thereport24.com
ঢাকা, রবিবার, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ৮ পৌষ ১৪৩১,  ২০ জমাদিউস সানি 1446

রিক্সা পেইন্টিংয়ের হাল-হকিকত

২০১৩ ডিসেম্বর ১৮ ২১:৩১:১৩
রিক্সা পেইন্টিংয়ের হাল-হকিকত

খেয়া মেজবা, দ্য রিপোর্ট : সমৃদ্ধ বাংলার কারুশিল্প কালের স্রোতে হারিয়ে যেতে বসেছে। মানুষের জীবনযাত্রা যেমন বদলেছে তেমনি বদলেছে মানুষের আকাঙ্ক্ষা ও চাহিদা। বংশ পরম্পরায় চলে আসা কারুশিল্পের নানা পেশার শিল্পীরা অনেকেই তাদের পুরনো পেশাকে বাদ দিয়ে জীবিকার তাগিদে নতুন করে ভাবতে বাধ্য হচ্ছেন।

রিক্সা কারুশিল্পেরই একটি অংশ। গ্রাম-শহরে সবখানেই রিক্সার চাহিদা রয়েছে অনেক আগে থেকেই। আমাদের দেশে অনেক আগে থেকেই রিক্সায় বিভিন্ন রকমের নকশা ব্যবহৃত হয়ে আসছে। এসব নকশার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে পেইন্টিং। রিক্সায় করা নকশার অনুষঙ্গ হিসেবে আমরা দেখতে পেতাম প্রকৃতি, বাংলা সিনেমার নানা ঘটনা সংবলিত চিত্র, পশু-পাখি, ফুল, লতা-পাতা, নদীর চিত্র ইত্যাদি।

কিছুদিন আগেও নতুন রিক্সার পেছনে আমরা বাহারি নকশার পেইন্টিং দেখতে পেতাম। রিক্সা অলঙ্ককরণের উপাদান হিসেবে ব্যবহৃত হতো রিক্সার সামনের ঝালড়, পেইন্টিংসহ আরো নানা অনুষঙ্গ। ইদানীং যা খুব একটা চোখে পড়ে না। রিক্সা পেইন্টিং নিয়ে অনেকদিন ধরে কাজ করছেন শিল্পী রোকন। তিনি জানান, প্রায় বছর দুই হলো তিনি এই পেশা থেকে বের হয়ে এসেছেন, কারণ এখন আর আগের মতো কাজ হয় না।

বিদেশিরা বরং এখন এসব কাজ কিনতে বেশি আগ্রহী, ফলে তিনি এখন বিদেশি পৃষ্টপোষকতায় কাজ করেন। অস্ট্রেলিয়া, জাপান, ইংল্যান্ডসহ নানা দেশের ক্রেতা তিনি পান। ১৯৮৭ সালে বাংলাদেশের এক শিল্পী ইংল্যান্ডে একটি রিক্সা নিয়ে নিজ উদ্যোগে লন্ডনে নিয়ে এক্সিবিশন করেন, সেখানে ব্রিটিশ মিউজিয়ামের সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তার খুব ভালো লাগে। পরে তারা বাংলাদেশে এসে শিল্পীর সাথে দেখা করে। কাজের মাধ্যম হিসেবে তিনি রিক্সায় ব্যবহৃত মেটাল ও রেক্সিনে ছবি আঁকেন, রং হিসেবে ব্যবহার করেন এনামেল পেইন্ট। তার কাজের বিষয়বস্তু হিসেবে রয়েছে- মুক্তিযুদ্ধ, বন্যা। এছাড়া বাংলা ছায়াছবির বিভিন্ন নায়ক-নায়িকা সংবলিত চিত্র। রিক্সা পেইন্টিংয়ে প্রধান বিষয় ছিল সিনেমার কাহিনী। এসব কাজগুলোতে সেই সময়ের সামাজিক প্রেক্ষাপট স্পষ্টভাবেই বুঝা যায়। গ্রাম-বাংলার লোকসংস্কৃতি, নানা রকমের কল্পকাহিনী নিয়ে গড়ে উঠতো এক একটি শিল্পকর্ম। উজ্জ্বল রং, শেডের ব্যবহার, মানুষের গড়ন এসব কিছুতেই ‍আলাদা বৈশিষ্ট্য চোখে পড়ে। এছাড়া সিনেমার নাম লেখা হতো বাহারি নকশা ও রং দিয়ে। এসব নামের মধ্যে ‘মায়ের দোয়া’ জনপ্রিয় ছিল।

বর্তমানে দেশের তুলনায় বাইরের দেশগুলোতে রিক্সা চিত্রের চাহিদা বেশি। ‘বাংলাদেশ শিল্পকর্মশালা’ নামে জাপানে কিছুদিন আগে মাসব্যাপী হয়ে গেল বাংলাদেশের কারুশিল্প প্রদর্শনী। সেখানে বাংলাদেশের রিক্সা পেইন্টিংয়ের জনপ্রিয়তা ছিল চোখে পড়ার মতো। বাংলাদেশের এসব শিল্পীরা তাই এখন দেশের বাইরে থেকে আসা কাজের ওপর অনেকাংশেই নির্ভর করেন।

শিল্পের মান, ধরন সব কিছু বদলায় সময়ের সাথে সাথে। নগর কেন্দ্রিক জীবনে দিনে দিনে রিক্সার চাহিদা কমে আসছে। সেই সাথে হারিয়ে যেতে বসেছে রিক্সাচিত্র। আমাদের এই আদি শিল্পকলা কি দিনে দিনে ধ্বংসের দিকেই এগোবে, নাকি এই নিয়ে ভাবনার আরো কিছু আছে তা নির্ধারণ করতে হবে আমাদেরই।

(দ্য রিপোর্ট/কেএম/সাদি/ডিসেম্বর ১৮, ২০১৩)

পাঠকের মতামত:

SMS Alert

শিল্প ও সংস্কৃতি এর সর্বশেষ খবর

শিল্প ও সংস্কৃতি - এর সব খবর