thereport24.com
ঢাকা, শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১,  ২১ জমাদিউল আউয়াল 1446

জবিতে কৌশলে এগুচ্ছে শিবির!

২০১৩ ডিসেম্বর ২৫ ২১:১১:৩১
জবিতে কৌশলে এগুচ্ছে শিবির!

সরকারবিরোধী আন্দোলনে সক্রিয় থাকার পাশাপাশি নিজেদের সাংগঠনিক শক্তি বাড়াতে নানা কৌশলে এগুচ্ছে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় (জবি) শাখা ছাত্রশিবির। এক্ষেত্রে তারা ছাত্রলীগ ও ছাত্রদলকর্মীবেশে গোপনে নিজেদের কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন।

তাদের এ সব সাংগঠনিক কাজে খোদ বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন শিক্ষক কর্মকর্তা সহযোগিতা করছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। এমন কি গ্রেফতার এড়াতে তারা সংশ্লিষ্ট থানা পুলিশকে নিয়মিত মাসোহারা দিয়েও থাকেন। এ সব অর্থ তারা চাঁদাবাজি করে সংগ্রহ করছেন বলেও অভিযোগ উঠেছে।

এ ব্যাপারে ছাত্রশিবিরের প্রচার সম্পাদক মাহবুবুর রহমান মাহফুজ দ্য রিপোর্টকে বলেন, কেউ কেউ হয়তো চাঁদাবাজির সঙ্গে জড়িত থাকতে পারেন। কিন্তু সংগঠন হিসেবে শিবির কোনো চাঁদাবাজি করে না।

অর্থের বিনিময়ে পুলিশের সঙ্গে যোগসাজেশ করার বিষয়টি অস্বীকার করে তিনি বলেন, আইনি প্রক্রিয়ায় আমরা আমাদের কর্মীদের নিরাপদ রাখার চেষ্টা করি।

তবে শিবিরের কাছ থেকে পুলিশ অর্থ নিচ্ছেন-এমন কোনো তথ্য জানা নেই বলে জানিয়েছেন কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শাহ আলম ও সূত্রাপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা খলিলুর রহমান।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, সক্রিয় কার্যক্রম চালাতে সংগঠনটির বিশ্ববিদ্যালয় শাখার মূল কমিটি ছাড়াও ১২টি উপশাখা কমিটি কাজ করছে। এর মধ্যে কলা অনুষদে চারটি, বিজ্ঞান অনুষদে তিনটি, ব্যবসায় প্রশাসন অনুষদে দুটি ও সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদে একটি শাখা কমিটি রয়েছে। প্রায় দুই শতাধিক নেতাকর্মী এ সব কমিটিতে সক্রিয়ভাবে দায়িত্ব পালন করছেন। অভিনব সব কৌশল ব্যবহার করে গোপনে ক্যাম্পাস ও ক্যাম্পাসের বাইরে নিয়মিতই সাংগঠনিক কার্যক্রম পরিচালনা করছেন তারা।

অনুসন্ধানে আরো জানা যায়, ছাত্রশিবিরের একটি মডেল শাখা ও একটি সাংস্কৃতিক সংগঠন (নিমন্ত্রণ) রয়েছে। গোয়েন্দা ও পুলিশি নজরদারি এড়িয়ে নিজেদের গোপনীয়তা রক্ষা করতেই কমিয়ে আনা হয়েছে কয়েকটি উপশাখা কমিটি। এ ছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের বাইরে নিজস্ব ৩৪টি ছাত্রাবাসে সাংগঠনিক কার্যক্রম চালাচ্ছেন তারা। এ সব ছাত্রাবাসেই শিবিরের সমস্ত পরিকল্পনা নেওয়া হচ্ছে।

এদিকে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা শিবিরের মূল কমিটির ব্যাপারে চরম গোপনীয়তা রক্ষা করেছে সংগঠনটি। আট সদস্যবিশিষ্ট কমিটির সদস্যদের নাম খোদ কর্মীদের কাছে গোপন রাখা হয়েছে। অধিকাংশ কর্মী সভাপতি মনিরুজ্জামান মনি ছাড়া অন্য সদস্যদের নাম জানেন না বলে জানা গেছে। এমনকি সংবাদমাধ্যমে পাঠানো সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে তার নাম মনিরুজ্জামান শামীম বলে উল্লেখ করা হয়। সাংগঠনিক সম্পাদক হিসেবে দাইয়ান মাহমুদ নাম প্রচার করা হলেও তার প্রকৃত নাম দাইয়ান সালেহীন।

এ ছাড়া অন্যান্য পদে খালেদ মাহমুদ (সাধারণ সম্পাদক), নুর মো. আবু তাহের (ছাত্র আন্দোলন সম্পাদক), জুবায়ের হোসাইন (ছাত্রকল্যাণ সম্পাদক), মাহবুবুর রহমান (সাহিত্য সম্পাদক), মাহবুবুর রহমান মাহফুজ (প্রচার সম্পাদক) দায়িত্ব পালন করছেন। তবে সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক ও সাংগঠনিক সম্পাদক ছাড়া অন্যান্য পদে প্রতিনিয়ত পরিবর্তন হচ্ছে বলে জানিয়েছেন সংগঠনটির প্রচার সম্পাদক মাহবুবুর রহমান মাহফুজ।

তিনি জানান, নিজেদের গোপন রাখতেই নিয়মিত দায়িত্বে রদবদল করা হচ্ছে। দায়িত্বপ্রাপ্ত শিবিরকর্মীরা ঘনঘন মুঠোফোন নাম্বার পরিবর্তন করে কর্মীদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন। এ ছাড়া গোপন রাখা হচ্ছে তাদের আবাসস্থলও। এমনকি জরুরি সভা ছাড়া কখনো তারা একত্রিতও হন না।

সংগঠন সূত্রে জানা গেছে, মূল কমিটির সহযোগী হিসেবে ৫০ সদস্যের একটি কর্মীবাহিনী রয়েছে। বিভিন্ন বেশে এরা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন, গোয়েন্দা কর্মকর্তা ও অন্যান্য ছাত্র সংগঠনের সঙ্গে মিশে তথ্য আদান প্রদান করেন। পাশাপাশি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে নজরদারি করা, স্পট নির্ধারণসহ নানাবিধ কাজ করে এ কর্মীবাহিনী।

বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন শিক্ষক ও প্রভাবশালী কর্মকর্তারা শিবিরের হয়ে কাজ করছেন অভিযোগ রয়েছে। এ সব শিক্ষক ও কর্মকর্তারা গত এক বছরে বিভিন্ন স্থানে আটক শিবিরকর্মীদের পরীক্ষাসহ নানা বিষয়ে সহায়তা করছেন। কয়েকটি বিভাগে ফাইনাল পরীক্ষা হওয়ার পরও কারাভোগ করা শিবিরকর্মীদের মিডটার্ম পরীক্ষা নেওয়া।

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রক্টর অশোক কুমার সাহা দ্য রিপোর্টকে বলেন, শিবিরের কার্যক্রমের ব্যাপারে আমাদের কাছে কোনো তথ্য নেই। কোনো শিক্ষার্থীর সমস্যা হলে তাদের পরীক্ষা নেওয়াটা বিভাগীয় শিক্ষকদের উপর নির্ভর করে। তবে নিয়ম বহির্ভূতভাবে কারো পরীক্ষা নেওয়া হয়েছে বলে আমার জানা নেই।

(দ্য রিপোর্ট/এলআরএস/এসবি/ডিসেম্বর ২৫, ২০১৩)

পাঠকের মতামত:

SMS Alert

বিশেষ সংবাদ এর সর্বশেষ খবর

বিশেষ সংবাদ - এর সব খবর