thereport24.com
ঢাকা, বুধবার, ২০ নভেম্বর ২০২৪, ৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১,  ১৮ জমাদিউল আউয়াল 1446

‘জীবনধর্মী চলচ্চিত্রের নির্ধারিত পরিধি থাকে না’

২০১৩ ডিসেম্বর ২৬ ২২:১৮:০৬
‘জীবনধর্মী চলচ্চিত্রের নির্ধারিত পরিধি থাকে না’

মুহম্মদ আকবর, দ্য রিপোর্ট : দেশের প্রতিশ্রুতিশীল চলচ্চিত্র নির্মাতা এবং ম্যুভিয়ানা ফিল্ম সোসাইটির সভাপতি বেলায়াত হোসেন মামুন। চলচ্চিত্র নির্মাণ, চলচ্চিত্র মাধ্যম বিষয়ে নিয়মিত লেখালেখি, দেশে এবং দেশের বাইরে সৃজনশীল চলচ্চিত্র প্রদর্শনীসহ চলচ্চিত্র সংসদ আন্দোলনের নেতৃত্বের মাধ্যমে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছেন। সম্প্রতি চলচ্চিত্রকে ঘিরে তার স্বপ্ন, সাধনা, প্রত্যাশা ও প্রাপ্তির বিষয় নিয়ে কথা বলেন দ্য রিপোর্টের সঙ্গে।

দ্য রিপোর্ট : একটি ফিল্ম সোসাইটি গঠনের প্রয়োজনীয়তা মনে করলেন কেন?

বেলায়াত হোসেন মামুন : ছেলেবেলা থেকেই বিভিন্ন সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে যুক্ত ছিলাম। বই পড়ার অভ্যাস ছিল। বড় হলে কী হবো এমন ভাবনা আমার মধ্যে তখন কাজ করেনি। তবে মননশীল চর্চার সঙ্গে নিজেকে সম্পৃক্ত রাখবো এই বিশ্বাস খুব দৃঢ়ভাবেই ছিল আমার মধ্যে। এরমধ্যে চলচ্চিত্র দেখার আগ্রহ নিয়েই বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের চলচ্চিত্র চক্রের সঙ্গে নিজেকে সম্পৃক্ত করি। সেখানে নিয়মিত ছবি দেখার পাশাপাশি রাশিয়ান কালচারাল সেন্টার অথবা গ্যাটে ইন্সটিটিউটে বিভিন্ন দেশের চলচ্চিত্রের স্বাদ পাই। সেই সময়েই নিজেদের কণ্ঠস্বর প্রকাশের তাড়না থেকে চলচ্চিত্র নিয়ে গঠনমূলক ও সাংগঠনিক পর্যায়ে কাজ করার একটি বিষয় আমার মধ্যে চলে আসে। এভাবে ২০০৬ সালে আমরা প্রতিষ্ঠা করলাম ম্যুভিয়ানা ফিল্ম সোসাইটি। এরপর লড়াই করেই আজকের ম্যুভিয়ানা ফিল্ম সোইসাইটি এমন একটা অবস্থানে এসেছে।

দ্য রিপোর্ট : দীর্ঘ ৮ বছরের অভিজ্ঞতার কথা বলুন।

বেলায়াত হোসেন মামুন : ২০০৬ সালের ১০ নভেম্বর আমাদের যাত্রা শুরু। ২০১৩ সালের ১০ নভেম্বর ৭ম বর্ষে পা রাখে। বিগত সময়ের প্রতিটি দিন আনন্দময় ছিল না। খুব কষ্টের ছিল এমনও নয়! আমাদের পথচলা আমাদের নিজস্ব লড়াইয়ের, অনুপ্রেরণা আপনাদের। আমরা মনে করেছি, কোনো সংগঠন তা যে কোনো বিষয়েরই হোক না কেন, তাকে তার স্বকীয়তার মধ্যেই নিজেকে চেনানোর ব্যাপার থাকে। যে সংগঠন সংঘবদ্ধ মানুষের স্বকীয়তার পরিচায়ক নয়, তা সংগঠন কি? আমরা মনে করেছি, নিজেদের মতই কাজ করবো, নয়তো আর আমাদের দরকার কি? আমরা মনে করেছি, আমরা আমাদের অধরা স্বপ্নগুলোর আবাদ করব। আমাদের স্বপ্নগুলো কেউ তো আবাদ করবে না। বিগত বছরগুলো আমরা সক্রিয় ছিলাম। এখনও আছি আমাদের মতই! শুধু মানুষের নয় সংগঠনেরও যাপিতজীবন থাকে। সে জীবন অন্যের মত হতে নেই, হতে হয় নিজের মত। আমরা তাই হতে চেয়েছি এবং হবও।

দ্য রিপোর্ট : এদেশের চলচ্চিত্রাঙ্গণে ম্যুভিয়ানার দায়বদ্ধতা কোথায়?

বেলায়াত হোসেন মামুন : চলচ্চিত্রময় হোক আমাদের ক্ষণগুলো এমন চাওয়া এবং পাওয়ার বিস্তার চায় ম্যুভিয়ানা। আমাদের প্রত্যেক কর্মী চলচ্চিত্রঘনিষ্ঠ থেকে চলচ্চিত্রসংস্কৃতির চর্চায় ঋদ্ধ হতে চেয়েছেন বিগত সময়গুলোতে। নিজেদের সংগঠনের মধ্যে নিজেদের ইচ্ছের, মননের স্বরূপকে উন্মোচিত করতে চেয়েছেন সব কর্মসূচিতে। আমরাও চলচ্চিত্রচর্চার সেই প্রাত্যহিকতার সাধনাই করে যাচ্ছি। আমাদের সংগঠন করার প্রয়াস আনুষ্ঠানিকতার বন্ধনে আবদ্ধ নয়, চর্চার এবং কর্মের বন্ধনে আবদ্ধ। আমরা প্রতিদিন চলচ্চিত্রময় থাকতে এবং রাখতে চাই। দেশীয় মাটির গন্ধ আমাদের সারাদেহে, আমরা এমনটাই চেয়েছি হতে, এমনটাই হতে চাই।

দ্য রিপোর্ট : দেশের কোন চলচ্চিত্রটি দেখার পর আপনার ভিন্নরকম অনুভূতি হয়েছে?

বেলায়াত হোসেন মামুন : একটি ভালো চলচ্চিত্র দেখার আগের মানুষ আর দেখার পরের মানুষটি এক নয়! তাদের মধ্যে একটি মৌলিক পার্থক্য তৈরি হয়ে যায়। যেমন একটি ভালো বই পড়ার অনুভূতি ঠিক তেমনি একটি ভালো চলচ্চিত্র দেখার অনুভূতি একই রকম হয়ে থাকে বলে আমি মনে করি। দেশের দুটি চলচ্চিত্রের কথা আমি বলতে পারি যে দুটি ছবি আমি আমার কৈশোরকালে বিটিভিতে দেখেছিলাম। যা দেখে আমার নিজের ভেতরে একটি তোলপাড় অনুভব করেছিলাম। ছবি দুটি হলো; সিবি জামানের ‘পুরস্কার’ এবং জহির রায়হানের ‘জীবন থেকে নেওয়া’।

এছাড়াও পরবর্তীতে মোরশেদুল ইসলামের ‘চাকা’ এবং তারেক মাসুদের ‘মাটির ময়না’ প্রথমবার দেখার অনুভূতি প্রবলতর!

দ্য রিপোর্ট : বিশ্বব্যাপী ইরানি ফিল্মের একটা গ্রহণযোগ্যতার কথা আমরা জানি কিন্তু এদেশের চলচ্চিত্রগুলো সেরকম মর্যাদা পাচ্ছে না কেন?

বেলায়াত হোসেন মামুন : দেশ ভিন্ন হলে জীবনের চলার পথ ও তৎপরতাও ভিন্ন হয়। কিন্তু জীবন বোধের সঙ্গে সম্পৃক্ত উপকরণগুলো কি ভিন্ন হয়? জীবনধর্মী চলচ্চিত্রের কোন নির্ধারিত পরিধি থাকে না। আমাদের দেশেও এমন অনেক চলচ্চিত্র আছে যা মর্যাদা পায়নি বা আমরা তার সঠিক মূল্যায়ন করতে ব্যর্থ হয়েছি। বরং আমি বলব আমাদের চলচ্চিত্র নিয়ে আমাদের সঠিক ধারণার অভাব আছে। যিনি বলেন যে আমাদের এখানে ভালো ছবি হয়নি। তিনি এই দেশের কয়টি ছবি দেখেছেন সেই বিষয়ে আমি সন্দিহান। আমি অতি মূল্যায়নের পক্ষে নই কিন্তু সঠিক মুল্যায়নের বিষয়ে কোনো ছাড় দিতে নারাজ। একথা অবশ্যই ঠিক যে আমাদের দেশের অধিকাংশ চলচ্চিত্রই একই বিষয়ের ও গতানুগতিক। সেটা কোথায় হয় না বলুন? সারা পৃথিবীতে কিন্তু একই বছরে ১০০ ভালো চলচ্চিত্র নির্মিত হয় না। সব দেশেই ভালো ছবি তুলনামূলক কম নির্মিত হয়। আমরা বলতে পারি, আমাদের দেশে খুব কম হয় যেটা আরো বেশি হওয়া উচিত এবং আমি বিশ্বাস করি সে সামর্থ্য আমাদের তৈরি হচ্ছে।

(দ্য রিপোর্ট/এমএ/এমসি/ডিসেম্বর ২৫, ২০১৩)

পাঠকের মতামত:

SMS Alert

জলসা ঘর এর সর্বশেষ খবর

জলসা ঘর - এর সব খবর