thereport24.com
ঢাকা, শনিবার, ১০ মে 25, ২৭ বৈশাখ ১৪৩২,  ১২ জিলকদ  1446

সিরাজ সিকদার

২০১৪ জানুয়ারি ০২ ০০:২৩:২৫
সিরাজ সিকদার

দ্য রিপোর্ট ডেস্ক : বাংলাদেশের অন্যতম বামপন্থী বিপ্লবী সিরাজ সিকদার ১৯৭৫ সালের ২ জানুয়ারি নিহত হন। তিনি পূর্ব বাঙলাকে পাকিস্তানের উপনিবেশ ঘোষণা দিয়ে বিখ্যাত একটি থিসিস লিখেন। তিনি কবি হিসেবেও পরিচিত।

সিরাজ সিকদার ১৯৪৪ সালের ২৭ অক্টোবর জন্মগ্রহণ করেন। তার দাদা বাড়ি ছিলো ফরিদপুরে। তার বোন বিখ্যাত ভাস্কর শামীম সিকদার। কৃষি অফিসার বাবার কাজের সূত্রে তার শৈশব কেটেছে বিভিন্ন অঞ্চলে। ১৯৫৯ সালে বরিশাল জিলা স্কুল থেকে ম্যাট্রিক পাশ করেন। বরিশালের ব্রজমোহন কলেজ থেকে ১৯৬১ সালে আইএসসি ও ঢাকা ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ থেকে ১৯৬৭ সালে ইঞ্জিনিয়ারিং পাস করেন।

ছাত্রবস্থায় তিনি পূর্ব পাকিস্তান ছাত্র ইউনিয়নের সঙ্গে জড়িত ছিলেন। ১৯৬৭ সালে ছাত্র ইউনিয়নের মেনন গ্রুপের কেন্দ্রীয় কমিটির ভাইস প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন। ১৯৬৮ সালের ৮ জানুয়ারি তিনি সমমনা কয়েকজনকে নিয়ে ‘পূর্ব বাংলা শ্রমিক আন্দোলন’ প্রতিষ্ঠা করেন। এই সংগঠনের লক্ষ্য ছিল বিদ্যমান কমিউনিস্ট পার্টির বিপরীতে সত্যিকারের বৈপ্লবিক কমিউনিস্ট পার্টি প্রতিষ্ঠা। মূল প্রত্যয় ছিল ‘জাতীয় মুক্তি সংগ্রামের’ মাধ্যমে পূর্ব বাংলায় পাকিস্তানের ঔপনিবেশিক শাসনের অবসান ঘটানো। ওই বছরের শেষ দিকে ঢাকায় মাও সে তুং গবেষণা কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করেন। ১৯৭০ সালে তার বিপ্লবী পরিষদ বিভিন্ন জেলায় পাকিস্তানী প্রশাসন ও শ্রেণি শত্রুর বিরুদ্ধে গেরিলা অপারেশন চালায়। ওই বছরের ৮ জানুয়ারি ঢাকা, মুন্সীগঞ্জ ও ময়মনসিংহ জেলায় স্বাধীন পূর্ব বাংলার পতাকা ওড়ান।

১৯৭০ সালের নির্বাচনে বিপুল সংখ্যাগরিষ্টতা জয় লাভ করে আওয়ামী লীগ। পাকিস্তান সরকার ক্ষমতা হস্তান্তরে গড়িমসি করতে থাকে। শেখ মুজিবুর রহমানকে আলোচনার ডাক দেয় পাকিস্তানি জান্তা সরকার। ১৯৭১ সালের ২ মার্চ বিপ্লবী পরিষদ শেখ মুজিবুর রহমান ও আওয়ামী লীগের উদ্দেশে একটি খোলা চিঠি লিখে। যা লিফলেট আকারে সারাদেশে প্রচার করা হয়। এর চার নাম্বার দফাটি ছিল পূর্ব বাংলার দেশ প্রেমিক রাজনৈতিক পার্টি ও ব্যক্তিদের প্রতিনিধি সমন্বয়ে ‘জাতীয় মুক্তিপরিষদ’ বা ‘জাতীয় মুক্তিফ্রন্ট’ গঠন। এ সময় দলটি কয়েকটা গেরিলা গ্রুপ করে কয়েকটি সরকারি অফিসে বোমাবাজী করে ও দেয়াল লিখনে বেশ সাড়া জাগিয়েছিলো। বিশেষ করে সিরাজ সিকদারের থিসিস আকৃষ্ট করেছিলো ছাত্র-তরুণদের। থিসিস শুরুই করেছিলেন পূর্ব বাঙলাকে পাকিস্তানের উপনিবেশ হিশেবে চিহ্নিত করে।

১৯৭১ সালের ৩০ এপ্রিল সিরাজ সিকদার বরিশালের পেয়ারা বাগানে তারিখে গড়ে তোলেন ‘জাতীয় মুক্তিবাহিনী’। ৩ জুন পার্টির নতুন নাম দেওয়া হয় ‘পূর্ব বাংলা সর্বহারা পার্টি’। আগস্টের শুরুতে সর্বহারা পার্টির অন্যতম কেন্দ্রীয় সদস্য এবং বর্তমান বাংলাদেশের পতাকার নকশাকার সাইফুল্লাহ আজমীসহ পাঁচজন যোদ্ধাকে সাভারে পাঠানো হয় মুজিববাহিনীর সঙ্গে বৈঠকের উদ্দেশ্যে। মুজিববাহিনী তাদের হত্যা করে। অক্টোবরে সর্বহারা পার্টি দলের গেরিলাদের নির্দেশ দেওয়া হয় পাকস্তানী বাহিনী, ভারতীয় বাহিনী ও আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে যুদ্ধ পরিচালনা করতে। তিনি পাকিস্তানকে উপনিবেশবাদী, ভারতকে আধিপত্যবাদী এবং আওয়ামী লীগকে ভারতপন্থী আধিপত্যবাদী শক্তি হিসেবে চিহ্নিত করেছিলেন। বরিশাল থেকে শুরু করে দেশের কয়েকটি উপকূলীয় অঞ্চল–বিক্রমপুর, মানিকগঞ্জ জেলা, পাবনা, ময়মনসিংহসহ বিভিন্ন এলাকায় সর্বহারা পর্টির গেরিলারা পাক-বাহিনীর সঙ্গে বীরত্বপূর্ণ লড়াই করে। নভেম্বরের মধ্যে আওয়ামী লীগ সমর্থক মুক্তিযোদ্ধাদের হাতে সর্বহারা পার্টির বহু সদস্য নিহত হয়।


১৯৭২ থেকে ১৯৭৪ সালের মধ্যে বাংলাদেশের মাওবাদী গ্রুপগুলোর মধ্যে রণনীতি নিয়ে বিভেদ দেখা দেয়। শিগগিরই শুরু হয়ে যায় পরস্পরকে বহিস্কার ও মৃত্যূদণ্ডের ঘোষণা। সিরাজ সিকদার ‘নিপাত চক্র’ নামে পার্টির ভেতরে একটি অনুগত গ্রুপ করেছিলেন। এদের মূল কাজ ছিলো পার্টির ভেতরের প্রতিক্রিয়াশীলদের হত্যা করা। ১৯৭৩ ও ১৯৭৪ সালের ১৬ ডিসেম্বর বিজয় দিবসের দিনে সর্বহারা পার্টি সারাদেশে হরতালের ডাক দেয়। পার্টির মুখপত্র ‘স্ফুলিঙ্গ’ ও প্রচারপত্রে বলা হয়, ১৬ ডিসেম্বর হচ্ছে ভারতীয় সম্প্রসারণবাদী শক্তির কাছে মুজিব সরকারের আত্মসমর্পণ দিবস। একমাত্র জনযুদ্ধের মাধ্যমেই জনগণের বিপ্লবী সরকার প্রতিষ্ঠা করে প্রকৃত বিজয় আসতে পারে। মাওবাদীদের বিরুদ্ধে তৎকালীন সরকারের দমন-পীড়নের প্রতিবাদে সর্বহারা পার্টি ঢাকায় হরতাল আহ্বান করলে সন্তোষ থেকে মাওলানা ভাসানী বিবৃতি দিয়ে সমর্থন জানান এবং হরতাল সফল হয়। ১৯৭৪ সালে সিরাজ সিকদার আত্মগোপনে যান।

কী অবস্থায় তিনি আটক হন এবং ঠিক কখন কোথায় কীভাবে তাকে হত্যা করা হয় সে সম্পর্কে অস্পষ্টতা রয়েছে। অনেকের মতে ১৯৭৫ সালের ১ জানুয়ারি চট্টগ্রামের হালিশহরে সরকারি গোয়েন্দা সংস্থার লোকজন তাকে গ্রেফতার করে। পরদিন ঢাকায় হত্যা করা হয়।

তার রচনা সমগ্র এবং রাজনৈতিক জীবন সম্পর্কে বিভিন্ন বই বাজারে পাওয়া যায়।

(দ্য রিপোর্ট/এমএইচও/ডব্লিউএস/জানুয়ারি ০২, ২০১৪)

পাঠকের মতামত:

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

M

M

SMS Alert

এর সর্বশেষ খবর

- এর সব খবর