thereport24.com
ঢাকা, বুধবার, ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ১৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১,  ২৫ জমাদিউল আউয়াল 1446

‘ভোটে বাধা দিলে প্রতিহত করা হবে’

২০১৩ ডিসেম্বর ২৭ ১৫:৪৮:৪৬
‘ভোটে বাধা দিলে প্রতিহত করা হবে’

গোপালগঞ্জ সংবাদদাতা : প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘ভোটের অধিকার জনগণের অধিকার। সেই অধিকার সকলে প্রয়োগ করবেন। যারা বাধা দিতে আসবে তাদের প্রতিহত করা হবে। নির্বাচন জনগণের গণতান্ত্রিক অধিকার। জামায়াত নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে পারবে না বলেই বিএনপি নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়িয়েছে।’

গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়া উপজেলার শহীদ মিনার চত্বরে শুক্রবার আওয়ামী লীগ আয়োজিত নির্বাচনী কর্মীসভায় প্রধান অতিথির ভাষণে তিনি এসব কথা বলেন।

তিনি আরও বলেন, রাজনীতি যদি হয় মানুষের জন্য, তবে কেন রাজনৈতিক কর্মসূচিতে মানুষ হত্যা করা হয়? অবরোধের নামে মানুষকে পুড়িয়ে মারা হয়। বিরোধী দল অবরোধ দিয়ে গরীবের পেটে লাথি মারছে। বোমা মেরে পুলিশ হত্যা করছে। রাস্তার পাশের লাখ লাখ গাছ কেটে ফেলছে। যেখানে আমরা পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় বৃক্ষ রোপণ করছি, সেখানে বিরোধী দল গাছ কেটে পরিবেশ নষ্ট করছে। বিরোধী দল ক্ষমতায় আসে ধ্বংস করতে, সৃষ্টি করতে নয়।

বিরোধী দলের নেতা খালেদা জিয়াকে ‘অশান্ত বেগম’ উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, তিনি অবরোধ দিয়ে মানুষকে অবরুদ্ধ করে বাসায় বসে টিভি দেখেন। মুরগির স্যুপ ও আয়েশ করে পায়েশ খান। বাংলাদেশের মানুষ যখন শান্তিতে থাকেন তখন একজন মানুষ অশান্তিতে থাকেন, তিনি হলেন ‘অশান্তি বেগম’। এ দেশে মিথ্যা কথা বলার জন্য যদি কাউকে পুরস্কার দেওয়া হয় তা হলে বিরোধী দলের নেতাকে দেওয়া উচিৎ।

বিগত পাঁচ বছরের উন্নয়নের কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, আমরা এবার ক্ষমতায় এসে ১০ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করেছি। ২০২১ সালের মধ্যে ২০ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে সক্ষম হবো। ৫৬টি বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপন করেছি। ৩৪টির কাজ চলছে। কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে স্বাস্থ্যসেবা জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিয়েছি। জনগণ এই কমিউনিটি ক্লিনিক থেকে বিনামূল্যে ২৮ প্রকার ওষুধ পাচ্ছে। ছাত্র-ছাত্রীরা দশম শ্রেণি পর্যন্ত বিনামূল্যে বই পাচ্ছে। ছাত্রীরা বৃত্তি পাচ্ছে। আগামীতে ডিগ্রি পর্যন্ত ছাত্রীদের বৃত্তির ব্যবস্থা করবো। ন্যাশনাল সার্ভিসের মাধ্যমে বেকারদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করেছি। ইউনিয়নে ইউনিয়নে তথ্যসেবা কেন্দ্র স্থাপন করেছি। এ সব তথ্যসেবা কেন্দ্রে অনেকের কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হয়েছে। এখন একজন কৃষক দশ টাকায় ব্যাংক হিসাব খুলতে পারছেন।

নিজের দলের কথা বলতে গিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, যে দল স্বাধীনতার জন্য সংগ্রাম করে, দেশের জন্য জীবন দেয়- সে দল ক্ষমতায় না থাকলে দেশের উন্নয়ন হয় না। বিএনপি সরকারের আমলে ছিল সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদে ভরপুর। আমাদের আমলে বাংলাদেশ বিশ্বের দরবারে উন্নয়নের রোল মডেলে পরিণত হয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সড়কপথে সকাল ১১টা ১৩ মিনিটে উপজেলা কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার চত্বরে নির্মিত আওয়ামী লীগ আয়োজিত কর্মীসভার মঞ্চে আসেন। সাড়ে ১১টায় তিনি বক্তব্য শুরু করেন। ৩০ মিনিটের বক্তব্য শেষে মুন্সীগঞ্জের লৌহজং জনসভায় যোগ দেওয়ার জন্য কোটালীপাড়া থেকে যাত্রা করেন।

উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট সুভাষ চন্দ্র জয়ধরের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত কর্মীসভায় সংসদ সদস্য শেখ হেলাল, কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবীর নানক, সাংগঠনিক সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, ধর্মবিষয়ক সম্পাদক শেখ মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ, কেন্দ্রীয় কৃষকলীগের উপদেষ্টা কেএম চাঁদ মিয়া, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক চৌধুরী এমদাদুল হক, কোটালীপাড়া উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান বিমলকৃষ্ণ বিশ্বাস, সদর উপজেলা চেয়ারম্যান লুৎফর রহমান বাচ্চু, টুঙ্গীপাড়া উপজেলা চেয়ারম্যান সোলায়মান বিশ্বাস, আওয়ামী লীগ নেতা লিয়াকত আলী মোল্লা, কমল সেন, মুক্তিযোদ্ধা মুজিবুল হক, উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সস্পাদক এসএম হুমায়ুন কবীর, যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মুজিবুর রহমান হাওলাদার, গোলাম কিবরিয়া দাঁড়িয়া, পৌর মেয়র এইচএম অহিদুল ইসলাম, সাবেক মেয়র শেখ কামাল হোসেন, ভাইস চেয়ারম্যান আমিনুজ্জামান খান মিলন, সাংগঠনিক সম্পাদক শেখ আয়নাল হোসেন, মহিলা আওয়ামী লীগ সভানেত্রী রাফেজা বেগম, যুবলীগের আহ্বায়ক মতিয়ার রহমান হাজরা, ছাত্রলীগের আহ্বায়ক বাবুল হাজরা, যুগ্ম-আহ্বায়ক নজরুল ইসলাম মন্নু, শেখ লুৎফর রহমান আদর্শ সরকারি কলেজের সাবেক ভিপি হায়দার হাজরা, মেহেদী হাসান মুন, কাইয়ুম শেখ, ছোটন চৌধুরী, ভিপি নাজমুল ইসলাম চপল প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।

সকাল ১০টায় কর্মীসভা শুরু হওয়ার কথা থাকলেও ৮টার মধ্যে কর্মীসভাস্থল কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে যায়। ১০টার মধ্যে কর্মীসভাস্থল জনসভায় পরিণত হয়। আওয়ামী লীগ সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মঞ্চে আসার সঙ্গে সঙ্গে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা তাদের প্রিয় নেত্রীকে করতালি ও হর্ষধ্বনির মাধ্যমে বরণ করে নেন।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, আমরা দেশের দরিদ্র মানুষের জন্য ন্যূনতম একটি টিনের ঘরের ব্যবস্থা করে দিতে চাই। এ দেশের মানুষ আর কুঁড়ে ঘরে থাকবে না। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান নোয়াখালী থেকে গুচ্ছগ্রাম কর্মসূচির শুরু করেছিলেন। আমরা ক্ষমতায় এসে সেই কর্মসূচি আবার চালু করেছি।

বিরোধী দলকে উদ্দেশ্য করে শেখ হাসিনা বলেন, তাদের আন্দোলন যুদ্ধাপরাধীদের রক্ষা করা। জিয়াউর রহমান ১১ হাজার যুদ্ধাপরাধীকে মুক্ত করে দিয়েছিলেন। জাতির জনকের খুনিদের বিভিন্ন দূতাবাসে চাকরি দিয়ে পুরস্কৃত করেছিলেন। কাদের মোল্লার ফাঁসি কার্যকর হওয়ায় বিরোধীদলীয় নেত্রী মর্মাহত হয়েছেন। তার যত আন্দোলন সবকিছুর মূলে রয়েছে যুদ্ধাপরাধীদের রক্ষা।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার নিজ নির্বাচনী এলাকা কোটালীপাড়াবাসিকে উদ্দেশ্য করে বলেন, আপনারাই আমার আপনজন। আপনাদের মাঝে আমি আমার আপনজনকে খুঁজে পাই। বারবার আপনারা আমাকে ভোট দিয়ে নির্বাচিত করেছেন। আমি আপনাদের কাছে কৃতজ্ঞ। ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে আপনারা আমাকে আবার ভোট দিয়ে নির্বাচিত করবেন। আমি আপনাদের কাছে নৌকা মার্কায় ভোট চাই। বিজয়ী হয়ে আপনাদের সেবা করতে চাই।

(দ্য রিপোর্ট/আরএসএস/এপি/এমএআর/রোসেল/ডিসেম্বর ২৭, ২০১৩)

পাঠকের মতামত:

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

SMS Alert

রাজনীতি এর সর্বশেষ খবর

রাজনীতি - এর সব খবর