর্থনীতির পঁচনশীল পণ্যের কারবারীরা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। কাজ না থাকায় অলস বসে আছেন তারা।

অবরোধের ধাক্কা লেগেছে মিল্ক ভিটা, প্রাণ, আড়ং, বিক্রমপুর ডেইরি, এমও মিল্ক, ফার্মফ্রেশের মতো পাস্তুরিত তরল দুধ বাজারজাতকারী কোম্পানিতে। কারণ, তরল দূধের জোগান আসে গ্রাম থেকে। গ্রামের অনেক মানুষ এসব বড় কোম্পানির কাছে দুধ বিক্রি করেই জীবিকা নির্বাহ করেন। অবরোধে পরিবহন চলাচল বাধাগ্রস্ত হওয়ায় এসব কোম্পানি দুধ কেনা বন্ধ করে দিয়েছে। ফলশ্রুতিতে সমস্যায় পড়েছেন গ্রামীণ দুগ্ধ খামারিরা।

প্রাণ কোম্পানির মার্কেটিং ডিরেক্টর কামরুজ্জামান কামাল দ্য রিপোর্টকে জানান, অবরোধের কারণে দুধের উৎপাদন কমেছে প্রায় ৭০ শতাংশ। তাই চাহিদা থাকা সত্ত্বেও বাজারে দুধের সরবরাহ স্বাভাবিক রাখা যাচ্ছে না।

তিনি আরও জানান, শুধু ঢাকা শহরেই প্রতিদিন আড়াই লাখ টন দুধের প্রয়োজন। শীর্ষস্থানীয় ৯-১০টি কোম্পানি এ পরিমাণ দুধের চাহিদা মেটায়। কিন্তু অবরোধের কারণে প্রাণের মতো কোম্পানিই তাদের উৎপাদনের ৭০ শতাংশ কমিয়ে দিয়েছে।

তার মতে, সারা দেশে প্রতিদিন দুধের প্রয়োজন হয় সাড়ে ৬ লাখ টন। অবরোধের কারণে চাষিদের কাছ থেকে দুধ সংগ্রহ করা যাচ্ছে না। পুলিশি পাহারায় অনেক ঝুঁকি নিয়ে অল্প কিছু দুধ সংগ্রহ করে কোনোও রকমে বাজার ধরে রাখা হয়েছে।

টাঙ্গাইল চেম্বারের সেক্রেটারি বেনজির আহমেদ টিটো দ্য রিপোর্টকেবলেন, ‘রাজনৈতিক অস্থিরতার প্রভাব পড়েছে গ্রামীণ অর্থনীতিতে। রাজধানীতে প্রতিদিন বিপুল পরিমাণ সবজি টাঙ্গাইল থেকে যায়। কিন্তু বর্তমানে পরিবহন সঙ্কটের কারণে সবজি যাচ্ছে না। এ কারণে মৌসুমি চাষিরা ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন। ক্ষেতেই নষ্ট হচ্ছে শিম, বাঁধাকপি, ফুলকপি, টমেটো, কাঁচামরিচসহ অন্যান্য কৃষিপণ্য।

অবরোধের কারণে রাজধানীর কারওয়ানবাজারের আড়তদাররা আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন বলে জানান আড়তদার সমিতির সভাপতি ইমরান মাস্টার।

তার মতে, দৈনিক যে পরিমাণ মালামাল বিক্রি করার কথা আড়তদাররা তা করতে পারছেন না। অবরোধের কারণে দেশের উত্তরাঞ্চল ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের জেলা বিশেষ করে যশোর, ঝিনাইদহ, কুষ্টিয়া, বগুড়া, পাবনা, সিরাজগঞ্জ ও নওগাঁ থেকে কোনো কাঁচামাল ঢাকায় আসছে না। এতে আড়তদারদের আয় কমে গেছে। জমানো টাকা থেকে প্রতিদিনের স্টাফ ও অফিস খরচ চালাতে হচ্ছে তাদের।

ইমরান মাস্টার আরও জানান, বর্তমানে ঢাকার পাশের জেলা মানিকগঞ্জ, মুন্সীগঞ্জ, নরসিংদী ও গাজীপুর থেকে ভ্যান ও ট্রলি করে অনেক ঝুঁকি নিয়ে কাঁচামাল আনা হচ্ছে। এতে পরিবহন খরচ বাড়ছে বহুগুণ। তাই মৌসুমি সবজিও বেশি দামে কিনতে হচ্ছে ভোক্তাদের।

এ ব্যাপারে মানিকগঞ্জ জেলা চেম্বারের পরিচালক মাহবুবুল ইসলাম রুনু জানান, পরিবহন ব্যবস্থা স্বাভাবিক না থাকায় পুঁজি হারানোর ভয়ে প্রান্তিক চাষিরা ক্ষেত উঠাচ্ছেন না। উৎপাদিত পণ্য জমিতেই নষ্ট হচ্ছে। এ অবস্থায় প্রান্তিক চাষিরা আর্থিক দূরাবস্থার মধ্যে আছেন।

নরসিংদী চেম্বার সহসভাপতি মোশাররফ হোসেন দ্য রিপোর্টকে জানান, অবরোধের কারণে ২০ শতাংশ ফসল নষ্ট হচ্ছে। একই কারণে শিল্পোৎপাদন খরচ বাড়ছে। পরিবহন ব্যয় বেড়েছে ৪ থেকে ৫ গুণ। এর নেতিবাচক প্রভাব একবছর পর পুরোপুরি বোঝা যাবে। তখন অনেক শিল্প প্রতিষ্ঠান ঋণখেলাপি হতে পারে। ব্যবসা-বাণিজ্য থেকেও অনেকের হারিয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

এদিকে বিদ্যমান রাজনৈতিক অস্থিরতার প্রেক্ষাপটে নেতা-নেত্রীদের প্রতি জনগণের আস্থা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইর সহ-সভাপতি হেলাল উদ্দিন।

তিনি দ্য রিপোর্টকে বলেন, ‘চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে দেশের অর্থনীতি ভেঙে পড়েছে। আমদানি-রফতানি করতে পারছি না। ব্যবসা বাণিজ্য স্থবির হয়ে পড়েছে। বিপর্যস্ত গ্রামীণ অর্থনীতি।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমরা রাজনীতি বুঝি না। নৌকা-ধানের শীষের চেতনা ধারণ করি না। ব্যবসায়ীরা লাল সবুজের পতাকার চেতনা ধারণ করি। আমরা সংঘাত নয় শান্তি চাই।’

(দ্য রিপোর্ট/এআই/এস/এইচকে/ডিসেম্বর ০৭, ২০১৩)

পাঠকের মতামত:

SMS Alert

বিশেষ সংবাদ এর সর্বশেষ খবর

বিশেষ সংবাদ - এর সব খবর