thereport24.com
ঢাকা, শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১,  ২১ জমাদিউল আউয়াল 1446

আলোচিত ৫ উক্তি

২০১৩ ডিসেম্বর ২৬ ২১:০৪:৪২
আলোচিত ৫ উক্তি

‘সংবিধান থেকে একচুলও নড়ব না’ আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এমন বক্তব্য এবং ‘আন্দোলনের বাতাসে সব চুল উড়ে যাবে’ বিরোধীদলীয় নেতা বেগম খালেদা জিয়ার মন্তব্যটি ছিল চলতি বছরের আলোচিত উক্তি। এ নিয়ে বেশ কিছু দিন রাজনৈতিক মহল ও সাধারণ মানুষের মধ্যে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনা চলে। তবে চলতি বছরের সবচেয়ে সমালোচিত উক্তি ছিল ‘হরতাল সমর্থকদের টানাহেচড়ায় সাভারের রানা প্লাজা ধস’ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর এমন বেফাঁস মন্তব্যটি। আর মহাজোট সরকারের পুরো ৫ বছরে ‘বোগাস’ বা ‘রাবিশ’ এর মতো বক্তব্য দিয়ে যিনি মানুষের হাস্যরসের পাত্র হয়েছেন সেই অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিতের ‘দিস ইজ বেয়াদবি, এক্কেবারে বেয়াদবি’ উক্তি করে আবারও তার স্বভাব সূলভ আচরণের পরিচয় দেন। এ ছাড়া বিএনপি দলীয় সংসদ সদস্য রেহেনা আক্তার রানুর সংসদে দেওয়া ‘চুদুরবুদুর’ শব্দটি নিয়ে রীতিমত দেশজুড়ে হৈ চৈ শুরু হয়। দেশের গণ্ডি ছাড়িয়ে বিদেশেও এ নিয়ে গবেষণা শুরু হয়। যদিও শেষ পর্যন্ত এ শব্দটি অশালীন নয় বলে প্রমাণ হয়।

সংবিধান থেকে একচুল নড়ব না

‘সংবিধান থেকে একচুলও নড়ব না’ প্রধানমন্ত্রীর দেওয়া এমন বক্তব্য ছিল চলতি বছরের অন্যতম আলোচিত উক্তি। এ নিয়ে রাজনৈতিক ও সুশীল সমাজে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনা হয়।

১৮ আগস্ট গণভবনে এক সংবাদ সম্মেলনে আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নির্বাচনকালীন সরকার নিয়ে এমন উক্তি করেন।

তিনি বলেন, ‘আগামীতে যা হবে সংবিধান অনুযায়ীই হবে। সংবিধান থেকে এক চুলও নড়ব না। জনগণের ভোট নিয়ে সংবিধান সংশোধন করেছি। সংবিধান অনুযায়ীই জাতীয় নির্বাচন হবে।

আগামী নির্বাচন নিয়ে কোনো সাংবিধানিক সংকটও সৃষ্টি হবে না বলে সাফ জানিয়ে দেন প্রধানমন্ত্রী।

আন্দোলনের বাতাসে চুল উড়ে যাবে

‘সংবিধান থেকে একচুলও নড়ব না’ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এমন বক্তব্যের জবাবের পরদিন ১৯ আগস্ট রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে জাতীয়তাবাদী স্বেচ্ছাসেবক দলের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর জনসভায় বিরোধীদলীয় নেতা বেগম খালেদা জিয়া বলেন, ‘বাতাসে গেলেই চুল উড়ে যাবে। জনগণের আন্দোলনের বাতাসে চুল তো থাকবেই না, সব এলোমেলো হয়ে যাবে। দিশেহারা হয়ে যাবেন।’

টানাহেচড়ায় রানা প্লাজা ধস

সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য ড. মহীউদ্দীন খান আলমগীরের ‘হরতাল সমর্থকদের টানাহেচড়ায় রানা প্লাজা ধসের ঘটনা ঘটেছে’ এমন বেফাঁস মন্তব্য নিয়ে দেশজুড়ে হাস্যরস ও ব্যাপক সমালোচনার জন্ম দেয়।

২৪ এপ্রিল সাভারের রানা প্লাজা ধসের পর তিনি এ মন্তব্য করেন। এ মন্তব্যের প্রতি অটল থেকে মহীউদ্দীন খান আলমগীর পরদিন সচিবালয়ে আবারও বলেন, ‘হরতাল সমর্থকদের ফটক আর স্তম্ভ ধরে ‘টানাহেচড়ায়’ সাভারের রানা প্লাজা ধসে পড়তে পারে।’

তিনি বলেন, ‘তথাকথিত হরতাল সমর্থক লোকজন কারখানা বন্ধ করার জন্য ফাটল ধরা স্তম্ভ নিয়ে টানাহেচড়া করেন। এর ফলে ধস হয়েছে কি না বা ধস ত্বরান্বিত হয়েছে কি না তা তদন্ত করে দেখতে হবে বলে।’

ঘটনার দিন বিবিসিকে দেওয়া এক সাক্ষাতকারে তিনি ভবন ধসের জন্য স্থানীয় বিরোধীদলীয় নেতাকর্মীদের দায়ী করে বলেন, ‘কিছু হরতাল সমর্থক ভবনটির ফাটল ধরা দেয়ালের বিভিন্ন স্তম্ভ এবং গেট ধরে নাড়াচাড়া করেছে বলে তিনি জানতে পেরেছেন। ভবনটি ধসে পড়ার পেছনে এটি একটি সম্ভাব্য কারণ হতে পারে। এখানকার মৌলবাদী... বিএনপি... এদের হরতালের জন্য আহ্বান জানাচ্ছিল। আমাকে বলা হয়েছে, হরতাল-সমর্থক কতিপয় ভাড়াটে লোক সেখানে গিয়ে ওই যে ভাঙা দালান ছিল বা ফাটল ধরা দালান ছিল, সেই দালানের বিভিন্ন স্তম্ভ নিয়ে নাড়াচাড়া করে এবং যে গেট বা দরজা ছিল, সেটা নিয়েও নাড়াচাড়া করে। এটাও এ ধরনের একটি দুর্ঘটনার কারণ হিসেবে বিবেচিত হতে পারে।’


মহীউদ্দীন খান আলমগীরের এ বক্তব্যের পর গণমাধ্যম ও ফেসবুকসহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে এ নিয়ে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনা শুরু হয়। তার এ ধরনের বক্তব্যের ফুটেজ ইন্টারনেটসহ সাধারণ মানুষের মোবাইলে মোবাইলে ছড়িয়ে পড়ে।

সাবেক এ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর আরেকটি উক্তি নিয়েও মানুষের মধ্যে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনার জন্ম দেয়। ২৯ মার্চ চাঁদপুরে তিনি বলেন, ‘বিএনপি-জামায়াত আন্দোলনের নামে নৈরাজ্য সৃষ্টি করলে পুলিশ তো আর চুপ করে বসে থাকবে না। তিনি প্রশ্ন রেখে বলেন, পুলিশের সামনে সাধারণ মানুষ খুন করা হলে তখন পুলিশ কি আঙ্গুল চুষবে?

এর আগে তিনি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব নিয়েই আলোচিত উক্তি করে বলেছিলেন, ‘সাহারা খাতুন পঁচাত্তরের পরে সবচেয়ে সফল স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। ‘বাংলাদেশের মতো একটি ঘনবসতিপূর্ণ দেশে প্রতি ঘরে ঘরে নিরাপত্তা বাহিনী দিয়ে নিরাপত্তা দেওয়া সম্ভব নয়।’ এ ছাড়া সাংবাদিক দম্পতি সাগর-রুনির হত্যাকাণ্ডের তদন্ত নিয়েও নির্দিষ্ট তারিখ দিয়ে তদন্ত সম্পন্ন করার ঘোষণা দিয়ে ব্যর্থ হয়ে বিভিন্ন মন্তব্যে বিতর্কে জড়ান স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী।

‘দিস ইজ বেয়াদবি, এক্কেবারে বেয়াদবি’

‘বোগাস কিংবা রাবিশ’ এ ধরনের বক্তব্য ছিল অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিতের নিত্যনৈমত্তিক ঘটনা। মহাজোট সরকারের ৫ বছরে তিনি অসংখ্যবার এ ধরনের বক্তব্য দিয়ে আলোচনা-সমালোচনার জন্ম দেন।

কিন্তু ১৯ ডিসেম্বর বাংলা-ইংরেজি মিশ্রিত ভাষায় ‘দিস ইজ বেয়াদবি, এক্কেবারে বেয়াদবি’ উক্তিটি ছিল এই সময়ের সবচেয়ে আলোচিত বিষয়।

বিজয় দিবসে স্মৃতিসৌধে না যাওয়ায় ঢাকাস্থ ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) রাষ্ট্রদূতের আচরণকে বেয়াদবিতুল্য এবং মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে ফাঁসি হওয়া কাদের মোল্লার পক্ষ নেওয়ায় পাকিস্তানকে এখনো ‘বর্বর’ জাতি হিসেবে আখ্যায়িত করেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত।

সচিবালয়ে তৈরি পোশাক ও বস্ত্র খাতে প্রণোদনা প্রদান-সংক্রান্ত বৈঠক অনুষ্ঠানের পর সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে ওইদিন তিনি এ মন্তব্য করেন।

ইইউ রাষ্ট্রদূতের উদ্দেশে অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘ইইউ রাষ্ট্রদূত স্মৃতিসৌধে গেলেন না, দিস ইজ বেয়াদবি, এক্কেবারে বেয়াদবি।’

‘তত্ত্বাবধায়ক সরকার নিয়া কোনো চুদুরবুদুর চইলত না’

জাতীয় সংসদে দেওয়া বিরোধীদলীয় সংসদ সদস্য রেহেনা আক্তার রানুর ‘চুদুরবুদুর’ শব্দটি নিয়ে রীতিমত দেশজুড়ে হৈ চৈ শুরু হয়। এ শব্দটি অশ্লীল কি না এক পর্যায়ে দেশ ছাড়িয়ে বিদেশেও এ নিয়ে গবেষণা চলতে থাকে।

৯ জুন জাতীয় সংসদে সম্পূরক বাজেটের ওপর আলোচনার সময় বিএনপির সংরক্ষিত আসনের সদস্য রেহানা আক্তার রানু তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি জানিয়ে বলেন, ‘তত্ত্বাবধায়ক সরকার নিয়া কোনো চুদুরবুদুর চইলত না।’

তার এ শব্দটি নিয়ে শুধু আলোচনা সমালোচনাই নয়, রীতিমত গবেষণাও শুরু হয়। এমনকি সংসদের অফিসিয়াল ওয়েবসাইটটিও ‘চুদুরবুদুর ডটকম’ এ রুপ নেয়।জাতীয় সংসদের ওয়েবসাইটের ঠিকানা parliament.gov.bd বদলে এটি হয় chudurbudur.com । চুদুরবুদুর ডটকমে ক্লিক দিলেই সংসদের ওয়েবসাইট এবং এর সব কন্টেন্ট দেখা যেত। যদিও এটি পরে বন্ধ করে দেওয়া হয়।

বিএনপির এই সংসদ সদস্য তার ফেনী অঞ্চলের ভাষায় সরকারকে হুঁশিয়ার করলে সরকারি দলের সংসদ সদস্যরা তীব্র প্রতিবাদ করেন। হুইপ আসম ফিরোজ রানুর বক্তব্যকে ‘অশোভন’ আখ্যা দিয়ে এক্সপাঞ্জের দাবি জানান।

‘চুদুরবুদুর’ শব্দটি নিয়ে সংসদে উত্তাপের পর আলোচনা গড়ায় আন্তর্জাতিক পর্যায়েও। ভারতের সর্বাধিক প্রচারিত বাংলা দৈনিক আনন্দবাজারও শব্দটির উৎপত্তি ও অর্থ বিচার করে তা অশ্লীল কি না খতিয়ে দেখার চেষ্টা করে।

আনন্দবাজার প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘চুদুরবুদুর’ গ্রাম্য শব্দ, অশ্লীল নয়। পরে জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীও বলেন, ‘শব্দটি অশালীন নয়।’

(দ্য রিপোর্ট/কেএ/এসবি/সাদিক/ডিসেম্বর ২৬, ২০১৩)

পাঠকের মতামত:

SMS Alert

বিশেষ আয়োজন এর সর্বশেষ খবর

বিশেষ আয়োজন - এর সব খবর