thereport24.com
ঢাকা, শুক্রবার, ২৯ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১,  ২৭ জমাদিউল আউয়াল 1446

মৃত্যুর আগে মাথা গোঁজার ঠাঁই চান মুক্তিযোদ্ধা সফর আলী

২০১৩ ডিসেম্বর ১৮ ০৭:১৫:৩৯
মৃত্যুর আগে মাথা গোঁজার ঠাঁই চান মুক্তিযোদ্ধা সফর আলী

মৌলভীবাজার সংবাদদাতা : একাত্তরে টগবগে তরুণ সফর আলী। দেশমাতৃকার মুক্তির আকাঙ্খায় সেদিন জীবনবাজি রেখে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন মরণপণ সংগ্রামে। মুক্ত স্বাধীন স্বদেশে জীবন বাঁচানোর তাগিদে আজ হাত পাতেন অপরের করুণার প্রত্যাশায়। আর বিড় বিড় করে নিজেকে প্রশ্ন করেন- এই কি বিজয়, এই কি স্বাধীনতা? ভিক্ষাবৃত্তিই আমার মুক্তিযুদ্ধের পুরস্কার।

মৌলভীবাজারের কুলাউড়া উপজেলার পৃথিমপাশা ইউনিয়নের মনরাজ গ্রামের টগবগে যুবক সফর আলী ’৬৯-র আন্দোলনমুখর দিনে তৎকালীন মুজাহিদ বাহিনীর চাকুরি ছেড়ে নেমে আসেন রাজপথে। রাজপথের মিছিলে কুলাউড়ার জননন্দিত নেতা সাবেক সংসদ সদস্য মরহুম আব্দুল জব্বারের নেতৃত্বে বিভিন্ন মিছিল-সমাবেশে অংশ নেন। ’৭০-এর সাধারণ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের একজন কর্মী হিসেবে সক্রিয় ভূমিকা পালন করেন।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণ শুনে যুদ্ধে যাওয়ার অনুপ্রেরণা পান। বাল্যকালে পিতৃহারা সেদিনের এই টগবগে যুবক সফর আলী মৌলভীবাজার-৩ আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য সৈয়দ মহসীন আলী, কুলাউড়ার প্রয়াত এমপি আব্দুল জব্বার, জুড়ী উপজেলা চেয়ারম্যান এমএ মুমিত আসুকের সঙ্গে ৪নং সেক্টরের অধীনে সেক্টর কমাণ্ডার মেজর সি আর দত্তের নেতৃত্বে মুক্তিযুদ্ধে সম্মুখসমরে অংশগ্রহণ করেন। যুদ্ধে যাওয়ার সময় মা, স্ত্রী, কন্যাসহ পরিবারের সদস্যদের কাছ থেকে বিদায় নেওয়ার সময়টুকুও পাননি।

নয় মাস রক্তক্ষয়ী যুদ্ধে অনেক পরিচিতজনকে হারিয়ে মাতৃভূমি শত্রুমুক্ত করেন। কিন্তু বিজয়ের ৪৩ বছর পরও তার অনুভূতি জানতে চাইলে কান্নাজড়িত কণ্ঠে বীর মুক্তিযোদ্ধা সফর আলী জানান, স্বাধীনতার পরপরই সকল নেতার দ্বারস্থ হয়েছেন, অন্তত একটি কাজ পাইয়ে দেওয়ার জন্য। তার ভাগ্যে কাজ জুটেনি। শরীরের শক্তি থাকায় তখন তিনি রিকশা চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করতেন। অসুস্থ মা চিকিৎসার অভাবে মারা গেছেন অনেক আগেই। এখন শরীরে তার শক্তি নেই। পরিবারের সদস্যদের নিয়ে প্রায়ই অর্ধাহারে আর অনাহারে দিন কাটান। কেউ তাঁর খোঁজও রাখে না। মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাস্ট থেকে ২ হাজার টাকা ভাতা প্রদান করা হয়। ভাতার টাকায় সংসার চলে না। নিজের কোনো ভিটেবাড়িও নেই। শ্বশুরবাড়ির একখণ্ড ভূমিতে যাযাবরের মতো তিনি দিনাতিপাত করছেন। বর্তমানে তিনি কুলাউড়া উপজেলার কাদিপুর ইউনিয়নের মনসুর গ্রামে বসবাস করছেন।

প্রতিনিয়ত মানুষের করুণার পাত্র হয়ে তাকে হাত পাততে হয়। মৃত্যুর পর রাষ্ট্রীয় সম্মানে সমাহিত করার চেয়ে তাঁর কাছে এ মুহূর্তে নিয়মিত দু’মুঠো অন্ন যোগানো খুব বেশি প্রয়োজন। জীবনের শেষ বয়সে রোগেশোকে ভোগা এই বীর মুক্তিযোদ্ধার ডান হাতে পঁচন ধরার উপক্রম। সরকারি স্বাস্থ্যকেন্দ্রে গেলেও তাকে দেখা হয় অবহেলিত চোখে। আশ্বাস আর প্রবঞ্চণাই বোধ হয় তাঁর নিয়তি।

বাংলাদেশের রাষ্ট্র ক্ষমতায় এখন গণতান্ত্রিক সরকার অধিষ্ঠিত। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তনয়া শেখ হাসিনা মুক্তিযোদ্ধা ও তাদের পরিবার-পরিজনদের পুনর্বাসনের জন্য অনেক উদ্যোগ নিয়েছেন। বীর এই মুক্তিযোদ্ধা তার পুনর্বাসনের ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে দাবি জানান।
মুক্তিযোদ্ধা সফর আলী বলেন, বিজয়ের ৪২তম বছর এবার পার হলো। কেউ তাঁর খোঁজ নেয় না। অসুস্থ অবস্থায় ঔষধ পান না; না খেয়ে অনাহারে থাকেন। বৃদ্ধ বয়সে শীত-গরমে কষ্ট পান। তাঁর আর্তি একটাই, মৃত্যুর আগে সরকার যেন মাথার গোঁজার ব্যবস্থা করে দেন। তাঁর একটাই চাওয়া শেষ মুহূর্তে যেনো সরকারের দেওয়া জায়গায় তিনি পরম শান্তিতে আশ্রয় নিয়ে মরতে পারেন।

কাঁদের মোল্লার ফাঁসি কার্যকর হওয়ায় শেখ হাসিনার প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান।

(দ্য রিপোর্ট/জেএ/জেএম/ডিসেম্বর ১৮, ২০১৩)

পাঠকের মতামত:

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

SMS Alert

জেলার খবর এর সর্বশেষ খবর

জেলার খবর - এর সব খবর