নিরুত্তাপ নির্বাচনেও ঘরের মধ্যে প্রতিদ্বন্দ্বিতার উত্তাপ
প্রধান বিরোধী দল বিএনপি নির্বাচনে না আসায় দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনেকটাই নিরুত্তাপ। এর মাঝে আবার ১৫৩ আসনে বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় প্রার্থীরা জয়ী হয়েছেন। বাকি আসনে মহাজোটের শরিকের বাইরে ৬২টি আসনের ৪২টিতে আওয়ামী লীগ প্রার্থীর সঙ্গে লড়াই হচ্ছে দলের বিদ্রোহী প্রার্থীদের। এ নিয়ে বিপাকে পড়েছেন দলটির হেভিওয়েট নেতারা।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও কৃষিমন্ত্রী বেগম মতিয়া চৌধুরী শেরপুর-২ আসনে দলের মনোনীত প্রার্থী। তবে তার বিপক্ষে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন কৃষকলীগ নেতা কৃষিবিদ বদিউজ্জামান বাদশা। তিনি নালিতাবাড়ী উপজেলা চেয়ারম্যান ছিলেন। উপজেলা চেয়ারম্যান থেকে পদত্যাগ করে তিনি মতিয়া চৌধুরীর বিরুদ্ধে আনারস প্রতীক নিয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে লড়ছেন।
মতিয়া চৌধুরীকে হারানোর ব্যাপারে দৃঢ় আশাবাদ ব্যক্ত করে বদিউজ্জামান বাদশা বলেন, ‘আমি তাকে পরাস্ত করার ব্যাপারে শতভাগ আশাবাদী। কিন্তু মতিয়ার পক্ষের লোকজন আমার বিরুদ্ধে ভোটারদের ভয়ভীতি দেখিয়ে নানা অপপ্রচার চালাচ্ছে। মতিয়ার দুর্ব্যবহারের কারণে অনেক নেতাকর্মীসহ সাধারণ মানুষ অতিষ্ঠ। এই দুর্ব্যবহার থেকে মুক্তি ও তার আশীর্বাদপুষ্টদের হাত থেকে রেহাই পেতে তৃণমূলের নেতাকর্মীরা সমর্থন দিয়ে আমাকে প্রার্থী করেছেন।’
আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর অন্যতম সদস্য কাজী জাফরউল্ল্যাহ। ফরিদপুর-৪ আসনে আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী হিসেবে নৌকা প্রতীক নিয়ে নির্বাচনে লড়ছেন। এ আসনে নবম সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে স্ত্রী নিলোফার জাফরউল্ল্যাহ বিপুল ভোটে জয়লাভ করেছিলেন। তার বিরুদ্ধে লড়ছেন বঙ্গবন্ধু পরিবারের ঘনিষ্ঠ ও হুইপ লিটন চৌধুরীর ছোটভাই মুজিবুর রহমান নিক্সন চৌধুরী। প্রতিপক্ষ শক্তিশালী হলেও নিক্সন চৌধুরীই এ আসনে জয়ের ব্যাপারে আশাবাদী। জাফরউল্ল্যাহর জন্য ভোট চেয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, তবুও ঘাম ঝরছে তার।
সুনামগঞ্জ-১ আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থী মোয়াজ্জেম হোসেন রতন। এ আসনে দলের বিদ্রোহী প্রার্থী সাবেক সংসদ সদস্য সৈয়দ রফিকুল হক বড় শক্তি হয়ে দাঁড়িয়েছেন। সুনামগঞ্জ-৩ আসনে (দক্ষিণ সুনামগঞ্জ-জগন্নাথপুর) বার বার বিজয়ী হয়েছেন আওয়ামী লীগের বর্ষীয়ান নেতা মরহুম আব্দুস সামাদ আজাদ। এ আসনে এবারের প্রার্থী এমএ মান্নান। দলীয় মনোনয়ন না পাওয়ায় বিদ্রোহী প্রার্থী হয়েছেন আজিজুস সামাদ ডন।
পাবনা-১ আসনে নির্বাচনী প্রতিদ্বন্দ্বিতায় লড়ছেন বর্তমান ও সাবেক দুই প্রতিমন্ত্রী। আওয়ামী লীগের প্রার্থী বর্তমান স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী অ্যাডভোকেট শামসুল হক টুকু। আর বিদ্রোহী প্রার্থী হয়েছেন আওয়ামী লীগ নেতা সাবেক তথ্য প্রতিমন্ত্রী অধ্যাপক আবু সাইয়িদ। এ আসনে অধ্যাপক আবু সাইয়িদকে টেক্কা দিয়ে নির্বাচনী বৈতরণী পার হতে ঘাম ঝরছে শামসুল হক টুকুর।
ঢাকা-৭ আসনে আওয়ামী লীগ প্রার্থী ডা. মোস্তফা জালাল মহিউদ্দীনের বিরুদ্ধে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক সংসদ সদস্য হাজী মো. সেলিম। ঢাকা-৪ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতির সাবেক ব্যক্তিগত সহকারী ও আওয়ামী লীগ নেতা ড. আওলাদ হোসেন। এ আসনে মহাজোট সমর্থিত জাতীয় পার্টির প্রার্থী সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা। কিন্তু মাঠে আওয়ামী লীগ কর্মীরা অবস্থান নিয়েছেন আওলাদের পক্ষে। ঢাকা-১৫ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী কামাল আহমেদ মজুমদারের বিরুদ্ধে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন ঢাকা-১৬ আসনের এমপি ইলিয়াস উদ্দিন মোল্লার বড় ভাই এখলাস উদ্দিন মোল্লা। ঢাকা-১৬ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী ইলিয়াস উদ্দিন মোল্লা। তার বিরুদ্ধে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন মহানগর আওয়ামী লীগের সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য ও বিজিএমই নেতা এসএম মান্নান কচি।
রাজশাহী-৬ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী শাহরিয়ার আলম। তাকে চ্যালেঞ্জ করে এবার নির্বাচন করছেন আওয়ামী লীগের সাবেক সংসদ সদস্য রায়নুল হক রায়হান। মাঠে আওয়ামী লীগ কর্মীরা তার পক্ষে অবস্থান নিয়েছেন। বিজয়ের ব্যাপারে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন রায়হান। তিনি বলেন, ‘মানুষের ভালোবাসা নিয়েই বিত্তশালী প্রার্থীকে জবাব দেব। আমি মাঠের কর্মী। সাধারণ মানুষের ভালোবাসাই আমার বড় সম্পদ।
নেত্রকোণা-১ আসনে আওয়ামী লীগ প্রার্থী হয়েছেন ছবি বিশ্বাস। এ আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য তরুণ নেতা মোস্তাক আহমেদ রুহি দলীয় মনোনয়ন না পেয়ে বিদ্রোহী প্রার্থী হয়েছেন। বরিশাল-২ আসনে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক তালুকদার মোহাম্মদ ইউনুস দলীয় মনোনয়ন পেয়েছেন। তার বিরুদ্ধে নির্বাচন করছেন উজিরপুর উপজেলা চেয়ারম্যানের স্ত্রী সাবিনা ইয়াসমিন। নোয়াখালী-৬ আসনের মনোনয়ন পেয়েছেন আয়শা সিদ্দিকী। তার বিরুদ্ধে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন সাবেক ছাত্রলীগ নেতা আমিরুল ইসলাম। তিনি নির্বাচনে শক্ত অবস্থানে রয়েছেন। জেলা আওয়ামী লীগ আমিরুলের পক্ষে অবস্থান নিয়েছে বলে জানা গেছে।
সব মিলিয়ে বিরোধী দলহীন নির্বাচনেও নিজেদের মধ্যে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় বেশ উত্তাপ ছড়াচ্ছে আসনগুলোতে।
(দ্য রিপোর্ট/এইউএ/এমসি/এইচএসএম/শাহ/সা/জানুয়ারি ৪, ২০১৪)