thereport24.com
ঢাকা, রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১,  ২২ জমাদিউল আউয়াল 1446

ইসির নির্বাচন প্রস্তুতি সম্পন্ন : শেষ হচ্ছে প্রচারণা

২০১৪ জানুয়ারি ০৩ ০২:০৫:২৫
ইসির নির্বাচন প্রস্তুতি সম্পন্ন : শেষ হচ্ছে প্রচারণা

দ্য রিপোর্ট প্রতিবেদক : দশম সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানে সব ধরনের প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। মিছিল-মিটিং-সভা-সমাবেশসহ সব ধরনের প্রচার-প্রচারণাও শুক্রবার সকাল ৮টা থেকে শেষ হচ্ছে। নির্বাচনী এলাকায় শনিবার রাত ১২টা থেকেই বন্ধ থাকবে সব ধরনের যান চলাচল। এর পাশাপাশি ভোটার বাড়াতে বিশেষ প্রচারণার ব্যবস্থা নিয়েছে ইসি ও ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ।

নির্বাচনী মাঠে রয়েছেন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ হেভিওয়েট প্রার্থীরা। আর আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা লড়বে স্বল্পসংখ্যক জাতীয় পার্টি ও স্বতন্ত্র প্রার্থীদের সঙ্গে। দেশজুড়ে সহিংসতার কারণে নির্বাচনী আমেজবিহীন নির্বাচনে ভোটার উপস্থিতি বাড়াতে মরিয়া আওয়ামী লীগ। ইসিও ভোটারদের ভোটদানে উৎসাহ দিতে মোবাইল এসএমএসের মাধ্যমে বিশেষ প্রচারণার উদ্যোগ নিয়েছে।

এ দেশের নির্বাচনী ইতিহাসে এর আগে অর্ধেকের কম আসনে সংসদ নির্বাচনের নজির নেই। এ অবস্থায় নির্বাচন সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন আসন পাওয়ার ক্ষেত্রে আগের সকল সংসদকে ছাড়িয়ে যাবে আওয়ামী লীগ। নবম সংসদে নির্বাচনে আওয়ামী লীগ নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করে সরকার গঠন করেছিল।

ইসির কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ১৪৭টি আসনে প্রার্থী রয়েছেন ৩৮৯ জন। এর মধ্যে আওয়ামী লীগের ১১৯, জাতীয় পার্টির ৬৩, স্বতন্ত্র ১০৬ ও বাকি ১০১ জন প্রার্থী ১০টি দলের।

নির্বাচনী এলাকায় ৩ ও ৪ জানুয়ারি খোলা থাকবে সব তফসিলি ব্যাংক। ৫৯ জেলার ১৪৭টি আসনে ভোটগ্রহণে সেনাবাহিনীর পাশাপাশি পর্যাপ্ত সংখ্যক আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে। ভোটকেন্দ্রর নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ভোটের আগের দিনই বিশেষ নিরাপত্তা বেষ্টনী তৈরি করবে ইসি। এ সব এলাকায় সাধারণ ছুটিও ঘোষণা করা হয়েছে। বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হওয়ার কারণে ৫ জেলায় ভোটগ্রহণ হচ্ছে না। ভোটগ্রহণের জন্য প্রস্তুত রাখা হয়েছে প্রশিক্ষিত আড়াই লাখ ভোটগ্রহণ কর্মকর্তা। ইসির দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী রকিবউদ্দীন আহমদ বুধবার সন্ধ্যায় বলেন, ‘নির্বাচনের সার্বিক প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়েছে। এই বিষয়টি অবহিত করতে বৃহস্পতিবার বিকেল সাড়ে তিনটায় মহামান্য রাষ্ট্রপতির সঙ্গে আমরা দেখা করব।’

তিনি আরো বলেন, ‘ভোটগ্রহণের ৪৮ ঘণ্টা আগে সব ধরনের প্রচার-প্রচারণা বন্ধ রাখতে বলা হয়েছে।’ প্রার্থীরা আচরণবিধি মেনে চলবে বলেও তিনি আশা প্রকাশ করেন।

ইসির সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, ভোটপ্রদানের পরিবেশ সৃষ্টি করতে ভোটকেন্দ্রে প্রয়োজনীয় সংস্কারকাজও ইতোমধ্যে শেষ করা হয়েছে। নির্বাচনী আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে ২৬ ডিসেম্বর থেকে টহল শুরু করেছে সেনাবাহিনী। থাকবে ৯ জানুয়ারি পর্যন্ত। এ ছাড়া র‌্যাব, বিজিবি, কোস্টগার্ড ও আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন ১ জানুয়ারি থেকে ৭ জানুয়ারি পর্যন্ত মোবাইল ও স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে নিয়োজিত থাকবে।

বিজিবি-র‌্যাবের স্কটে দেশের ৫৯ জেলায় রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয়ে ব্যালট পেপারসহ নির্বাচনী মালামাল পাঠানোর কাজও শেষ হয়েছে। ভোটের আগের দিন ৪ জানুয়ারি বিশেষ নিরাপত্তায় তা কেন্দ্রে কেন্দ্রে পাঠানো হবে।

ইসির নির্বাচন শাখার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা জানান, কোনো ধরনের বিঘ্ন ছাড়াই ব্যালট পেপার সংশ্লিষ্ট জিনিসপত্র রিটার্নিং কর্মকর্তাদের কাছে পৌঁছেছে। ৫ জানুয়ারি সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত একটানা ভোট নেওয়ার প্রস্তুতি সম্পর্কে রিটার্নিং কর্মকর্তারা ইসি সচিবালয়কে অবহিত করেছেন।

সংশ্লিষ্ট নির্বাচনী এলাকায় ইতোমধ্যে ব্যালট পেপার, ব্যালট বাক্স, অমোচনীয় কালির কলম, কাঠপেন্সিল, স্কেল পাঠানো হয়েছে। এবার ব্যালট পেপার মুদ্রণ করা হয়েছে ৪ কোটি ৩৬ লাখ ৬৮ হাজার ৪১টি। এ ছাড়া প্রতিটি আসনের জন্য ১০০০ করে পোস্টাল ব্যালটও ছাপানো হয়েছে। ১৪৭টি আসনে ভোটার রয়েছে ৪ কোটি ৩৯ লাখ ৩৮ হাজার ৯৩৮ জন। মোট ভোটকেন্দ্র রয়েছে ১৮ হাজার ২০৯টি। এতে ৯১ হাজার ২১৩ ভোট কক্ষ রয়েছে।

ইসির সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র জানিয়েছে, মনোনয়ন প্রত্যাহারের দিনই ১৫৩টি আসনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন একক প্রার্থীরা।

নির্বাচনকে সামনে রেখে সাতদিনের জন্য সামরিক বিমান ও হেলিকপ্টার প্রস্তুত রাখা হয়েছে। ১ জানুয়ারি থেকে ৭ জানুয়ারি পর্যন্ত এসব বিমান ও হেলিকপ্টার নির্বাচনী কাজে ব্যবহৃত হবে। রাজনৈতিক অস্থিরতা ও সহিংসতার কারণে দেশের সব জায়গায় ভোটগ্রহণ কর্মকর্তা, ব্যালট পেপার ও ব্যালট বাক্স পাঠাতে সমস্যা হতে পারে এ জন্য এ সব সরঞ্জাম ও লোকবল পাঠাতে প্রয়োজনীয় সংখ্যক সামরিক বিমান ও হেলিকপ্টার প্রস্তুত রাখা হয়েছে।

নির্বাচনী প্রচারণায় নিষেধাজ্ঞা

আগামী ৩ জানুয়ারি সকাল ৮টার পর থেকে সকল ধরনের প্রচার-প্রচারণা নিষিদ্ধ থাকবে। এ সময় নির্বাচনী এলাকায় সভা, সমাবেশ, মিছিল ও শোভাযাত্রা নিষিদ্ধ করা হয়েছে। একই সঙ্গে ভোটগ্রহণের পরবর্তী ৪৮ ঘণ্টা সকল ধরনের মিছিল-মিটিংয়ের ওপরেও নিষেধাজ্ঞা বজায় থাকবে।

যান চলাচল বন্ধ

নির্বাচনী ৫৯টি জেলায় শনিবার রাত ১২টা থেকে রবিবার রাত ১২টা পর্যন্ত সকল ধরনের যান চলাচল বন্ধ থাকবে। মোটরসাইকেলের ক্ষেত্রে ৩ জানুয়ারি থেকে ৭ জানুয়ারি মধ্যরাত পর্যন্ত চলাচল বন্ধ থাকবে।

বিশেষ মনিটরিং সেল

নির্বাচনের সার্বিক অবস্থা ও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ১ জানুয়ারি থেকেই কাজ শুরু করেছে বিশেষ মনিটরিং সেল। প্রাপ্ত পরিস্থিতি তাৎক্ষণিকভাবে কমিশনকে অবহিত করতে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। বিচার বিভাগীয় কর্মকর্তাদের সমন্বয়ে প্রতিটি এলাকায় ভিজিল্যান্স টিম ও অবজারভেশন টিম কাজ করছে। একই সঙ্গে এ সব এলাকায় সকল ধরনের বৈধ অস্ত্র প্রদর্শন নিষিদ্ধ করা হয়েছে।

সশস্ত্র বাহিনী ও র‌্যাব হেলিকপ্টার ব্যবহার করবে

আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণের প্রয়োজনে র‌্যাব হেলিকপ্টার ব্যবহার করতে পারবে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, ইসি সচিবালয় ও বাহিনীগুলোর অনুরোধে বিমানবাহিনী প্রয়োজনীয় সংখ্যক হেলিকপ্টার সহায়তা দেবে। স্বশস্ত্র বাহিনীর সদরের নির্দেশনা অনুযায়ী রোগী/হতাহতদের জরুরি চিকিৎসা ও স্থানান্তরে প্রয়োজনীয় সংখ্যক হেলিকপ্টার সুবিধাজনক স্থানে মোতায়েন করবে বিমানবাহিনী। সেনাসদরের বিবেচনায় প্রতিটি স্তরে প্রয়োজনীয় সংখ্যক সেনাসদস্য রিজার্ভ হিসেবে মোতায়েন থাকবে।

দুর্গম ও প্রত্যন্ত অঞ্চলে নির্বাচন কর্মকর্তা, নির্বাচনী মালামাল পাঠাতেও হেলিকপ্টারের প্রয়োজন হয়। এ লক্ষ্যে নির্বাচনের কয়েক দিন আগে থেকে নির্বাচনের পরের দিন পর্যন্ত হেলিকপ্টার সার্ভিস দিতে সশস্ত্র বাহিনী বিভাগ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে।

দেশী-বিদেশী পর্যবেক্ষক

নির্বাচন পর্যবেক্ষণে ইলেকশন ওয়ার্কিং গ্রুপের ২৯টিসহ ৪৪টি দেশী সংস্থা নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করবেন। তবে এখন পর্যন্ত বিদেশী কোনো পর্যবেক্ষক সংস্থা পর্যবেক্ষণের সম্মতি জানায়নি।

তিন স্তরের নিরাপত্তা

নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে তিন স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্চিত করেছে ইসি। নির্বাচনী মাঠে থাকছে প্রায় সাড়ে চার লাখ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য। নির্বাচন পরিচালনা কর্মকর্তার বাইরে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট, বিচারিক ম্যাজিস্ট্রেট, পুলিশ, র‌্যাব, বিজিবি, অঙ্গীভূত আনসার/ভিডিপি, আনসার ব্যাটালিয়ান ও এপিবিএন সদস্যরা মাঠে সার্বক্ষণিক টহলে নেমেছে। একই সঙ্গে গ্রাম পুলিশ, চৌকিদার ও দফাদার নিয়োজিত থাকবে। পাশাপাশি গোয়েন্দা নজরদারিও বাড়ানো হয়েছে।

এ সবের মধ্যে অঙ্গীভূত আনসার/ভিডিপি, আনসার ব্যাটালিয়ান, গ্রাম পুলিশ, চৌকিদার ও দফাদার থাকবে ২ লাখ ১৮ হাজার ৫০৮ জন। প্রতি কেন্দ্রে ৬ জনসহ মোট পুলিশ থাকবে ১ লাখ ৯ হাজার ২৫৪ জন। সেনাবাহিনী থাকছে ৫০ হাজার। র‌্যাব থাকছে ৩০ হাজার। বিজিবি থাকছে ৬০ হাজার। এ ছাড়াও উপকূলীয় এলাকায় কোস্টগার্ড এবং পাহাড়ি ও দুর্গম এলাকায় বিমানবাহিনীর সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে।

(দ্য রিপোর্ট/এমএস/এপি/এসকে/জানুয়ারি ০৩, ২০১৪)

পাঠকের মতামত:

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

SMS Alert

জাতীয় এর সর্বশেষ খবর

জাতীয় - এর সব খবর