thereport24.com
ঢাকা, রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১,  ২২ জমাদিউল আউয়াল 1446

ভোটের সময় সীমান্ত সিল করবে ভারত

২০১৪ জানুয়ারি ০১ ২৩:১১:১০
ভোটের সময় সীমান্ত সিল করবে ভারত

কলকাতা প্রতিনিধি : বাংলাদেশে দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে ঘিরে সহিংসতার আশঙ্কায় সীমান্ত সিল করবে ভারত। একই সঙ্গে বাংলাদেশ থেকে আসা কোনো নাগরিককে ‘পুশ ব্যাক’ না করারও নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। মঙ্গলবার পশ্চিমবঙ্গের প্রশাসনিক প্রধান কার্যালয় ‘নবান্ন’-এ এসে বিএসএফ এবং স্থানীয় প্রশাসনকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের পরামর্শ দিয়ে গেলেন ভারতের কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রসচিব অনিল গোস্বামী। বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয় দু-একদিনের মধ্যে (সমর্থিত সূত্রের খবর আগামী ৩ তারিখ থেকে) ভারত বাংলাদেশ সীমান্ত সিল করে দেওয়া হবে যাতে বাংলাদেশে নাশকতা করে কেউ ভারতে পালিয়ে আসতে না পারে।

বিএনপি-জামায়াতহীন দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে ঘিরে বাংলাদেশে ভয়াবহ পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে বলে আশঙ্কা করছে প্রতিবেশী দেশ ভারত। আর সেই ভয়াবহতার শিকার হতে পারে বাংলাদেশের সংখ্যালঘুরা। তবে এ নিয়ে ভারতের পক্ষ থেকে কোনো বিবৃতি দেওয়া না হলেও ব্যবস্থা গ্রহণ করছে দেশটির কেন্দ্রীয় ও সীমান্তবর্তী রাজ্য সরকার।

আগামী নির্বাচনের আগে সীমান্তে অতিরিক্ত বিএসএফ মোতায়েন করে পাহারা জোরদার করা হচ্ছে। কিন্তু তারপরেও নির্বাচনে অশান্তির জেরে বাংলাদেশ থেকে শরণার্থীরা যদি এপারে চলে আসতে বাধ্য হন। সে ক্ষেত্রে তাদের সঙ্গে মানবিক ব্যবহারের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে সীমান্তরক্ষীদের। মান-সম্মান বাঁচাতে দেশ ছেড়ে আসা প্রতিবেশী দেশের নাগরিকদের ‘পুশ ব্যাক’ না-করার নির্দেশও দিয়েছে দিল্লি।

গত মঙ্গলবার পশ্চিমবঙ্গের প্রশাসনিক প্রধান কার্যালয় ‘নবান্ন’-এ আসেন ভারতের কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রসচিব অনিল গোস্বামী। এ সময় চার ঘণ্টাব্যাপী আলোচনায় উপস্থিত ছিলেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যসচিব সঞ্জয় মিত্র, স্বরাষ্ট্রসচিব বাসুদেব বন্দ্যোপাধ্যায়, পুলিশ প্রধান জিএমপি রেড্ডি এবং কেন্দ্রীয় ও রাজ্য গোয়েন্দা কর্মকর্তারা। বৈঠকে বাংলাদেশ পরিস্থিতি পর্যালোচনা করেন অনিল। বৈঠক শেষে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে দেখা করে পুরো পরিস্থিতি তাকে জানিয়ে যান কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রসচিব।

কলকাতা থেকে প্রকাশিত আনন্দবাজার পত্রিকা এক প্রতিবেদনে বলেছে, নয়াদিল্লিতে বৈদেশিক মন্ত্রণালয়ের এক মুখপাত্র বাংলাদেশ পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেছেন, ‘নির্বাচন বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়। ভারতের এ বিষয়ে হস্তক্ষেপের কোনো ইচ্ছা নেই। কিন্তু প্রতিবেশী দেশ হওয়ায় এক দেশের ঘটনাপ্রবাহ অন্য দেশেও প্রভাব ফেলে।’

বৈদেশিক মন্ত্রণালয় মনে করছে, নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বাংলাদেশের উত্তাল পরিস্থিতির প্রভাব সীমান্তেও পড়বে। এক দিকে যেমন হিন্দু শরণার্থীরা সম্মান বাঁচাতে এপারে আসার চেষ্টা করবেন, তেমনই সেনা-পুলিশের ধরপাকড় থেকে বাঁচতে মৌলবাদী ও দুর্বৃত্তরাও সীমান্ত পারের চেষ্টা করবে। কিন্তু সব অনুপ্রবেশকারীই যে দুর্বৃত্ত নন, সে কথাই সীমান্তরক্ষীদের মনে করিয়ে দিচ্ছে দিল্লি।

এদিকে, দিল্লি কলকাতা বৈঠকের মূল বিষয় বাংলাদেশের চলমান পরিস্থিতি হলেও কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রসচিবের সঙ্গে বাংলাদেশ প্রসঙ্গে কী কথা হয়েছে তা জানাননি মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ স্বাধীন রাষ্ট্র। সে দেশের নির্বাচন তাদের অভ্যন্তরীণ বিষয়।’

রাজ্য স্বরাষ্ট্র দফতরের এক কর্মকর্তা জানান, আগামী ৫ জানুয়ারি বাংলাদেশের সাধারণ নির্বাচন। কিন্তু সে দেশের প্রধান বিরোধী দল বিএনপি এই ভোটে অংশ নিচ্ছে না। পশ্চিমা দেশগুলো এই নির্বাচনের বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন তুললেও ভারত এতে পৃথক অবস্থান নিয়েছে। নির্বাচনকালীন এই ঘটনা প্রভাব ফেলতে পারে বলে দেশের নিরাপত্তা এজেন্সিগুলো আগেই কেন্দ্রকে সতর্ক করেছে। তাতে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে পুলিশ ও সেনার তৎপরতার কারণে ওখানকার ইসলামী জঙ্গিগোষ্ঠীর সদস্যরা এপারে এসে নানা নাশকতামূলক কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে যেতে পারে।

তিনি আরও জানান, সম্প্রতি কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা এক সতর্কবার্তায় জানিয়েছে, পাকিস্তানের মৌলানা মাসুদ আজহারের জামাত-উদ-দাওয়ার সদস্যরা এ দেশে নরেন্দ্র মোদির ওপর হামলা চালানোর পরিকল্পনা করেছে। এই কাজে তারা বাংলাদেশের একটি নিষিদ্ধ মৌলবাদী সংগঠনকে কাজে লাগাতে পারে। এ জন্য জানুয়ারির শেষে বা ফেব্রুয়ারির শুরুতে কলকাতায় মোদির সফরকালে কঠোর নিরাপত্তা নিতে এখন থেকেই প্রস্তুত হতে পরামর্শ দিয়েছে তারা। দেশের নিরাপত্তা এজেন্সিগুলোর আশঙ্কা, পাকিস্তানী গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআই বাংলাদেশে অশান্তির সুযোগ নিতে পারে।

তিনি জানান, ভারত বরাবরই হাসিনা সরকারের কাছে সে দেশে সংখ্যালঘু হিন্দু-বৌদ্ধদের স্বার্থ ও সম্পত্তি রক্ষায় ব্যবস্থা গ্রহণে চাপ দিয়ে আসছে। ২৩ অক্টোবর ঢাকায় শেখ হাসিনার সরকারি বাসভবন গণভবনে গিয়ে নির্বাচন পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা করেন ভারতের রাষ্ট্রদূত পঙ্কজ শরণ ও নয়াদিল্লিস্থ বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত তারেক করিম। সেখানে সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তার বিষয়টিও গুরুত্ব পায়।

গোয়েন্দা কর্তারা জানান, বাংলাদেশের পুলিশ, সেনা ও সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিজিবি) সংখ্যালঘুদের জীবন-সম্পত্তি রক্ষার্থে এখন পর্যন্ত যথেষ্ট তৎপর রয়েছে। কিন্তু ভোটের পরে সে দেশে মৌলবাদীরা মাথাচাড়া দিলে পরিস্থিতি মোকাবিলা করা মুশকিল হবে।

গোয়েন্দাদের এই আশঙ্কার পরিপ্রেক্ষিতেই সরকার এ পদক্ষেপ নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

(দ্য রিপোর্ট/এসএম/এসকে/জেএম/জানুয়ারি ০২, ২০১৩)

পাঠকের মতামত:

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

SMS Alert

জাতীয় এর সর্বশেষ খবর

জাতীয় - এর সব খবর