thereport24.com
ঢাকা, মঙ্গলবার, ২৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ১০ পৌষ ১৪৩১,  ২২ জমাদিউস সানি 1446

হোঁচট খেল ১ কোটি নতুন ভোটার

২০১৩ ডিসেম্বর ১৯ ২২:৩৬:২৪
হোঁচট খেল ১ কোটি নতুন ভোটার

শুরুতেই হোঁচট খেল ১ কোটির অধিক নতুন ভোটার। জীবনে প্রথমবার পাওয়া ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারছেন না এদের মধ্যে অন্তত ৬১ লক্ষাধিক ভোটার। অন্যদিকে বড় দলগুলোর অংশগ্রহণ না থাকায় নির্বাচনের আসল স্বাদ পাচ্ছেন না আরো অন্তত ৪৭ লক্ষাধিক ভোটার। এ অবস্থায় নতুন ভোটারদের অনেকেই আগামী নির্বাচনে ভোটদান থেকে বিরত থাকার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।

নির্বাচন কমিশন সূত্র জানায়, গত নির্বাচনে সারাদেশে মোট ভোটার ছিল ৮ কোটি ১০ লাখ ৮৭ হাজার ৩ জন। এবার ভোটার সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ৯ কোটি ১৯ লাখ ৬৫ হাজার ১৬৭ জন। নতুন ভোটার বেড়েছে ১ কোটি ৮ লাখ ৭৮ হাজার ১৬৪ জন।

আগামী নির্বাচনে হার-জিতের বড় ফ্যাক্টর ধরা হচ্ছিল এই ১ কোটির অধিক নতুন ভোটারকে। যারা গতানুগতিক বুলিসর্বস্ব রাজনীতিতে বিশ্বাসী নয়। অতীতের চেয়ে এ প্রজন্ম সচেতন ও চিন্তায় বাস্তবমুখী। এদেরই একজন রাজধানীর ধানমন্ডি এলাকার (ঢাকা-১০) ভোটার মো. সুমন হোসেন (ভোটার নম্বর-১৯৯১২৬৯১৬১৫০০০৩০৩); যিনি একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষার্থী। তিনি এখনও ভোটদান নিয়ে অনিশ্চয়তায় ভুগছেন। তিনি বলেন, ‘এটা ইলেকশন নয়, সিলেকশন। এখানে আমার মতামতের কোনো দাম নেই। এটা একটা ভোট-ভোট খেলা।’

এ প্রতিবেদক তার সঙ্গে কথা বলে বুঝতে পারেন, তিনি জানেনই না, তার আসনে ইতোমধ্যে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়ে গেছেন।

পাবনা-৪ আসনের ভোটার নোমান বিশ্বাস (ভোটার নম্বর-১৯৯২৭৬১৩৯২১০০০০২১)। ভোটার হওয়ার পর থেকেই মনে মনে অংক কষছিলেন আগামী নির্বাচন নিয়ে। কিন্তু এবার ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারছেন না। কেননা মতামত প্রদানের আগেই তার এলাকায় আওয়ামী লীগের প্রার্থী বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়ে গেছেন।

প্রায় একই প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন নেত্রকোনা-২ আসনের পূর্বধলা এলাকার ভোটার সাদ্দাম হোসেন। তিনি বলেন, ‘ভাবতে খুবই খারাপ লাগছে আমার মতামত ছাড়াই এমপি নির্বাচন হয়ে গেছে। যা আমাকে হতাশ করেছে।’

নির্বাচন কমিশনের তথ্য মতে, সারাদেশে ১৫৪টি আসনে ইতোমধ্যে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়ে গেছে। এদের মধ্যে আওয়ামী লীগের ১২৭জন, জাতীয় পার্টির ২১, জাসদের ৩, ওয়ার্কার্স পার্টির ২ ও জেপির (মঞ্জু) একজন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন।

জানা যায়, ওই ১৫৪টি আসনে মোট ভোটার ৪ কোটি ৮৫ লাখ ৬৬ হাজার ৩১ জন। এদের মধ্যে ৬১ লাখ ৭১ হাজার ৫৪১ জন নতুন ভোটার, যারা এবার তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারছেন না।

ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী আগামী ৫ জানুয়ারি বাকি ১৪৬ আসনের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। বিএনপিসহ অন্তত ২২টি নিবন্ধিত দল এ নির্বাচন বর্জন করেছে। নির্বাচন প্রতিহত করতে টানা কর্মসূচি পালন করছে দলগুলো। সহিংস হয়ে উঠেছে দেশের বিভিন্ন জেলা। এতেও ভীত হয়ে আছেন অনেক ভোটার; যারা ইতোমধ্যে ভোটদান থেকে বিরত থাকার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।

গত নির্বাচনে ৩ লাখ ৮৩ হাজার ৬১৫ জন ভোটার ‘না’ ভোট দিয়েছেন। ভোটারদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এবার এই সংখ্যা আরো বাড়বে। তবে ‘না’ ভোটের বিধান বাতিল হওয়ায় এবার অনেকেই ভোটদান থেকে বিরত থাকার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।

ট্র্যান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান দ্য রিপোর্টকে বলেন, শুধু নতুন ভোটার নয়, সমগ্র তরুণদের মাঝে এই নির্বাচন নিয়ে একটি নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। এতে তাদের মাঝে রাজনৈতিক দল ও রাজনীতিবিদদের বিষয়ে বিতৃষ্ণা এবং আস্থাহীনতা তৈরি হবে। এটা গণতন্ত্রের জন্য উদ্বেগের বিষয়।

নির্বাচন পর্যবেক্ষণ সংস্থা সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার বলেন, এটা ইলেকশন নয়, এটা সিলেকশন। এ ধরনের নির্বাচন কারো কাছেই গ্রহণযোগ্য হবে না। এ নির্বাচনে ভোটারের উপস্থিতি ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারির নির্বাচনের চেয়ে কম হবে বলেই আমার ধারণা।

গত নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নিরঙ্কুশ বিজয়ে বড় ভূমিকা রেখেছিল ৩ কোটি নতুন ভোটার। দিনবদলের সনদ আর ডিজিটাল বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখিয়ে তখন তরুণ ভোটারদের মন কাড়া হয়েছিল।

(দ্য রিপোর্ট/আরএইচ/শাহ/এইচএসএম/ডিসেম্বর ১৯, ২০১৩)

পাঠকের মতামত:

SMS Alert

বিশেষ সংবাদ এর সর্বশেষ খবর

বিশেষ সংবাদ - এর সব খবর