thereport24.com
ঢাকা, শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১,  ২১ জমাদিউল আউয়াল 1446

এরশাদকে নিয়ে অন্ধকারে জাপা নেতারা

২০১৩ ডিসেম্বর ১১ ২৩:৩৮:৪৭
এরশাদকে নিয়ে অন্ধকারে জাপা নেতারা

জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের নির্বাচন বর্জনের সিদ্ধান্ত ও পরবর্তীতে কী হবে তা নিয়ে এখনো অন্ধকারে জাতীয় পার্টির শীর্ষনেতারা।

নেতারা জানেন না, এরশাদ কী করতে যাচ্ছেন। সকালে গলফ খেলার নাম করে কোথায় যাচ্ছেন। এমনকি নির্বাচনকালীন সরকারে অংশ নেওয়া জাপার মন্ত্রীরাও জানতে পারছেন না এরশাদ আসলে কিসের জন্য অপেক্ষা করছেন।

বুধবার জাপার একাধিক প্রেসিডিয়াম সদস্য ও নির্বাচনকালীন সরকার থেকে পদত্যাগের আবেদন করা একাধিক মন্ত্রী ও প্রতিমন্ত্রীর সঙ্গে আলাপকালে এ কথা জানা গেছে।

জাপার একজন মন্ত্রী তার বাসভবনে এ প্রতিবেদকের সঙ্গে আলাপকালে বলেন, ৩ ডিসেম্বর স্যার নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দেবেন এটা দলের কেউ জানতেন না। এমনকি দলের নেতাদের কল্পনাতেও আসেনি। আমরা যখন শুনলাম স্যার নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দিয়েছেন, সঙ্গে সঙ্গে মহাসচিবকে ফোন দিলে তিনি জানান কিছুই জানেন না। তার মানে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন এরশাদ সাহেব একা।

পদত্যাগপত্র জমা দেওয়া এ মন্ত্রীর দাবি, এ নিয়ে বিভ্রান্তিতে পড়েছেন জাপার অনেক এমপি প্রার্থী। এ সুযোগে সরকারের সঙ্গে লিয়োজোঁ করে সিদ্ধান্তহীন নেতারা প্রত্যাহার করছেন না মনোনয়নপত্র। অনেকেই দেখছেন জীবনে একবার হলেও এমপি হওয়ার স্বপ্ন। আবার সরকারপন্থী অনেক নেতাও দেখাচ্ছেন প্রার্থীদের এমপি হওয়ার স্বপ্ন।

এরশাদের প্রেস অ্যান্ড পলিটিক্যাল সেক্রেটারি সুনীল শুভ রায় জানান, দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য জাপার ২৪৮ জন প্রার্থী মনোনয়নপত্র দাখিল করেছিলেন। তবে বুধবার পর্যন্ত কতজন প্রার্থী মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করেছেন সে বিষয়ে কিছু জানেন না তিনি।

এরশাদের দুটিসহ মাত্র ২২ জন প্রার্থী সারাদেশ থেকে বুধবার পর্যন্ত মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের আবেদন করেছেন বলে জেলা প্রতিনিধি সূত্রে জানা গেছে।

প্রসঙ্গত ৩ ডিসেম্বর এরশাদ তার বনানীর কার্যালয়ে বসে যখন নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দেন এর এক ঘণ্টা আগে প্রেস সচিব সুনীল শুভ রায়কে সাংবাদিকদের ফোন দিতে বলেন। আর সংবাদ বিজ্ঞপ্তিটিও সুনীল শুভ রায়কে দিয়ে না লিখে নিজের হাতে লিখে ও ফটোকপি করে সাংবাদিকদের বিলি করেন। এর পরই ২৭ ঘণ্টার জন্য লাপাত্তা হয়ে যান। ৪ নভেম্বর ৩টা ২০মিনিটে একটি মাইক্রোবাসে করে পিছনের ফটক দিয়ে বারিধারার প্রেসিডেন্ট পার্কে প্রবেশ করেন তিনি। অনেকের ধারণা, এরশাদ তার বাড়ির সামনে চীনা দূতাবাস থেকে বেরিয়ে প্রেসিডেন্ট পার্কে প্রবেশ করেন।

বুধবার বিকেলে একান্ত আলাপচারিতায় জাপার সাবেক এক মন্ত্রী ও প্রেসিডিয়াম সদস্য জানান, আমরা অনেকেই স্যারের সঙ্গে কথা বলে বোঝার চেষ্টা করেছি কিন্তু তিনি কিছুই বলেন না। শুধু বলেন, তোমরা আমার সন্তান। আমি তোমাদের আগুনের মুখে ফেলে দেব না।

আলাপচারিতায় জাপার এ নেতার দাবি, এরশাদ গত এক বছর কাজী জাফর আহমদের মাধ্যমে বিএনপির সঙ্গে গোপনে যোগাযোগ করতেন এটা সত্য। কিন্তু বিএনপির অতিরিক্ত আত্মবিশ্বাস ও জাপাকে কম আসন দেওয়ার কারণে স্যার ক্ষুব্ধ ছিলেন। তবে এবার স্যার বিএনপির সঙ্গে সমঝোতা না করে নির্বাচন বর্জনের মতো এত গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিয়েছেন এটাও বিশ্বাসযোগ্য নয়।

ঢাকা মহানগরের এ নেতা আরও বলেন, এ বিষয়ে কিছু জিজ্ঞাসা করলে স্যার বলেন, যারা আমাদের সংরক্ষিত আসনসহ ৩০টি আসন দিতে চায় তাদের সঙ্গে আমি কেন যাব। তোমাদেরই তো মনোনয়ন দিতে পারব না। তাই স্পষ্ট নয় এরশাদ আসলে কী করছেন। আমরা পুরোপুরি অন্ধকারে। কারণ স্যার এও বলেছেন, একা নির্বাচন করলে আমরা কয়টি আসন পাব সেটা আমার জানা আছে। এ কথা শুনে মনে হয়, স্যার জোটগতভাবে নির্বাচনে যাবেন। কিন্তু প্রশ্ন, কাদের নিয়ে জোট করবেন। আমি টোটালি কনফিউজড।

তবে নির্বাচনকালীন সরকারের এক প্রতিমন্ত্রী ও প্রেসিডিয়াম সদস্যের দাবি, স্যার (এরশাদ) সেনাবাহিনীর শীর্ষনেতাদের সঙ্গে পরামর্শ করেই নির্বাচন বর্জনের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। স্যার ধরেই নিয়েছেন নির্বাচন হচ্ছে না। তাই এ নির্বাচনে গিয়ে কেন স্যার কর্মীদের জীবন ধ্বংসের পথে ঠেলে দেবেন।

এ প্রসঙ্গে এরশাদের উদ্ধৃতি দিয়ে এই নেতা বলেন, ‘স্যার তো ৯ তারিখ বলেছেন- যে নির্বাচন অর্থহীন, ক্ষণস্থায়ী, এ নির্বাচনে সরকার ১০০ আসন দিলেই কী আর ২০০ আসন দিলেই কী। সব দল অংশ না নিলে আমি নির্বাচনে যাব না।’

জাপা সূত্রে জানা গেছে, মঙ্গলবার থেকে এরশাদ প্রতিটি প্রার্থীকে মনোনয়ন প্রত্যাহারের জন্য ফোন দিচ্ছেন। বুধবার দুপুরে এই প্রতিবেদকের সঙ্গে জাপার এক নেতার আলাপকালেও এরশাদের একজন প্রতিনিধি ফোন করে জানতে চান, মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করেছেন কিনা।

এ প্রসঙ্গে জাপার প্রেসিডিয়াম সদস্য ও নির্বাচনকালীন সরকার থেকে পদত্যাগের আবেদনপত্র জমা দেওয়া যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী মুজিবুল হক চুন্নু বলেন, আমরা তো প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেই এমপি হতে পারব। প্রত্যাহারপত্র প্রস্তুত। ১২ তারিখ রাতে কিশোরগঞ্জ নিয়ে যাব।’

তিনি বলেন, ‘কিন্তু অনেক নেতা আছেন যারা স্যারের বিভ্রান্তির সুযোগ নিয়ে ইচ্ছা করেই মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করছেন না। তাদের ধারণা, আওয়ামী লীগ তো আর ৩০০ আসনই নেবে না। তাই আমরা থেকে গেলে কিছু আসন ভাগ্যে জুটতেও পারে। আর একবার এমপি হলে সংসদ একদিন থাকলেও তো সাবেক এমপি লিখতে পারবে।’

চুন্নু বলেন, ‘আমার ইমাম এরশাদ। স্যার যা বলবেন আমি তাই করব। স্যারের কথার বাইরে আমি একচুলও নড়ব না।’

(দ্য রিপোর্ট/সাআ/নূরু/এইচএসএম/শাহ/এআইএম/ডিসেম্বর ১১, ২০১৩)

পাঠকের মতামত:

SMS Alert

বিশেষ সংবাদ এর সর্বশেষ খবর

বিশেষ সংবাদ - এর সব খবর