thereport24.com
ঢাকা, শনিবার, ১৮ মে 24, ৪ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১,  ১০ জিলকদ  1445

নির্বাচন স্থগিতের দাবি নাগরিক সমাজের

২০১৩ ডিসেম্বর ২৮ ১৭:৩২:৪৮
নির্বাচন স্থগিতের দাবি নাগরিক সমাজের

দ্য রিপোর্ট প্রতিবেদক : নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরা অভিন্ন কণ্ঠে আগামী ৫ জানুয়ারির নির্বাচন স্থগিতের দাবি জানিয়েছেন।

নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিদের মতে, বিরোধীদলবিহীন এই নির্বাচন দেশে সহিংসতা বাড়াবে। এভাবে চলতে পারে না। দাবি আদায়ে তাদের পক্ষ থেকে অহিংস কর্মসূচি দেওয়ার ওপরও গুরুত্বারোপ করা হয়।

রাজধানীর লেক শোর হোটেলে শনিবার অনুষ্ঠিত ‘সংকটে বাংলাদেশ, নাগরিক ভাবনা’ শীর্ষক এই আলোচনা সভার আয়োজন করে সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি), আইন ও শালিস কেন্দ্র (আসক), সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) ও ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)।

অর্থনীতিবিদ ড. রেহমান সোবহানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে সঞ্চালকের ভূমিকা পালন করেন সিপিডির বিশেষ ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য। সভায় নাগরিক সমাজের ৫৪জন প্রতিনিধি বক্তব্য রাখেন।

দীর্ঘ এই আলোচনায়ও চলমান সংকট থেকে উত্তরণের পথ বের হয়নি।

আলোচনায় অংশ নেওয়া সরকারের ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী রাশেদ খান মেনন বলেন, ২০০৮ সালের নির্বাচনের পর থেকেই রাজনৈতিক সংকটের শুরু। তাই বলে বিরোধী দল ‘মার্চ ফর ডেমোক্রেসি’ নামে হেফাজতের মতো তাণ্ডব চালাবে- এটা মেনে নেওয়া যায় না। আবার ৫ জানুয়ারির মধ্যে নির্বাচন না হলে সাংবিধানিক সংকট তৈরি হবে। তবে কোনো প্যাকেজ ডিল হলে সেটা বিবেচনা করা যেতে পারে।’

বাম এই নেতার দাবি- ‘দেশে নির্বাচন নয় সাম্প্রদায়িকতা নিয়ে সংকট রয়েছে। শেখ হাসিনা ক্ষমতা থেকে চলে গেলেও বিএনপি নির্বাচনে আসবে না। সামনের নির্বাচনে বিরোধী দল অংশ নেয়নি, জাতীয় পার্টিও সরে গেছে। রাজনৈতিক দলের স্বাভাবিক অংশগ্রহণ না থাকলে প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক নির্বাচন হয় না।’

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য লে. জেনারেল মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘বিজয়ের মাসে আমরা পরাজয়ের কথা বলছি। ইতোমধ্যে ৫ কোটি ভোটারকে বোকা বানানো হয়েছে। আগামী ৫ জানুয়ারিও একই অবস্থা হবে।’

‘গণতন্ত্রের একমাত্র বিকল্প গণতন্ত্র’ মন্তব্য করেন সাবেক এই সেনাপ্রধান।

অনুষ্ঠান সঞ্চালকের পক্ষ থেকে বিএনপির সিনিয়র এই নেতার কাছে জানতে চাওয়া হয়েছিল ‘ক্ষমতায় গেলে তার দল ব্যতিক্রম কি করবে’- জবাবে তিনি কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি।

তিনি বলেন, ‘সিভিল সোসাইটির প্রতিনিধিদের সঙ্গে আলোচনা করে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে’।

৫ জানুয়ারির নির্বাচন স্থগিতের দাবি জানিয়ে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শমসের মবিন চৌধুরী বলেন, ‘সংবিধান কোনো ধর্মীয় গ্রন্থ নয়। এর আগে ১৫ বার এটি সংশোধন হয়েছে। মানুষের জন্য সংবিধান, সংবিধানের জন্য মানুষ নয়।’

বর্তমান সরকারকে নির্বাচিত স্বৈরতন্ত্রী বলেও আখ্যায়িত করেন বিএনপির এ নেতা।

প্রফেসর আব্দুল্লাহ আবু সায়ীদ বলেন, ‘৯০ এর স্বৈরতন্ত্রকে নিপাত করে গভীরতর একটি স্বৈরতন্ত্রে ঢুকে পড়েছি। সামরিক স্বৈরতন্ত্রকে হটানো যত কঠিন তার চেয়েও বেশি কঠিন এ লেবাসধারী স্বৈরতন্ত্রকে হটানো।’

তিনি আরও বলেন, ‘দেশের দু’টি দলই সংঘাতপূর্ণ। তাদের ব্যক্তিস্বার্থ কোনো কোনো সময় আমাদের জীবনযাত্রা, দেশকে পঙ্গু করে দেয়। অর্থনীতিকে ঠেলে দেয় ধ্বংসের দিকে।’

প্রবীণ আইনজীবী ব্যারিস্টার রফিক-উল হক বলেন, ‘বিরোধী দলের সভা উপলক্ষে গতকাল (শুক্রবার) রাত থেকে সরকার গাড়ি চলাচল বন্ধ করে দিয়েছে। একজন আরেকজনের মুখ দেখা বন্ধ করে দিয়েছে। এভাবে চলতে থাকলে কীভাবে সমাধান আসবে।’

প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘ফাঁকা মাঠে গোল করে কোনো লাভ নেই। ডেমোক্রেসিকে তার নিজস্ব গতিতে চলতে দিতে হবে।’

কলামিস্ট আবুল মকসুদ বলেন, ‘বাংলাদেশ একটি গভীর সংকটে আছে। একাত্তর সালের পর এ ধরনের সংকট তৈরি হয়নি। তার মূল কারণ যারা ক্ষমতায় আসেন তাদের ভাবনা, আর যদি ক্ষমতায় আসতে না পারেন।’

সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ব্যারিস্টার মইনুল হোসেন বলেন, ‘সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনী দেশকে এক দলীয় শাসন ব্যবস্থার দিকে ঠেলে দিয়েছে।’

ইংরেজি দৈনিক ডেইলি স্টারের সম্পাদক মাহফুজ আনাম বলেন, ‘নির্বাচন বলতে যা বোঝায় ৫ জানুয়ারি তা হচ্ছে না। ভোটার ছাড়াই যে পার্লামেন্ট গঠন হচ্ছে তা সংবিধানের মূল্যবোধের বিরুদ্ধে। আওয়ামী লীগের মতো একটি ঐতিহ্যবাহী দল এ নির্বাচন করে নিজেদের গায়ে কলঙ্ক লাগাচ্ছে।’ এ নির্বাচন বন্ধ করতে সুপ্রিমকোর্ট থেকে কোনো পদক্ষেপ নেওয়া যায় কি না তা ভেবে দেখার জন্য উপস্থিত সিনিয়র আইনজীবীদের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।

সরকারি দলের মন্ত্রীদের ‘একাদশ সংসদ নির্বাচন নিয়ে’ আলোচনার প্রস্তাব প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘দশম সংসদের এমপিরা নির্বাচন দেবে এতে কোনো সমাধান হবে বলে মনে হয় না।’

দৈনিক মানবজমিন সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী বলেন, ‘৫ জানুয়ারির নির্বাচন গ্রহণযোগ্য নয়।’ এ নির্বাচন স্থগিত করে পরবর্তী ৯০ দিনের মধ্যে সবার সঙ্গে আলোচনা করে গ্রহণযোগ্য একটি নির্বাচন দেওয়ার আহ্বান জানান তিনি।

জাতীয় পার্টি (বিজেপি) চেয়ারম্যান আন্দালিব রহমান পার্থ বলেন, ‘একদিনে দেশের সংকট সৃষ্টি হয়নি। হঠাৎ করে এর সমাধানও আসবে না। এ সংকট থেকে উত্তরণে তরুণ সমাজকে রাজনীতিমুখী হতে হবে।’ সেই সঙ্গে স্থানীয় সরকারকে শক্তিশালী করার ওপর জোর দেন তিনি।

‘ওয়ান ইলেভেন দুই নেত্রীকে পাওয়ার ফুল করেছে’ বলেও মন্তব্য করেন তরুণ এ সংসদ সদস্য।

নির্বাচন স্থগিতের দাবি জানিয়ে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা হোসেন জিল্লুর রহমান বলেন, ‘দেশের নাগরিক শক্তি অনেক দুর্বল হয়ে গেছে। আইনের শাসন জনগণের কাছে ভয়ংকর রূপে আবির্ভূত হয়েছে।’

রাশেদ খান মেননকে উদ্দেশ করে তিনি বলেন, ‘আমাদের রাজনীতিকরা নাগরিকদের ভাবনা ভাবেন না। তারা যা ভাবেন নাগরিকরা তা না ভাবায় আশ্চর্য হন। সেই ভেবে আমরাই আশ্চর্য হই।’

ব্যবসায়ী আনিসুল হক বলেন, ‘দুই নেত্রী সমঝোতা করে যে স্বৈরশাসককে লাঠি দিয়ে বিদায় করেছিলেন। ২০ বছর পর ক্ষমতায় আসার জন্য এখন তারই পেছনে ঘুরছেন তারা।’

অধ্যাপক আসিফ নজরুল বলেন, ‘নাগরিক সমাজের মধ্যকার বিভক্তি ও সুবিধাভোগী আচরণের কারণে রাজনীতিবিদরা সুযোগ পায়। প্রধানমন্ত্রী নির্বাচনকালীন সরকারের প্রধান থাকা অবস্থায় নির্বাচন হতে পারে না। অথবা রুলস অব বিজনেসে সংশোধন এনে নির্বাচনকালীন সরকারের প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতা কমাতে হবে।’

টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ‘দেশের রাজনীতিবিদরা নিজেরাই অন্ধকারে বাস করছেন। তারা দেখছেন না, শুনছেন না তারা দেশবাসীকে কী বিপদে ফেলে রেখেছে। রাজনীতিকদের মধ্যে অসুস্থ একটি প্রতিযোগিতা রয়েছে।’

৫ জানুয়ারির নির্বাচন বাতিলের দাবি জানিয়ে তিনি আরও বলেন, ‘আওয়ামী লীগ ১৫ ফেব্রুয়ারির মতো ৫ জানুয়ারি রক্তক্ষরণ করে ক্ষমতায় টিকে থাকার প্রতিযোগিতায় নেমেছে। এর ফলে অগণতান্ত্রিক শক্তি লাভবান হচ্ছে। যার ঝুঁকিতে আমাদের দুই নেত্রী রয়েছেন।’

সুজন সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার বলেন, ‘নির্বাচন কমিশন শক্তিশালী করার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। এছাড়া যারাই ক্ষমতায় আসুক তারা কী করবে এ বিষয়ে সুস্পষ্ট প্রতিশ্রুতি থাকা দরকার।’

আলোচনায় আরও অংশ নেন- মঞ্জুর এলাহী, এনাম আহমেদ চৌধুরী, রিয়াজ উদ্দিন আহমেদ, পিয়াস করিম, তালেয়া রহমান, ড. সারওয়ার আলী, রোকেয়া রহমান, তপন চৌধুরী, আয়েশা খানম, অ্যাডভোকেট সালমা আলী, সৈয়দা রেজওয়ানা হাসান, ফজলুল হক, অ্যাডভোকেট রানা দাশগুপ্ত, প্রফেসর রওনক জাহান প্রমুখ।

(দ্য রিপোর্ট/আরএইচ/এনডিএস/এইচএসএম/নূরুল/ডিসেম্বর ২৮, ২০১৩)

পাঠকের মতামত:

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

SMS Alert

রাজনীতি এর সর্বশেষ খবর

রাজনীতি - এর সব খবর