thereport24.com
ঢাকা, শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১,  ২১ জমাদিউল আউয়াল 1446

দুর্ভোগে সবজি ও মাছ ব্যবসায়ীরা

২০১৩ ডিসেম্বর ০৯ ২৩:৪৯:০৯
দুর্ভোগে সবজি ও মাছ ব্যবসায়ীরা

জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সরকার ও বিরোধী দলের মধ্যে সমঝোতা না হওয়ায় সাধারণ জনগণের দুর্ভোগ বাড়ছে। দেশে চলমান রাজনৈতিক অস্থিরতায় ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা।

রাজধানীর মাছ ও সবজির পাইকারি বাজারে সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, রাজনৈতিক অস্থিরতায় ব্যবসায়ীরা বিক্রির জন্য পণ্যদ্রব্য সংগ্রহ করতে পারছেন না। আবার যতটুকু সংগ্রহ করতে পারছেন ক্রেতার অভাবে তাও শতভাগ বিক্রি করতে পারছেন না। কেননা, লাগাতার অবরোধ আর হরতালে বাজারে ক্রেতার সংখ্যা প্রায় অর্ধেকেরও নিচে নেমে গেছে।

যাত্রাবাড়ী পাইকারি মাছ বাজারের ব্যবসায়ী মো. মাইনুদ্দিন দ্য রিপোর্টকে বলেন, ‘বর্তমানে অন্যান্য দিনের তুলনায় তিন ভাগের একভাগ মাছ বিক্রি হচ্ছে। বরিশাল, মাওয়া, ভৈরব ইত্যাদি স্থান থেকে ট্রাকে করে মাছ আসলেও অবরোধের জন্য দেশের অনেক স্থান থেকে মাছ আসতে পারছে না।’

তিনি বলেন, ‘সাধারণত ভোর ৬টা থেকে মাছের বাজার বসে। বেলা ১১টা থেকে ১২টার মধ্যে মাছ বিক্রি করে আমরা বাসায় চলে যাই। কিন্তু হরতাল-অবরোধের জন্য এখন মাছ বিক্রি শেষ করতে দুপুর হয়ে যায়। ঢাকার আশপাশের ক্রেতারা আসলেও ঢাকার বাইরের বড় পাইকারি ব্যবসায়ীরা আসতে পারছেন না। তাই প্রতিদিনই লোকসান গুনতে হচ্ছে।’

দেশের দুইনেত্রীর ওপর আক্ষেপ প্রকাশ করে মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল হামিদ সরদারের ছেলে মাছ ব্যবসায়ী মো. টুকু দ্য রিপোর্টকে বলেন, ‘মাছতো আনতে পারছি, কিন্তু ক্রেতাতো আসছেন না। ঘর ভাড়া দিয়ে স্ত্রী-সন্তানদের নিয়ে অনেক কষ্টে আছি। আমাদের কথা না শেখ হাসিনা ভাবেন, না খালেদা জিয়া। জনস্বার্থে এ সব কর্মকাণ্ড বন্ধ করা উচিত। পেটে ভাত নেই আর আমাদের নিয়ে রাজনীতি করবেন তা তো হবে না। নিজেরা সংবিধান সংশোধন করবেন নাকি একই অবস্থায় রাখবেন তা দুই নেত্রী বুঝবেন। তাদের ভুলের মাশুল আমরা কেন দেব? দেশে বর্তমান সংকট তারা সৃষ্টি করেছেন, সমাধানও তাদের করতে হবে।’

তিনি বলেন, ‘প্রতিদিন ২৫০-৩০০ টাকা ভিট (মাছ বিক্রির স্থান) ভাড়া দিতে হয়। মাছ বিক্রি হোক আর না হোক ভিট ভাড়া মালিককে দিতেই হয়। ভাড়া যদি দিতে না পারি তাহলে জায়গা ছেড়ে দিতে হবে। তাই শুধু লোকসান গুনতে হচ্ছে।’

জানা গেছে, দেশে চলমান অস্থিরতায় মাছ আমদানি-রফতানি করে ব্যবসায়ীরা ঠিকমত ব্যবসা করতে পারছেন না। ঢাকার বাইরে থেকে ট্রাকে করে মাছ আনতেও পারছে না তারা। প্রতিনিয়ত তাদের লোকসান গুনতে হচ্ছে। এর ফলে মাছের দাম বাড়ছে। স্বাভাবিকের তুলনায় বেশি দাম দিয়ে মাছ কিনতে হচ্ছে বলে সাধারণ জনগণের দুর্ভোগ বাড়ছে।

এদিকে বর্তমান পরিস্থিতিতে রাজধানীর সবজির বাজারে যাতে কোনো প্রকার ক্ষতিকারক প্রভাব না পড়ে, সে জন্য অভিনব পন্থা অবলম্বন করছেন যাত্রাবাড়ীর কাঁচাবাজার ব্যবসায়ীরা।

অবরোধে সারাদেশে রোডে কাঁচামাল পরিবহন ব্যবস্থা বন্ধ থাকায় এখন ট্রেনে করে শাক-সবজি ঢাকায় আনা হচ্ছে বলে দ্য রিপোর্টকে জানান সবজি বিক্রেতা মো. বাহার মিঞা।

তিনি বলেন, ‘অন্য দিনের চেয়ে হরতাল-অবরোধে শাক-সবজিসহ অন্যান্য কাঁচামাল আনা-নেয়া বেশি সুবিধা হচ্ছে। ঢাকার আশপাশ বিশেষ করে টাঙ্গাইল, গাজীপুরসহ বিভিন্ন জায়গা থেকে ট্রাকে করেই কাঁচামাল আনা যাচ্ছে। মাঝ রাতে ট্রাকে করে রওয়ানা হলে ভোররাতের মধ্যে মাল নিয়ে ঢাকায় পৌঁছানো যাচ্ছে। তাই তেমন কোনো সমস্যা হচ্ছে না। তবে দেশের উত্তরবঙ্গ থেকে কাঁচামাল আনতে খুব সমস্যা হচ্ছে। তাই ওইসব এলাকা থেকে ট্রেনে করে ঢাকার কমলাপুরে মাল আনা হচ্ছে। সেখান থেকে ভোররাতের মধ্যেই আমরা শাক-সবজি বাজারে নিয়ে আসছি।’

ইয়া হাসান বাণিজ্যালয়ের মালিক শরিফ আহমেদ দ্য রিপোর্টকে বলেন, ‘আমগো তো সমস্যাই নেই। আলু আনি বিক্রামপুর থেইকা। রাত আড়াইটার দিকে রওনা দিলে আধা ঘণ্টা লাগে ঢাকায় আইতে। অসুবিধা হইলো উত্তরবঙ্গের ব্যবসায়ীগো। হরতাল-অবরোধে ওই এলাকার শাক-সবজি ঠিক মতো ঢাকায় আহে না।’

হরতাল-অবরোধের জন্য রাজধানীর কাঁচাবাজারগুলোতে যখন নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে, ঠিক তখনই যাত্রাবাড়ীর কাঁচাবাজার ব্যবসায়ীরা এ প্রভাব প্রতিরোধে নতুন পন্থা খুঁজে বের করেছেন। এতে শাক-সবজির দাম তেমন বাড়ছে না ওই এলাকায়। তবে বিক্রির ক্ষেত্রে বাজারে ঢাকা ও এর আশপাশের ক্রেতাদের দেখা গেলেও ঢাকার বাইরের অনেক জায়গা থেকে বড় বড় পাইকারি ক্রেতাদের দেখা মিলছে না বলে জানান ব্যবসায়ীরা।

(দ্যরিপোর্ট/এসআর/সাদি/এনডিএস/ডিসেম্বর ০৯, ২০১৩)

পাঠকের মতামত:

SMS Alert

বিশেষ সংবাদ এর সর্বশেষ খবর

বিশেষ সংবাদ - এর সব খবর