thereport24.com
ঢাকা, শুক্রবার, ২৯ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১,  ২৭ জমাদিউল আউয়াল 1446

পাঁচদিন পরও নিহত দুই বাংলাদেশির লাশ ফেরত দেয়নি বিএসএফ

২০১৩ ডিসেম্বর ১৮ ০৫:০৪:২৩
পাঁচদিন পরও নিহত দুই বাংলাদেশির লাশ ফেরত দেয়নি বিএসএফ

মৌলভীবাজার সংবাদদাতা : নিখোঁজ ও মৃত্যুর খবর পাওয়ার পর ৫ দিন পেরিয়ে গেলেও মৌলভীবাজারের কুলাউড়া উপজেলার শরীফপুর সীমান্তে ভারতীয়দের গণপিটুনিতে নিহত বাংলাদেশি দুই কৃষকের লাশ এখনও ফেরত দেয়নি বিএসএফ।

গত ১৪ ডিসেম্বর সন্ধ্যায় বিজিবির চিঠির প্রেক্ষিতে ভারত সীমান্ত এলাকায় চুরির অভিযোগে গণপিটুনিতে নিহত দুই বাংলাদেশির ছবি পাঠায় বিএসএফ। কিন্তু ক্ষতবিক্ষত ও গলিত লাশের ছবি দেখে স্বজনরা লাশ সনাক্ত করতে পারেননি। স্বজনরা সনাক্ত করতে পারলে গত ১৫ ডিসেম্বর লাশ ফেরত দেওয়ার কথা ছিল। পরে নিহতদের পকেট থেকে জব্দ করা মোবাইল ফোনের সিম কার্ডের মাধ্যমে লাশ সনাক্ত করার জন্য বিজিবির পক্ষ থেকে বিএসএফকে জানানো হয়।

এদিকে এর আগে গত শুক্রবার বিএসএফ ও বিজিবি ঘটনাটি গুজব বলে উড়িয়ে দিলেও নিখোঁজ দুই বাংলাদেশির সন্ধানে সহযোগিতা চেয়ে পরদিন সকালেই বিএসএফের কাছে আনুষ্ঠানিকভাবে চিঠি দেয় বিজিবি। তবে ঘটনার ৫ দিন পার হলেও লাশ বুঝে পাননি স্বজনরা।

নিহত মাজিদ আলী শরীফপুর সীমান্তের সঞ্জরপুর গ্রামের বেরীরপার এলাকার ইয়াকুব মিয়ার ছেলে এবং নজর আলী একই গ্রামের আব্দুর রহিমের ছেলে।

নিহত কৃষক মাজিদ ও নজর আলীর বৃদ্ধ পিতামাতা ও তাদের পরিবারের অন্যান্য সদস্যরা জানান, বিজিবি সুবেদার তাদের বাড়িতে গিয়ে নাম-ঠিকানা শনাক্ত করে নিশ্চিত করেন মাজেদ ও নজর আলী ভারতে অভ্যন্তরে নিহত হয়েছেন।

তারা আরও জানান, গত ১২ ডিসেম্বর বিকেলে মনু নদী অতিক্রম করে জিরো পয়েন্টে অর্থাৎ ভারতের সমরুরপাড় সীমান্ত এলাকায় গরু চরাতে যাওয়ার পর থেকে তারা নিখোঁজ ছিল। সন্ধ্যায় গরু বাড়ি ফিরে এলেও কৃষক মাজিদ ও নজর ফিরে আসেনি। তাদের মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করে ফোন বন্ধ পাওয়া যায়। পরবর্তীতে সমরুরপাড় গ্রামে বসবাসকারী তাদের আত্মীয়রা জানিয়েছেন, ভারতীয় লোকজন লাঠিপেটা ও দা দিয়ে কুপিয়ে তাদের গুরুতর আহত করলে কৈলাশহর হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পথে তাদের মৃত্যু হয়।

সঞ্জরপুর গ্রামের দিনমজুর আব্দুল খালিক জানান, বিএসএফ ও ভারতীয়রা বাংলাদেশিদের ধরে নিয়ে যাওয়ার পর যেসব হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে তার বেশিরভাগ লাশই ফেরত দেয়নি বিএসএফ। লাশ ফেরত দিলেও ‘চোর’ আখ্যা দিয়ে ফেরত দেওয়া হয়। নিহতের পরিবারের স্বজনরা গত ১৪ ডিসেম্বর ত্রিপুরার দু’টি পত্রিকা দৈনিক সংবাদ ও উত্তর ত্রিপুরায় ‘গণধোলাইয়ে দুই বাংলাদেশি চোর নিহত’ শিরোনামে প্রকাশিত সংবাদের কপিও হাতে পেয়েছেন।

এ ব্যাপারে শরীফপুর সীমান্তের বিজিবি ক্যাম্প ও শ্রীমঙ্গলস্থ ১৪ বিজিবি ব্যাটালিয়নে যোগাযোগ করা হলে প্রথমে বিজিবির পক্ষে জানানো হয়, এ সংবাদ সঠিক নয়। অবশেষে শনিবার সকাল ১১টায় চাতলাপুর চেকপোস্ট এলাকায় বিজিবি-বিএসএফের সাপ্তাহিক নিয়মিত বৈঠকে নিখোঁজ দুই বাংলাদেশির বিষয়টি ওঠে আসে। বৈঠকে বিজিবির পক্ষে নেতৃত্ব দেন চাতলাপুর কোম্পানি কমাণ্ডার সুবেদার মোহাম্মদ আলী, শরীফপুর ক্যাম্প কমান্ডার নায়েক সুবেদার আব্দুল মালেক। বিএসএফের পক্ষে নেতৃত্ব দেন ভারতের টিলাবাজার কোম্পানি কমান্ডার পিসি দীনেশ।

এদিনও যোগাযোগ করা হলে উর্ধ্বতন বিজিবি কর্মকর্তাদের অনুমতি ছাড়া চাতলাপুর ও শরীফপুর বিজিবি ক্যাম্পের পক্ষে কোনো কথা বলতে রাজি না হলেও নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক বিজিবি সদস্য জানান, বৈঠকে নিখোঁজ কৃষক মাজিদ আলী ও নজর আলীর সন্ধানে সহযোগিতা চেয়ে চিঠি দেওয়া হয় বিএসএফকে। এ সময় বিএসএফের পক্ষ থেকে বলা হয়, এ ধরনের কোনো তথ্য তাদের কাছে নেই। তবে তারা খতিয়ে দেখছেন। এরপর গত রবিবার সকালে বিজিবি-বিএসএফের পুনরায় বৈঠক হলেও লাশের কোনো হদিস মিলেনি।

নিহত মাজিদ আলীর বাবা ইয়াকুব আলী ও মা মর্তুজা বেগম জানান, গত বৃহস্পতিবার দুপুরে সীমান্ত এলাকায় মাজিদ গরু চরাতে গেলে ভারতীয়রা তাকে ধরে নিয়ে গিয়ে বিএসএফের উপস্থিতিতে মাজিদকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়। একই রকম অভিযোগ করেন নিহত নজর আলীর ভাই নিজাম উদ্দিন ও নজরের স্ত্রী আলাতুন বেগমের। তারা জানান, সীমান্ত এলাকা থেকে গরু আনতে গিয়ে আর ফিরে আসেনি নজর আলী। পরদিন বিকেলে বিজিবি আলাতুন বেগমকে জানায়, তার স্বামী ভারতে মারা গেছেন। লাশের অপেক্ষায় ৫ দিন পার হলেও লাশ পাওয়ার ব্যাপারে কোনো সুরাহা না হওয়ায় দুই পরিবারের অভিযোগ আর দাবি এখন একটাই, লাশ ফিরিয়ে আনতে গড়িমসি করছে বিজিবি।

(দ্য রিপোর্ট/জেএ/জেএম/ডিসেম্বর ১৮, ২০১৩)

পাঠকের মতামত:

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

SMS Alert

জেলার খবর এর সর্বশেষ খবর

জেলার খবর - এর সব খবর