thereport24.com
ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৬ মে 24, ২ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১,  ৮ জিলকদ  1445

জয়যাত্রার অভিষেক

২০১৩ ডিসেম্বর ২৩ ১৪:৪৩:৫৭
জয়যাত্রার অভিষেক

মুহম্মদ আকবর, দ্য রিপোর্ট : দেশের যাত্রাশিল্পের ক্রান্তিকালে অভিষেক হল ‘জয়যাত্রা’র। বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির নাট্যপরীক্ষণ হলে রবিবার সন্ধ্যায় এ দলটির যাত্রা শুরু হয়।

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের শুরুতেই ছিল ‘বাংলাদেশের যাত্রাশিল্প : বদলাবার এবং বদলে দেওয়ার এখনই সময়’ শীর্ষক সেমিনার। অনুষ্ঠানে দেশের প্রতিথযশা যাত্রাশিল্পী এবং বিশিষ্টজনরা উপস্থিত ছিলেন। সেমিনার শেষে আইটিআই বিশ্ব সভাপতি রামেন্দু মজুমদার যাত্রাদলটির উদ্বোধন করেন।

উদ্বোধনী যাত্রাপালা ‘নবাব সিরাজউদ্দৌলা’ মঞ্চায়নের আগে জয়যাত্রা’র অধিকারী অ্যাডভোকেট হাসান কবির শাহীন বলেন-‘যাত্রাশিল্পকে বদলাবার এখনই সময়। কারণ যাত্রাশিল্পের সহযোগিতায় রাষ্ট্র এগিয়ে এসেছে। প্রণীত হয়েছে যাত্রাশিল্প উন্নয়ন নীতিমালা। যাত্রাশিল্পকে বাঁচাতে হলে অপসংস্কৃতির আগ্রাসন ঠেকাতে হবে। সেই আন্দোলনে জয়যাত্রা থাকবে অগ্রভাগে। এই বিশ্বাস নিয়ে আমাদের এই কর্মপ্রয়াস।’

বাঙালির শত বছরের ঐতিহ্যবাহী যাত্রাশিল্প যখন বিলুপ্তির পথে এমনি সময় ‘জয়যাত্রা’র অভিষেক নিয়ে দেশের যাত্রা শুভানুধ্যায়ীরা পৃথকভাবে তাদের অভিমত ব্যক্ত করেছেন।

আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক : যাত্রাগান প্রধানত শ্রমিক ও কৃষিজীবী সমাজে জনপ্রিয় বিনোদন শিল্প। বিবর্তনের চিরন্তন ধারায় ক্রমপরিবর্তনশীলতার প্রবল স্রোতের মুখে আজও যাত্রাশিল্প টিকে আছে। তবে আধুনিক বিনোদন শিল্পে নানা অপসংস্কৃতিক আগ্রাসনের কারণে যাত্রা তার আপন মাধুর্যকে ধারণ করতে ব্যর্থ হচ্ছে। যাত্রাদল ‘জয়যাত্রা’ যাত্রাগানের নিজস্বতা ও স্বকীয় বৈশিষ্ট্য লালনের মাধ্যমে লোকজ সংস্কৃতির ঐতিহ্যকে সমুন্নত রাখার চেষ্টায় নিবেদিত থাকবে। তাদের এ আগমন সাংস্কৃতিক অঙ্গনের শুভ সংবাদ।

রামেন্দু মজুমদার : নানা কারণে আবহমান বাংলার ঐতিহ্যবাহী যাত্রাশিল্প বর্তমানে সঙ্কটে। সম্প্রতি এই শিল্পের একটি নিজস্ব নীতিমালা তৈরি হয়েছে। তারই আলোকে যাত্রাঙ্গনে নব চেতনার উন্মেষ ঘটতে যাচ্ছে। পেশাদার যাত্রাচর্চার পাশাপাশি অপেশাদার দলও এগিয়ে আসছে পরিশীলিত চর্চার অঙ্গীকার নিয়ে। জয়যাত্রা এমনি একটি দল। দলটির এমন অঙ্গীকার ও কর্মযজ্ঞ দেখে আমি আনন্দিত।

সারা আরা মাহমুদ : যাত্রা আমাদের গ্রামীণ জীবনের একটি প্রধান বিনোদন মাধ্যম। আকাশ সংস্কৃতির এই যুগে সমাজের অবকাঠামো উন্নয়নের পাশাপাশি সেখানে বিনোদন প্রক্রিয়াতেও পরিবর্তন হয়েছে। ফলে যাত্রাশিল্প সমকালীন গ্রামীণ সমাজের বিনোদন প্রক্রিয়ায় ব্যাপক ভূমিকা রাখতে পারছে না। এছাড়াও প্রকৃত যাত্রাশিল্পী, পালাকারসহ সংগঠনের অপ্রতুলতা রয়েছে। শূন্যতা পূরণের অঙ্গীকার নিয়ে এগিয়ে এসেছে যাত্রাদল ‘জয়যাত্রা’। তাদের বর্তমান চিন্তার সঙ্গে ভবিষ্যতের সমন্বয় থাকলে যাত্রাঙ্গন উপকৃত হবে বলে আমি বিশ্বাস করি।

মিলন কান্তি দে : নাগরিক জীবন থেকে ঐতিহ্যবাহী ‘যাত্রা’ ক্রমশ হারিয়ে যাচ্ছে যেন। অথচ এটি বাংলার প্রাচীন সংস্কৃতির একটি ধারা, সেখানে রয়েছে আমাদের ঐতিহ্যের শেকড় মা-মাটি-মানুষের চিরায়ত আবেদন। কিন্তু কালের গর্ভে হারিয়ে যেতে চলেছে এ প্রাচীন শিল্প মাধ্যমটি। কিন্তু স্বপ্ন দেখানোর দৃঢ়প্রত্যয় নিয়ে একুশ শতকের দ্বিতীয় দশকে ঢাকা থেকে আত্মপ্রকাশ করল একটি যাত্রাদল। যার নাম ‘জয়যাত্রা’। যাত্রাপথে জয়যাত্রা নতুন মাত্রায় উদ্ভাসিত হোক।

তাপস সরকার : গ্রামে বসবাস করেছে অথচ যাত্রাপালা দেখেনি এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া যাবে না। যাত্রাপালার দুঃখের কাহিনী দেখে কিংবা ভালোবাসার অমর গল্প শুনে দর্শকশ্রোতারা কান্নাভেজা হয়ে অথবা আনন্দে বিহবল হয়ে বাড়ি ফিরতেন। গ্রামীণ বিনোদনের এই সর্বজনীন ও অসাধারণ মাধ্যমটি এখন লুপ্ত হতে চলেছে। তারপরও আমি আশাবাদী যে দেশের আবহমান বাংলার ঐতিহ্যমণ্ডিত যাত্রাশিল্প আবার স্বমহিমায় ফিরে আসবে। আশা রাখি এতসব মাথায় রেখে ‘জয়যাত্রা’ এগিয়ে যাবে।

হাবিব সারওয়ার : জয়যাত্রা তৈরির মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে নীতিমালা অনুযায়ী নিজস্ব শিল্পী তৈরির মাধ্যমে সুষম প্রযোজনা দিয়ে দর্শক রুচির পরিবর্তন আনা। আমি বিশ্বাস করি এদেশের মানুষ সুন্দরকে খুঁজে ফেরে; সুতরাং প্রত্যাশা রাখতেই পারি- ‘জয়যাত্রা’র মতো আরো দল তৈরি হবে এবং যাত্রাঙ্গনকে সমৃদ্ধ করবে।

(দ্য রিপোর্ট/শাহ/এমএ/ডিসেম্বর ২৩, ২০১৩)

পাঠকের মতামত:

SMS Alert

জলসা ঘর এর সর্বশেষ খবর

জলসা ঘর - এর সব খবর