thereport24.com
ঢাকা, বুধবার, ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ১২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১,  ২৫ জমাদিউল আউয়াল 1446

‘অবরুদ্ধ করা হলে ভয়াবহ পরিণতি হবে’

২০১৩ ডিসেম্বর ২৫ ২০:৫৫:১৬
‘অবরুদ্ধ করা হলে ভয়াবহ পরিণতি হবে’

দ্য রিপোর্ট প্রতিবেদক : বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া বলেছেন, সরকারের সাহস থাকলে ২৯ ডিসেম্বরের কর্মসূচিতে বাধা দেবে না। এ সরকার যদি ভীত হয়, আর আমাকে যদি অবরুদ্ধ করে তবে তার পরিণতি ভয়াবহ হবে। প্রয়োজনে আরও কঠোর কর্মসূচি দেওয়া হবে।

বড়দিন উপলক্ষে খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের সঙ্গে বুধবার রাত সাড়ে ৮টায় শুভেচ্ছা বিনিময়কালে তার গুলশান কার‌্যালয়ে তিনি এ কথা বলেন।

গুলশানের রাজনৈতিক কার্যালয়ে শুভ বড়দিন উপলক্ষে খ্রিস্টান অ্যাসোসিয়েশনের সঙ্গে এ শুভেচ্ছা বিনিমনের আয়োজন করা হয়।

সবাইকে এই কর্মসূচিতে আসার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন ‘আমিও আপনাদের সঙ্গে এই কর্মসূচিতে থাকবো।’

তিনি বলেন, আজকে এখানে কোনো নেতাকর্মী নেই। তারা আসতে পারেনি। তাদের আসতে দেওয়া হয়নি। আমার বাসার সামনে পুলিশ দেওয়া হয়েছে। আপনাদেরও হয়রানির শিকার হতে হয়েছে। এর নাম কি গণতন্ত্র? আমরা অনুষ্ঠান-সমাবেশ করতে পারবো না। আমরা কোন দেশে বাস করছি। এই সরকার গণতান্ত্রিক সরকার নয়। এই সরকারের কাছে কোনো ধর্মের মানুষ নিরাপদ নয়।

বিরোধীদলীয় নেতা বলেন, ‘আমরা চেয়েছি সব দলের অংশগ্রহণে নির্বাচন। কিন্তু তারা তা চায় না। তারা আসন ভাগ-বাটোয়ারা করছেন। বাংলাদেশটা আওয়ামী লীগের পৈতৃক সম্পত্তি হয়ে গেছে।'

বিরোধীদলীয় নেতা আরও বলেন, বড়দিন শান্তির দিন হলেও আজকে শান্তি কোথায়। শান্তি, স্থিতিশীলতা, গণতন্ত্র বজায় রাখার জন্যই আমরা আন্দোলন করছি। শান্তির জন্যই আমাদের সংগ্রাম।

‘মন্ত্রী হলেই টাকার মালিক হওয়া যায়’

সরকারের মন্ত্রী-এমপিরা কি করে এতো টাকার মালিক হন? এমন প্রশ্ন রেখে খালেদা জিয়া বলেন, ‘বর্তমান সরকারের এমপি-মন্ত্রীরা যে হিসাব দিয়েছে তা সঠিক হিসাব নয়। আরও যে কতকিছু আছে তা সময়মতো জানা যাবে। সম্পদের লোভ ছাড়তে পারছে না বলেই তারা ক্ষমতা ছাড়তে চাচ্ছে না। ক্ষমতা ছেড়ে নির্বাচন দিলে তাদের ভরাডুবি হবে। তাই তারা নির্বাচন দিতে চায় না।'

দিলীপ বড়ুয়ার উদ্দেশে তিনি বলেন, এই দিলীপ বড়ুয়ার সঙ্গে আমার ভালো সম্পর্ক ছিল। নিয়মিত যোগাযোগ রাখতেন। আসা-যাওয়া করতেন। তিনি অঢেল টাকার মালিক হয়ে গেছেন। মন্ত্রী হলেই টাকার মালিক হওয়া যায়।

‘নির্বাচন কমিশন সরকারের আজ্ঞাবহ’

বর্তমান নিবার্চন কমিশনের সমালোচনা করে খালেদা জিয়া বলেন, নির্বাচন কমিশন যে ভূমিকা রাখার কথা ছিল তা রাখতে পারেনি। এ নির্বাচন কমিশন সরকারের আজ্ঞাবহ, ব্যর্থ, অযোগ্য, অপদার্থ, মেরুদণ্ডহীন। নির্বাচন কমিশনের দায়িত্ব ছিল সব দলের অংশগ্রহণে একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন করার। কিন্তু তারা তা না করে সরকার যা বলছে তারা সেটা পালন করছে।

‘সংসদ ডেকে নির্দলীয় সরকার ব্যবস্থা করার আহ্বান’

সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়ে খালেদা জিয়া বলেন, আমরা যে প্রস্তাব দিয়েছি তাতে সংশোধনী আনার সুযোগ এখনো আছে। সেই সুযোগের সদব্যবহার করে সংবিধান সংশোধন করুন। দেশকে ভালোবাসলে সংসদ ডেকে নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের ব্যবস্থা করুন। সেই পথ তো আমরা দেখিয়ে দিয়েছি।

আমরা যে প্রস্তাব দিয়েছি তাতে নির্বাচিত সরকারের অধীনেই নির্বাচন হতে পারে বলেও উল্লেখ করেন তিনি।

তিনি বলেন, সরকারকে বুঝতে হবে, তারা যদি দেশকে ভালোবাসে, দেশের কল্যাণ ও উন্নতি চায়, তাহলে জেদ-প্রতারণা ছেড়ে যে দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের কথা বলা হচ্ছে সেটা বাতিল করে, তফসিল স্থগিত করে, আবার আলোচনা করে নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের ব্যবস্থা করবে।

তিনি বলেন, তারা যে অপরাধ করেছে সেজন্য তারা জনগণ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। তারা জানে তারা যে সব কাজ করেছে তাতে জনগণ ক্ষুব্ধ। তাই নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন হলে তারা সরকার গঠন করতে পারবে না। সেই জন্যই তারা ভয় পাচ্ছে।

আওয়ামী লীগ বাসে আগুন দিয়ে মানুষ মারছে অভিযোগ করে তিনি বলেন, তারা বাস পোড়াচ্ছে আর নাম দিচ্ছে আমাদের। সরকার নিজে এসব করছে। আর আমাদের নেতাদের নামে মামলা দিচ্ছে। এটা নতুন নয়। ’৯৬ সালেও তারা এমনটা করেছে। তখন নির্দলীয়-নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের জন্য আন্দোলন করেছে। তখন তো তারা বলেনি যে, এ দাবি অসাংবিধানিক দাবি। তারা সংসদ থেকে পদত্যাগ করায় সংবিধান সংশোধন করা আমাদের পক্ষে সম্ভব হয়নি। তাই আমরা বলেছি আমরা নির্বাচিত হয়ে সংবিধান সংশোধন করে আবার নির্বাচন দেবো। আমরা সেই কথা রেখেছি।

তিনি বলেন, তারা জোর করে ক্ষমতায় আঁকড়ে রাখতে চায়। যত চেষ্টাই করেন না কেন ক্ষমতায় থাকতে পারবেন না। ক্ষমতায় থাকতে দেওয়া হবে না। আপনাদের বিদায় নিতেই হবে।

তিনি বলেন, আপনাদের ১৫৪ জন তো নির্বাচিত হয়েই গেছে। বাকিগুলোও নির্বাচিত হয়ে যাবে। আপনাদের ভোট কেন্দ্রে যাওয়ার প্রয়োজন আছে বলে আমি মনে করি না। এ নির্বাচন দিয়ে কোনো কাজ হবে না। গণতন্ত্রের পথে আসতে হবে। শান্তির পথে আসতে হবে।

‘২৯ ডিসেম্বরের কর্মসূচি হবে শান্তিপূর্ণ’

‘মার্চ ফর ডেমোক্রেসি’ কর্মসূচি শান্তিপূর্ণ হবে উল্লেখ করে খালেদা জিয়া বলেন, ‘ডিসেম্বর মাস। উৎসবের মাস। সেজন্য আমরা সারাদেশ থেকে সবাইকে কর্মসূচিতে অংশগ্রহণের আহ্বান জানিয়েছি। কিন্তু সরকার আমাদের কর্মসূচিতে বাধা দিতে চায়। করতে দিতে চায় না। কিন্তু তারা যদি তাদের অফিসের সামনে মিটিং করতে পারে তাহলে আমরা কেন করতে পারবো না। বিরোধী দলের অফিসের সামনে কেন পুলিশ থাকবে। এক দেশে কি করে দুই আইন চলে? এমন প্রশ্ন রাখেন তিনি। ইতোমধ্যেই তারা ২৯ তারিখের কর্মসূচি নিয়ে হুমকি-ধমকি শুরু করেছে বলেও অভিযোগ করেন তিনি।’

তিনি বলেন, সরকার গুম-হত্যা করছে, মানুষ মারছে। সাতক্ষীরায় বাড়িঘর পুড়িয়েছে। বুলডোজার দিয়ে বাড়িঘর গুঁড়িয়ে দিয়েছে। মেয়েদের ধরে নিয়ে নির্যাতন করা হচ্ছে। যুবকদের ধরে নিয়ে গুম করা হচ্ছে। তাদের হত্যা করা হচ্ছে।

হেফাজতের সমাবেশে ও পিলখানায় হত্যাকাণ্ড চালানো হয়েছে এমন অভিযোগ করে তিনি বলেন, এই সরকারের কাজই হচ্ছে মানুষ খুন, গুম আর হত্যা। এই সরকার লুটেরা তাদের আর ক্ষমতায় রাখা যায় না। দিন যত যাবে দেশের তত ক্ষতি হবে। শান্তির মুখ আর কেউই কখনো দেখতে পারবে না।

অনুষ্ঠানে খ্রিস্টান নেতারা বিএনপি চেয়ারপারসনকে শুভেচ্ছা জানিয়ে তাদের দাবি-দাওয়া তুলে ধরেন। চলমান আন্দোলনে খ্রিস্টান সম্প্রদায় বিএনপির পাশে থাকবে বলেও অঙ্গীকার ব্যক্ত করেন তারা। পাশাপাশি ২৯ ডিসেম্বরের গণতন্ত্রের অভিযাত্রায় খ্রিস্টান সম্প্রদায় অংশগ্রহণ করবে বলেও অঙ্গীকার ব্যক্ত করেন বক্তারা।

খ্রিস্টান অধ্যুষিত এলাকায় আগামী জাতীয় নির্বাচনে খ্রিস্টানদের মধ্যে থেকে মনোনয়ন দেওয়ার বিষয়টি বিএনপি চেয়ারপারসনকে বিবেচনা করার অনুরোধ জানান। সংরক্ষিত মহিলা আসন, বিএনপির নির্বাহী কমিটিতে খ্রিস্টানদের মধ্য থেকে প্রতিনিধি দেওয়ার বিষয়টি বিবেচনা করার অনুরোধ জানান তারা। এছাড়া বিএনপি নির্বাচিত হলে পুলিশসহ প্রশাসনে খ্রিস্টানদের পক্ষ থেকে উপযুক্তদের চাকরি দেওয়ার বিষয়টিও বিএনপি চেয়ারপারসনকে বিবেচনা করার অনুরোধ জানান তারা।

অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন খ্রিস্টান অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি অ্যালবার্ট পি কস্তা, আর্চ বিশপ ফলিনিউস কস্তা, ধর্ম বিষয়ক সহসম্পাদক অ্যাডভোকেট জন গোমেজ, ধর্মগুরু ফাদার আলবার্ট রোজারিও, খ্রিস্টান অ্যাসোসিয়েশনের উপদেষ্টা ও জাতীয়তাবাদী ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর সভাপতি মৃগেন হাগিদক, অ্যাসোসিয়েশনের উপদেষ্টা অ্যাডভোকেট মাইকেল, অঞ্জন খিসান, যুববিষয়ক সম্পাদক ডেভিট রোজারিও প্রমুখ।

অনুষ্ঠানে বিএনপির আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক ড. আসাদুজ্জামান রিপন ও মহিলাবিষয়ক সম্পাদক শিরিন সুলতানা উপস্থিত ছিলেন।

অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণের জন্য বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আব্দুল মঈন খান, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ড. ওসমান ফারুক ও ফজলে এলাহী আকবরসহ বেশ কয়েকজন নেতা গুলশানের রাজনৈতিক কার্যালয়ে প্রবেশ করতে চাইলে পুলিশ তাদের ফিরিয়ে দেয়।

গুলশান কার্যালয়ে প্রবেশ করতে চাইলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য প্রবীণ রাজনীতিবিদ ড. আর এ গনি, আর এ গনির পিএস লেনিন, স্বেচ্ছাসেবক দলের সহসম্পাদক প্রফেসর আমিনুল ইসলামসহ আরো দুইজনকে আটক করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। পরে আর এ গনিকে ছেড়ে দেওয়া হয়।

অনুষ্ঠানের শুরুতেই বড়দিনের কেক কাটেন খালেদা জিয়া।

(দ্য রিপোর্ট/টিএস-এমএইচ/এপি/ এমডি/ডিসেম্বর ২৫, ২০১৩)

পাঠকের মতামত:

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

SMS Alert

রাজনীতি এর সর্বশেষ খবর

রাজনীতি - এর সব খবর