thereport24.com
ঢাকা, মঙ্গলবার, ২৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ১০ পৌষ ১৪৩১,  ২২ জমাদিউস সানি 1446

মহাজোট সরকার

অনেক আইন ও নীতির খসড়া চূড়ান্ত হলো না

২০১৩ ডিসেম্বর ১৯ ২১:২১:০৫
অনেক আইন ও নীতির খসড়া চূড়ান্ত হলো না

প্রণয়ন করা অনেক আইন ও নীতির খসড়া চূড়ান্ত করতে পারেনি মহাজোট সরকার। জন গুরুত্বপূর্ণ হলেও খসড়া প্রণয়নের পরই স্বার্থান্বেষী মহলের তৎপরতার কাছে নতি স্বীকার করে কোনো কোনো ক্ষেত্রে সেই আইন থেকে সরে এসেছে সরকার। সদিচ্ছার অভাবেরও অভিযোগ আছে কোনো কোনো ক্ষেত্রে। আবার কয়েকটি ক্ষেত্রে মেয়াদ শেষ হওয়ায় চূড়ান্ত করা সম্ভব হয়নি আইন বা নীতির খসড়া।

গত ২১ নভেম্বর প্রধানমন্ত্রীসহ ২৯ সদস্যের নির্বাচনকালীন মন্ত্রিসভা গঠন করা হয়। এর মধ্যে ২১জন মন্ত্রী, ৭জন প্রতিমন্ত্রী। এ মন্ত্রিসভায় আওয়ামী লীগ ছাড়া জাতীয় পার্টি, জাসদ ও বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সংসদ সদস্যরা রয়েছেন। নির্বাচন কমিশনের তফসিল অনুযায়ী আগামী ৫ জানুয়ারি দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।

মালিকদের বাণিজ্য ঠেকাতে গত জানুয়ারিতে ‘বেসরকারি মেডিকেল ও ডেন্টাল কলেজ স্থাপন আইন-২০১৩’খসড়া প্রণয়ন করে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়।

সরকারি মেডিকেল কলেজে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে ১০ হাজার টাকা ভর্তি ফি নেয়া হলেও বেসরকারি মেডিকেল কলেজগুলোর বিরুদ্ধে ১৫ লাখ টাকা পর্যন্ত ফি নেয়ার অভিযোগ রয়েছে। বিভিন্ন মহল থেকে আইনটি চূড়ান্ত করার দাবি থাকলেও এ বিষয়ে আগ্রহ ছিলো না স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের। অভিযোগ আছে, বেসরকারি মেডিকেল কলেজগুলোর প্রভাবশালী মালিকদের চাপের মুখে গুরুত্বপূর্ণ এ খসড়াটি চূড়ান্ত করেনি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়।

নিম্নমান, ভেজাল ওষুধ প্রতিরোধ, ওষুধের নিরাপদ ব্যবহার নিশ্চিত করতে গত ১১ জুন জাতীয় ওষুধ নীতির চূড়ান্ত খসড়া প্রণয়ন করে সরকার। ওষুধ খাতের জন্য কোনো নীতিমালা নেই। ওষুধ কোম্পানিগুলো বিভিন্ন সময় তাদের ইচ্ছে মতো ওষুধের দাম বাড়িয়ে দুর্ভোগে ফেলছে ক্রেতাদের।

স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের প্রণয়ণ করা এ খসড়া নীতিমালা অনুযায়ী একটি মূল্য নির্ধারণী কমিটির মাধ্যমে সরকার ওষুধের দাম নির্ধারণ করে দেবে। সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালে গ্র্যাজুয়েট ফার্মাসিস্টদের তত্ত্বাবধানে গঠন করা হবে ‘হসপিটাল ফার্মেসি’ এবং অন্যান্য ক্ষেত্রে ‘কমিউনিটি ফার্মেসি’গঠন করবে সরকার। শক্তিশালী করা হবে ওষুধ প্রশাসন অধিদফতরকে। রাজস্ব আদায়ের ১৫ শতাংশের অংশীদার হবেন এ প্রতিষ্ঠানের কর্মীরা। ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিকে দ্রুত ক্ষতিপূরণ ও অভিযুক্তদের ড্রাগ কোর্টের মাধ্যমে দ্রুত বিচারের কথাও বলা হয়েছে প্রস্তাবিত নীতিমালায়। এতে আরো উল্লেখ আছে, সব ওষুধ কারখানায় যোগ্য জনবল নিয়োগসহ সব বিভাগীয় শহরে ওষুধ পরীক্ষাগার স্থাপন করা হবে। খসড়া প্রণয়ন করেই দায়িত্ব সেরেছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়, নীতিমালাটিও চূড়ান্ত করতে আগ্রহ দেখা যায়নি তাদের।

এ বিষয়ে স্বাস্থ্য সচিব এমএম নিয়াজউদ্দিন দ্য রিপোর্টকে বলেন, ‘বিভিন্ন ধরনের সভা ও প্রক্রিয়ার মাধ্যমে সিদ্ধান্ত নিয়ে একটি আইন চূড়ান্ত করে মন্ত্রিসভা বৈঠকে পাঠানো হয়।’ বেসরকারি মেডিকেল কলেজ আইনের খসড়ার বিষয়ে সেভাবে কাজ হয়নি জানিয়ে সচিব বলেন, ‘ওষুধ নীতিমালাটি চূড়ান্ত করার কাজ চলছে। এই মুহূর্তে কিছু হবে না। নতুন সরকার আসার পূর্ব পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে।’

একইভাবে খসড়াতেই বন্দী রয়েছে বাণিজ্য সংগঠন আইনের খসড়া। ২০১১ সালের শুরুর দিকে সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে আলোচনা করে বাণিজ্য সংগঠন আইনের খসড়া প্রণয়ন করা হয়। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় খসড়া আইনটি গত বছরের ফেব্রুয়ারির মধ্যে চূড়ান্ত করে মন্ত্রিসভা বৈঠকে অনুমোদনের জন্য পাঠানোর কথা জানালেও এ বিষয়ে আর কোনো অগ্রগতি হয়নি।

শিল্প, বাণিজ্য, সেবা খাতসহ দেশের সার্বিক অর্থনৈতিক স্বার্থ সংরক্ষণ ও উন্নয়নে বাণিজ্য সংগঠনগুলোর ভূমিকা সুসংহত করতে এ আইন তৈরির উদ্যোগ নেওয়া হয়। বলা হয়, বাণিজ্য সংগঠনগুলোর যুগোপযোগী সাংগঠনিক কাঠামো, কার্যপ্রণালী ও দায়িত্ব সুনির্দিষ্ট হবে এ আইনের মাধ্যমে। সংগঠনগুলোর শৃঙ্খলা ও দায়বদ্ধতা নিশ্চিত করা সম্ভব হবে। বর্তমানে দেশের বাণিজ্য সংগঠনগুলো ‘বাণিজ্য সংগঠন অধ্যাদেশ-১৯৬১’ দিয়ে পরিচালিত হচ্ছে।

গত বছরের সেপ্টেম্বর মাসে চূড়ান্ত করা হয় ‘অনলাইন গণমাধ্যম নীতিমালা’। অনলাইন সংবাদ মাধ্যম ব্যাপকভাবে বিস্তার লাভ করলেও এগুলো পরিচালনার জন্য এখন দেশে কোনো আইন, নীতিমালা, অধ্যাদেশ নেই। ওই বছরের ১২ সেপ্টেম্বর তৎকালীন তথ্য সচিব হেদায়েতুল্লাহ আল মামুন সাংবাদিকদের জানান, অনলাইন সাংবাদপত্রগুলোকে নিয়মের মধ্যে আনতে অক্টোবরের মধ্যে চূড়ান্ত হচ্ছে নীতিমালা। কিন্তু অনলাইন গণমাধ্যমের একটি অংশের বিরোধিতার মুখে মুখ থুবড়ে পড়ে এ নীতিমালাটিও।

আলোর মুখ দেখেনি তথ্য মন্ত্রণালয়ের ‘বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল স্থাপন ও পরিচালনা নীতিমালা’। বর্তমান সরকারের শুরু থেকেই একটি নীতিমালা করার কথা শোনা গেলেও গত জানুয়ারিতে খসড়া নীতিমালার অনুলিপি আটটি মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয় মতামতের জন্য।

সরকার চাইলেই কোনো কারণ দর্শানো ছাড়াই বেসরকারি টিভি চ্যানেলের লাইসেন্স বাতিল করতে পারবে, খসড়া নীতিমালার এমন কিছু ধারার জন্য এ নীতিমালার বিরোধিতায় নামে চ্যানেল মালিকরা।

গত ৯ অক্টোবর জাতীয় সংসদে প্রশ্নোত্তর পর্বে তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু জানান, বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেলগুলোর জন্য নীতিমালা চূড়ান্ত করা হয়েছে, যা এই সরকারের মেয়াদেই ঘোষণা করা হবে। কিন্তু এরপর আর কোনো অগ্রগতি নেই।

তথ্য সচিব মরতুজা আহমেদ দ্য রিপোর্টকে বলেন, দুটি নীতিমালাই প্রায় চূড়ান্ত করা হয়েছে। নির্বাচনকালীন মন্ত্রিসভার কোনো নীতি নির্ধারণী সিদ্ধান্ত নেয়ার এখতিয়ার না থাকায় এগুলো এ মুহূর্তে চূড়ান্ত করা যাচ্ছে না।

প্রজাতন্ত্রের কর্মচারীদের জন্য কোনো আইন নেই। বিধি, নীতিমালা ও প্রয়োজনমতো নির্দেশনাপত্র জারি করে সরকারি কর্মচারীদের পরিচালনা করা হচ্ছে। বর্তমান সরকার ২০১০ সালে ‘গণকর্মচারী আইন (পাবলিক সার্ভেন্ট আইন)’ খসড়া প্রণয়ণ করে। দুই বছর ধরে সভা-সেমিনার করে এবং সাধারণ মানুষের মতামত নিয়ে এর খসড়া চূড়ান্ত করা হয়। ওই খসড়া আইনে পরীক্ষার মাধ্যমে উপসচিব, যুগ্মসচিব, অতিরিক্ত সচিব ও সচিব পদে পদোন্নতির কথা বলা হয়। প্রশাসনের বিভিন্ন স্তরের কর্মকর্তারা পরীক্ষার মাধ্যমে পদোন্নতি পদ্ধতির ঘোর বিরোধিতা করেন। এ খসড়া আইনটি নিয়ে আর এগোতে পারেনি সরকার। পরে ‘সরকারি কর্মচারী আইন’নামে নতুন একটি আইনের খসড়া আসে। বেশ কিছু ধারার কারণে এ খসড়াটিও প্রশাসনের কর্মকর্তাদের বিরোধিতার মুখে পড়ে। তাই সরকারের মেয়াদ শেষ হলেও গুরুত্বপূর্ণ আইনের খসড়াটি আলোর মুখ দেখেনি।

জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব আবদুস সোবহান সিকদার দ্য রিপোর্টকে বলেন, আমরা এখনো অপেক্ষায় আছি। আশা করি আগামীতে আইনের খসড়াটি চূড়ান্ত করতে পারবো।

নির্বাচনকালীন সরকার নীতি-নির্ধারণী না নিতে পারায় কেন্দ্রীয় ব্যাংক ও রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন চার বাণিজ্যিক ব্যাংকের জন্য প্রস্তাবিত স্বতন্ত্র বেতন কাঠামো আটকে গেছে।

গত ৮ ডিসেম্বর অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত সাংবাদিকদের বলেন, স্বতন্ত্র বেতন কাঠামো নির্বাচনকালীন সরকারের সময় হবে না। সিদ্ধান্ত হয়ে গেছে। কিন্তু পরিপত্র জারি করতে গিয়ে জটিলতা দেখা দিয়েছে। জাতীয় বেতন কাঠামো থেকে এই ব্যাংকগুলোকে আলাদা করতে হবে। সে জন্য আইন সংশোধন প্রয়োজন। কিন্তু বর্তমান সরকার সেটা পারবে না।

বাংলাদেশ ব্যাংকের জন্য স্বতন্ত্র এবং সোনালী, অগ্রণী ও জনতা ব্যাংকে অভিন্ন বেতন কাঠামো বাস্তবায়নে দীর্ঘদিন ধরে দাবি করে আসছেন ব্যাংকাররা। চলতি বছর রূপালী ব্যাংকও এ কাঠামোর আওতায় অন্তর্ভুক্ত হওয়ার আবেদন করে।

(দ্য রিপোর্ট/আরএমএম/এইচএসএম/সাদি/ডিসেম্বর ১৯, ২০১৩)

পাঠকের মতামত:

SMS Alert

বিশেষ সংবাদ এর সর্বশেষ খবর

বিশেষ সংবাদ - এর সব খবর