thereport24.com
ঢাকা, শুক্রবার, ৩ মে 24, ২০ বৈশাখ ১৪৩১,  ২৪ শাওয়াল 1445

৫ জানুয়ারির নির্বাচন প্রতিহতের ডাক

‘জেল-জুলুমকে আমি ভয় করি না’

২০১৪ জানুয়ারি ০৩ ১৮:৫৫:০৫
‘জেল-জুলুমকে আমি ভয় করি না’

দ্য রিপোর্ট প্রতিবেদক : বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া বলেছেন, গৃহবন্দিত্ব বা জেল-জুলুমকে আমি ভয় করি না। সর্বশক্তিমান আল্লাহর ওপর অবিচল আস্থা এবং জনগণের ওপর আমার অকুন্ঠ বিশ্বাস আছে। স্বৈরাচারী সরকার দেশের জনগণ ও বিশ্বসমাজ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে কেবল সন্ত্রাস ও রাষ্ট্রীয় শক্তির ওপর ভর করে টিকে থাকতে পারবে না।

তিনি বলেন, আমি দেশবাসীকে নির্বাচনের নামে ৫ জানুয়ারির কলঙ্কময় প্রহসন পুরোপুরি বর্জনের আহ্বান জানাচ্ছি। এ প্রহসনকে দেশে-বিদেশে কোথাও কেউ নির্বাচন হিসেবে বৈধতা দেবে না। এর মাধ্যমে বৈধতার খোলস ছেড়ে অবৈধ মুর্তিতে আবির্ভূত হবে আওয়ামী লীগ সরকার।

বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে শুক্রবার সন্ধ্যায় পাঠানো প্রেসসচিব মারুফ কামাল খান স্বাক্ষরিত এক বিবৃতিতে তিনি এসব কথা বলেন।

খালেদা জিয়া বলেন, বিরোধীদলকে সন্ত্রাসী আখ্যা দিয়ে ৫ জানুয়ারির পর সমূলে উৎখাতের হুমকি দিচ্ছে আওয়ামী শাসকেরা। অথচ তাদের নেতাকর্মীরা যানবাহনে, বিচারপতির বাড়িতে ও হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকদের ঘরবাড়িতে বোমা হামলা ও অগ্নিসংযোগ করতে গিয়ে ধরা পড়েছে, বিচার হচ্ছে না। তারা নিজেরাই অস্ত্র হাতে রাজপথে মহড়া দিচ্ছে ও হামলা চালাচ্ছে। এই হামলা ও হুমকির জবাবে আমি বলতে চাই, এক ব্যক্তির ক্ষমতার লালসা ও স্বেচ্ছাচারিতার কাছে জাতির সম্মিলিত ইচ্ছাশক্তি পরাজিত হবে না। যে আন্দোলনে বহু মানুষ রক্ত দিয়েছে সেই আন্দোলন সফল হবেই ইনশাল্লাহ। ক্ষমতার দম্ভের শোচনীয় পরাজয় আসন্ন।

আওয়ামী শাসকেরা হত্যা, নাশকতা, গুম, নির্যাতন, অপপ্রচার ও অপসারণের এক মহা নীলনকশা তৈরি করেছে অভিযোগ করে খালেদা জিয়া বলেন, শুধু সরকার কিংবা সংসদ নয়, সকল রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান, প্রশাসন ও সংস্থাকে একদলীয়করণের এ অপপ্রয়াসকে ব্যর্থ করতে যে যেখানে আছেন, সকলকে সক্রিয় ভূমিকা পালন করতে হবে। দেশকে এবং জনগণকে মুক্ত করতে হবে, বাঁচাতে হবে সম্মিলিত প্রয়াসের মাধ্যমে।

তিনি বলেন, দেশের মানুষের ভোটের, সাংবিধানিক, গণতান্ত্রিক ও মৌলিক মানবিক সমস্ত অধিকার কেড়ে নিয়ে আওয়ামী লীগ অপকৌশল ও সন্ত্রাসের মাধ্যমে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা কুক্ষিগত রাখার উদ্দেশ্যে আগামী ৫ জানুয়ারি জাতীয় সংসদের অর্ধেকেরও কম আসনে নির্বাচনের নামে এক নির্লজ্জ প্রহসনের আয়োজন করেছে।

‘আজ্ঞাবহ নির্বাচন কমিশনের সহযোগিতায় রাষ্ট্রীয় প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীগুলোকে ভয়ংকরভাবে অপব্যবহার করে গণতন্ত্র নাশের এ কদর্য অধ্যায় রচনা করা হচ্ছে। তাই ৫ জানুয়ারি চিত্রিত হয়ে থাকবে জঘন্য কলংকময় এক কালো তারিখ হিসেবে।’

খালেদা বলেন, ‘বিএনপি ও ১৮ দলসহ দেশের কোনো গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দল এ প্রহসনে শরিক হয়নি। দেশের বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠ নাগরিকদের মধ্যে এ নিয়ে সামান্যতম উৎসাহ নেই। বরং ভোটের অধিকার থেকে বঞ্চিত হওয়ায় তাদের মধ্যে সৃষ্টি হয়েছে তীব্র ক্ষোভ। এই প্রহসনের আয়োজকদের তারা ধিক্কার দিচ্ছেন। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় হতবাক হয়েছেন গণতন্ত্র ধ্বংসের এ স্বেচ্ছাচারী তাণ্ডব ও কারসাজিতে।

বিরোধী দলীয় নেতা বলেন, ‘অনেক আগে থেকেই আমরা বলেছি, সাজানো পাতানো এমন প্রহসনে আমরা শামিল হবো না। সমঝোতার মাধ্যমে সুষ্ঠু অবাধ নিরপেক্ষ একটি প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ নির্বাচনের পন্থা ও সকল পক্ষের জন্য সুযোগের সমতা নিশ্চিত করার উপায় বের করার জন্য আমরা বারবার আহ্বান জানিয়েছি। জনগণের ওপর আস্থাহীন এবং সুষ্ঠু নির্বাচনে দেশবাসীর রায় গ্রহণে ভীত ক্ষমতাসীনদের একগুঁয়েমির কারণে তা সম্ভব হয়নি।’

তিনি বলেন, ‘ইতিমধ্যে সংবাদ-মাধ্যমে খবর এসেছে যে, অল্প কিছু দলীয় লোক সারাদিন ভোট কেন্দ্রে লাইনে দাঁড়িয়ে থেকে জালভোট দিয়ে ভোটার উপস্থিতির সংখ্যা বাড়িয়ে দেখাবার জন্য আওয়ামী লীগ নির্দেশ দিয়েছে। সেই নির্দেশের প্রমাণ হিসেবে অডিও ক্লিপও সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশ করা হয়েছে।’

বিবৃতিতে খালেদা বলেন, ‘এই প্রহসন ও ভোটাধিকার কেড়ে নেওয়ার বিরুদ্ধে জনগণ যাতে বৈধভাবে প্রতিবাদ জানাতে না পারে তারজন্য সবখানে এখন চালু করা হয়েছে বন্দুকের শাসন।’

তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের গণতন্ত্রপ্রিয় মানুষ একতরফা নির্বাচন হতে দেবে না বলেছিলাম আমরা। আমাদের কথা সত্য হয়েছে। অর্ধেকের বেশি আসনে নির্বাচনী প্রহসনের ঝুঁকি নিতেও সাহস পায়নি আওয়ামী লীগ। আসনগুলো ভাগবাটোয়ারা করে নিয়ে সিলেকশন করতে হয়েছে তাদেরকে। বাকী আসনগুলোতে বন্দুকঘেরা ভোটারবিহীন জালজালিয়াতির প্রহসনের আয়োজন চলছে।’

১৮ দলীয় জোটের প্রধান বলেন, ‘কারসাজি ও রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে গণতন্ত্র ও ভোটের অধিকার রক্ষায় সারাদেশে মুক্তিকামী জনগণের গণতান্ত্রিক সংগ্রাম চলছে। আমি এ বৈধ গণতান্ত্রিক আন্দোলনকে বেগবান করতে রাজধানী অভিমুখে শান্তিপূর্ণ মার্চ ফর ডেমোক্রেসি কর্মসূচি ঘোষণা করেছিলাম। দেশবাসী এবং সারা পৃথিবী দেখেছে, কী জঘন্য নাৎসী কায়দায় সেই নিয়মতান্ত্রিক কর্মসূচি পালনে জনগণকে বাধা দেওয়া হয়েছে। সরকারের লেলিয়ে দেওয়া সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা সুপ্রিম কোর্ট ও প্রেসক্লাবের মতো প্রতিষ্ঠানে হামলা চালিয়েছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের পিটিয়ে আহত করেছে। ওরা সশস্ত্র মিছিল নিয়ে প্রকাশ্যে মহড়া দিয়েছে। সবকিছুই হয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ছত্রছায়ায়। অথচ নিরস্ত্র জনগণকে শান্তিপূর্ণ অভিযাত্রা ও সমাবেশে যোগ দিতে বাধা দেওয়া হয়েছে। সারাদেশে সব যানবাহন বন্ধ রেখেছে সরকার। এর মাধ্যমে ক্ষমতাসীনরা পরাজয় মেনে নিয়েছে। তাদের জনভীতি দিবালোকের মতো স্পষ্ট হয়ে গেছে।’

বিএনপি প্রধান বলেন, এমন নিশ্চিদ্র বাধার মধ্যেও সারাদেশ থেকে সর্বস্তরের লক্ষ লক্ষ মানুষ ‘মার্চ ফর ডেমোক্রেসি’তে অংশ নিতে অনেক দুর্ভোগ সয়ে সীমাহীন কষ্টে ঢাকায় এসেছিলেন। সরকারি সন্ত্রাসকবলিত রাজপথে এই শান্তিপ্রিয় নাগরিকদের নামতে দেওয়া হয়নি। যেতে দেওয়া হয়নি সমাবেশস্থলে। তারা গভীর বেদনা নিয়ে ক্ষমতাসীনদের ধিক্কার জানিয়ে ফিরে গেছেন। আমি তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাই। ‘মার্চ ফর ডেমোক্রেসি’কে ঘিরে নানামুখী উস্কানি সত্ত্বেও গণতান্ত্রিক আন্দোলনের নেতাকর্মী ও জনগণ কোনো সহিংসতায় না জড়িয়ে সংযম, ধৈর্য্য ও শান্তি বজায় রেখেছেন। এই জন্য আমি তাদেরকে ধন্যবাদ জানাই। তারা প্রমান করেছেন যে, আমাদের কর্মসূচি ছিল শান্তিপূর্ণ এবং সরকারি প্রচারণা ছিল সম্পূর্ণ অসত্য।

বিএনপি চেয়ারপারসন আরও বলেন, আমি শান্তিপূর্ণ ‘মার্চ ফর ডেমোক্রেসি’ কর্মসূচি ঘোষণার পর থেকে ভীত সরকার আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও গোয়েন্দাদের দিয়ে আমার বাসভবন ঘিরে রেখেছে। আমাকে বাইরে যেতে দেওয়া হচ্ছে না। কোনো ঘোষণা ছাড়াই সরকার কার্যত আমাকে গৃহবন্দী করে রেখেছে। আমার অফিস এবং বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয় অবরুদ্ধ। এই পরিস্থিতিতে আমি দেশবাসীকে গণতান্ত্রিক আন্দোলন চালিয়ে যাবার উদাত্ত্ব আহবান জানাচ্ছি।

তিনি বলেন, আমরা অনেক কষ্টে যে গণতন্ত্র অর্জন করেছিলাম সেই গণতন্ত্র আজ আওয়ামী লীগের হাতে আবারো নিহত হলো। ১৯৭৫ সালে ‘দ্বিতীয় বিপ্লব’ নাম দিয়ে একদলীয় বাকশাল পদ্ধতির মাধ্যমে তারা গণতন্ত্র হত্যা করেছিল। আজও তারা গণতন্ত্র হত্যার আয়োজন করে বলছে যে, গণতন্ত্র ও ভোটের অধিকারের চেয়ে বেশী জরুরি তাদের কর্মসূচির বাস্তবায়ন করা। এই কন্ঠ ফ্যাসিবাদের। এই স্বৈরাচারকে রুখতে হবে। প্রতিটি জনপদ, গ্রাম ও মহল্লাকে গণতান্ত্রিক আন্দোলনের দুর্ভেদ্য দুর্গ হিসেবে গড়ে তুলে আন্দোলন চালিয়ে যেতে আমি নেতাকর্মী ও জনগণের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি।

সাবেক প্রধানমন্ত্রী জনগণের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে বলেন, ‘বাংলাদেশের মানুষ আমাকে বিপুল সমর্থন দিয়ে সেবা করার সুযোগ বারবার দিয়েছেন। আমি তাদের প্রতি কৃতজ্ঞ। ক্ষমতা আমার কাছে বড় নয়। ক্ষমতায় যাবার উদ্দেশ্যে নয়, মানুষের অধিকার পুনঃপ্রতিষ্ঠা ও মুক্তির জন্য আমি জীবনের এই প্রান্তে এসেও যেকোনো ত্যাগ স্বীকারে প্রস্তুত আছি। আল্লাহ আমাদের সহায় হোন। বাংলাদেশ, দেশের মানুষ ও গণতন্ত্র মুক্তি পাক।’

(দ্য রিপোর্ট/টিএস-এমএইচ/জেএম/আরকে/জানুয়ারি ০৩, ২০১৪)

পাঠকের মতামত:

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

SMS Alert

রাজনীতি এর সর্বশেষ খবর

রাজনীতি - এর সব খবর