thereport24.com
ঢাকা, রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১,  ২২ জমাদিউল আউয়াল 1446

কী ইঙ্গিত দিলেন হাসিনা, খালেদা...

২০১৩ ডিসেম্বর ৩০ ২৩:১৮:০৩
কী ইঙ্গিত দিলেন হাসিনা, খালেদা...

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, বিরোধীদলীয় নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া ও আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফের মন্তব্যে আশঙ্কা দানা বাঁধছে। সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মধ্যেও এ শঙ্কার শেষ নেই। তাহলে কি তৃতীয় কারও ক্ষমতায় আরোহণের আশঙ্কা রয়েছে? এমন প্রশ্নই এখন ঘুরপাক খাচ্ছে সবার মনে।

শনিবার বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া বলেন, ‘আজকে সকলের দায়িত্ব হয়ে গেছে- দেশ বাঁচানো, মানুষ বাঁচানো। আর আপনারা ঘরে ঘরে ঢুকে এখন মানুষ হত্যা করছেন। মনে করেন যে এগুলোর হিসাব নেই, এই মা-বোনের কান্না, এই আলেম এতিমের কান্না, এই বিডিআরের অফিসারদের ওয়াইফদের কান্না এগুলো কি বৃথা যাবে? এগুলো কোনো দিনও বৃথা যাবে না। চোখের পানি ফেলতে ফেলতে জুলুম-নির্যাতনকারীরা একদিন অন্ধ হয়ে যাবে।’

২০০৯ সালে পিলখানায় বিডিআর সদর দফতরে হত্যাকাণ্ডের জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে দায়ী করে খালেদা জিয়া বলেন, ‘এতগুলো অফিসার যে মারল, ৫৭ সেনা অফিসারকে হত্যা করল- সেদিন হাসিনার এই ফোর্স কোথায় ছিল? কেন সে ফোর্স পাঠায়নি। আসলে সে নিজেই জড়িত ছিল এ হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে, সে জন্যই।’

অন্যদিকে বিশিষ্ট নাগরিক যারা সরকারকে ৫ জানুয়ারির নির্বাচন পিছিয়ে দেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাদের বিরুদ্ধে তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেছেন, ১/১১-এর কুশীলবরা আবারো সক্রিয় হয়েছে।’

তিনি বলেন, ‘আজকের পত্রিকায় দেখেছি- কয়েকজন ‘বিশিষ্ট নাগরিক’ আমাদের কিছু পরামর্শ দিয়েছেন। আমি তাদের সম্পর্কে কিছু বলতে চাই না। তবে তাদের অনেককেই আমরা ১/১১-এর পর দেখেছি এবং তারা এখন আবারো সোচ্চার হয়েছেন।’

প্রধানমন্ত্রী রবিবার সকালে গণভবনে জেএসসি ও জেডিসি পরীক্ষার ফল গ্রহণকালে এ কথা বলেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘দেশে যখন গণতন্ত্র ও সাংবিধানিক প্রক্রিয়ার অস্তিত্ব থাকে না এবং অসাংবিধানিকভাবে ক্ষমতা কুক্ষিগত করা হয় তখন এ সব বিশিষ্ট নাগরিকরা সক্রিয় হন। তারা সব সময় এমন একটা পরিস্থিতির জন্য অপেক্ষা করেন, যখন তাদের ডাকা হয় এবং কদর বাড়ে।’

আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম বলেন, ‘শনিবার কিছু সংখ্যক বুদ্ধিজীবী একটা আলোচনার আয়োজন করেছিলেন। তারা নিজেদের দাবি করেছেন নির্দলীয়। ওই অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করেছিলেন বিএনপির তিনজন নেতা। কিন্তু আওয়ামী লীগের কাউকে আমন্ত্রণ জানানো হয়নি। এতেই বোঝা যায় তারা কতটুকু নিরপেক্ষ। তারা আসলে কারা? তারা ১/১১-এর মতো আরেকটি পরিস্থিতি সৃষ্টি করার জন্য শনিবার এই তথাকথিত নাগরিক সমাজের অনুষ্ঠান আয়োজন করেছিল।’

সৈয়দ আশরাফ বলেন, ‘তারা দাবি করলেন ৫ জানুয়ারি নির্বাচন বাতিল করতে। কেন নির্বাচন বাতিল করব? আওয়ামী লীগ বন্দুকের নল দেখিয়ে ক্ষমতায় আসেনি। গত নির্বাচনে দুই-তৃতীয়াংশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে ক্ষমতায় এসেছি। তাই সুপ্রিমকোর্টের রায়ের মাধ্যমে আমরা সংবিধান সংশোধন করতে পারি।’

প্রসঙ্গত, শনিবার দেশের বিশিষ্ট নাগরিকরা রাজধানীর গুলশানের একটি হোটেলে গোলটেবিল বৈঠকে সরকারের কাছে ৫ জানুয়ারির নির্বাচন স্থগিতের দাবি জানান।

প্রধান দুই দলের নেত্রীদের বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. নুরুল আমীন বেপারি দ্য রিপোর্টকে বলেন, ‘প্রধান দল দুটির শীর্ষ নেতাদের বক্তব্যে এটা স্পষ্ট যে, তারা সবাই অগণতান্ত্রিক শক্তির উত্থানের আশঙ্কা করছেন। তবে এখন যে অবস্থা তাতে মনে হচ্ছে, অগণতান্ত্রিক শক্তির মাধ্যমেই দেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা হবে।’

তিনি বলেন, ‘১৯৩৩ সালে বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়ে হিটলার যেমন ফ্যাসিইজম প্রতিষ্ঠা করেছিলেন, বর্তমান সরকারও তাই করছে। বিরোধীদলীয় নেত্রী বিডিআর ও হেফাজতকে যেভাবে তার বক্তব্যে নিয়ে এসেছেন, তা অবশ্যই ইঙ্গিতবহ। বিরোধী দল যেহেতু আন্দোলন করতে পারছে না, তাই দেশে কী হয় তা স্পষ্ট নয়।’

নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না দ্য রিপোর্টকে বলেন, ‘উনারা যা করছেন ও বলছেন- এ বিষয়ে আমি কোনো মন্তব্য করব না। করা উচিতও না।’

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক ড. ইমতিয়াজ আহমেদ বলেছেন, ‘দুই নেত্রী যে ভাষাতেই কথা বলুক, সমাধানে উনাদের আসতেই হবে। এভাবে হরতাল, অবরোধ-পাল্টা অবরোধ চলতে পারে না। দেশের মানুষ অতিষ্ঠ। মানুষ এই দুর্গতি থেকে মুক্তি চায়।’

তিনি বলেন, ‘সবাই অগণতান্ত্রিক শক্তির আশঙ্কা করছে। আমি বুঝতে পারছি না, আমরা গণতান্ত্রিক শক্তির মধ্যে আছি, নাকি অগণতান্ত্রিক শক্তির মধ্যে আছি। তবে সমাধান দুই নেত্রীকেই করতে হবে।’

(দ্য রিপোর্ট/এসএ/এসবি/শাহ/ডিসেম্বর ৩০, ২০১৩)

পাঠকের মতামত:

SMS Alert

বিশেষ সংবাদ এর সর্বশেষ খবর

বিশেষ সংবাদ - এর সব খবর