thereport24.com
ঢাকা, সোমবার, ৬ মে 24, ২৩ বৈশাখ ১৪৩১,  ২৭ শাওয়াল 1445

 

ওয়ার্কার্স পার্টির পূর্ণাঙ্গ নির্বাচনী ইসতেহার পড়তে এখানে ক্লিক করুন

২০১৩ ডিসেম্বর ৩১ ২০:২৫:৩২

দুনিয়ার মজদুর এক হও

১০ম জাতীয় সংসদ নির্বাচন-২০১৪

নির্বাচনী

ইশতেহার

বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি

কেন্দ্রীয় কমিটি

ভূমিকা

রাজনৈতিক গুরুত্বের দিক দিয়ে এবারের দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন শুধুমাত্র নির্বাচনী সংগ্রাম নয়, এই সংগ্রামে নিহিত রয়েছে বাংলাদেশের স্বাধীনতা মুক্তিযুদ্ধের চেতনার ধারাবাহিকতা রক্ষাসহ অসাম্প্রদায়িক গণতান্ত্রিক শক্তির বিকাশ। মহান মুক্তিযুদ্ধের অর্জন এবং জনগণের স্বপ্নের বাংলাদেশের অগ্রযাত্রা মুক্তিযুদ্ধের অব্যবহিত পরে ১৯৭৫ এ রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে থামিয়ে দেওয়া হয়েছিল। স্বাধীনতার ৪২ বছরে অধিকাংশ সময়ই শাসকগোষ্ঠীর ভূমিকায় যারা এসেছে তারা ধর্মান্ধ প্রতিক্রিয়াশীল ও সাম্রাজ্যবাদী শক্তিকে বাংলাদেশে প্রতিষ্ঠিত করেছে। রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় ঐ সকল শক্তি অর্থবিত্তে শক্তিশালী হয়ে আজ পরিপূর্ণভাবেই বাংলাদেশের অস্তিত্ব ধরে টান দিয়েছে। সাম্প্রদায়িক মৌলবাদী গোষ্ঠী ও সাম্রাজ্যবাদের ক্রিড়ানক বিএনপি-জামাত জোটসহ হেফাজতে ইসলাম মুক্তিযুদ্ধের চেতনার বাংলাদেশের প্রতিপক্ষ হয়ে দাঁড়িয়েছে। বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি স্বাধীনতা পরবর্তী সময় হতে অসাম্প্রদায়িক গণতান্ত্রিক বাংলাদেশের পক্ষে তার লড়াই অব্যাহত রেখেছে এবং এদেশে গরিব মেহনতি মানুষের পার্টি হিসেবে স্বৈরতন্ত্র, সামরিকতন্ত্র, মৌলবাদ জঙ্গিবাদবিরোধী সংগ্রামসহ সাম্রাজ্যবাদবিরোধী সংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছে। জাতির ঘাড়ে যখনই কোন গণবিরোধী শক্তি চেপে বসেছে তখনই ওয়ার্কার্স পার্টি তার বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছে। কখনও এককভাবে, কখনও ইস্যুভিত্তিক জোটের মাধ্যমে, কখনও বা কর্মসূচিগত ফ্রন্ট করে। বাংলাদেশে মৌলবাদের উত্থান ও বিপদ সম্পর্কে ওয়ার্কার্স পার্টি ’৮০-র দশক থেকেই জনগণকে সচেতন করে আসছিল।

মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তির উপর রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস এবং আক্রমণ চাপিয়ে দিয়ে ঐ সব সামরিক বেসামরিক শাসকেরা ক্রমাগতভাবে মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে নিঃশেষিত করতে চেয়েছে। সমাজের অভ্যন্তরে রাজনীতি, অর্থনীতি, সংস্কৃতিতে তাদের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করেছে। যার নেতিবাচক প্রভাব সর্বস্তরে পৌছে যায়। পাশাপাশি মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তি দাবীদার রাজনৈতিক দল সমূহ তাদের মধ্যে ব্যাপক কার্যকর কোন ঐক্য গড়ে তুলতে পারেনি। কৌশলের নামে অপশক্তির সংগে আপোষ এবং প্রতিবাদী জনগোষ্ঠী প্রস্তুত করতে না পারার ফলে প্রতিক্রিয়াশীল দেশী-বিদেশী শক্তি পরিপূর্ণভাবেই সুযোগ নিয়েছে। বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি ২০০২ সনে বিএনপি জামাত জোটের সরকারের বিরুদ্ধে দুঃসাহস নিয়ে পল্টনে জনসভায় ‘না’ বলার মধ্য দিয়ে ঐ অপশক্তির বিরুদ্ধে রাজনৈতিক উদ্যোগ এগিয়ে নিতে থাকে এবং ১৪ দলের সংগ্রামী জোট গড়ে তুলে সেই লড়াই অব্যাহত রাখে বিএনপি-জামাতের বিরুদ্ধে। পরবর্তীতে সামরিক সাহায্য পুষ্ট ফখরুউদ্দিন-মইন-ইউ-আহমদের সরকারের বিরুদ্ধেও সেই যুদ্ধ সম্পন্ন করে ১৪ দলীয় জোট ২০০৮ সনে ব্যাপক সংখ্যাগরিষ্ঠতার মধ্যে দিয়ে সরকার গঠন করে। জোট সরকারের ব্যাপক নির্বাচনী সাফল্য এদেশের অসাম্প্রদায়িক গণতান্ত্রিক শক্তির মধ্যে সাহসের জায়গা সৃষ্টি করে, যা মুক্তিযুদ্ধের চেতনা পুনরুদ্ধারের একধাপ অগ্রগতি। সরকারের সীমাবদ্ধতা, সত্বেও ’৭২ এর সংবিধানের মূলনীতিমালা সংবিধানে সংযোজিত করা (যদিও সাংঘর্ষিক রাষ্ট্রধর্ম সংবিধানে থেকে গেছে) নারীনীতি-শিক্ষানীতি, শিক্ষাব্যবস্থা, স্বাস্থ্যসেবা-সামজিক সুরক্ষানীতি, কৃষিখাতে সাফল্য, বিদ্যুৎ উন্নয়ন প্রভৃতি উন্নয়নমূলক কাজে জোট সরকার সাফল্য লাভ করে। অবশ্য দুর্নীতিও তাদের পিছু ছাড়েনি। পদ্মাসেতু, হলমার্ক ডেসটিনি, শেয়ার কেলেঙ্কারী, নিয়োগ বাণিজ্য, চাঁদাবাজি সন্ত্রাস জোটের সাফল্যে কলঙ্ক এঁকে দিয়েছে।

ওয়ার্কার্স পার্টি জোট সরকারের সরাসরি ক্ষমতার অংশীদার না হলেও রাজনৈতিক সংগ্রামে সরকারের সংগে ছিল। তবে তাদের ব্যর্থতার সমালোচনা করতেও পিছপা হয়নি।

ওয়ার্কার্স পার্টিই আবার বিএনপি-জামাত হেফাজত, আন্তর্জাতিক সাম্রাজ্যবাদী মৌলবাদী ষড়যন্ত্র অনুধাবন করে সর্বদলীয় সরকারে অংশ নিয়ে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে অসাম্প্রদায়িক গণতান্ত্রিক ধারার রাজনীতি রক্ষায় দায়িত্ব কাধে তুলে নিয়েছে। সর্বদলীয় সরকার বহু আকাক্সিক্ষত এদেশের সকল মানুষের প্রাণের দাবী মানবতাবিরোধী যুদ্ধাপরাধী কাদের মোল্লার ফাঁসির রায় কার্যকর করতে পেরেছে। ’৪২ বছরের মধ্যে এটি কার্যকর করা ছিল একটি বিশেষ চ্যালেঞ্জ স্বরূপ।

অতীতের যে কোন সময়ের চেয়ে বাংলাদেশে জনগণের বিরুদ্ধে ’৭১-এর বিরোধী শক্তি বিশেষভাবে মার্কিন সাম্রাজ্যবাদসহ তাদের মিত্ররা অতিমাত্রায় ষড়যন্ত্রে লিপ্ত। মুখে জামাত বিরোধীতা করলেও কার্যত তারা জামাতকে রক্ষায় নেমেছে। বিএনপি-জামাতের ঐক্য দক্ষিণপন্থী প্রতিক্রিয়ার কেন্দ্র হিসেবে চিহ্নিত হয়ে পড়েছে। গণতন্ত্র রক্ষার আড়ালে ফ্যাসিবাদী শক্তির আগমনের পথকে প্রশস্ত করে দিতে চায় তারা। আন্দোলনের নামে বিএনপি-জামাতের রাষ্ট্রবিরোধী যুদ্ধ, জনগণের উপর আক্রমণ, অর্থনৈতিক ভিত্তি ধ্বংস করা, সংখ্যালঘুদের উপর সাম্প্রদায়িক আক্রমণকে তারা নিন্দা না জানিয়ে গণতন্ত্রের ইনক্লুসিভ অংশীদার করতে বাধ্য করতে চাচ্ছে। এগুলোও বাংলাদেশের জনগণের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র। ’৭১-এর পরাজয় পুষিয়ে নেবার অপচেষ্টা।

এই জটিল রাজনৈতিক সমীকরণে জনগণের শক্তিকে সাহস নিয়ে সংগঠিত করাই হবে এই নির্বাচনের লক্ষ্য। অর্থনীতি, ব্যবসা-বাণিজ্য, শ্রমজীবী মেহনতি জনগণকে জিম্মি করে যারা বাংলাদেশের চেতনাকে পরাজিত করতে চাচ্ছে তাদের বিরুদ্ধে সংগঠিত লড়াই ছাড়া অন্য কোন রাস্তা খোলা নেই।

বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি দ্ব্যর্থহীনভাবে ঘোষণা করে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ প্রজাতন্ত্রের মালিক সকল জনগণ যারা মুক্তিযুদ্ধের বিশ্বাসে গড়ে উঠেছে, বেড়ে উঠেছে। দেশকে এগিয়ে নেবার উদয়স্থ পরিশ্রম করে মধ্য আয়ের দেশের দিকে নিয়ে যাচ্ছে। সেই দেশপ্রেমিক জনগণের একটি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠাই আজ কর্তব্য, যা মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় আরো উঁচুতে মাথা তুলে দাঁড়াবে। জঙ্গিবাদ-মৌলবাদকে পরাস্ত করবে। ন্যায়-সমতার অসাম্প্রদায়িক গণতন্ত্রের পথে দেশকে এগিয়ে নেবে। বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি ১০ম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ঐক্য সংগ্রাম ঐক্যের ধারায় যেমন ১৪ দলের সমঝোতার ‘নৌকা’ মার্কা প্রতীকে নির্বাচন করছে, তেমনি দেশের বিভিন্ন প্রান্তে শ্রমজীবী-মেহনতি মানুষের লড়াই-সংগ্রামের প্রতীক ‘হাতুড়ি’ মার্কা নিয়েও লড়াই করছে।

কর্মসূচি

১। খাদ্য নিরাপত্তা অর্জন ও দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ

ক. প্রতি নাগরিকের মানসম্পন্ন এবং প্রয়োজনীয় খাদ্য প্রাপ্তি নিশ্চিত করা। খাবারের অধিকার প্রতিটি নাগরিকের মৌলিক সাংবিধানিক অধিকার হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করা। গ্রাম-শহরের দিনমজুর, খেতমজুর ও নিঃস্ব দরিদ্র জনগোষ্ঠীসহ নিুবিত্ত ও মধ্যবিত্তের জন্য গণবণ্টন ব্যবস্থা প্রবর্তন করা।

খ. গণউদ্যোগ ও জনপরিকল্পনার ভিত্তিতে দেশীয় ঐতিহ্য ও লাগসই প্রযুক্তি অনুসরণ করে খাদ্য উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করা।

গ. চাল ডাল তেলসহ দ্রব্যমূল্য জনগণের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে রাখা। ‘মূল্য নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ’ প্রতিষ্ঠা করে বাজার তদারকির ব্যবস্থা গ্রহণ, ভেজাল খাদ্য প্রস্তুত, সরবরাহ ও বিপণন বন্ধ করে নিরাপদ খাবার তৈরি ও বিপণন নিশ্চিত করা। ভোক্তা অধিকার আইন প্রণয়ন করে ভোক্তার অধিকার প্রতিষ্ঠা করা। বিদ্যুৎ, গ্যাস, পানি নিষ্কাশনসহ সকল প্রকার সেবার মূল্য সাধারণ মানুষের সঙ্গতির মধ্যে ও স্থিতিশীল রাখা।

ঘ. বাজার-সিন্ডিকেট অপরাধ চক্র সমূলে উৎপাটন করা, মজুদদারি কঠোরভাবে দমন করা।

২। কর্মসংস্থান, দারিদ্র্য বিমোচন ও মর্যাদাপূর্ণ জীবন নিশ্চিত করা

ক. কর্মক্ষম সব মানুষের জন্য ক্রমান্বয়ে কর্মসংস্থান নিশ্চিত করতে প্রয়োজনীয় বাজেট বরাদ্দ করা। প্রাথমিকভাবে দেশের সবচেয়ে দরিদ্র ১০০ উপজেলায় খরা, বন্যা, জলাবদ্ধতা ও প্রকৃতিক দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাসমূহ চিহ্নিত করে ‘কর্মসংস্থান স্কীম’ চালু করা এবং পর্যায়ক্রমে তা সম্প্রসারিত করা। প্রতি বছর ন্যূনতম ১০% নতুন কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টির পরিকল্পিত ব্যবস্থা গ্রহণ করা।

খ. দরিদ্র জনগণের জন্য বসত ভিটা ও খাদ্য, বস্ত্র, চিকিৎসা সেবাসহ ন্যূনতম বেঁচে থাকার ব্যবস্থা নিশ্চিত করা।

গ. শহর ও গ্রামের মধ্যে সুযোগ-সুবিধার বিদ্যমান বৈষম্য ক্রমান্বয়ে দূর করার উদ্যোগ গ্রহণ করা, সকল নাগরিকের সুযোগের সমতা আনা। গ্রামীণ অর্থনীতির উন্নয়ন, কাজের ক্ষেত্র সম্প্রসারিত করে গ্রামের মানুষের শহরমুখী হওয়ার প্রবণতা বন্ধ করা।

ঘ. উপযুক্ত পুনর্বাসন ছাড়া বস্তি উচ্ছেদ বন্ধ করা। দরিদ্র নিম্নবিত্তদের জন্য গৃহনির্মাণ ঋণ প্রকল্প চালু করা। বস্তিবাসীর জন্য পৌর জীবনের সুযোগ-সুবিধার ব্যবস্থা করা। শহরের খাস জমি উদ্ধার করে সেখানে সরকারিভাবে কলোনি, ডরমিটরি ইত্যাদি নির্মাণ করে তা গরীব শ্রমজীবী মানুষের মধ্যে ও বস্তিবাসীদের কাছে বসবাসের জন্য বরাদ্দ দেয়া। বাস্তুহীন ও নিম্নবিত্ত দরিদ্র সকল পরিবারের জন্য ৩ বছরের মধ্যে ন্যূনতম বাসস্থানের ব্যবস্থা করা।

৩। সাম্প্রদায়িকতা, মৌলবাদ, জঙ্গীবাদ দমন

ক. বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধকালীন মানবতাবিরোধী যুদ্ধাপরাধীদের বিচার অব্যাহত রাখা, আন্তর্জাতিক যুদ্ধাপরাধীদের বিচার ট্রাইব্যুনালে ঘোষিত রায়সমূহ দ্রুত কার্যকর করা।

খ. জঙ্গিবাদ, সাম্প্রদায়িকতা, সন্ত্রাস কঠোরভাবে দমন করা। জামাত-শিবিরের রাজনীতি নিষিদ্ধসহ ঐ সংগঠনগুলোকে নিষিদ্ধ করা।

গ. চট্রগ্রাম অস্ত্র চালান, বগুড়া গুলি চালান, একুশে আগস্টের গ্রেনেড হামলা, উদীচী ও ১ বৈশাখের অনুষ্ঠানে বোমাবাজী ও গ্রেনেড হামলার তদন্ত এবং দোষী ব্যক্তি ও সংগঠনকে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করা।

ঘ. জঙ্গিবাদী অপরাধী চক্রের ঘাঁটি ও নেটওয়ার্ক নির্মূল, দেশী-বিদেশী অর্থ ও শক্তির উৎস বন্ধ, গোপন সশস্ত্র প্রশিক্ষণ ও ক্যাডারবাহিনী লালন করার ব্যবস্থা নির্মূল করা।

ঙ. মাদ্রাসা শিক্ষার সংস্কার করে বিজ্ঞানভিত্তিক ও যুগোপযোগী করা। কোমলমতি মাদ্রাসা ছাত্রদের জঙ্গিবাদের অশুভ প্রভাব বলয় থেকে মুক্ত করা। ধর্মস্থল ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে ধর্মের রাজনীতিক ব্যবহার নিষিদ্ধ করা।

চ. হেফাজত ইসলামের ১৩ দফার নামে প্রগতিবিরোধী কুপমণ্ডুকতার বিরুদ্ধে জনগণকে সংগঠিত করা।

৪। কৃষক, খেতমজুর ও কৃষি সংস্কার প্রসঙ্গে

ভূমিনীতি

ক. খোদ কৃষকের হাতে জমি এই নীতিমালার ভিত্তিতে ভূমি সংস্কার করা।

খ. জমির সিলিং ব্যবস্থার পুনঃসংস্কার করা। এক ফসল জমির ক্ষেত্রে জমির সিলিং ৫০ বিঘা এবং দো ফসলা জমির সিলিং ৩০ বিঘা নির্ধারণ করা।

গ. অকৃষক জমির মালিক, যাদের পরিবার কৃষি আয়ের ওপর নির্ভরশীল নয়, তাদের জমি অধিগ্রহণ করা এবং উদ্ধারকৃত জমি ভূমিহীনদের মধ্যে বিতরণ করা।

ঘ. বর্গা রেজিস্ট্রেশন বাধ্যতামূলক করা, বর্গা চাষীদের বর্গাসত্ত্ব প্রতিষ্ঠা করা। বর্গা চাষীদের জমি থেকে উচ্ছেদ নিষিদ্ধ করা, উৎপাদিত ফসলের ক্ষেত্রে তেভাগা কার্যকর করা।

ঙ. খাস জমি ও জলাশয় উদ্ধার করে ভূমিহীন কৃষক জনগণের মধ্যে বিলিবণ্টনের উদ্যোগ গ্রহণ, জলমহলগুলো প্রকৃত মৎস্যজীবীদের হাতে দেওয়া।

চ. শিল্প বাণিজ্য, রাবার বাগান করার নামে নামসর্বস্ব শিল্প মালিক, ব্যক্তি প্রতিষ্ঠানের জমির লীজ বা ক্রয়ের অনুমোদন বাতিল করে কৃষি জমি রক্ষার ব্যবস্থা করা। আবাদী কৃষি জমিতে ইটের ভাটা রিয়েল এস্টেট ব্যবসায়ীদের আবাসিক প্রকল্প গড়ে তোলা আইন করে নিষিদ্ধ করা।

ছ. অল্প জমিতে অধিক আয়ের সংস্থান গড়ে তোলা। কৃষিকে ভিত্তি করো এ্যাগ্রো ইন্ডাস্ট্রি কমপ্লেক্স গড়ে তোলা।

কৃষি নীতি

ক. বাংলাদেশে কৃষি নীতি বলতে কৃষি উৎপাদনের সাথে সম্পর্কিত নীতিমালার আইনগত দিক, উৎপাদনে নীতিমালার দিক, উপকরণের দিক, উৎপাদিত ফসলের বাজারজাতকরণ, লাভজনক মূল্য বুঝায়। সামগ্রিক দিকগুলো নিয়ে আমাদের দেশে কোন নীতিমালা নেই। যা আছে তাও সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। এ সমস্ত দিকগুলোকে সামনে রেখে কৃষি নীতি নির্ধারণ করা।

খ. আধুনিক কৃষি নির্ভর উন্নতমানের বীজ, সার, কীটনাশক সেচসহ অন্যান্য কৃষি উপকরণ, কৃষি উপকরণের ভর্তুকী বাড়ানো, উপকরণ বিতরণ ও বাজারজাতকরণ ঢালাওভাবে ব্যক্তি মালিকানায় না দিয়ে বিএডিসিকে সচল করে তার নিয়ন্ত্রণে আনা।

গ. উৎপাদন ব্যয়ের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে ধান, পাট, আখ, তামাক, পানসহ প্রধান ফসলগুলোর লাভজনক মূল্য পাবার ব্যবস্থা করা। মধ্যসত্ত্বভোগীদের হাত থেকে কৃষি পণ্য সরাসরি ভোক্তার হাতে পৌঁছানোর ব্যবস্থাসহ বাজারজাত করানোর সমস্যাসমূহ দূর করা হবে।

ঘ. গ্রামাঞ্চলে মহাজনী ঋণের খপ্পর থেকে কৃষি ও কৃষককে রক্ষা করার জন্য বাস্তবমুখী পরিকল্পনা গ্রহণ, কৃষি ব্যাংকসহ তফসিলি ব্যাংকের কৃষি ঋণের সরল সুদ ৫%, সেই সঙ্গে এনজিওদের ঋণের সুদ অনুরূপ করার উদ্যোগ গ্রহণ করা। ক্ষুদ্র কৃষকদের ফসল অনুযায়ী বিশেষ প্রণোদনা প্যাকেজ দেয়া।

ঙ. দেশীয় বীজ ভাণ্ডারকে রক্ষা, দেশীয় উদ্ভাবিত উচ্চ ফলনের বীজ উদ্ভাবন, বন্ধ্যা বীজ ও জিএমও বীজ বাদ দিয়ে আমাদের দেশের বিজ্ঞান প্রযুক্তিকে ব্যবহার, কৃষি গবেষণাকে গুরুত্ব দেয়া।

চ. শস্য বীমা চালু করা, খরা, বন্যা, জলাবদ্ধতাসহ প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে কৃষি খাতকে রক্ষা করা বাস্তব উদ্যোগ গ্রহণ।

ছ. হাট-বাজার, ঘাট, বিল-বাওড়, হাওড়সহ ইজারাদারি ও কন্ট্রাক্ট প্রথা বাতিল করা। হাট-বাজারে সরাসরি কৃষকদের বেচাকেনার ওপর তোলা বা খাজনা বন্ধ করা।

জ. কৃষি উৎপাদন স্বার্থবিরোধী বিভিন্ন প্রতারণা, অপরাধ, দুর্নীতি দমনে কৃষি আদালত গঠন করা।

ভূমি ব্যবহার নীতি

অতি জনসংখ্যার এই দেশে খাদ্য নিরাপত্তা, শিল্প, আবাসন ইত্যাদি দিকগুলোকে খেয়ালে নিয়ে কৃষি-অকৃষি জমি চিহ্নিত করে কৃষকের প্রতিনিধি, ভূমি সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞ ও গবেষকসহ সকলের মতামত নিয়ে ভূমি ব্যবহার নীতিমালা সংশোধন ও তার বাস্তবায়ন নিশ্চিত করার পদক্ষেপ গ্রহণ করা।

খেতমজুর, দিনমজুর প্রসঙ্গে

ক. সারা বছরে কাজের নিশ্চয়তা প্রদান করা।

খ. বাজার মূল্যের সাথে সঙ্গতি রেখে ন্যূনতম মজুরি নির্ধারণ করা।

গ. ১০০ দিনের কর্মসংস্থান প্রকল্প মঙ্গা, খরা, জলাবদ্ধ এলাকা ভিত্তি হিসেবে ধরে সারাদেশে তা সম্প্রসারিত করা, মজুরি ১০০ টাকার পরিবর্তে ১৫০ টাকা ধার্য করা এবং ১০০ দিনের কাজের গ্যারান্টি কার্ড প্রদান করা।

ঘ. বয়স্ক ভাতা ও দুঃস্থ ভাতার টাকা দ্বিগুণ করা

৫। শিল্প, শ্রমিক ও কর্মচারি

ক. মুক্তবাজার অর্থনীতির নামে বিরাষ্ট্রীয়করণ, বিনিয়ন্ত্রণ, উদারীকরণের আত্মঘাতী নীতি পরিত্যাগ করা। রাষ্ট্রীয় কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠানকে দক্ষ, উন্নত ও লাভজনক করার বাস্তব পদক্ষেপ গ্রহণ করা।

খ. বন্ধ করে দেওয়া পাটকল, বস্ত্রকল, চিনিকলসহ সকল বন্ধ কারখানা চালু করা, চাকুরিচ্যুত শ্রমিক-কর্মচারিদের কাজ ও চাকুরিতে পুনর্বহাল করা। পাট শিল্পে বিকাশের জন্য বাস্তবসম্মত কার্যকরী বহুমুখী ব্যবস্থা গ্রহণ করা।

গ. ব্যাংক, বীমা, টিএন্ডটি, বিদ্যুৎ মৌল ও ভারী শিল্পকে রাষ্ট্রীয় মালিকানায় রেখে জাতীয় চাহিদা অনুযায়ী সরকারি বেসরকারি উদ্যোগে ব্যাপক ছোট, মাঝারি ও ভারি শিল্প গড়ে তোলার পরিকল্পনা ও পদক্ষেপ গ্রহণ করা।

ঘ. সকল গার্মেন্টস শিল্পকে একই জাতীয় শিল্প নীতিমালার অধীনে আনা।

ঙ. ২০০৬ সালে প্রণীত শ্রম আইনে শ্রমিক স্বার্থবিরোধী ধারাসমূহ এবং আইএলও কনভেনশন পরিপন্থী সংশোধনী সমূহ বাতিল করে গণতান্ত্রিক শ্রম আইন প্রণয়ন করা। আইএলও কনভেনশনের সকল ধারা বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেয়া।

চ. শ্রমিকদের (ইপিজেড এলাকাসহ) পরিপূর্ণ ট্রেড ইউনিয়ন অধিকার ও ধর্মঘটের অধিকার নিশ্চিত করা, আদালতে সুনির্দিষ্ট অপরাধ প্রমাণিত না হওয়া পর্যন্ত কোন শ্রমিককে বরখাস্ত করা নিষিদ্ধ করা।

ছ. গার্মেন্টসসহ সকল মিল কারখানায় ৮ ঘণ্টা শ্রম দিবস চালু এবং ওভারটাইম আইন অনুযায়ী দ্বিগুণ মজুরি প্রদানের জন্য মালিক বা কর্তৃপক্ষকে বাধ্য করা। বিনা মজুরিতে জোর করে ওভারটাইম করালে মালিককে কঠোর শাস্তি প্রদানের ব্যবস্থা করা। কাজের সুষ্ঠু পরিবেশ ও শ্রমিকদের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্চিত করা।

জ. বর্তমান বাজার দরের সাথে সঙ্গতি রেখে জাতীয় ন্যূনতম মজুরি ৮ হাজার টাকা ধরে নতুন বেতন ও মজুরি নির্ধারণ করা। মূল্যস্ফীতির সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ বেতন বৃদ্ধি নিশ্চিত করা।

ঝ. নারী শ্রমিকদের মাতৃকালীন ছুটি, ভাতাসহ অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করা।

ঞ. প্রবাসী শ্রমিকদের স্বার্থ রক্ষায় জনশক্তি মন্ত্রণালয়ের অধীনে বিশেষ সেল প্রতিষ্ঠা করা। ইমারত নির্মাণ বিধিমালার পরিপূর্ণ বাস্তবায়ন করা। নির্মাণ শ্রমিক, চা বাগানের শ্রমিক, গৃহশ্রমিক প্রভৃতি শ্রমজীবী মানুষের সমস্যা নিরসন করা।

৬। সাম্রাজ্যবাদী আগ্রাসন প্রতিরোধ

ক. টিকফা চুক্তিসহ বিশ্ব সন্ত্রাসের প্রধান হোতা মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের তথাকথিত ‘সন্ত্রাসবিরোধী’ যুদ্ধের জন্য বাংলাদেশের আকাশ মাটি ও সমুদ্র ব্যবহারে’র চুক্তিসহ সকল প্রকার সার্বভৌমত্ব বিরোধী চুক্তি বাতিল করা।

খ. জাতীয় অর্থনীতি ও দেশীয় শিল্প বিকাশে প্রতিবন্ধক এমন বৈদেশিক সাহায্য বা ঋণ গ্রহণ বন্ধ করা।

গ. সাম্রাজ্যবাদী সাংস্কৃতিক আগ্রাসন প্রতিরোধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা।

৭। দুর্নীতি, দুর্বৃত্তায়ন, সন্ত্রাস প্রতিরোধ ও দমন

ক. সমাজ ও রাষ্ট্রের উচ্চস্তরসহ সর্বস্তর থেকে দুর্নীতি, আয়ের সঙ্গে সঙ্গতিহীন ব্যয়, ক্ষমতার অপব্যবহার ও রাষ্ট্রীয় সম্পদ আত্মসাৎ বন্ধে কঠোর ব্যবস্থা করা। প্রশাসনের সকল পর্যায়ে স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা ও জনসেবার সংস্কৃতি প্রতিষ্ঠা করা। দুর্নীতির মধ্য দিয়ে অর্জিত সকল সম্পদ বাজেয়াপ্ত করা। দুর্নীতিবাজদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির বিধান এবং নির্বাচনে দাঁড়ানোর অধিকার হরণ করা।

খ. ঋণ খেলাপী, অসৎ ও লুটেরা ফটকাবাজ ব্যবসায়ীদের অর্থনৈতিক অপরাধের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা। অবৈধ উপায়ে অর্জিত সম্পদ বাজেয়াপ্ত করা। মানি লন্ডারিং আইন আরও শক্তিশালী করা।

গ. রাজনৈতিক মাফিয়া গডফাদারদের সশস্ত্র ক্যাডারবাহিনী দমন, চোরাচালান, কালোবাজারি, ছিনতাইকারী, চাঁদাবাজ, মাদক ব্যবসায়ী, পেশাদার অপরাধী, খুনী প্রভৃতি সামাজিক অপরাধী চক্রকে কঠোরভাবে দমন করা।

৮। জাতীয় সম্পদ তেল, গ্যাস, বিদ্যুত, কয়লা, বন্দর প্রসঙ্গে

ক. জাতীয় স্বার্থবিরোধী অসম ‘উৎপাদন-বণ্টন চুক্তি’ বাতিল করা। সমুদ্রে গ্যাস-তেল সম্পদ অনুসন্ধানে বর্তমানের রপ্তানিমুখী ‘পিএসসি’ বাতিল করা। সম্পদ ও সমুদ্রের ওপর জাতীয় কর্তৃত্ব নিশ্চিত করতে সমুদ্র সীমা সংক্রান্ত অস্পষ্টতা-অনিশ্চয়তা দূর করা। দেশের স্বার্থ জলাঞ্জলি দিয়ে নতুন কোন চুক্তি সম্পাদন না করা।

খ. ফুলবাড়ী কয়লা প্রকল্পের বিষয়ে সরকারের সাথে তেল গ্যাস বন্দর জাতীয় সম্পদ রক্ষা কমিটির চুক্তি বাস্তবায়িত করা। বিদেশী কোম্পানিকে কয়লা খনি লিজ না দেওয়া, ঘনবসতিপূর্ণ জনপদ ও প্রাকৃতিক পরিবেশকে ধ্বংস করে উন্মুক্ত পদ্ধতিতে কয়লা উত্তোলন নিষিদ্ধ করা।

গ. চট্টগ্রাম বন্দরের মালিকানা ও ব্যবস্থাপনার ওপর জাতীয় কর্তৃত্ব নিশ্চিত করা। বন্দরকে বেসরকারিকরণ বা লিজ দেয়ার ষড়যন্ত্র প্রতিহত করা।

ঘ. বিদ্যুৎ উৎপাদনে বহুমুখী পরিকল্পনা গ্রহণ করা। বিদ্যুৎ চাহিদা পূরণের জন্য দেশের গ্যাস, পানি, সৌর শক্তি, হাওয়া ইত্যাদি নিরাপদ উৎসগুলো ব্যবহার করা। ২০২০ সালের মধ্যে সকলের জন্য বিদ্যুৎ নিশ্চিতকরণের লক্ষ্যে বিদ্যুৎ উৎপাদন, সঞ্চালন, ও বিতরণ ব্যবস্থার উন্নয়ন। কুইক রেন্টাল বন্ধ করে স্থায়ী বিদ্যুৎ উৎপাদনের উদ্যোগ নেয়া।

ঙ. প্রাকৃতিক সম্পদ শত ভাগ জনগণের মালিকানায় রেখে সম্পদ আহরণ ও ব্যবহারে পরিকল্পিত ব্যবস্থা গ্রহণ এবং জাতীয় স্বার্থকে সকল প্রকার বাণিজ্যিক স্বার্থের ঊর্ধ্বে রাখা। খনিজ সম্পদ আইন করে রপ্তানি নিষিদ্ধ করা। ‘কোলবাংলা’ গঠন ও বাপেক্সসহ জাতীয় সংস্থাসমূহের বিকাশে দ্রুত কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করা।

চ. জাতীয় স্বার্থকে অগ্রাধিকার প্রদান করে একটি পূর্ণাঙ্গ জ্বালানি নীতির অধীনে স্বনির্ভর প্রবৃদ্ধি, জ্বালানি প্রযুক্তির ক্ষেত্রে স্বনির্ভরতা অর্জন ও অ-নবায়নযোগ্য জ্বালানির দেশীয় ব্যবহার নিশ্চিত করা।

ছ. গভীর সমদ্র বন্দর প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নেয়া এবং তার সকল টেকনিক্যাল, লাভ-লোকসান, জাতীয় নিরাপত্তা, জনস্বার্থ বিবেচনাসহ জনসমক্ষে পরিকল্পনা তুলে ধরা।

৯। পরিবেশ

ক. বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তনের হুমকি মোকাবেলায় জাতিসংঘের উদ্যোগে গৃহীত কিওটো প্রটোকল পরিকল্পনা বাস্তবায়নে ব্যবস্থা গ্রহণ এবং স্থানীয় জ্ঞান ও লাগসই প্রযুক্তি ব্যবহার নিশ্চিত করা।

খ. পরিবেশ আইনের কার্যকর প্রয়োগ এবং পানি, মাটি ও বায়ু দূষণের সাথে জড়িত সকল ব্যক্তি, শিল্প-প্রতিষ্ঠান, কল-কারখানার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা।

গ. বন উজাড়, পাহাড় কাটা, নদী ভরাটকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনগত ব্যবস্থা নেয়া। সংশ্লিষ্ট দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা ও পরিবেশ ধ্বংসকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা।

ঘ. বিশ্বের বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ বনাঞ্চল সুন্দরবনসহ বনাঞ্চল সংরক্ষণে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ। বৃক্ষহীন বনাঞ্চলের পুনর্বাসন করা। সামাজিক বনায়ন কর্মসূচিকে জোরদার করা। ক্ষতিকর বিদেশী গাছ নিধন করা।

ঙ. ভৈরব কপোতাক্ষ নদের পলি অপসারণ এবং ভবদহ সমস্যা সমাধান, দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের জলাবদ্ধতা নিরসনে ব্যাবস্থা গ্রহণ করা।

চ. বুড়িগঙ্গা, শীতলক্ষা ও কর্ণফুলীসহ গুরুত্বপূর্ণ নদনদীর নাব্যতা বজায় রাখার উদ্যোগ গ্রহণ করা। শহরের পার্ক, খেলার মাঠ, খাল, পুকুর ও শহরের উন্মুক্ত স্থানগুলো সংরক্ষণ ও পুনরুদ্ধার করা।

ছ. ক্ষতিকর কীটনাশক সম্পর্কে জনগণকে সচেতন করা এবং উন্নত বিশ্বে নিষিদ্ধ কীটনাশক যাতে দেশে বাজারজাত হতে না পারে তার ব্যবস্থা করা। সমন্বিত বালাই ব্যবস্থাপনা (ওচগ) ও সমন্বিত উদ্ভিদ পুষ্টি ব্যবস্থাপনা (ওচঘঝ) কার্যকর করা। জৈব সার উৎপাদনে কৃষকদের উৎসাহিত ও ব্যবহারে প্রশিক্ষিত করা। কৃষিতে সেচ ব্যবস্থা সহজলভ্য করা। এই লক্ষ্যে ভূ-উপরিস্থিত পানির ব্যবহার বহুগুণ বাড়ানো। প্রয়োজনীয় অভয়াশ্রম তৈরি ও সংরক্ষণ করা। বিলুপ্তপ্রায় প্রজাতিগুলো চিহ্নিত করে সেগুলো সংরক্ষণের জন্য পদক্ষেপ গ্রহণ করা।

জ. পানি ব্যবস্থাপনা ও বন্যা সমস্যা সমাধানের জন্য ভৌগোলিক ও পরিবেশগত বৈশিষ্ট্য বিবেচনায় নিয়ে দীর্ঘমেয়াদী ও স্বল্পমেয়াদী পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা। এজন্য জাতীয় ও আন্তঃরাষ্ট্রীয় এবং আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক উদ্যোগ গ্রহণ করা।

ঝ. দুর্যোগ পূর্ব আধুনিক সতর্কতা ব্যবস্থা স্থাপন করা। দক্ষ, টেকসই, উন্নত, জনসম্পৃক্ত, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করা। দুর্যোগ পরবর্তী নিরাপদ খাদ্য, পানি ও চিকিৎসার জন্য প্রয়োজনীয় স্থানিক প্রস্তুতি নিশ্চিত করা। প্রয়োজনীয় সংখ্যক আশ্রয়কেন্দ্র নির্মাণ করা।

ঞ. নৌ ও রেল যোগাযোগ ব্যবস্থার অগ্রাধিকার দিয়ে যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নে দীর্ঘমেয়াদী মহাপরিকল্পনা প্রণয়ন করা। পরিবেশ সহায়ক, সহজলভ্য, পথচারী বান্ধব বিকল্প গণপরিবহণ ব্যবস্থা গড়ে তোলা। ইতোমধ্যে জাহাজ নির্মাণ শিল্পের যে অবকাঠামো গড়ে তোলা হয়েছে তা আরও বিস্তৃত করা।

১০। আন্তর্জাতিক সম্পর্ক ও সংহতি

ক. স্বাধীন ও সক্রিয় জোট নিরপেক্ষ পররাষ্ট্র নীতি অনুসরণ করা।

খ. আন্তঃরাষ্ট্রীয় সম্পর্কের গণতন্ত্রায়ন, জাতিসংঘ ও তার বিভিন্ন সংস্থার গণতন্ত্রায়ন এবং স্থায়ী বিশ্বশান্তি ও পূর্ণ নিরস্ত্রীকরণের জন্য দৃঢ় ও সক্রিয় প্রচেষ্টা চালানো।

গ. সাম্রাজ্যবাদ, নয়া উপনিবেশবাদ, আধিপত্যবাদ, বর্ণবাদ, জায়নবাদ, নব্য নাৎসিবাদ প্রভৃতির বিরুদ্ধে দৃঢ় অবস্থান গ্রহণ করা এবং এসবের বিরুদ্ধে সংগ্রামরত জাতি ও আন্দোলনসমূহের সঙ্গে ঐক্য ও সংহতি জোরদার করা।

ঘ. দ্বি-পাক্ষিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে প্রতিবেশী দেশ সমূহের সাথে সহযোগিতামূলক সম্পর্ক স্থাপন ও সম্পর্ক উন্নয়নে অগ্রাধিকার প্রদান। ‘সার্ক’ সংস্থার কার্যক্রমকে প্রসারিত করে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে সুসম্পর্ক ও সহযোগিতার ভিত্তি প্রসারিত ও গভীরতর করা। ‘সার্ক’ দেশসমূহের জনগণ ও গণতান্ত্রিক, প্রগতিশীল শক্তি ও আন্দোলনসমূহের মধ্যে সংহতি ও সহযোগিতা গভীরতর করা।

ঙ. তৃতীয় বিশ্বের উন্নয়নশীল দেশের অনুকূলে বিশ্ব বাণিজ্য ব্যবস্থা ঢেলে সাজানো এবং প্রকৃত সমতার ভিত্তিতে ‘নয়া বিশ্ব অর্থনৈতিক ব্যবস্থা’ প্রতিষ্ঠার জন্য সমস্বার্থ সম্পন্ন উন্নয়নশীল দেশগুলোর সঙ্গে ঐক্যবদ্ধভাবে সংগ্রাম করা। ল্যাটিন আমেরিকার সাম্রাজ্যবাদবিরোধী দেশগুলোর সাথে ঘনিষ্ট যোগাযোগ ও সংহতি জোরদার করা।

১১। শিক্ষা, সংস্কৃতি ও মানব সম্পদের উন্নয়ন

ক. শিক্ষা নীতি পরিপূর্ণ বাস্তবায়ন করা, শিক্ষা ক্ষেত্রে বৈষম্য দূর করা।

খ. শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে স্বায়ত্ত্বশাসন নিশ্চিত করা। শিক্ষকদের পর্যাপ্ত বেতন-ভাতা ও মর্যাদা নিশ্চিত করা, তাদের ন্যায়সঙ্গত দাবিসমূহ কার্যকর করা।

গ. সামাজিক সাংস্কৃতিক পশ্চাদপদতা দূর করার লক্ষ্যে সুনির্দিষ্ট সাংস্কৃতিক আন্দোলন গড়ে তোলা যাতে জনগণের মধ্যে মানবতাবোধ দেশপ্রেম গণতান্ত্রিক চেতনাবোধ, অন্যায়-অবিচার শোষণের বিরুদ্ধে সংগ্রামের প্রেরণা, জাগরিত ও প্রসারিত করা যায়। মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে বিকশিত করা।

ঘ. জনসংখ্যাকে জনশক্তিতে রূপান্তরিত করার জন্য বাজেটে অগ্রাধিকার প্রদান করা। দেশ ও দেশের বাহিরে কর্মসংস্থানের উপযোগী বৃত্তিমূলক শিক্ষা, প্রায়োগিক শিক্ষা, কারিগরি শিক্ষা, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিগত শিক্ষা-কার্যক্রম গ্রহণ করা। প্রতিটি উপজেলা পর্যায়ে এ ধরনের প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা। আত্মকর্মসংস্থান এবং বিদেশে চাকুরী ব্যয় নির্বাহের জন্য স্বল্প সুদের ব্যাংক ঋণের ব্যবস্থা করা।

ঙ. ছোট ও পরিকল্পিত পরিবার গঠনের বিষয়টিকে স্বতঃস্ফূর্ত ও স্বাভাবিক আকাক্সক্ষায় পরিণত করা। জন্মনিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থাদির ব্যবহার জনপ্রিয় ও সহজলভ্য করা। এসব প্রয়াসের মাধ্যমে ১০ বছরের মধ্যে জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার শূন্যের কোঠায় নিয়ে আসা।

১২। বিচার ও আইন আদালত

ক. বিচার প্রক্রিয়াকে দুর্নীতি প্রভাবমুক্ত করাসহ বিচারঙ্গনে দলবাজি নিষিদ্ধ করা। মেধা যাচাইয়ের মধ্য দিয়ে বিচারক নিয়োগসহ বিচার ব্যবস্থার প্রতিটি স্তরে স্বচ্ছতা জবাবদিহিতা প্রতিষ্ঠা করা। দ্রুততম সময়ে মামলা নিষ্পত্তি করার লক্ষ্যে বিচারিক আদালত বৃদ্ধি করা ও তার কাঠামো বিন্যাস করা।

খ. নাগরিক অধিকার ও আইনী সুরক্ষাসহ মানবধিকার কমিশনকে আরও স্বাধীন ও ক্ষমতাশালী করে তোলা।

১৩। আধুনিক তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহার ও জাতীয় উন্নয়ন

ক. রাষ্ট্রীয় প্রশাসনে সর্বস্তরে দুর্নীতিমুক্ত, স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা সৃষ্টির লক্ষে ই-গর্ভনেন্স চালু করা।

খ. ইনফরমেশন টেকনোলজি সুপার হাইওয়েতে আধুনিক প্রযুক্তিসহ উন্নয়ন ঘটানো ও প্রতিটি ইউনিয়ন পর্যায়ে ই-টেকনোলজি ব্যবহারের কাঠামো বিন্যাস করা ও তথ্য প্রযুক্তিতে জনগণকে সম্পৃক্ত করা।

গ. তথ্যের অভিগম্যতা ও সুষ্ঠু ব্যবহার যেমন নিশ্চিত করা তেমনি তথ্য সন্ত্রাস ও তথ্য অপব্যবহারের বিরুদ্ধে আইনকে যুগোপযুগী করা।

ঘ. যুব সম্প্রদায়ের শহর-গ্রাম যুব ও নারীদের মেধা ও সমশক্তিকে কাজে লাগাতে অঞ্চল ভিত্তিতে আইটি ভিলেজ গড়ে তোলা।

১৪। নারী ও পুরুষের সমান অধিকার প্রতিষ্ঠা

ক. ১৯৪৮ সালে জাতিসংঘ ঘোষিত মানবাধিকার সনদ, ১৯৭৯ সালে ঘোষিত নারীর প্রতি সকল প্রকার বৈষম্য বিলোপ সনদ তথা ‘সিডো সনদ’ (কোনো রকম সংরক্ষণ ছাড়াই), ১৯৯৩ সালে ঘোষিত ভিয়েনা সম্মেলন এবং ১৯৯৫ সালে বিশ্ব নারী সম্মেলনে ঘোষিত বেইজিং কর্মসূচি পূর্ণভাবে বাস্তবায়ন করা।

খ. যৌতুক প্রথা, ধর্ষণ, এসিড নিক্ষেপ, অপহরণসহ সকল প্রকার নারী নির্যাতন কার্যকরভাবে রোধ করা। নারী ও শিশু পাচার রোধ করতে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করা। কন্যা শিশুদের অধিকার ও স্বার্থ রক্ষার বহুমুখী পদক্ষেপ গ্রহণ করা।

গ. ‘পারিবারিক নির্যাতন প্রতিরোধ আইন’ প্রণয়ন করা। ‘ক্রিমিনাল প্রসিডিউর কোড’ এবং ‘অ্যাভিডেন্স অ্যাক্ট’-এ নারীর প্রতি বৈষম্যমূলক ধারাসমূহ শনাক্ত ও দূর করা। ‘অভিভাবক ও পোষ্য আইন ১৮৯০’ সংশোধন করে অভিভাবক ও পোষ্য গ্রহণের বিধানে সমতা আনা। ‘ইকুয়াল অপরচুনিটি অ্যাক্ট’ প্রণয়ন করা। এসব ছাড়াও বর্তমানে প্রচলিত আইনে যেসব পিতৃতান্ত্রিক বিধান রয়েছে তার অবসান ঘটানো। বিদ্যমান পারিবারিক আইন ও উত্তরাধিকার আইনের ক্ষেত্রে যে বৈষম্য বিরাজ করছে তা দূর করা এবং ইউনিফর্ম ফ্যামিলি কোড চালু করা।

ঘ. ২০০৮ সালে ঘোষিত নারী উন্নয়ন নীতিমালাকে আরো বিকশিত করা এবং তার পরিপূর্ণ বাস্তবায়নের ব্যবস্থা করা।

ঙ. কর্মস্থলে শিশু পরিচর্যা কেন্দ্র স্থাপন করা। নিরাপদ মাতৃত্ব নিশ্চিত করা। কর্মজীবী নারীদের জন্য আইনানুগ প্রসূতিকালীন ছুটি প্রদানের ব্যবস্থা করা। প্রাথমিক প্রজনন স্বাস্থ্য শিক্ষার ব্যবস্থা করা।

চ. সংসদে নারীদের জন্য সংরক্ষিত আসন সংখ্যা বৃদ্ধি করে এক-তৃতীয়াংশ করা ও প্রত্যক্ষ নির্বাচনের ব্যবস্থা করা। জেণ্ডার বিষয়ক সংসদীয় কমিশন গঠন করা। মহিলা বিষয়ক মন্ত্রণালয়ে একজন পূর্ণমন্ত্রী নিয়োগ দেয়া।

ছ. নারীর সামাজিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। ধর্মান্ধ ফতোয়াবাজ ও প্রভাবশালীদের দৌরাত্ম্য থেকে নারীদের রক্ষা করা। ফতোয়াকে আইনগতভাবে নিষিদ্ধ করে ২০০১ সালে হাইকোর্টে প্রদত্ত ঐতিহাসিক রায়কে কার্যকর করা।

জ. পরিবারে ও গৃহস্থালী কাজে নারীর শ্রমের উপযুক্ত মর্যাদা ও সামাজিক স্বীকৃতি নিশ্চিত করা। নারী ও পুরুষের মধ্যে কাজ ও মজুরির ক্ষেত্রে সমতা প্রতিষ্ঠা করা।

ঝ. নারীর প্রতি অবমাননাকর, নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গির সকল অনুষঙ্গ বাদ দিয়ে যুগোপযোগী শিক্ষা কার্যক্রম চালু করা। নারীর প্রতি নেতিবাচক, গৎবাঁধা, অবমাননাকর, সনাতনী দৃষ্টিভঙ্গির বিরুদ্ধে গণমাধ্যমের সঠিক ভূমিকা, প্রচার নিশ্চিত করার লক্ষ্যে সকল প্রচার মাধ্যমের জন্য জেন্ডার সংবেদনশীল নীতিমালা প্রণয়ন ও তা বাস্তবায়ন করা। রাস্তাঘাটে উত্ত্যক্তকরণ বা ঈভ টিজিং প্রতিরোধের লক্ষ্যে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের বিধান রেখে আইন প্রবর্তন করা।

ঞ. প্রান্তিক নারী, সুবিধাবঞ্চিত নারীদের মূলধারায় যুক্ত করার জন্য কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করা। যৌন শোষণের শিকার নারীদের কর্মসংস্থানের মাধ্যমে পুনর্বাসিত করা।

১৫। শিশু-কিশোর-যুব ও বৃদ্ধ-দুঃস্থ নাগরিকদের সামাজিক নিরাপত্তা

ক. জাতিসংঘ শিশু অধিকার সনদ বাস্তবায়ন করা। শিশু শ্রম বন্ধ করার লক্ষ্যে কার্যকর ব্যবস্থা গড়ে তোলা। শিশু নির্যাতন প্রতিরোধে স্বাধীন কমিশন গঠন করা।

খ. বঞ্চিত শিশুদের জন্য বৃত্তিমূলক ও কারিগরী শিক্ষা প্রদানের জন্য বিশেষ উদ্যোগ গ্রহণ।

গ. পথশিশুদের জন্য সামাজিক সুরক্ষা বলয় নিশ্চিত করাসহ ছিন্নমূল পথশিশুদের জন্য রাত্রিকালীন নিরাপদ আশ্রয় কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করা।

ঘ. শিশুদের সৃষ্টিশীল বিনোদনের জন্য উপযুক্ত সামাজিক পরিবেশ ও কাঠামো গড়ে তোলা। শহরের পার্ক, খেলার মাঠ পুনরুদ্ধার করে সংরক্ষণ করা। সরকার ও ব্যক্তিমালিকানাধীন আবাসিক এলাকা গড়ে তোলার ক্ষেত্রে সকল এলাকায় যেন শিশুদের খেলার মাঠ থাকে, সে ব্যাপারে ব্যবস্থা নেয়া।

ঙ. দেশের গ্রাম ও শহরের অসহায় বৃদ্ধ নাগরিকদের জন্য পেনশন, বয়স্ক ভাতা, দুঃস্থ ভাতা, আবাসন কেন্দ্র, সেনিটোরিয়াম সুবিধা ইত্যাদির ব্যবস্থা করা।

চ. বন্যা, উত্তরাঞ্চলের মঙ্গা ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের জলাবদ্ধতা এবং প্রাকৃতিক বিপর্যয়গ্রস্থ মানুষদের জন্য জরুরি ভিত্তিতে খাদ্য ও কাজের ব্যবস্থা করা।

যুব সমাজ

ক. কর্মক্ষম সকল যুবকদের কর্মসংস্থান নিশ্চিত করার জন্য সুনির্দিষ্টভাবে বার্ষিক ও পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা গ্রহণ করা।

খ. সংবিধান বর্ণিত মৌলিক অধিকার ও সামাজিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করার পদক্ষেপ গ্রহণ করা এবং কর্মক্ষেত্র সম্প্রসারণ করা, কর্মবিহীন বেকার যুবকদের কর্মহীন সময়ে বেকার ভাতা প্রদান করা।

গ. যুব সমাজকে ধ্বংসকারী মাদকাশক্তি ও মাদক ব্যবসার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া যুব সমাজে শ্রম, মেধাকে কাজে লাগিয়ে সামনে এগিয়ে নেয়া।

১৬। ক্ষমতার গণতান্ত্রিক বিকেন্দ্রীকরণ ও স্থানীয় স্বায়ত্ত্বশাসন

ক. রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থার কাঠামো ও রাষ্ট্রযন্ত্রের প্রশাসনিক কাঠামোকে (১) উপযুক্ত গণতান্ত্রিক বিকেন্দ্রীকরণ (২) স্বচ্ছতা (৩) জবাবদিহিতা (৪) জনগণের কার্যকর নিয়ন্ত্রণের নীতির ভিত্তিতে মৌলিকভাবে ঢেলে সাজানো। ব্রিটিশ উপনিবেশিক আমলে প্রবর্তিত প্রশাসন ব্যবস্থার আমূল পরিবর্তন করা।

খ. স্বশাসিত, আর্থিক সক্ষমতাসহ স্থানীয় সম্পদের উৎসসমূহের ওপর পরিপূর্ণ কর্তৃত্ব এবং স্থানীয় জনগণের কাছে দায়বদ্ধ স্থানীয় সরকার ব্যবস্থার প্রবর্তন করা। আমলা নিয়ন্ত্রণ থেকে স্থানীয় সরকার মুক্ত রাখা।

১৭। আদিবাসী অধিকার

ক. পাহাড়ে সমতলে বসবাসকারী আদিবাসী জনগণের সাংবিধানিক স্বীকৃতি প্রদান করা। এই জাতিসত্ত্বাসমূহের ভাষা, সংস্কৃতি, কৃষ্টি, আইন প্রথাকে আইনের মাধ্যমে সংরক্ষণ ও বিকাশের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা এবং আদিবাসী জনগোষ্ঠীকে তাদের মাতৃভাষায় প্রাথমিক শিক্ষা নিশ্চিত করা।

খ. আদিবাসীদের জমির উপর অধিকার প্রতিষ্ঠা করা, সমতলে সাঁওতাল, গারো, হাজং, ওঁরাওসহ সকল সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠীর ভূমির অধিকার নিশ্চিত করার লক্ষ্যে একটি ভূমি কমিশন গঠন করা।

গ. ১৯৯৭ সালের ডিসেম্বর মাসের স্বাক্ষরিত পার্বত্য শান্তি চুক্তির অসঙ্গতিসমূহ দূর করা এবং চুক্তির পূর্ণ বাস্তবায়ন নিশ্চিত করা।

ঘ. আদিবাসী সমাজ অধ্যুষিত এলাকাসমূহে ভূমি ও জীব বৈচিত্র বিনাশকারী সকল ধরনের তৎপরতা বন্ধ করা। আদিবাসী জনগণের অস্তিত্ব, পরিবেশ, প্রকৃতি ও জীবিকাকে বিপন্ন করে এমন ধরনের তথাকথিত উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন বন্ধ করা।

ঙ. আলফ্রেড সরেন, পীরেন স্লোন, সত্যবান হাজং, চলেশ রিছিল হত্যাকাণ্ডসহ আদিবাসীদের ওপর হত্যা, অত্যাচার, উৎপীড়নের ঘটনার বিচার করা।

১৮। প্রতিবন্ধী জনগণ

ক. জাতীয় প্রতিবন্ধী নীতিমালা বাস্তবায়ন এবং সমাজের সর্বক্ষেত্রে প্রতিবন্ধীদের সামাজিক মর্যাদা ও অর্থনৈতিক নিরাপত্তা বিধানের জন্য আইন প্রণয়ন করা।

খ. প্রতিবন্ধীদের জন্য চাকুরিতে নিয়োগের কোটা নির্ধারণ ও কর্মক্ষেত্র গড়ে তোলা।

গ. মানসিক ও শারীরিক প্রতিবন্ধী শিশু-কিশোরদের জন্য প্রয়োজনীয় শিক্ষা ব্যবস্থা গড়ে তোলা।

১৯। ধর্মীয় সংখ্যালঘু সম্প্রদায়

ক. সব ধর্মের মানুষের সমঅধিকার নিশ্চিত করা। ধর্মীয় সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানুষের ওপর অত্যাচার, উৎপীড়ন বৈষম্য হয়রানি বন্ধ করা। স্বাধীনভাবে ধর্ম পালন, রাষ্ট্রীয় ও সামাজিক সকল ক্ষেত্রে মর্যাদা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের উপর আক্রমণকারীদের বিচারের আওতায় এনে শাস্তি প্রদান করা।

খ. সমাজের সর্বক্ষেত্রে সকল ধরনের সাম্প্রদায়িকতা নির্মূল করা।

গ. সংশোধিত অর্পিত সম্পত্তি প্রত্যাপন আইন বাস্তবায়ন ও কার্যকরী করার সকল উদ্যোগ গ্রহণ।

২০। স্বাস্থ্য ও চিকিৎসা

ক. সকল নাগরিকের জন্য বিনামূল্যে মৌলিক স্বাস্থ্যসেবা ও চিকিৎসা প্রাপ্তি নিশ্চিত করা। সুষম ও অভিন্ন চিকিৎসা নীতি, স্বাস্থ্য নীতি ও ঔষধ নীতি চালু করা।

খ. শহর ও গ্রামের স্বাস্থ্য সেবার মান উন্নয়ন করা। প্রতিটি ইউনিয়নে মাতৃসদন, শিশু স্বাস্থ্য পরিচর্যা ভিত্তিক স্বাস্থ্য অবকাঠামো গড়ে তোলা। ইতোমধ্যে যেগুলো প্রতিষ্ঠিত হয়েছে তার সেবা কার্যক্রম নিশ্চিত করা। সরকারি হাসপাতালগুলোতে উন্নত চিকিৎসা ব্যবস্থা প্রসারিত করা এবং সেখানে শ্রমজীবী মেহনতি মানুষের জন্য চিকিৎসার সুযোগ বৃদ্ধি করা।

গ. আর্সেনিক মুক্ত পানীয় সরবরাহ, সেনিটেশন, রোগ-প্রতিষেধক ব্যবস্থার সম্প্রসারণ করা।

ঘ.বিভিন্ন দেশজ চিকিৎসা পদ্ধতির আধুনিকায়নের ওপর গুরুত্ব আরোপ করা। হোমিওপ্যাথি, বায়োক্যামি, আয়ুর্বেদীয়, হেকিমী ও অনানুষ্ঠানিক চিকিৎসা ব্যবস্থার উন্নয়ন করা। প্রতিটি সরকারি হাসপাতালে সহজলভ্য বিকল্প চিকিৎসা পদ্ধতি সংযোজিত করা।

২১। আইনের শাসন ও সুশাসন : সংবিধান ও রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থা

ক. অন্ন, বস্ত্র, শিক্ষা, চিকিৎসা, বাসস্থান ও কর্মসংস্থানকে জনগণের মৌলিক নাগরিক অধিকার হিসেবে গণ্য করা এবং তা পর্যায়ক্রমে নিশ্চিত করতে সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতার বিধান।

খ. বিশেষ ক্ষমতা আইন, সন্ত্রাস দমন আইন, বাংলাদেশ দণ্ড বিধির ৫০৫ (ক) ধারা, অর্ডিন্যান্স, ১৯৭৪ সালের সরকারি কর্মচারী অবসর বিধির ৯ (২) ধারা, জননিরাপত্তা আইন, নিরাপত্তা ও নিবর্তনমূলক আটক আইন, চলচ্চিত্র সংসদ রেজিস্ট্রেশন অ্যাক্ট, সন্ত্রাস দমন আইন, বিভিন্ন ধরনের সেন্সরশিপ, ধর্মঘট নিষিদ্ধকরণ আইনসহ মৌলিক অধিকার খর্বকারী সকল নিবর্তনমূলক কালাকানুন বাতিল করা। বেতার-টিভিকে স্বায়ত্ত্বশাসিত প্রতিষ্ঠানে পরিণত করা।

গ. রাষ্ট্রীয় কার্যকলাপের সকল তথ্য জনগণের অবগত হবার অধিকার নিশ্চিত করা।

ঘ. উপনিবেশিক যুগের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার পরিবর্তে স্বাধীন দেশের উপযোগী গণতান্ত্রিক প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা গড়ে তোলা। যুগোপযোগী প্রতিরক্ষা নীতি প্রণয়ন করা। দেশের প্রতিরক্ষা নীতি প্রণয়নের কাজ এবং সশস্ত্র বাহিনীর সকল কার্যক্রম জাতীয় সংসদের কাছে দায়বদ্ধ রাখার ব্যবস্থা করা।

২২। নির্বাচনী সংস্কার

ক. সংবিধানের অধীনে থেকেই প্রতি টার্মে সুনির্দিষ্ট সময়ে নির্বাচন সম্পন্ন সহ সাংবিধানিক ধারাবাহিকতা রক্ষা করা।

খ. নির্বাচন কমিশনকে আরও পূর্ণ ক্ষমতাসহ প্রায়োগিক অধিকার প্রদান করে শক্তিশালী করা।

গ. টাকার খেলা, পেশী শক্তির ব্যবহার ও সাম্প্রদায়িকতা মুক্ত নির্বাচনী ব্যবস্থা কায়েম করা। সংসদে রাজনৈতিক দলসমূহের প্রাপ্ত ভোটের আনুপাতিক হারে প্রতিনিধিত্বের ব্যবস্থা করা।

২৩। নগরায়ন

ক. দরিদ্র ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর আবাস নিশ্চিতকল্পে গণমুখী নগরায়ন পরিকল্পনা প্রণয়ন করা।

খ. শহরতলির উন্নতি সাধন এবং দক্ষ যোগাযোগ ব্যবস্থা গড়ে তোলা।

গ. যানজট নিরসনকল্পে ঢাকা মহানগরীতে পাতাল রেল, আকাশ রেলসহ আধুনিক যোগাযোগ ব্যবস্থা গড়ে তোলা। অন্যান্য মহানগরীগুলোতে যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নে দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করা।

২৪। জাতীয় গণতান্ত্রিক উন্নয়ন নীতি প্রণয়ন

ক. কৃষি, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কর্মসংস্থান ও জনসম্পদ উন্নয়ন ইত্যাদি জাতীয় নীতিমালার ক্ষেত্রে সাম্রাজ্যবাদ নিয়ন্ত্রিত সংস্থা বিশ্বব্যাংক, আইএমএফ, এডিবি ইত্যাদি সংস্থার ব্যবস্থাপত্রের বদলে জনপ্রতিনিধি ও জনগণের প্রত্যক্ষ অংশগ্রহণের মাধ্যমে জনগণের চাহিদা ও আকাক্সক্ষা নির্ভর জাতীয় উন্নয়ন নীতিমালা প্রণয়ন করা।

খ. উন্নয়ন পরিকল্পনা প্রণয়নের ক্ষেত্রে স্থানীয় জনগণের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা। জাতীয় অর্থনীতির বিকাশের দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা প্রণয়ন করা। সুষম উন্নয়ন নিশ্চিত করার স্বার্থে অনগ্রসর এলাকা এবং প্রতিবন্ধী, আদিবাসী, দলিত ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জন্য বিশেষ আর্থিক বরাদ্দ রাখা। ব্যাপক কর্মসংস্থান সৃষ্টির কাজকে অগ্রাধিকার দিয়ে দেশের শিল্প, বাণিজ্য, প্রযুক্তি ইত্যাদি নীতি প্রণয়ন করা। বিশ্ববাজারের অসম প্রতিযোগিতার মুখে জাতীয় শিল্প-কারখানার স্বার্থ রক্ষায় রাষ্ট্রীয়ভাবে সহায়তা প্রদানের নীতি অনুসরণ করা।

গ. ঢালাও বিরাষ্ট্রীয়করণ, বিনিয়ন্ত্রণ, উদারীকরণের আত্মঘাতী নীতি পরিত্যাগ করা। রাষ্ট্রীয় কল-কারখানা ও প্রতিষ্ঠানকে দক্ষ, উন্নত ও লাভজনক করার বাস্তব পদক্ষেপ গ্রহণ করা। একই সঙ্গে ব্যক্তিখাতে প্রকৃত উদ্যোক্তাদের শিল্প-ব্যবসার পথে প্রতিবন্ধকতা দূর করা এবং রাষ্ট্র কর্তৃক তাদের সহায়তা প্রদান করা। উৎপাদন ও সেবামূলক খাত বিকাশের স্বার্থে ব্যক্তি, সংহতি-সমবায় ও অন্যান্য মিশ্র খাতকে সহায়তা প্রদান করা। প্রবাসীদের অর্জিত আয়-উপার্জনকে দেশে বিনিয়োগ করার জন্য প্রণোদনামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা।

ঘ. সামরিক খাত ও মাথাভারী প্রশাসনসহ সকল অনুৎপাদনশীল খাতে ব্যয় বরাদ্দ যুক্তিসঙ্গত পরিমাণে হ্রাস করা। জাতীয়ভাবে দক্ষতার সঙ্গে উৎপাদিত হচ্ছে বা উৎপাদন করা সম্ভব এ ধরনের পণ্য আমদানি নিয়ন্ত্রণ করা। দেশের ব্যাপক সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের জন্য একান্তভাবে প্রয়োজনীয় নয়, এমন পণ্যের ও বিলাসদ্রব্যের আমদানি নিয়ন্ত্রণ করা।

ঙ. দেশের বিত্তবানদের জন্য কর বেয়াত প্রদান বন্ধ করে তাদের ওপর প্রত্যক্ষ করের হার বৃদ্ধি ও তা নিñিদ্র আয় নিশ্চিত করা। বাজেটে সাধারণ জনগণের ওপর আরোপিত পরোক্ষ করের অনুপাত হ্রাস করা।

ওয়ার্কার্স পার্টি শ্রমিকশ্রেণীর পার্টি। ওয়ার্কার্স পার্টি শ্রমিক, কৃষক, শ্রমজীবী মানুষের স্বার্থের পক্ষের পার্টি। ওয়ার্কার্স পার্টি মুক্তিযুদ্ধের অংশগ্রহণকারী দেশপ্রেমিক পার্টি। ওয়ার্কার্স পার্টি সাম্রাজ্যবাদবিরোধী পার্টি। ওয়ার্কার্স পার্টি অসাম্প্রদায়িক ও গণতান্ত্রিক চেতনাসম্পন্ন পার্টি। ওয়ার্কার্স পার্টি হচ্ছে ত্যাগী ও সংগ্রামী মানুষের পার্টি। সর্বোপরি ওয়ার্কার্স পার্টির আছে সুনির্দিষ্ট, আদর্শভিত্তিক ও বাস্তবমুখী কর্মসূচি। ওয়ার্কার্স পার্টির প্রার্থীগণ নির্বাচনে বিজয়ী হলে উপরে উল্লেখিত কর্মসূচি তুলে ধরবে সংসদে। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা রক্ষায় অসাম্প্রদায়িক গণতান্ত্রিক সরকার যাতে গঠিত হতে পারে সেজন্য ভূমিকা রাখবে এবং শ্রমজীবী মধ্যবিত্ত গণতান্ত্রিক মানুষের কণ্ঠকে সোচ্চার করবে সংসদের ভিতরে ও বাইরে।

ডিসেম্বর ২০১৩, বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির নির্বাচনী ইশতেহার প্রকাশ। ৩১/এফ, তোপখানা রোড, ঢাকা-১২০৫।

পাঠকের মতামত:

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

SMS Alert

রাজনীতি এর সর্বশেষ খবর

রাজনীতি - এর সব খবর