thereport24.com
ঢাকা, মঙ্গলবার, ২৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ১০ পৌষ ১৪৩১,  ২২ জমাদিউস সানি 1446

এনবিআর চেয়ারম্যানের দুর্নীতির অনুসন্ধানে দুদক

২০১৩ ডিসেম্বর ২৪ ২০:৪৭:৪১
এনবিআর চেয়ারম্যানের দুর্নীতির অনুসন্ধানে দুদক

অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগের সচিব ও জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) চেয়ারম্যান গোলাম হোসেনের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ অনুসন্ধান করছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। এই বিষয়ে দুদকের পক্ষ থেকে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়কেও অবহিত করা হয়েছে।

দ্য রিপোর্টের অনুসন্ধানে এই তথ্য জানা গেছে। এই সংক্রান্ত সংশ্লিষ্ট নথিপত্রের অনুলিপিও এই প্রতিবেদকের হাতে রয়েছে। অভিযোগ অস্বীকার করে এনবিআর চেয়ারম্যান গোলাম হোসেন জানান, ‘দুদকের অনুসন্ধানের বিষয়টি আমার জানা নেই’।

দুদক সূত্রে জানা গেছে, ১৭ ডিসেম্বর দুদকের কমিশনার (অনুসন্ধান) নাসিরুদ্দীন স্বাক্ষরিত একটি চিঠি প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব শেখ মো. ওয়াহিদুজ্জামান বরাবর পাঠানো হয়েছে।

চিঠিতে বলা হয়, ‘অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগের সচিব ও জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যান মো. গোলাম হোসেনের বিরুদ্ধে একাধিক দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে। এই অভিযোগসমূহ বর্তমানে দুর্নীতি দমন কমিশনে অনুসন্ধানের পর্যায়ে রয়েছে।’

জানা গেছে, গোলাম হোসেনের বিরুদ্ধে রিকন্ডিশন গাড়ির শুল্কায়ন প্রক্রিয়ায় বিদ্যমান আইনকে পাশ কাটিয়ে অবচয় সুবিধা দেওয়া, শুল্ক সুবিধায় পণ্য এনে খোলা বাজারে বিক্রি করে দেওয়ার অভিযোগে শুল্ক গোয়েন্দাদের সংশ্লিষ্ট গার্মেন্টসের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া থেকে বিরত রাখা এবং একাধিক মুঠোফোন প্রতিষ্ঠানের সিম প্রতিস্থাপনের জন্য ৩ হাজার ১ কোটি টাকার পাওনা রাজস্বের সুরাহা না হওয়ার ক্ষেত্রে গোলাম হোসেনের ভূমিকার বিষয়ে অনুসন্ধান করছে দুদক। এ ছাড়া তিনি বাণিজ্য সচিব থাকাকালীন গ্রহণ করা কয়েকটি পদক্ষেপেরও অনুসন্ধান করা হচ্ছে বলে জানা গেছে।

দুদক সূত্র জানিয়েছে, ইতোমধ্যে এসব অভিযোগের নথিপত্র দিতে সংশ্লিষ্ট দফতরকে চিঠি দিয়েছে দুদক।

এ ব্যাপারে দুদক কমিশনার ড. নাসিরউদ্দীন আহমেদ বলেন, অনেকের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ থাকে। এসব অভিযোগ অনুসন্ধান করা হয়। তবে এই পর্যায়ে এখনই কিছু বলা যাবে না।

দ্য রিপোর্টের অনুসন্ধানে জানা গেছে, চলতি অর্থবছরের বাজেটে রিকন্ডিশন গাড়ি আমদানিতে ৪৫ শতাংশ অবচয় সুবিধা দিয়ে প্রজ্ঞাপন (এসআরও) জারি করা হয়। এই অবচয় সুবিধা ৬ জুন ২০১৩ সালের আগে আমদানি করা বিল অব এন্ট্রি নেটিংকৃত গাড়ির ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে না বলে প্রজ্ঞাপনে উল্লেখ করা হয়। কিন্তু গাড়ি অবচয় সুবিধার বিদ্যমান ১৪৯ নাম্বার প্রজ্ঞাপনটি সংশোধন করে নতুন ৩৫৩ নাম্বার প্রজ্ঞাপন জারি করেছে এনবিআর। চলতি বছরের নভেম্বরের শেষ নাগাদ এই এসআরও জারি করা হয। এর ফলে ৬ জুন ২০১৩ সালের আগে আমদানি করা ও নেটিংকৃত প্রায় সাড়ে তিন হাজার গাড়ি ৪৫ শতাংশ অবচয় সুবিধার খালাসের সুযোগ পাচ্ছে। এতে সরকারের ২৪ কোটি ৮৯ লাখ টাকা ক্ষতি হবে বলে এনবিআরের একটি প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।

পাশাপাশি এনবিআর থেকে অর্থমন্ত্রীর কাছে পাঠানো শুল্ক মূল্যায়ন সংক্রান্ত এক সার সংক্ষেপে বলা হয়েছে, ‘গাড়ি অবচয় সুবিধা সংক্রান্ত সংশোধিত এসআরও’র কারণে সরকার ২৪ কোটি ৮৯ লাখ টাকার রাজস্ব আয় থেকে বঞ্চিত হবে।’

এনবিআর সূত্র জানিয়েছেন, নতুন এই প্রজ্ঞাপনের ফলে সাড়ে তিন হাজার গাড়ি ১০ শতাংশ অবচয় সুবিধা বেশি পাবে। কারণ বিদ্যমান এসআরওতে ৪৫ শতাংশ অবচয় সুবিধা দেওয়া হয়েছে শুধু ৬ জুন ২০১৩ সালের পর থেকে নেটিংকৃত গাড়ির ক্ষেত্রে। এর আগে নেটিংকৃত গাড়ির ক্ষেত্রে ৩৫ শতাংশ অবচয় সুবিধা ছিল। কিন্তু ১৪৯নং প্রজ্ঞাপনটি সংশোধন করে নতুন ৩৫৩নং প্রজ্ঞাপন জারির পর ৬ জুনের আগে নিটিংকৃত গাড়ি ক্ষেত্রেও ৪৫ শতাংশ অবচয় সুবিধা কার্যকর হবে। এতে সরকার প্রায় ২৫ কোটি টাকা রাজস্ব আয় থেকে বঞ্চিত হবে।

অনুসন্ধানের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা দ্য রিপোর্টকে জানান, গাড়ি অবচয় সুবিধা সংক্রান্ত সংশোধিত এসআরও’র কারণে সরকারের রাজস্ব ক্ষতি ১০০ কোটি টাকারও বেশি। এই বিষয়ে এখনো অনুসন্ধান চলছে। পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য শিগগিরই কমিশনে অনুসন্ধান প্রতিবেদন দাখিল করা হবে।

এ ছাড়াও এনবিআর চেয়ারম্যান গোলাম হোসেনের বিরুদ্ধে আরও কয়েকটি বিষয়ে অনুসন্ধান কার্যক্রম চালাচ্ছে দুদক। এর মধ্যে রয়েছে মুঠোফোন প্রতিষ্ঠানগুলোর সিম প্রতিস্থাপনে মোবাইল অপারেটরদের ৩ হাজার ১০০ কোটি টাকা থেকে অব্যাহতি দিতে টিওআর (টার্মস অব রেফারেন্স) অনুমোদন করা। এক্ষেত্রে বড় অঙ্কের আর্থিক লেনদেনের অভিযোগ রয়েছে।

লিবার্টি এন্টারপ্রাইজের ২৫ কোটি টাকা ও গাজীপুরের গ্যালাক্সি এক্সেসরিজ অ্যান্ড সোয়েটার্স ৭৫ কোটি টাকা শুল্ক ফাঁকি দেওয়ার পরও চেয়ারম্যানের হস্তক্ষেপে আদায় করা হচ্ছে না। এসব বিষয়ে বড় অঙ্কের লেনদেন হয়েছে বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন।

এ ছাড়া সম্প্রতি বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ও এনবিআরের নিয়োগ ও বদলিতেও দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। এই বিষয়টিও খতিয়ে দেখছে দুদক।

(দ্য রিপোর্ট/এইচবিএস/সাদিক/এসবি/ডিসেম্বর ২৪, ২০১৩)

পাঠকের মতামত:

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

SMS Alert

অপরাধ ও আইন এর সর্বশেষ খবর

অপরাধ ও আইন - এর সব খবর