thereport24.com
ঢাকা, বুধবার, ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ১২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১,  ২৫ জমাদিউল আউয়াল 1446

রবিবার ‘মার্চ ফর ডেমোক্রেসি’

২০১৩ ডিসেম্বর ২৪ ১৮:১৯:৪৫
রবিবার ‘মার্চ ফর ডেমোক্রেসি’

দ্য রিপোর্ট প্রতিবেদক : ‘প্রহসনের’ নির্বাচন বন্ধ ও গণতন্ত্র রক্ষায় রবিবার জনগণকে ‘ঢাকা অভিমুখে যাত্রা’র আহ্বান করেছেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। এ কর্মসূচিকে ‘মার্চ ফর ডেমোক্রেসি’ নামে অভিহিত করে সরকারকে এতে বাধা না দেওয়ারও আহ্বান জানান তিনি।

গুলশানে নিজ কার্যালয়ে মঙ্গলবার সন্ধ্যা পৌনে ৬টায় এক সংবাদ সম্মেলন এ কর্মসুচি ঘোষণা করে খালেদা জিয়া ওইদিন জনগণকে জাতীয় পতাকা হাতে নিয়ে ঢাকা অভিযাত্রা করে নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে জমায়েত হওয়ার আহ্বান জানান।

‘ভয়ঙ্কর রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস’ কবলিত দেশ- এমন মন্তব্য করে বিএনপি চেয়ারপারসন বলেন, প্রতিদিনই রক্ত ঝরছে। বিনাবিচারে নাগরিকদের জীবন কেড়ে নেওয়া হচ্ছে। ঘরে ঘরে কান্নার রোল। শহরের সীমা ছাড়িয়ে নিভৃত পল্লীতেও ছড়িয়ে পড়েছে আতঙ্ক। সকলের চোখে অনিশ্চয়তার ছায়া। নির্বিকার শুধু সরকার। তাদের লক্ষ্য একটাই যেকোনো মূল্যে ক্ষমতা কুক্ষিগত রাখা। তাই তারা ভিনদেশী হানাদারদের মতো পোড়ামাটির নীতি অবলম্বন করে চলেছে।

খালেদা জিয়া বলেন, সংকট নিরসনে আমরা বারবার সংলাপ-আলোচনার প্রস্তাব দিয়েছি সরকারকে। আমাদের আহ্বানে সাড়া দিয়ে জাতিসংঘসহ বিশ্বের গণতন্ত্রকামী দেশসমূহও সংলাপের প্রতি সমর্থন দিয়েছে। সকলের দাবিতে সরকার সংলাপে এসেছিল। কিন্তু তা ছিল লোক দেখানো। এটা ছিল তাদের প্রতারণার কৌশল।

তিনি বলেন, সরকার আলোচনা ও শান্তির পথে না এসে সারাদেশে বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের দমন অভিযান শুরু করেছে। সরকারের হটকারীতায় দেশে যা ঘটছে, তার দায় অবশ্যই আওয়ামী লীগকে বহন করতে হবে।

বিরোধীদলীয় নেত্রী বলেন, অতীত অভিজ্ঞতা থেকে আমরা দেখেছি, সংকট সমাধানে দেশের প্রধান দুই রাজনৈতিক শক্তির সমঝোতা প্রয়োজন। কিন্তু সরকার সমঝোতায় না এসে ‘মেরুদণ্ডহীন’ নির্বাচন কমিশন দ্বারা ‘একতরফা’ নির্বাচনের পথে এগিয়ে চলছে। অথচ শুধু বিএনপি নয়, দেশের সকল বিরোধী দল এ নির্বাচন বর্জন করেছে।

প্রধানমন্ত্রী জনগণের দাবি মেনে না নিয়ে আসন ভাগাভাগির প্রস্তাব দিয়েছেন উল্লেখ করে বিরোধীদলীয় নেত্রী। তিনি প্রধানমন্ত্রীকে উদ্দেশ্য করে বলেন, আসন ভাগাভাগি করার আপনি কেউ নন।

সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী বলেন, ১৫৪ জনসহ বাকী যারা ‘আজ্ঞাবহ’ নির্বাচন কমিশন দ্বারা নির্বাচিত হবে তারা কেউ জনপ্রতিনিধি নয়।

সরকারের অত্যাচার ও অপকর্মের বিরুদ্ধে জনগণ লড়াই শুরু করেছে উল্লেখ করে খালেদা জিয়া বলেন, গ্রামে-গঞ্জে, পাড়া-মহল্লায়, নগরে-বন্দরে মানুষ আজ লড়াইয়ে নেমেছে। এ লড়াই গণতন্ত্রকে রক্ষার লড়াই। জনগণের বিজয় অর্জন না হওয়া পর্যন্ত এ লড়াই চলতে থাকবে। আমরা জনগণের সঙ্গেই থাকবো, ইনশাআল্লাহ।

তিনি অভিযোগ করেন, শাসকরা জানতো তাদের লুটপাট, দুর্নীতি ও অত্যাচারের বিরুদ্ধে দেশের জনগণ প্রতিরোধ গড়ে তুলবে। এ কারণেই তারা গণতন্ত্রেও লড়াইকে অপকৌশলে ধামাচাপা দিতে মানবতাবিরোধী অপরাধের রায় বাস্তবায়নকে একই সময়সীমায় এনে দাঁড় করিয়েছে।

বাংলাদেশের মানবতাবিরোধী অপরাধের রায়কে কেন্দ্র করে পাকিস্তানের পার্লামেন্টে গৃহীত নিন্দা প্রস্তাবেরও নিন্দা জানান বিরোধীদলীয় নেত্রী। তিনি বলেন, তাদের এ সিদ্ধান্ত আমাদের মর্মাহত করেছে।

গণতন্ত্রের জন্য জনগণের শান্তিপূর্ণ আন্দোলন চলছে দাবি করে বিএনপি প্রধান বলেন, এই শান্তিপূর্ণ আন্দোলন দমনে অপকৌশল নিয়েছে সরকার। এ ব্যাপারে সবাইকে সচেতন থাকতে হবে।

তিনি অভিযোগ করেন, প্রধানমন্ত্রী স্বয়ং বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের উপর হামলার জন্য উস্কানী দিয়েছেন। দেশে আজ ভয়ঙ্কর অনিশ্চিত অবস্থার সৃষ্টি করেছে সরকার। যৌথবাহিনী গঠন করে তাদের দিয়ে দলীয় সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড পরিচালনা করা হচ্ছে বলেও অভিযোগ করেন তিনি।

খালেদা জিয়া বলেন, নির্বিচারে গণহত্যা, গুম, নির্যাতন, গ্রেফতার ও বাড়িঘর বুলডোজার দিয়ে গুড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে। আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে। এসব কর্মকাণ্ড শুধু বিদেশি হানাদার বাহিনীর দ্বারাই সম্ভব বলে মন্তব্য করেন তিনি।

আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের প্রতি আবারও আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, আপনারা জনগণের বিপক্ষে দাঁড়াবেন না। সরকারি দলের নৃশংস কর্মকাণ্ডের হাতিয়ার হবেন না। তাদের ক্রীড়নক হবেন না। সময় এসেছে জনগণের পাশে দাঁড়াবার।

প্রধানমন্ত্রীর প্রতি আহ্বান জানিয়ে বিরোধীদলীয় নেত্রী বলেন, অনেক রক্তে অর্জিত আমাদের এই দেশকে বিশ্ব থেকে বিচ্ছিন্ন করবেন না। একঘুয়েমি পরিহার করুন। গণতন্ত্রের সৌন্দর্য হচ্ছে ‘আর্ট অফ কম্প্রোমাইজ।’ জনগণের দাবি মেনে নিয়ে জেদ পরিহার করুন। সমঝোতার পথে আসুন। আমরাও ১৯৯৬ সালে আপনাদের দাবি মেনে নিয়ে তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থা এনেছিলাম। মনে রাখবেন, সমঝোতার স্থাপন করলে কেউ ছোট হয়ে যায় না। জেদ ছুড়ে ফেলুন। প্রহসনের নির্বাচনের তফসিল বাতিল করুন। এখনও সময় শেষ হয়ে যায়নি। আলোচনা শুরু করুন। আমরাও আলোচনায় রাজি আছি।

বিএনপি চেয়ারপারসন চারদফা করণীয় ও নীতি কৌশল ঘোষণা করেন। সেগুলো হলো- ১. ভোটাধিকার হরণকারী, মানবাধিকার লঙ্ঘনকারী সরকারের বিরুদ্ধে প্রাণক্ষয়ী লড়াইয়ে যারা শরিক, তাদের মধ্যে সমন্বয় ও ঐক্য গড়ে তুলুন।

২. বিভক্তি ও বিভাজনের রাজনীতির চির অবসানে জনগণের ইচ্ছা ও অভিপ্রায়কে মূল্য দিন।

৩. ভোটকেন্দ্র ভিত্তিক সংগ্রাম কমিটির পাশাপাশি গণতন্ত্র রক্ষায় আন্দোলনরত পক্ষকে নিয়ে অবিলম্বে দেশের সকল স্থানে ‘সার্বভৌমত্ব ও গণতন্ত্র রক্ষা সংগ্রাম কমিটি’ গঠন করে ৫ জানুয়ারি নির্বাচনী তামাশা প্রতিহত করুন।

৪. সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের উপর হামলা ও নিরাপত্তা লঙ্ঘনে সরকারি ষড়যন্ত্রে সকলে সজাগ থাকুন। কোনো প্রকার সাম্প্রদায়িকতাকে বরদাশত করবেন না।

বক্তব্যের শেষে ২৯ ডিসেম্বর ‘মার্চ ফর ডেমোক্রেসি’ সফলের আহ্বান জানিয়ে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া বলেন, বিজয়ের মাসে লাল সবুজের জাতীয় পতাকা হাতে নিয়ে সকলে ঢাকা আসুন। সকলেই নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে মিলিত হবেন। অভিযাত্রায় ব্যবসায়ীরা আসুন, সিভিল সমাজ আসুন, ছাত্র-যুবকরাও দলে দলে যোগ দাও। মা-বোনেরা আসুন, কৃষক-শ্রমিক ভাই-বোনেরা আসুন। কর্মজীবী পেশাজীবীরা আসুন। আলেমরা আসুন, সব ধর্মের নাগরিকরা আসুন। পাহাড়ের মানুষরাও আসুন। যেভাবে পারেন, বাসে, ট্রেনে, লঞ্চসহ অন্যান্য যানবাহনে করে ঢাকায় আসুন। রাজধানী অভিমুখে জনস্রোতে শামিল হোন। যারা রাজধানীতে আছেন, তারাও সেদিন পথে নামুন।

সংবাদ সম্মেলনে দলের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আর এ গণি, ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, ব্যারিস্টার জমিরউদ্দিন সরকার, ড. আবদুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, ভাইস চেয়ারম্যান শমসের মবিন চৌধুরী, উপদেষ্টা ড. ওসমান ফারুক, রিয়াজ রহমান, যুগ্ম মহাসচিব মিজানুর রহমান মিনু, সাংগঠনিক সম্পাদক ফজলুল হক মিলন উপস্থিত ছিলেন। এ ছাড়া ১৮ দলের নেতাদের মধ্যে এলডিপি সভাপতি কর্নেল (অব.) ড. অলি আহমদ, বিজেপি চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার আন্দালিব রহমান পার্থ, কল্যাণ পার্টির সভাপতি মেজর জেনারেল (অব.) সৈয়দ মুহাম্মদ ইব্রাহিম, জামায়াতে ইসলামীর নেতা ড. রেদোয়ান উল্লাহ শাহেদী উপস্থিত ছিলেন।

এর আগে সর্বশেষ ২১ আক্টোবর রাজধানীর হোটেল ওয়েস্টিনে সংবাদ সম্মেলন করেন বিরোধীদলীয় নেত্রী।

(দ্য রিপোর্ট/টিএস-এমএইচ/এসবি/জেএম/ডিসেম্বর ২৪, ২০১৩)

পাঠকের মতামত:

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

SMS Alert

রাজনীতি এর সর্বশেষ খবর

রাজনীতি - এর সব খবর